প্রতিদিন আখরোট খাওয়ার আগে জেনে নিন আখরোট কি, আখরোট খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। আখরোটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট এবং শর্করা, স্নেহ পদার্থ, ফাইবার, অ্যামিনো অ্যাসিড, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এই প্রত্যেকটি উপাদান হৃদ যন্ত্রের এবং মস্তিষ্কের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
আখরোটে বিদ্যমান ওমেগা ৩, ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বক ও চুলের যত্ন নিতে বিশেষভাবে কাজ করে। দাঁত ও হাড় মজবুত রাখার জন্য এমনকি স্ট্রোকের হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রতিদিন আখরোট খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। পানির পরিবর্তে দুধ কিংবা মধুর সাথে আখরোট মিশিয়ে খেলে সব থেকে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে আখরোট খাওয়ার একটি নির্দিষ্ট নিয়ম এবং পরিমাণ রয়েছে। আখরোট খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য আমাদের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটির সাথেই থাকুন।
আখরোট
আখরোট হলো অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি বাদাম জাতীয় ফল। এই বাদামটি সাধারণত গোলাকার আকৃতির হয়ে থাকে এবং ভেতরে একটি বীজ থাকে। ফলটি যখন পরিপক্ক হয় তখন এর বাইরের খোলস ফেলে দিয়ে ভিতরের বীজটি সংগ্রহ করতে হয়। খোলসের ভেতরে যে বাদাম থাকে তাতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। আখরোট গাছকে Plantae জগতের গাছ হিসেবে ধরা হয়।
এটি Magnoliophyta বিভাগ ও শ্রেণীর একটি উদ্ভিদ। Juglandaceae পরিবারের উদ্ভিদ হিসেবে এটি অধিক পরিচিত। আখরোট বৃক্ষ সাধারনত ২০০-৯০০ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে। আখরোট বৃক্ষ পালকের ন্যায় বহুধাবিভক্ত হয়ে থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম আখরোট থেকে ২,৭৩৮ কিজু (৬৫৪ kcal) কিলোগ্রাম শক্তি পাওয়া যায়। এতে বিদ্যমান শর্করার পরিমাণ ১৩.৭১। প্রোটিনের পরিমাণ ১৫.২৩ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ৯৮ মিগ্রা, লৌহ এর পরিমাণ ২.৯১ মিগ্রা, ফসফরাস এর পরিমাণ ৩৪৬ মিগ্রা, পটাশিয়াম এর পরিমাণ ৪৪১ মিগ্রা।
আখরোট এর উপকারিতা
শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করার জন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আখরোট (walnut) খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এর রয়েছে বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা। চলুন জেনে নেই আখরোট এর উপকারিতা গুলো কি কি?
স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে
আখরোটে বিদ্যমান ওমেগা থ্রি অবসন্নতা ধীরে ধীরে কমিয়ে এনে মস্তিষ্কের কোষগুলো সজীবতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ফলে স্মৃতিশক্তি প্রাকৃতিকভাবে বৃদ্ধি পায়।
হৃদযন্ত্র ভালো রাখে
কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের উন্নতির জন্য এবং খারাপ কোলেস্টেরল দূর করার জন্য প্রতিদিন খালি পেটে আখরোট খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে বিদ্যমান ওমেগা থ্রি ভালো কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
গর্ভস্থ শিশুর জন্য উপকারী
আখরোটে বিদ্যমান আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড গর্ভস্থ শিশুর হাড় মজবুত করতে, দেহের গঠন ঠিক রাখতে, এলার্জির জনিত যাবতীয় সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
ত্বকের বলিরেখা ও বয়সের ছাপ দূর করে
আখরোটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট। এই উপাদান গুলো ত্বকের বলিরেখা দূর করার পাশাপাশি বার্ধক্য জনিত ছাপ দূর করতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
প্রতিদিন সকালে পরিমিত পরিমাণে আখরোট সেবন করলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের বিশেষ উপকার হয়। ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রতিদিন আখরোট সেবন করুন।
মানসিক চাপ দূর করে
আখরোটে বিদ্যমান ভিটামিন বি স্ট্রেস রিলিভার ও মুড ম্যানেজার হিসেবে কাজ করে। ফলে মানসিক চাপ দূর হয়।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
আখরোটে বিদ্যমান পলিফেনলস এবং ইউরোলিথিন উপাদান স্তন, কোলন এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
ভালো ঘুম উপহার দেয়
আখরোটের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পটাশিয়াম, জিঙ্ক, ক্যালশিয়াম জীবনী শক্তি বাড়িয়ে তোলে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটি আখরোট খেলে রাতে ঘুম ভালো হবে।
শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে সহায়তা করে
