নিয়মিত টক দই খাবার তালিকায় রাখার আগে জেনে নিন টক দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো কি কি? টক দই এর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গুলো হল ক্যালসিয়াম, বিভিন্ন উপকারী ব্যাকটেরিয়া, প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল ও ফসফরাস, ভিটামিন বি ১২, বি২, পটাশিয়াম, প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ। এই প্রত্যেকটি উপাদান আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত টক দই খেলে পেটের যাবতীয় সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
এছাড়া শরীরের টক্সিন বের করতে এবং শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে তুলতে প্রতিদিন টক দই খেতে পারেন। উচ্চ রক্তচাপ এবং মানসিক চাপ কমাতে, বিষন্নতা দূর করতে টক দই সাহায্য করে। হাড় ও দাঁত মজবুত করার পাশাপাশি চর্ম রোগের বিরুদ্ধেও লড়াই করে টক দই। মুখের আলসার নিরাময় করতে এবং ধীরে ধীরে ওজন কমাতে টক দই সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত টক দই সেবনে কিছু অপকারিতা ও রয়েছে। টক দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
টক দই
টক দই ও মিষ্টি দই দুটোই দুধ থেকে তৈরি হলেও এই দুটো খাবার একটি অপরটি থেকে আলাদা। তবে টক দই এবং মিষ্টি দই দুটোই ক্রিমি টেক্সচার এবং প্রবায়োটিক সমৃদ্ধ হয়ে থাকে। টক দই সাধারণত দুধ থেকে গাজন প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়ে থাকে। ফলে এতে প্রথম থেকেই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
টক দই তৈরিতে ল্যাক্টোব্যাসিলাস বুলগ্যারিকাস ও থার্মোফিলাস ব্যাক্টেরিয়ার স্ট্রেইন প্রবেশ করানো হয় না বলে এর স্বাদ মিষ্টি দই থেকে আলাদা হয়। টক দইয়ের ইংরেজি নাম হল Sour Curd। প্রায় ৪৫০০ বছর আগে থেকে টক দই এর ব্যবহার প্রচলিত রয়েছে। যারা দুধ খেয়ে সহ্য করতে পারেন না তারা খাবার তালিকায় নিয়মিত টক দই রাখুন। এতে করে অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে। টক দই সাধারণত ওটস, স্মুদি, ড্রেসিং, ডিপ ও ডেজার্টে ব্যবহার করে খেতে পারেন।
টক দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
টক দই প্রধানত হজম প্রক্রিয়ার উন্নতি সাধনের জন্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। চলুন টক দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক:
পেটের সমস্যার সমাধান করে
টক দই বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেট ফাঁপা জাতীয় সমস্যা সমাধানে কাজ করে। পেটের আলসার এর ঝুঁকি কমাতে ও টক দই সাহায্য করে।
শরীরের টক্সিন দূর করে
নিয়মিত টক দই খেলে প্রাকৃতিকভাবে খারাপ টক্সিন শরীর থেকে বের হয়ে যায় এবং শরীর ফিট এবং সুন্দর থাকে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অথবা সালাদের সাথে টক দই মিশিয়ে খেলে ধীরে ধীরে ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে অধিক ওজন কমানোর জন্য প্রয়োজনের বেশি টক দই খেতে যাবেন না।
শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি করে
টক দই শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধির ক্ষমতা আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে তোলে।
উচ্চ রক্তচাপ ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করে
নিয়মিত টক দই খেলে শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল ধীরে ধীরে দূর হয় এবং হার্ট ভালো থাকে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও টক দই বেশ সাহায্য করে। যাদের অধিক মাত্রায় মানসিক স্ট্রেস রয়েছে তারা প্রতিদিন সকালে টক দই খান।
হাড় এবং দাঁত মজবুত করে
হাড়ের বিভিন্ন অসুখ যেমন অস্টিওপরোসিস, আরথ্রাইটিসের প্রতিরোধে টক দই সাহায্য করে। হাড়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস পৌঁছে দিতে টক দই খুবই কার্যকরী।
চর্মরোগ দূর করে
ত্বকের গভীর থেকে মৃত কোষ দূর করতে প্রতিদিন খাবার তালিকায় টক দই রাখুন। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন: চুলকানি, ফোলা ভাব, ত্বকের লালচে ভাব দূর করতে টক দই সাহায্য করে।
মুখের আলসার দূর করে
মুখে অথবা শরীরের যেকোনো বাহ্যিক স্থানে যদি আলসার হয়ে থাকে তাহলে ফ্যাটানো টক দই আলসারের স্থানে লাগিয়ে রাখুন। কয়েকদিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যাবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়া দূর করে
