সঠিক উপায়ে কাঁচা হলুদ দিয়ে রূপচর্চা করতে হলে অবশ্যই কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম এবং কাঁচা হলুদের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান রাখতে হবে। কাঁচা হলুদ থেকে পরিমিত পরিমাণে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান পেতে হলে কাঁচা হলুদ ব্যবহারের পরিমিত পরিমাণ এবং ব্যবহারের সঠিক সময় জেনে রাখা উচিত।
গ্রীষ্ম ঋতুতে রোদে পোড়া দাগ দূর করার জন্য কাঁচা হলুদ প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়ো ত্বকের জেল্লা বৃদ্ধির জন্য, ব্রণ, র্যাশ ইত্যাদি দূর করার জন্য সপ্তাহে অন্তত দুই দিন কাঁচা হলুদ মুখে এপ্লাই করতে পারেন। তবে কাঁচা হলুদ সরাসরি ত্বকে না লাগিয়ে দুধ, দই, বেসন, মধু কিংবা লেবুর রস এর সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে। চলুন তাহলে কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম এবং কাঁচা হলুদের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক:
মুখে কাঁচা হলুদের উপকারিতা
সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন কাঁচা হলুদ পাতিলেবুর রস এবং শসার রসের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ব্রণ থেকে পুরোপুরি নিস্তার পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও কাঁচা হলুদের নির্যাসে রয়েছে আরো বিভিন্ন উপকারিতা। নিচে মুখে কাঁচা হলুদের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
- কাঁচা হলুদ বাটা, পরিমাণ মতো ময়দা ও সামান্য পানি মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে ত্বকে লাগালে ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর হয়।
- কাঁচা হলুদ বাটার সাথে সামান্য পরিমাণ গাজরের রস এবং জলপাই তেল মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ব্রণ দূর হয়,
- কাঁচা হলুদের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়,
- কাঁচা হলুদের সাথে মধু মিশিয়ে মুখে লাগালে মুখের আর্দ্রতা সঠিক থাকে,
- কাঁচা হলুদ বাটার সাথে চন্দন গুড়া মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ত্বক প্রাণবন্ত দেখায়,
- কাঁচা হলুদের সাথে নারিকেল তেল মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ময়শ্চারাইজার এর কাজ করে,
- কাঁচা হলুদের সাথে মুলতানি মাটি, শসার রস ও লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে লাগালে রোদে পোড়া দাগ নিরাময় হয়,
- কাঁচা হলুদের সাথে এলোভেরা জেল ও মধু মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বকের প্রদাহ দূর হয়,
- কাঁচা হলুদের সাথে পরিমাণ মতো কাঁচা দুধ মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা ঠিক থাকে।
কাঁচা হলুদ দিয়ে রূপচর্চা
রূপচর্চে কাঁচা হলুদের ব্যবহার হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। সঠিক উপায়ে কাঁচা হলুদ দিয়ে রূপচর্চা করার কিছু নিয়ম রয়েছে। চলুন কাঁচা হলুদ দিয়ে রূপচর্চা করার নিয়ম জেনে নেই:
হলুদ ও লেবুর রসের মিশ্রণ
২ চা চামচ কাঁচা হলুদ বাটা এর সাথে হাফ চা চামচ লেবুর রস ত্বকে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখতে হবে। শুকিয়ে গেলে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
কাঁচা হলুদ ও কাঁচা দুধ
২ চা চামচ কাঁচা হলুদ বাটা এর সাথে সামান্য পরিমাণ কাঁচা দুধ মিশিয়ে ১০ মিনিট ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই মিশ্রনটি ত্বকের ক্ষতিকর উপাদানের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
কাঁচা হলুদ ও অলিভ অয়েল
২ চা চামচ কাঁচা হলুদের সাথে হাফ চা চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে ত্বকে ১৫ থেকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এই উপাদানটি ত্বকের তারুণ্যতা এবং সজীবতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
কাঁচা হলুদ ও নারিকেল তেল
পরিমাণ মতো কাঁচা হলুদ এর সাথে হাফ চা চামচ নারিকেল তেল মিশিয়ে ত্বকে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এটি ভালো ময়েশ্চারাইজার এর কাজ করে থাকে।
কাঁচা হলুদ, লেবুর রস ও মধু
২ চা চামচ কাঁচা হলুদ বাটার সাথে হাফ চা চামচ লেবুর রস ও হাফ চা চামচ মধু মিশিয়ে ত্বকে ১০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এতে করে ত্বকের নির্জীবতা দূর হবে।
কাঁচা হলুদ ও পানি
