পুষ্টিগুণে ভরপুর চিয়া সিড ব্যবহারের আগে চিয়া সিড সম্পর্কে সকল তথ্য এবং চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্ক অবশ্যই জেনে নিতে হবে। চিয়া সিডের গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর উপাদান গুলো হল: ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ক্যাফিক এসিড, প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ। হৃদরোগ এবং হাড়ের বিভিন্ন চিকিৎসায় চিয়া সিড ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
এছাড়া ডায়াবেটিস এর সমস্যা মোকাবেলায় এবং নিদ্রাহীনতার চিকিৎসায় চিয়া সিড ব্যবহৃত হয়। তবে চিয়া সিড খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। নিয়ম ব্যতীত অধিক সেবনে আপনি প্রোটেস্ট ক্যান্সার, পেটের বিভিন্ন সমস্যা, স্বল্প রক্তচাপ, অতিরিক্ত ওজন কমে যাওয়ার মত সমস্যায় ভুগতে পারেন। আজকের এই পোস্টে আমরা চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা- চিয়া সিড সম্পর্কে সকল তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। চলুন তাহলে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক:
চিয়া সিড কি
সাধারণত মরুভূমিতে জন্মানো সালভিয়া হিসপানিকা (Salvia Hispanica) উদ্ভিদের বীজকেই চিয়া সিড বলা হয়ে থাকে। এই উদ্ভিদের আদি জন্মস্থান সেন্ট্রাল আমেরিকায়। অ্যাজটেক জাতির খাদ্য তালিকায় সেন্ট্রাল আমেরিকার আদিবাসীরা চিয়া সিড ব্যবহার করে থাকতো।
প্রাচীন মায়া এবং অ্যাজটেক সম্প্রদায়ের আদিবাসীদের কাছে এই বীজটি সোনার মত মূল্যবান ছিল। এই পুষ্টিকর বীজটি তে রয়েছে দুধের চেয়েও ৫ গুণ বেশি শক্তি। বীজটির আকার খুব ছোট হয়ে থাকে। এবং চিয়া সিড সাধারণত সাদা, কালো ও বাদামি রংয়ের হয়ে থাকে। বর্তমানে আমেরিকা এবং মেক্সিকোতে চিয়া সিড জন্মাতে দেখা যায়।
চিয়া সিড এর অন্য নাম
চিয়া সিডের ইংরেজি নাম হল Salvia Hispanica. এছাড়া বাংলায় চিয়া সীডকে তোকমা হিসেবেও নামকরণ করা হয়ে থাকে। আরবিতে চেয়ার সীডকে “বাযুর শিয়া” বলে অভিহিত করা হয়। এবং চিয়া সীডের আরবী বানান হল بذورالشيا।
চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা
চিকিৎসকরা চিয়া সিড কে “সুপার ফুড” হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। কারণ এই বীজটি তে রয়েছে দুধ এবং ডিমের চেয়েও বেশি প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম। চলুন এক নজরে চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো দেখে নেওয়া যাক:
হৃদ রোগের ঝুঁকি কমায়
নিয়মিত চিয়া সিড পানিতে ভিজিয়ে রেখে খালি পেটে সকালে সেবন করলে হৃদরোগে যদি অনেক অংশে কমে আসে। কারণ এই বীজটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩, যা হৃদ রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমায়
চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল। তাই প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এটি সেবন করলে শরীরে বাড়তি খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা ধীরে ধীরে কমে আসে।
প্রোটিনের ভালো উৎস
চিয়া সিডে ডিমের চেয়েও তিনগুণ বেশি প্রোটিন পাওয়া সম্ভব। তাই যারা প্রোটিনের অভাবজনিত সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন এক চা চামচ চিয়া সিড পানিতে ভিজিয়ে খাবেন।
হাড়ের সমস্যা মোকাবেলা করে
চিয়া সিডে দুধের চেয়েও পাঁচ গুন বেশি ক্যালসিয়াম থাকায় হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হাড়ের ক্ষয়জনিত সমস্যা, হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা ইত্যাদি সমস্যায় প্রতিদিন চিয়া সিড সেবন করুন।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ২ চা চামচ চিয়া সিড পানিতে ভিজিয়ে খেলে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ করে
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস পানিতে ২ চা চামচ চিয়া সিড ভিজিয়ে খেলে দ্রুত ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ত্বক, চুল ও নখ সুন্দর রাখে
চিয়া সিড শরীর থেকে অতিরিক্ত বর্জ্য বের করে দেয়। যার ফলে ত্বক, চুল ও নখ সুন্দর থাকে এবং মজবুত হয়।
ভালো ঘুম নিশ্চিত করে
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে যারা চিয়া সিড সেবন করেন তাদের ভালো ঘুম নিশ্চিত হয়।
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
চিয়া সিড এর উপকারিতা সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যে আলোচনা করেছি। চলুন চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক:
- চিয়া সিড খাওয়ার আগে পানিতে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে,
- সালাদ, কাস্টার্ড এর উপরে ছিটিয়ে চিয়া সিট সেবন করলে ভালো স্বাদ পাবেন। কারণ এই বীজের নিজস্ব কোন স্বাদ নেই,
- রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস চিয়া সিড ভেজানো পানি সেবন করুন,
- সকালে খালি পেটে চিয়া সিড ভেজানো পানি পান করলে সর্বাধিক উপকারিতা পাওয়া যায়,
- টকদই রান্না করা সবজির সাথে চিয়া সিড মিশিয়ে খেতে পারেন,
- দ্রুত ওজন কমানোর জন্য ডায়েট প্ল্যানে অবশ্যই খালি পেটে চিয়া সিড গ্রহণ করুন,
জনপ্রিয় ব্লগ: রূপচর্চায় দুধ ও কাঁচা হলুদের ব্যবহার
চিয়া সিডের উপকারিতা
চিয়া সীডের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যে আলোচনা করেছি। চলুন চিয়া সিডের উপকারিতা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক:
- প্রতিদিন খালি পেটে চিয়া সিড ভেজানো পানি সেবন করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা চিরতরে দূর হয়,
- দীর্ঘক্ষণ শরীরে স্ট্যামিনা নাম ধরে রাখতে সাহায্য করে,
- রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে চমৎকার কাজ করে থাকে,
- শরীর ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি পাকস্থলীর সব ধরনের সমস্যা দূর করতে প্রতিদিন চিয়া সিড খাওয়া জরুরী,
- চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ উপাদান, ভিটামিস ও ফাইবার। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা করে তুলতে সাহায্য করে,
- বডি ডিটক্সিফিকেশনে চিয়া সিড এর ভূমিকা সর্বাধিক,
- কোষ্ঠকাঠিন্য পুরোপুরি নিরাময় করতে সাহায্য করে,
- মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে,
- পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করে।
চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা
চিয়া সিড এর বিভিন্ন উপকারিতা থাকলেও অপর্যাপ্ত সেবনে শরীর নানা ক্ষতির সম্মুখীন হয়। চলুন এক নজরে দেখে নেই চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা গুলো কি কি?
- প্রয়োজনের তুলনায় অধিক চিয়া সিড সেবনে অতিরিক্ত পরিমাণে স্বাস্থ্য কমে যেতে পারে,
- অধিক চিয়া সিড সেবনে রক্তে শর্করা কমে যায়,
- অতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে,
- অতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে ডায়রিয়া জনিত সমস্যা হতে পারে,
- প্রোটেস্ট ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সারকে বাড়িয়ে তুলতে চিয়া সিড কাজ করে থাকে। তাই মহিলাদের এটি সেবনের আগে সতর্ক হতে হবে,
- অধিক পরিমাণে চিয়া সিড খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তৈরি হয়,
- শুকনো চিয়া সিড খাওয়ার সময় শ্বাসনালীতে আটকে দম বন্ধ হওয়ার সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই এটি অবশ্যই ভিজিয়ে খেতে হবে,
- পরিমাণের তুলনায় বেশি চিয়া সিড খেলে ফুসকুড়ি, অ্যালার্জি, চুলকানি দেখা দিতে পারে,
- ডাইভার্টিকুলাইটিস বা ইরিটেবল বা অয়েল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS) রোগীদের জন্য চিয়া সিড মারাত্মক ক্ষতিকর,
- স্তন্যদানকারী মায়েরা চিয়া সিড খেলে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে পারেন। তাই যারা সন্তানকে দুধ খাওয়াচ্ছেন অথবা গর্ভবতী তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেবন করুন।
আমাদের শেষ কথা
প্রিয় পাঠক বৃন্দ, আমাদের আজকের পোস্টে আমরা চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা- চিয়া সিড সম্পর্কে সকল তথ্য নিয়ে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। যারা চিয়া সিড খাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন হীনমন্যতায় ভুগছেন আশা করি আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।
সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নগুলি
১) চিয়া সিড কত সময় ভিজিয়ে রাখতে হয়?
উঃ চিয়া সিড উষ্ণ গরম পানিতে কমপক্ষে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে সেবন করতে হবে।
২) চিয়া সিড খেলে কি পেটে গ্যাস হয়?
উঃ চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক চিয়া সিড সেবা করলে পেটে ফোলা ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা এবং পেটে ব্যথার মত সমস্যা তৈরি হতে পারে।
৩) চিয়া সিড কি দুধের সাথে খাওয়া যায়?
উঃ উষ্ণ গরম দুধের সাথে পরিমাণ মতো চিয়া সিড মিশিয়ে খেলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা থেকে পরিত্রা পাওয়া যায়।
1 thought on “চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা- চিয়া সিড সম্পর্কে সকল তথ্য”