স্বাস্থ্যের জন্য দারুন উপকারী খেজুর প্রতিদিন খাওয়ার আগে অবশ্যই জেনে নিতে হবে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম গুলো কি কি? খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও বি, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সালফার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রোটিন, ফাইবার এবং প্রচুর পরিমাণে আয়রন। খেজুর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
তাছাড়া মস্তিষ্ক সচল রাখতে এবং হিমোগ্লোবিন বাড়াতে খেজুরের জুড়ি মেলা ভার। তাছাড়া প্রতিনিয়ত খেজুর খেলে খুশখুসে কাশি দূর হয় এবং চুলের গোড়া মজবুত থাকে। দীর্ঘদিন ধরে খেজুর সেবনের ফলে ক্যান্সার প্রতিরোধ হয়। তবে খেজুর খাওয়ার নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। নিচে আমরা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
নিয়মিত খেজুর শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। চলুন খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো জেনে নেয়া যাক:
খেজুর খাওয়ার উপকারিতা গুলো হল:
রেটিনা ভালো থাকে
খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে লিউটেন ও জিক্সাথিন। এই উপাদানগুলো রেটিনা ভালো রাখতে সাহায্য করে।
হৃদস্পন্দন ঠিক রাখে
খেজুরি রয়েছে নানা প্রকারের খনিজ উপাদান। যা হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং হৃদস্পন্দন ঠিক রাখে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
সারারাত পানিতে খেজুর ভিজিয়ে রেখে সকালে উঠে খেজুর ভেজানো পানি পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা চিরতরে দূর হয়।
রক্তস্বল্পতা দূর করে
যারা প্রতিনিয়ত রক্তস্বল্পতো সমস্যায় ভুগছেন তাদের ১১ ভাগ রক্তস্বল্পতা সমস্যা পূরণ করতে খেজুর খুবই উপকারী।
উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে
প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুর থেকে পাওয়া যায় ২০ থেকে ২৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম। প্রতিনিয়ত খেজুর খাওয়ার ফলে শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয় এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়।
ইমিউনিটি সিস্টেম উন্নত করে
খেজুরে বিদ্যমান খনিজ, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
খেজুরের পুষ্টিকর উপাদান মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা সঠিক মাত্রায় বজায় রাখে। এবং মস্তিষ্কে সঠিক পুষ্টির যোগান দেয়।
ওজন নিয়ন্ত্রণ করে
খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। যা দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরাট রাখে, এবং দেরি করে খিদা অনুভূত হয়। প্রাকৃতিকভাবে কম খাবার গ্রহণের ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে।
হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে
খেজুরে বিদ্যমান আয়রন শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি সরবরাহ করে এবং রক্তের উৎপাদন সঠিক মাত্রায় বজায় রাখে।
ত্বক প্রাণবন্ত রাখে
খেজুরে বিদ্যমান ভিটামিন বি ত্বক সতেজ রাখতে এবং ত্বক প্রাণবন্ত রাখতে সাহায্য করে।
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
খেজুরে বিদ্যমান ল্যাক্সেটিভ উপাদান জরায়ুর সংকোচনে ভূমিকা রাখে। নিয়মিত খেজুর খেলে গর্ভাবস্থায় প্রসব বেদনা অনেকাংশে কমে আসে। গর্ভবতী মায়েরা প্রতিদিন খেজুর গ্রহণ করলে গর্ভস্থ শিশুর শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, ভিটামিন, খনিজ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রন এর চাহিদা পূরণ হয়। গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার আরো কিছু উপকারিতা রয়েছে। নিচে গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা গুলো আলোচনা করা হলো:
- গর্ভবতী মায়ের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়,
- গর্ভবতী মায়ের এবং গর্ভস্থ শিশুর রক্তে পরিমিত পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ করে খেজুর,
- খেজুর গর্ভবতী মায়ের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে,
- খেজুর গর্ভবতী মায়ের ও গর্ভস্থ শিশুর হৃৎপিণ্ড, কিডনি, হার্ট সুস্থ রাখে,
- খেজুর গর্ভস্থ শিশুর দাঁত ও হাড় সুস্থ রাখে,
- গর্ভাবস্থায় প্রতিনিয়ত খেজুর খেলে ওসব পরবর্তী রক্তপাতের সম্ভাবনা কমে,
- গর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে গর্ভবতী মায়ের হাঁপানি ও কাশি অনেকাংশে কমে আসে।
সকালে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে খেজুরের যাবতীয় পুষ্টি ও উপাদান শরীর গ্রহণ করতে পারে। সকালে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা গুলো হল:
- যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে,