হাতের কাছে বিভিন্ন উপাদান না থাকলে শুধুমাত্র কাঁচা হলুদ বাটা ও পানি মুখে লাগিয়েও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে কাঁচা হলুদ ও পানি সর্বোচ্চ মুখে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখতে পারেন।
কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম
কাঁচা হলুদের বিভিন্ন উপকারিতা থাকলেও এটি ব্যবহারের নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। নিয়ম ব্যতীত ব্যবহার করলে কাঁচা হলুদ ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। চলুন কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম গুলো জেনে নিই:
শুধুমাত্র কাঁচা হলুদ নয়
শুধুমাত্র কাঁচা হলুদ মুখে ব্যবহার করা উচিত নয়। কাঁচা হলুদের সাথে বিভিন্ন উপকরণ যেমন: মধু, লেবুর রস, মুলতানি মাটি, দুধ, বেসন, অলিভ অয়েল, চন্দন গুড়া, বেসন ইত্যাদি হারবাল জাতীয় যেকোনো একটি উপাদান মিশিয়ে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করুন।
প্রতিদিন ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
কাঁচা হলুদ এর নানাবিধ উপকারিতা থাকলেও এটি প্রতিদিন ব্যবহার করা মোটেও উচিত নয়। সপ্তাহের সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন দিন কাঁচা হলুদ মুখে ব্যবহার করতে পারেন।
জনপ্রিয় ব্লগ: রূপচর্চায় দুধ ও কাঁচা হলুদের ব্যবহার
এলার্জি রোগীরা কাঁচা হলুদ থেকে দূরে থাকুন
যাদের স্কিনে এলার্জি সমস্যা রয়েছে তারা হঠাৎ করেই কাচা হলুদ মুখে ব্যবহার করতে যাবেন না। এক্ষেত্রে তারা শরীরের অন্যান্য অংশ যেমন: হাতে অথবা পায়ে সামান্য পরিমাণ কাঁচা হলুদ ব্যবহার করে দেখতে পারেন। সাইড ইফেক্ট না থাকলে মুখেও ব্যবহার করা যাবে।
কাঁচা হলুদ মুখে দিলে কি হয়
ইতোমধ্যে আমরা কাঁচা হলুদের বিভিন্ন উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করেছি। নিচে কাঁচা হলুদ মুখে দিলে কি হয় এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
- ব্রণ কমাতে সর্বাধিক কার্যকরী,
- ত্বকের প্রদাহ কমাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে,
- ত্বক কোমল ও উজ্জল রাখতে সাহায্য করে,
- দীর্ঘদিনের ডার্ক সার্কেল দূর করতে কাঁচা হলুদ সর্বাধিক উপযোগী,
- চর্ম রোগের চিকিৎসায় কাঁচা হলুদ ব্যবহৃত হয়,
- তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে,
- এন্টি এজিং এর কাজ করে থাকে।
কাঁচা হলুদের ফেসপ্যাক
সর্বাধিক উপকারী কাঁচা হলুদের ফেসপ্যাক সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-
১ চা চামচ কাঁচা হলুদ বাটার সাথে সমপরিমাণ নারিকেল তেল এবং ৩ ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। আলতো হাতে ত্বকে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত মুখে মিশ্রণটি দিয়ে ম্যাসেজ করতে হবে। পাঁচ মিনিট পর উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি ময়েশ্চারাইজার এবং টোনার এর কাজ করে থাকে।
আমাদের শেষ কথা
আমাদের আজকের পোস্টে আমরা কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম কাঁচা হলুদের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। যারা মুখের বিভিন্ন সমস্যায় কাঁচা হলুদ ব্যবহার করতে চাচ্ছেন আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।
সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলি
১)হলুদ আর দুধ মুখে দিলে কি হয়?
উঃ দুধের সাথে হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়।
২)হলুদ ও অ্যালোভেরা মুখে কিভাবে ব্যবহার করব?
উঃ পরিমাণ মতো হলুদ বাটা, এক চা চামচ অ্যালোভেরা জেল এর সাথে কিছুটা পরিমাণ মধু এবং গোলাপ জল মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে সব থেকে ভালো ফল পাওয়া যায়।
৩) কাঁচা হলুদ কিভাবে মুখে দেওয়ার নিয়ম?
উঃ কাঁচা হলুদ সরাসরি মুখে দেওয়া উচিত নয়। কাঁচা হলুদের সাথে বিভিন্ন হারবাল উপাদান মিশিয়ে মুখে ব্যবহার করলে সর্বাধিক উপকারিতা পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে মধু, টক দই, কাঁচা দুধ, লেবুর রস, মুলতানি মাটি ব্যবহার করতে পারেন।
৪) কাঁচা হলুদ দিয়ে কিভাবে ফর্সা হওয়া যায়?
উঃ কাঁচা হলুদের সাথে কাঁচা দুধ এবং সামান্য পরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বক কিছুদিনের মধ্যেই উজ্জ্বল হবে। তবে কাঁচা হলুদের যে কোন প্যাক ব্যবহারের পর উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুলে সর্বাধিক উপকারিতা পাওয়া যায়।