টক দইয়ের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ল্যাকটিক এসিড ডায়রিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং এই একই উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ও খাদ্য হজমে সহায়তা করে।
কোলন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ করে
শুনতে অবাক লাগলেও নিয়মিত খাবার তালিকায় টক দই রাখলে উপরিউক্ত রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
চুলের সমস্যা দূর করে
চুলে টক দই লাগালে আগা ফাটা দূর হয়, চুল লম্বা হয়, চুল ঘন এবং মসৃণ হয়।
টক দই খাওয়ার অপকারিতা
- সর্দি কাশি জনিত সমস্যায় টক দই এড়িয়ে চলুন,
- টক দই রোদে অথবা কড়াইতে গরম করে খাওয়া যাবে না,
- ফ্রিজে রাখা টক দই খেলে ওজন বৃদ্ধি পাবে,
- পরপর টক দই খাওয়ার অভ্যাস থাকলে পেটে ফোলা ভাব তৈরি হবে,
- সন্ধ্যার পর টক দই খাওয়া যাবেনা।
টক দই খাওয়ার নিয়ম
টক দই নিয়মিত খাবার তালিকায় রাখার আগে টক দই খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনাকে সচেতন হতে হবে। চলুন নিয়ম গুলো জেনে নেওয়া যাক:
- টক দই এ কোনভাবেই চিনি মেশানো যাবেনা, ফলের কেউ যদি স্বাদ ভালো করার জন্য টক দই মিষ্টি মেশাতে চান তাহলে গুড় অথবা মধু মেশাতে পারেন।
- প্রতিদিন টক দই খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, সপ্তাহে মোটামুটি চার দিন খাবার তালিকায় টক দই রাখলে শরীরের জন্য যথেষ্ট।
- টক দই এ মিউকাস বিদ্যমান থাকায় এটি কোনভাবেই রাতে খাওয়া উচিত নয়। রাতে টক দই খেলে শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা তৈরি হতে পারে।
- টক দই খেয়ে যদি শরীরে ফোলাভাব তৈরি হয় তাহলে এটা আপনার শরীরের জন্য শুভকর নয়।
- ফ্রিজে টক দই রেখে যদি নিয়মিত খান এটা ওজন বৃদ্ধির জন্য দায়ী।
- টক দই গরম করে খাবেন না এবং মাছ এবং মাংসের সাথে মিশিয়ে খাবেন না।
টক দই এর পুষ্টিগুণ
প্রতি ১০০ গ্রাম টক দই থেকে ২৭৫ গ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। প্রতিদিন সকালের নাস্তায় আপনি যে ধরনের খাবার খান সেই খাবারের সাথে টক দই মিশিয়ে খেলে সঠিক পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। এছাড়া প্রতি গ্রাম টক দই থেকে ১০০ মিলিয়ন অ্যাকটিভ ল্যাকটোব্যাসিলাস পাওয়া যায় যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম টক দই এর শর্করা থাকে ৪.৭ g, স্নেহ পদার্থের পরিমাণ ৩.৩ g, চিনির পরিমাণ ৪.৭ g, রিবোফ্লাবিন বি২ এর পরিমাণ ০.১৪ মিগ্রা, ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ১২১ মিগ্রা, প্রোটিনের পরিমাণ ৩.৫ g।
খালি পেটে টক দই খাওয়ার উপকারিতা
খালি পেটে টক দই খাওয়ার উপকারিতা গুলো হল:
- খালি পেটে টক দই খেলে পেট ফোলা ভাব দূর হয়,
- টক দইয়ে বিদ্যমান সেলেনিয়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে,
- সকালে খালি পেটে টক দই খেলে হাড় এবং দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো থাকে,
- বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে,
- ডাইরিয়াজনিত সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করে,
- চুলের জন্য টক দই খুবই উপকারী,
- খালি পেটে টক দই খেলে অকাল বার্ধক্য জনিত সমস্যা দূর হয়,
- খালি পেটে টক দই খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
জনপ্রিয় ব্লগ: কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
উপসংহার
টক দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আপনাদের কে দেওয়ার জন্য সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের আর্টিকেল। যারা খাবার তালিকা নিয়মিত টক দই রাখতে চাচ্ছেন, আশা করি আমাদের আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে।
সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১)প্রতিদিন কতটুকু টক দই খাওয়া উচিত?
উঃ প্রতিদিন সর্বোচ্চ তিনশ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম টক দই খাওয়া যেতে পারে।
২)টক দই খেলে কি মোটা হওয়া যায়?
উঃ টক দই ওজন বৃদ্ধি করে না বরং ধীরে ধীরে ওজন কমাতে এবং ফ্যাট ঝরিয়ে ফেলতে সাহায্য করে।
৩)দই খেলে কি কি ক্ষতি হয়?
উঃ দই ঠান্ডা কাশি বাড়িয়ে তুলতে পারে, ফ্রিজে রেখে টক দই খেলে ওজন বৃদ্ধি পায়, প্রয়োজন এর অধিক টক দই খেলে পেট ফোলা ভাব তৈরি হয়।
1 thought on “টক দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা”