স্থায়ীভাবে ত্বক ফর্সা করার জন্য জেনে নিন স্থায়ী ফর্সা হওয়ার উপায় গুলো কি কি? বাজারে এখন নানা ব্রান্ডের কৃত্রিম প্রোডাক্ট পাওয়া যায় যেগুলো দিয়ে ত্বক ফর্সা করা যায়। কিন্তু এগুলো সাময়িক সময়ের জন্য ত্বক ফর্সা করলেও পার্মানেন্ট ভাবে ত্বকের ক্ষতি করে থাকে।
তাই নারী এবং পুরুষ উভয়েরই স্থায়ীভাবে ফর্সা হওয়ার জন্য প্রাকৃতিক উপাদানের উপর নির্ভর করা উচিত। প্রাকৃতিক কিছু উপাদান যেমন: কাঁচা হলুদ, লেবুর রস, কাঁচা দুধ, টমেটো এবং ওটমিল, গোলাপ জল, কমলালেবুর রস ও কমলালেবুর খোসা, যষ্টিমধু, বেসন, আখরোট, অ্যালোভেরা জেল ইত্যাদি ব্যবহারে ত্বক স্থায়ীভাবে ফর্সা করা যায়।
উপরিউক্ত উপাদান গুলো দিয়ে বিভিন্ন ফেসপ্যাক তৈরি করে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন মুখে লাগালে ত্বক ধীরে ধীরে ফর্সা হতে থাকবে। আজকের এই পোস্টে আমরা স্থায়ীভাবে ফর্সা হওয়ার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন তাহলে শুরু করা যাক:
কালো থেকে ফর্সা হওয়ার উপায়
কালো থেকে ফর্সা হওয়ার জন্য নির্ভর করুন প্রাকৃতিক বিভিন্ন ঘরোয়া উপাদানের উপর। চলুন কালো থেকে ফর্সা হওয়ার উপায় গুলো জেনে নেওয়া যাক:
টমেটো এবং ওটমিল
টমেটো এবং ওটমিল ভালোভাবে ধুয়ে ব্লেন্ডারে পেস্ট করে ত্বকের উপর ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। ১৫ মিনিট পর স্ক্রাবের মতো কিছুটা সময় ম্যাসাজ করুন। এতে করে ত্বকের কালো ভাব ধীরে ধীরে কেটে যায়।
কাঁচা হলুদ এর ফেসপ্যাক
পরিমাণ মতো কাঁচা হলুদ বাটা অথবা হলুদের গুঁড়া এর সাথে কিছুটা পরিমাণ লেবুর রস যোগ করুন। মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহারে ত্বকের কালচে ভাব দূর হবে।
কমলালেবু এর ব্যবহার
একটি কমলালেবুর খোসা বাটা এর সাথে অর্ধেক পরিবর্তন কমলালেবুর রস যোগ করুন। এই পেস্ট এর সাথে সামান্য পরিমাণ লেবুর রস এবং হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে সারারাত মুখে লাগিয়ে রাখুন। সকালে ধুয়ে ফেললে পরিবর্তন বুঝতে পারবেন।
যষ্টিমধুর ফেসপ্যাক
যষ্টিমধু থেকে রস বের করে নিয়ে কিছুটা তুলোর সাহায্যে রাতে ঘুমানোর আগে মুখে লাগিয়ে রাখুন। এতে করে ত্বকের ডার্কনেস এবং সূর্যের তাপ থেকে তৈরি হওয়া কালচে ভাব দূর হবে।
বেসন এর ফেসপ্যাক
৫ চা চামচ বেসনের সাথে এক চা চামচ হলুদ গুঁড়ো ভালোভাবে মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করুন। ২০ মিনিট মুখে ভালো করে লাগিয়ে রেখে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেললে ত্বক ফর্সা হবে।
আখরোট দই, ও তিসির ফেসপ্যাক
পরিমাণ মতো পানিতে ভেজানো বাদাম এবং আখরোট একসাথে ব্লেন্ড করে নিয়ে তার মধ্যে কিছুটা পরিমাণ দই এবং তিসি দিয়ে দিন। শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত রেখে দিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এতে করে ত্বক ফর্সা হবে।
অ্যালোভেরা জেল এর ব্যবহার
অ্যালোভেরা জেল থেকে তৈরি লোশন ও ক্রিম প্রতিদিন ঘুমানোর আগে মুখে এপ্লাই করে ঘুমাতে হবে। পরের দিন সকালে মুখ ধুয়ে ফেললে পরিবর্তনটা নিজের চোখেই দেখতে পাবেন।
চালের গুড়োর ফেস প্যাক
কাঁচা চাল ব্লেন্ড করে তার সাথে পরিমাণ মতো কাঁচা দুধ মিশিয়ে একটি ঘন ফেসপ্যাক তৈরি করুন। ৩০ মিনিট মুখে রেখে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে করে ত্বক পরিপূর্ণভাবে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই ,অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাবে।
চন্দন গুড়োর ফেস প্যাক
চন্দন গুড়ো এর সাথে কিছুটা পরিমাণ কাঁচা দুধ একসাথে মিশিয়ে মুখে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেললে আশা করি আপনার মুখে কিছুদিনের মধ্যে হাসি ফুটবে।
টমেটো ও লেবুর রস
টমেটো পিউরি এর সাথে কয়েক ফোঁটা গোলাপ জল মিশিয়ে প্রতিদিন একবার করে ত্বকে লাগাতে হবে। মিশ্রণটি চাইলে গলায় এবং ঘাড়ে লাগানো যেতে পারে। সংবেদনশীল ত্বকের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করবেন না।
মুখ ফর্সা হওয়ার উপায়
মুখ ফর্সা করার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে আমরা ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি। চলুন আরো বিস্তারিতভাবে মুখ ফর্সা করার উপায় সমূহ জেনে নেওয়া যাক:
শসার রস ও মধু
অর্ধেক পরিমান শসা থেকে রস বের করে তার সাথে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে মুখে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা এই ফেসপ্যাকে লেবু ব্যবহার করতে পারেন।
কলা ব্যবহার করুন
ত্বকে নিয়মিত পাকা কলা চটকে ৫ মিনিট করে লাগিয়ে রেখে কিছুটা সময় ম্যাসাজ করুন। যেকোনো ত্বকেই এটি নিয়মিত ব্যবহার করা যায়। এটি ব্যবহারে ত্বক নিজের উজ্জ্বলতা মেলে ধরে।
আলুর রস এর ব্যবহার
আলু একটি ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিয়ে তার থেকে রস বের করে নিন। দিনে একবার থেকে দুই বার আলুর রস ব্যবহারে ত্বকের কালচে ভাব নিমিষেই দূর হয় এবং ত্বক ফর্সা হয়।
পেঁপে ও ডিমের ফেসপ্যাক
৩ চামচ পেপের রস, ২ চামচ দই, ৪ চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এর সাথে সামান্য পরিমাণ অলিভ অয়েল এবং একটি ডিমের সাদা অংশ যোগ করুন। সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে ফ্রিজে দুই ঘন্টার জন্য রেস্টে রাখুন। পরবর্তীতে ভালোভাবে মিশিয়ে মুখে ২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন।
দুধ, লেবুর রস ও হলুদের গুড়ার ফেসপ্যাক
৩ চামচ দুধ, ২ চামচ লেবুর রস, ১ চামচ মধু ও পরিমাণমতো হলুদ গুঁড়া নিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করুন। চাইলে এর সাথে কাঁচা দুধ মেশাতে পারেন। এই ফেসপ্যাক টি মুখে ব্যবহারের পর মুখ উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুলে সবথেকে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
বিট পালং এর ব্যবহার
৪ চা চামচ বেসন এর সাথে ২ চা চামচ হলুদের গুঁড়ো মধ্যে বিট পালং ব্লেন্ড করে তার রস মিশিয়ে নিন। মোটামুটি ত্বকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এতে করে ত্বক স্থায়ীভাবে ফর্সা হবে।
আরো পড়ুন: কোরিয়ানদের মতো ফর্সা হওয়ার উপায়
স্থায়ীভাবে ত্বক ফর্সা করার উপায়
ত্বকের বিভিন্ন ফেসপ্যাক ব্যবহার করলে ত্বক চটজলদি পরিষ্কার হয় এবং উজ্জ্বলতা মেলে ধরে। কিন্তু স্থায়ীভাবে ত্বক ফর্সা করার আরো বিভিন্ন উপায় রয়েছে। স্থায়ীভাবে ত্বক ফর্সা করার উপায় গুলো হলো:
- পরিমিত পরিমাণে সুষম খাবার খেতে হবে,
- ডায়েট চার্ট এ প্রতিদিন ডিম, দুধ, সবুজ শাকসবজি, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ মাছ, পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন রাখুন,
- প্রতিদিন কমপক্ষে সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন,
- প্রতিদিন কমপক্ষে তিন থেকে চার লিটার পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন,
- নিয়মিত ড্রাইভিং, জগিং, সাইক্লিং, সোয়ামিং এর মত ব্যায়াম করলে ত্বক দ্রুত ফর্সা হয়।
আমাদের শেষ কথা
সবাই নিজের কল্পনাতে স্থায়ীভাবে ফর্সা হতে চায়। কিন্তু স্থায়ীভাবে ফর্সা হওয়ার উপায় গুলো সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। যারা প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে স্থায়ীভাবে ফর্সা হতে চাচ্ছেন আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে তারা উপকৃত হয়েছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
১)কি কি খাবার খেলে ত্বক ফর্সা হয়?
উঃ গ্রিন টি, গাজর, বাদাম, কলা, টমেটো এবং ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ মাছ খেলে ত্বক ফর্সা হয়। এছাড়া খাবার তালিকা পর্যাপ্ত পরিমাণে শাক সবজি রাখুন।
২)হলুদ খেলে কি গায়ের রং ফর্সা হয়?
উঃ হলুদের বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গায়ের রং ফর্সা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হলুদ এর সাথে কাঁচা দুধ মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ত্বক কয়েকদিনের মধ্যেই ফর্সা হয়।।
৩)কি দিলে তাড়াতাড়ি ফর্সা হওয়া যায়?
উঃ গ্রিন টি, গাজর, বাদাম, কলা, টমেটো এবং ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ মাছ খেলে দ্রুত ফর্সা হওয়া যায়।
2 thoughts on “ঘরোয়া পদ্ধতিতে স্থায়ী ফর্সা হওয়ার উপায়”