আখরোটে বিদ্যমান মোলাটোন, ওমেগা ৩, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ছোটবেলা থেকেই শিশুকে প্রতিদিন একটি করে আখরোট খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুললে পরবর্তীতে মস্তিষ্ক বিকাশের ক্ষেত্রে আখরোট সহায়তা করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ করে
আখরোটে বিদ্যমান আয়রন, কপার ও জিঙ্ক দীপকপত্র ভালো রাখতে সহায়তা করে ও দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে। ফলে প্রাকৃতিকভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
হাড় ও দাঁত ভালো রাখে
নিয়মিত আখরোট খেলে শরীরে ফ্যাটি অ্যাসিড ও ম্যাগনেসিয়াম এর চাহিদা পূরণ হয় ফলে হার্ট এবং দাঁত ভালো থাকে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে
টাইমস অফ ইন্ডিয়া এর মতে, যারা নিয়ম করে আখরোট খান তাদের শরীরে ধীরে ধীরে খারাপ কোলেস্টেরল দূর হয় এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
গর্ভবতী নারীর জন্য উপকারী
আখরোটে রয়েছে ফোলেট, রাইবোফ্লাভিন এবং থিয়ামিন। এই উপাদানগুলো হবু মায়ের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে এবং অনাগত সন্তানের শরীরের গঠন ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
যারা নিয়মিত সকালে খালি পেটে আখরোট খান তাদের শরীরে ইমিউনিটি সিস্টেম ভালো থাকে। ফলে সহজেই কোন অসুখে আক্রান্ত হন না।
পুরুষের যৌন স্বাস্থ্য ভালো রাখে
যে সব পুরুষের শুক্রানুর সংখ্যা কম তাদের শুক্রাণু সংখ্যা বৃদ্ধি করতে আখরোট খাওয়া অত্যাবশ্যক।
আখরোট খাওয়ার নিয়ম
বিশেষজ্ঞদের মতে, আখরোট কাঁচা খাওয়ার থেকে ভিজিয়ে খাওয়া শরীরের জন্য অধিক উপকারী। সাধারণত রাতে ঘুমানোর আগে ৫-৬ ঘন্টা আখরোট ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে ভেজানো আখরোট এবং আখরোট ভেজানো পানি চুমুক দিয়ে খেতে হবে। তবে আপনি যদি সুস্থ ব্যক্তি হয়ে থাকেন তাহলে প্রতিদিন ৫টির বেশি আখরোট খেতে পারবেন না। চলুন এক নজরে আখরোট খাওয়ার নিয়ম গুলো দেখে নেই:
- পেস্তা বাদাম, কাজু বাদাম এবং কাঠ বাদামের সাথে আখরোট মিশিয়ে ড্রাই ফ্রুটস হিসেবে খেতে পারেন,
- দুধ অথবা মধুর সাথে আখরোটের গুড়ো মিশিয়ে স্নাক্স হিসেবে খেতে পারেন,
- শুধুমাত্র দুধের সাথে আখরোট করছি মিশিয়ে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়,
- সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা আপলোড ভেজানো পানি এবং আখরোট চিবিয়ে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়,
- আখরোট গুড়ো সংরক্ষণ করে চা এবং কফির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন,
- বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবারে আখরোট কুচি মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
আখরোটের অপকারিতা
আখরোটে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও এর কিছু অপকারিতাও বিদ্যমান। নিয়মিত আখরোট খেতে চাইলে জেনে নিন আখরোটের অপকারিতা গুলো কি কি?
- যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের আখরোট খেলে মুখে চুলকানি, গলা ফুলে যাওয়া, হাঁপানি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে,
- প্রয়োজনের অধিক আখরোট খেলে বিভিন্ন জায়গায় চুলকানি দেখা দিতে পারে,
- যাদের বাদামে অ্যালার্জি রয়েছে তাদের আখরোট খেলে বমি, পেট ব্যথা ও ডায়রিয়া হতে পারে।
- হাঁপানি রোগীরা আখরোট খেলে শ্বাসকষ্ট এবং জিভে ও গলা ফোলা সমস্যায় ভুগতে পারেন,
- অধিক মাত্রায় আখরোট খেলে লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে,
- যাদের শরীরে সামান্য পরিমাণেও আয়রনের ঘাটতি রয়েছে তারা আখরোট খাবেন না।
জনপ্রিয় ব্লগ: কাঠ বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
আমাদের শেষ কথা
আজকের এই সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে আমরা আখরোট খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আখরোট এর বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও এর অপকারিতা গুলো ও চোখে পড়ার মতো। তাই আখরোট নিয়মিত খাওয়ার আগে আপনি আপনার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নগুলি
১)আখরোট কিভাবে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়?
উঃ সকাল বেলা আখরোট ভেজানো পানি এর সাথে ভেজানো আখরোট চিবিয়ে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়। উষ্ণ গরম দুধের সাথে আখরোট কুচি মিশিয়ে খেলে বিভিন্ন সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
২)অতিরিক্ত আখরোট খেলে কি হয়?
উঃ অতিরিক্ত আখরোট খেলে এলার্জিজনিত বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাছাড়া প্রয়োজনের অধিক আখরোট খেলে বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা ও ডায়রিয়ার মত সমস্যা হতে পারে।
৩)প্রতিদিন কতটুকু আখরোট খেলে ওমেগা ৩ পাওয়া যায়?
উঃ প্রতিদিন সর্বোচ্চ পাঁচটি আখরোট খেলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা ৩ পাওয়া যায়।