চন্দন ব্যবহার করে নিয়মিত রূপচর্চা করতে চাইলে অবশ্যই জেনে নিন চন্দন দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় গুলো কি কি? শুধুমাত্র চন্দন ব্যবহার করে রূপচর্চা করলে কিছু উপকারিতা পেলেও ফর্সা হওয়া যায় না। চন্দনের সাথে কিছু প্রাকৃতিক উপাদান যেমন: কাঁচা দুধ, কমলার খোসা, মুলতানি মাটি, টমেটোর রস, নারকেল তেল অথবা আমন্ড অয়েল, অ্যালোভেরা জেল ও বেসন, নিমের গুঁড়ো ও হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে ব্যবহার করলে কয়েক দিনের মধ্যে ত্বকের রং ফর্সা হয়।
এছাড়া চন্দন গুঁড়োর সাথে গোলাপজল অথবা গ্লিসারিন মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বক নরম ও মসৃণ হয়। চন্দনের গুড়োর সাথে কাঁচা দুধ মিশিয়ে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন মুখে লাগালে সানবার্ন দূর হয়। হার্বস আয়ুর্বেদিক এর বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, চন্দন গুড়ো ব্যবহারের আগে কিছুটা সময় ভিজিয়ে রাখতে হবে। চন্দন গুড়ো থেকে ত্বকের স্থায়ী সমাধান পাওয়ার জন্য দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার করতে হবে। চন্দন দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
চন্দন
চন্দন একটি চিরহরিৎ বৃক্ষ যার উচ্চতা ১৫-১৮ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। আংশিক মূল পরজীবী উদ্ভিদ হিসেবে এটি ব্যাপক সমাদৃত। এই গাছের ছাল সাধারণত গাঢ় খয়েরি রঙের হয়ে থাকে, পূর্ণবয়স্ক সব গাছগুলোর বাকলে লম্বালম্বি ফাটল পরিলক্ষিত হয়। সুগন্ধিযুক্ত বাকল সমৃদ্ধ এই গাছ ৪০-৬০ বছর বয়সে পূর্ববয়স্ক হয়ে থাকে। ঔষধি গুন সমৃদ্ধ এই গাছের অসার অংশ সাদা রঙের হয় এবং এটি পুরোপুরি গন্ধহীন হয়ে থাকে।
চন্দন গাছ সাধারণত ভারতের বিন্ধ্যপর্বতের দক্ষিণে কর্ণাটক ও তামিলনাড়ু অঞ্চলে সব থেকে ভালো জন্মে। বাংলাদেশের কয়েকটি অঞ্চল যেমন: পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট এর কিছু জায়গায় চন্দন গাছ জন্মাতে দেখা যায়। হিন্দু ধর্মের মহাভারতে (খ্রিষ্টপূর্ব-২০০) শতাব্দী থেকে চন্দন গাছের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। সাধারণত পাহাড়ি এলাকায় এসব গাছ ভালো জন্মায় বলে পাহাড়ি অঞ্চল ছাড়া এসব গাছ দেখা যায় না।
চন্দন দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
চন্দনগোড়ার সাথে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান মিশিয়ে ত্বকে কিছুদিন লাগালে ত্বক ফর্সা হয়। চলুন জেনে আসি চন্দন দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় গুলো কি কি?
চন্দন গুড়ো, কমলার খোসা, গোলাপজল
১ চা চামচ চন্দনের গুড়োর সাথে সমপরিমাণ কমলার খোসা গুঁড়ো এবং এক চা চামচ গোলাপ জল ভালোভাবে মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করুন। এই ফেসপ্যাকটি সপ্তাহে অন্তত দুই দিন ত্বকে ২০
মিনিট লাগিয়ে রাখলে ত্বক দুধের মত সাদা হবে।
চন্দন গুড়ো, মুলতানি মাটি ও লেবুর রস
১/২ চা চামচ চন্দন গুঁড়ো, সমপরিমাণ মুলতানি মাটি এবং হাফ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন। দূষণের ফলে মুখে জমে থাকা ধুলাবালি দূর করতে ফেসপ্যাকটি কার্যকরী।
চন্দন গুড়ো ও অলিভ অয়েল
১ চা চামচ চন্দন গুঁড়ো এর সাথে হাফ চা চামচ অলিভ অয়েল ও কয়েক ফোটা গোলাপজল মিশিয়ে মুখে, গলায় ও ঘাড়ে 20 মিনিট লাগিয়ে রাখুন। ত্বকের ড্রাইনেস দূর করতে এটি কার্যকরী।
চন্দন গুড়ো ও অ্যালোভেরা জেল
পরিমাণ মতো চন্দনগুরো এর সাথে ১ টেবিল চামচ এলোভেরা জেল মিশিয়ে মুখে এবং গলায় লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। রোদে পোড়া ভাব দূর করার পাশাপাশি ব্রণের প্রকোপ কমায় এই ফেসপ্যাক।
চন্দন গুড়ো, হলুদ গুঁড়ো ও কাঁচা দুধ
পরিমাণ মতো কাঁচা দুধ নিয়ে তার সাথে চন্দন গুড়ো এবং হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে একটি ঘন ফেসপ্যাক তৈরি করুন। শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেললে ত্বক উজ্জ্বল হয়।
চন্দন গুড়ো, বেসন ও গোলাপজল
সবগুলো উপকরণ পরিমাণ মতো নিয়ে ঘন ফেসপ্যাক তৈরি করে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত রেখে দিন। যাদের কোন প্যাক লাগালে ত্বক ড্রাই হয়ে যায় তারা এই মিশ্রণে কাঁচা দুধ ব্যবহার করুন।
চন্দনগুড়ো ও গোলাপজল
এই দুটি উপাদান দিয়ে ঝটপট ফেসপ্যাক বানিয়ে প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন। মুখ পরিষ্কার করার জন্য প্রতিদিন এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করলে ত্বকে কোন ময়লা জমতে পারে না।
চন্দন গুঁড়ো, নিমের গুঁড়ো ও কাঁচা দুধ
১ চা চামচ চন্দন গুঁড়ো এর সাথে সমপরিমাণ নিমের গুড়ো এবং পরিমাণ মতো কাঁচা দুধ যোগ করুন। ব্রণের সমস্যা দূর করতে এটি অধিক কার্যকরী।
চন্দন মুখে দিলে কি হয়
চন্দন মুখে দিলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা কয়েকদিনেই দূর হয়। চলুন এক নজরে দেখে আসি চন্দন মুখে দিলে কি হয়!
- চন্দনে বিদ্যমান এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করে,
- নিয়মিত চন্দন গুঁড়ো মুখে দিলে পার্লারে যাওয়ার দরকার পড়ে না,
- রোদে পোড়া এবং ব্রণের দাগ দূর করতে চন্দনগুড়ো অধিক কার্যকরী,
- চন্দন গুড়োর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগালে তৈলাক্ত ভাব দূর হয়,
- চন্দন গুড়ো এর সাথে পাকা পেঁপে মিশিয়ে ত্বকে দুই সপ্তাহ ব্যবহার করলে ত্বকের মৃত কোষ দূর হয়,
- ত্বকের ট্যান দূর করার জন্য চন্দনগুড়ো এর সাথে হলুদ গুঁড়ো ব্যবহার করুন,
- নিয়মিত ত্বকে চন্দন বাটা লাগালে ত্বকের সজীবতা এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়,
- সঠিক পদ্ধতিতে চন্দন লাগালে ব্ল্যাকহেডস দূর হয়,
- চন্দনগুলো ত্বকের ক্লান্তি ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
চন্দন পাউডার এর দাম কত
বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চন্দন পাউডার কিনতে পাওয়া যায়, এর দামও বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। চন্দন পাউডার এর দাম কত তার নিচে টেবিলের সাহায্যে দেখানো হলো:
ব্রান্ডের নাম | গ্রাম | মূল্য |
স্যান্ডাল উড চন্দন গুড়া | ১০ গ্রাম | ১৫০ টাকা। |
রংধনু সাদা চন্দন গুঁড়া | ১০০ গ্রাম | ৪৯০ টাকা। |
স্যান্ডাল উড চন্দন গুড়া | ৪০ গ্রাম | ৩৮০ টাকা। |
লাল চন্দন গুড়া | ১০০ গ্রাম | ৩০০ টাকা। |
তৃণমূল হারবাল চন্দন গুড়া | ৫০ গ্রাম | ৮৩৭ টাকা। |
সাধারণত আমদানি, রপ্তানি এবং পরিবহন খরচ এর উপর ভিত্তি করে চন্দন গুড়ার দাম উঠানামা করে। তবে অথেনটিক চন্দন গুড়ো এর দাম তুলনামূলক কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। তাই বাজার থেকে চন্দনগুলো ক্রয় করার আগে অবশ্যই আসল নাকি নকল তা যাচাই-বাছাই করে নিন।
চন্দন মুখে লাগানোর নিয়ম
ত্বকে চন্দন ব্যবহার করার আগে চলুন জেনে আসি চন্দন মুখে লাগানোর নিয়ম গুলো কি কি?
- চন্দন গুরুর সাথে যে কোন প্রাকৃতিক উপাদান একসাথে মিশিয়ে মুখে ব্যবহার করুন,
- ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য রাতে ঘুমানোর আগে চন্দনগুলো মুখে লাগিয়ে ঘুমিয়ে যান। সকালে উঠে মুখ ধুয়ে ফেলুন,
- চন্দন পাউডার সপ্তাহে তিন দিন এর বেশি ত্বকে লাগানো উচিত নয়,
- চন্দন গুড়ো এর সাথে অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে কম করে। এতে করে ত্বক চন্দনের পরিপূর্ণ পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে পারবে।
আমাদের শেষ কথা
চন্দন দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় সম্পর্কে যারা বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছিলেন আজকের আর্টিকেলটি পড়ে তারা উপকৃত হয়েছেন বলে আশা করছি। চন্দনগুড়া ত্বকের নানা উপকার করলেও দিনে অন্তত একবারের বেশি চন্দন গুড়া মুখে ব্যবহার করতে যাবেন না। অতিরিক্ত ব্যবহারে চন্দন গুড়া ত্বকের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১) লাল চন্দন পাউডার প্রতিদিন মুখে লাগানো যাবে কি?
উঃ লাল চন্দনপুরা মুখে কম বেশি লাগানো গেলেও রূপচর্চায় সাদা চন্দনের গুঁড়ো বেশি ব্যবহৃত হয়।
২)চন্দন পাউডার খেলে কি ত্বক শুষ্ক হয়?
উঃ নিয়মিত চন্দন পাউডার খেলে ত্বকের যাবতীয় সমস্যা কয়েকদিনের মধ্যে ভুল হলেও প্রয়োজনের অধিক চন্দন গুলো সেবনে ত্বক শুষ্ক হয়।
৩)চন্দন পাউডার কি ব্রণের জন্য ভালো?
উঃ চন্দন পাউডার এর সাথে মিমের বুড়ো ও হলুদ গুঁড়ো একসাথে মিশিয়ে মুখে লাগালে ব্রণ এবং ব্রনের দাগ দূর হয়।