- সারাদিনের খুদার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে ফলে সারাদিনে খাবার কম পরিমাণে গ্রহণ করা যায়,
- ধীরে ধীরে ওজন বৃদ্ধি করে, ফলে যারা ওজনীনতাইয় ভুগছেন তাদের জন্য খুবই উপকারী,
- সব ধরনের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে,
- ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে,
- হেমোরয়েড রোগীদের জন্য প্রতিদিন সকালে খেজুর শরীরের জন্য খুবই উপযোগী
জনপ্রিয় ব্লগ: ওটস খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত
খেজুরে প্রচুর পরিমাণে উপকারিতা থাকলেও প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় খেজুর খাওয়া উচিত। একজন সুস্থ ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪ থেকে ৫ খেজুর খেতে পারেন। ৪-৫ খেজুরের মোট ওজন হয় ১০০ গ্রাম এর কাছাকাছি। একজন সুস্থ ব্যক্তি দৈনিক পাঁচটি খেজুর খেলে ২৭৭ কিলোক্যালরি শক্তি পেতে পারেন। তবে প্রতিদিন ৫ টির বেশি খেজুর গ্রহণে ধীরে ধীরে ওজন বৃদ্ধি পায় এবং ডায়াবেটিস এর মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত হয়। এবং একটি খেজুর থেকে ৬.৪-১১.৫ শতাংশ ডায়েটরি ফাইবার, ০.২-০.৫ শতাংশ চর্বি, ২.৩-৫.৬ শতাংশ প্রোটিন পাওয়া সম্ভব।
দুধ ও খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
দুধে বিদ্যমান প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং খেজুরের নানা উপকারিতা একত্রিত হয়ে শরীরের নানা ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করে। দুধ ও খেজুর এর উপকারিতা রয়েছে বহুবিধ। দুধ ও খেজুর খাওয়ার উপকারিতা গুলো হল:
- শরীরের দুর্বলতা সম্পূর্ণরূপে কাটিয়ে তোলে,
- দুধ ও খেজুর একসাথে গ্রহণ করলে ধীরে ধীরে ওজন বৃদ্ধি পায়,
- মুখের কুঁচকে যাওয়া চামড়া টানটান করে এবং বয়সের ছাপ দূর করে,
- দুধ এবং খেজুরের কম্বিনেশন জীবনশক্তি বাড়ায়,
- নারী ও পুরুষ উভয়ের প্রজনন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দুধ ও খেজুরের মিশ্রণ খুবই উপকারী,
- প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে দুধ এবং খেজুর খেলে ইমিউনিটি সিস্টেম বহুগুণ বৃদ্ধি পায়,
- ত্বক এবং চুল সর্বদা সুন্দর রাখার জন্য দুধ এবং খেজুর প্রতিদিন খেতে হবে।
শুকনো খেজুর খাওয়ার নিয়ম
শরীর সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন শুকনো খেজুর অথবা পানিতে ভেজানো খেজুর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। শুকনো খেজুর সারারাত অর্থাৎ ৮-১০ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেজুর ভেজানো পানি এবং খেজুর খান। রাতে ঘুমানোর আগে ২ টি শুকনো খেজুর চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে। সকালে ঘুম থেকে উঠে ২ টি শুকনো খেজুর চিবিয়ে খাওয়ার পর এক গ্লাস পানি পান করলেও যাবতীয় উপকারিতা পাওয়া যায়। তবে যারা শুধুমাত্র শুকনো খেজুর চিবিয়ে খেতে চান তারা সকালে খালি পেটে চিবিয়ে খাবেন।
খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
খেজুর শুকনো হোক বা ভেজানো, দুটো উপায়েই খেজুরের পুষ্টিগুণ সর্বোচ্চ পরিমাণে পাওয়া সম্ভব। চলুন খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা গুলো জেনে নেওয়া যাক:
- বীর্য ঘন করতে সাহায্য করে,
- পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব দূর করতে সাহায্য করে,
- নারী ও পুরুষের বার্ধক্য জনিত সমস্যা দূর করে,
- নারী ও পুরুষের উভয়ের রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে,
- রক্তস্বল্পতা এবং ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে,
- প্রতিনিয়ত খেজুর খেলে ক্যান্সারের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
উপসংহার
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। যারা প্রতিনিয়ত খেজুর খান অথবা খেজুর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে চাচ্ছেন আশা করি আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১)খেজুর খেলে কি ওজন বাড়ে?
উঃ প্রতিদিন চার থেকে পাঁচটি খেজুর খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিন্তু প্রয়োজনের অধিক খেজুর সেবনে অথবা দুধের সাথে খেজুর মিশিয়ে খেলে ওজন বৃদ্ধি পায়।
২)খালি পেটে খেজুর খেলে কি হয়?
উঃ খালি পেটে খেজুর খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, বদহজং দূর হয় এবং পেটের গ্যাসের সমস্যা অনেকাংশে কমে আসে।
৩)খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময় কখন?
উঃ খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময় হল সকালে খালি পেটে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে।
৪) রাতে ঘুমানোর আগে খেজুর খেলে কি হয়?
উঃ রাতে ঘুমানোর আগে খেজুর খেলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ডার্ক সারকেল কমে যায় এবং ক্লান্তি দূর হয়।
2 thoughts on “খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম”