লম্বা ও ঘন চুলের স্বপ্ন সত্যি করার জন্য চুলের যত্নে ডিম ও টক দই ব্যবহার করুন। ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এবং মিনারেল। এবং টক দইয়ে বিদ্যমান উপকারী উপাদান চুলের স্ক্যাল্পে খুশকি কমিয়ে দিতে সাহায্য করে, চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে, চুলের রুক্ষতা এবং শুষ্কতা কমায়, চুলের ফলিকলকে মজবুত করে, স্ক্যাল্পের পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখার পাশাপাশি চুলের বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
টক দই এর সাথে ডিম একসাথে চুলে ব্যবহার করলে চুলের প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হয়। টক দই এবং ডিম এর সাথে আরও কিছু প্রাকৃতিক উপাদান যোগ করে হেয়ার প্যাক তৈরি করলে চুল তার যাবতীয় পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে পারে। যারা চুলের যত্নে ডিম ও টক দই দিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি করে নিয়মিত ব্যবহার করতে চাচ্ছেন তারা আমাদের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবেন বলে আশা করছি।
চুলের যত্নে ডিম ও টক দই
চুলের যত্নে ডিম ও টক দই নানাভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। চুল সিল্কি ও লম্বা করার জন্য সব থেকে ভালো হেয়ার প্যাক হলো:
টক দই, ডিম ও আমন্ড অয়েল
২ টেবিল চামচ টক দই এর সাথে একটি ডিম এবং এক চা চামচ আমন্ড ওয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি করে সম্পূর্ণ চুলে ২০ মিনিট লাগিয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
ডিম, টক দই ও আমলকির গুঁড়ো
২ টেবিল চামচ টক দই একটি ডিম এবং এক টেবিল চামচ আমলকির গুঁড়ো ভালোভাবে মিশিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি করুন। এই প্যাকটি চুলে ৪০ মিনিট লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
ডিম, টক দই ও অ্যাভোকাডো
একটি পাত্র পরিমাণ মতো এভোকাডো ব্লেন্ড করে নিয়ে তার সাথে একটি ডিমের সাদা অংশ এবং পরিমাণ মতো টক দই মিশিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি করুন। এই প্যাকটি চুলে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।
ডিম, টক দই ও মধু
একটি ডিমের সাথে পরিমাণ মতো টক দই এবং এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি করে চুলে ৪০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এই প্যাকটি নতুন চুল গজাতে এবং চুলের ভিটামিন বি কম্পলেক্স এর চাহিদা পূরণ করে।
ডিম, অলিভ অয়েল ও টক দই
একটি ডিমের সাদা অংশের সাথে এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ও এক টেবিল চামচ টক দই ভালোভাবে মিশিয়ে মাথায় ৩০ মিনিট লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলের আগা ফাটা বন্ধ করে এবং চুলের শুষ্কতা দূর করে।
চুলে টক দই এর উপকারিতা
সপ্তাহে অন্তত দুইবার চুলে টক দই ব্যবহার করলে চুল প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল এবং মসৃণ থাকবে। চলুন জেনে নেই চুলে টক দই এর উপকারিতা গুলো কি কি?
- টক দইয়ে বিদ্যমান ল্যাকটিক অ্যাসিড চুলের শুষ্কতা দূর করতে সাহায্য করে,
- অতিরিক্ত গরমের ফলে সৃষ্ট মাথার চুলকুনি, জ্বালাভাব দূর করে টক দই,
- চুলের নিয়ম করে টক দই লাগালে খুশকি দূর হয়,
- সপ্তাহে অন্তত দুইদিন টক দই ব্যবহারে চুল পড়া অনেকাংশে কমে আসে,
- চুল প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল এবং ঝলমলে করে,
- টক দই চুলের ভিটামিন বি5 আর ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ করে চুলের রুক্ষতা দূর করে,
- টক দই এর সাথে মধু মিশিয়ে তুলে লাগালে কন্ডিশনার এর কাজ করে,
- টক দই এর সাথে এলোভেরা জেল মিশিয়ে চুলে লাগালে চুলের আর্দ্রতা বজায় থাকে।
চুলের যত্ন ও চুল লম্বা করার উপায়: জেনে নিন
চুলের যত্নে টক দই এর ব্যবহার
টক দই থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি পাওয়ার জন্য চুলের জন্য টক দই এর ব্যবহার সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা থাকতে হবে। চলুন জেনে আসি চুলের যত্নে টক দই কিভাবে ব্যবহার করতে হয়?
টক দই ও ডিম
তিন টেবিল চামচ টক দই এর সাথে একটি ডিমের সাদা এবং হলুদ অংশ ভালোভাবে নেড়েচেড়ে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত খুব ভালোভাবে লাগাতে হবে। মিশ্রণটি চুলে অন্তত ৩০ মিনিট লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
কলা, টক দই, ডিম ও মধু
১ টেবিল চামচ দই ও ৩ টেবিল চামচ মধু, একটি গোটা ডিম এর সাথে মাঝারি সাইজের একটি পাকা কলা চটকে হেয়ার প্যাক তৈরি করুন। চাইলে এর সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস যোগ করতে পারেন। ৩০ মিনিট লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু করার পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।
টক দই ও কারি পাতার মিশ্রণ
এক কাপ টক দই এর সাথে পরিমাণ মতো কারি পাতার গুঁড়ো মিশিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি করুন। এই প্যাকটি ৩০ মিনিটের জন্য সপ্তাহে অন্তত একবার ব্যবহার করুন। চুল ধোয়ার সময় একটি ভেষজ শ্যাম্পু ব্যবহার করা সব থেকে ভালো।
ডিমের হেয়ার প্যাক
টক দই এর মত ডিম ব্যবহারেও চুল হয় উজ্জ্বল এবং ঝলমলে। চুল সুন্দর রাখতে ডিমের হেয়ার প্যাক সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:
ডিম, মধু ও কাঁচা দুধ, অলিভ অয়েল
একটি ডিম , তিন চা চমচ মধু, তিন চা চমচ দুধ, পাঁচ চা চামচ অলিভঅয়েল এর সাথে কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এই হেয়ার প্যাকটি চুলের ড্যামেজ ভাব কমাতে সাহায্য করে।
ডিম ও অ্যালোভেরা জেল
২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল এর সাথে একটি ডিম ভালো করে মিশিয়ে চুলে অন্তত ৪০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এই হেয়ার প্যাক এ বিদ্যমান অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিসেপটিক উপাদান চুলের স্ক্যাল্প ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ডিম, হেনা ও মেথির গুড়া
এক কাপ হেনা পাউডার এর সাথে এক টেবিল চামচ মেথির গুঁড়া এবং একটি ডিম ভালো করে মিশিয়ে চুলের স্ক্যাল্পে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। দেড় ঘন্টা লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
টক দই এর হেয়ার প্যাক
টক দই এর হেয়ার প্যাক তৈরির জন্য ব্যবহার করতে পারেন এলোভেরা জেল, মেথির গুড়া, কারি পাতার গুড়া, মধু, লেবুর রস, কাঁচা দুধ, ডিমের সাদা এবং হলুদ অংশ, মেহেদি পাতা বাটা, পেঁয়াজের রস, অপরিশোধিত নারিকেল তেল ইত্যাদি। এই প্রত্যেকটি উপাদান চুলে আদ্রতার পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে, চুলে খুশকির প্রকোপ কমায়, চুল পড়া কমাতে এবং চুল গজাতে সাহায্য করে। হাতের কাছে যখন যেই উপাদান থাকবে সেই উপাদান দিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি করে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন লাগাতে পারেন। শারীরিক সমস্যা ব্যতীত আর কোন কারনে যদি চুল পড়া সমস্যা থাকে তা নিমিষেই দূর হবে।
উপসংহার
যারা নিয়মিত চুলের যত্নে ডিম ও টক দই ব্যবহার করতে চাচ্ছেন কিন্তু বুঝতে পারছেন না যে কিভাবে ব্যবহার করবেন আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে আশা করছি। তবে যে কোন হেয়ার প্যাক চুলে সপ্তাহে দুই দিনের বেশি ব্যবহার করা মোটেও উচিত নয়।
সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১)ডিমের সাদা অংশ চুলে দিলে কি হয়?
উঃ ডিমের সাদা অংশ চুলে দিলে চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়, চুলের আগা ফাটা বন্ধ হয়।
২)ডিম খেলে কি চুল পড়া বন্ধ হয়?
উঃ ডিমে বিদ্যমান “ভিটামিন ডি” চুল পড়া বন্ধ করতে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
৩)চুল লম্বা করার জন্য কি করতে হবে?
উঃ চুল লম্বা করার জন্য চুলের নিয়মিত পেঁয়াজের রস, ডিম, টক দই, পাকা কলা দিয়ে তৈরি হেয়ার প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
2 thoughts on “চুলের যত্নে ডিম ও টক দই”