জীবনে চলার পথে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া। কারণ মানুষকে বিপথগামী পথে ধাবিত করার জন্য শয়তান মানুষের মনে দুশ্চিন্তা এবং হতাশা ঢুকিয়ে দেয়। দুশ্চিন্তার ফলস্বরূপ মানুষ পার্থিব পৃথিবীতে বিভিন্ন রকম অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়।
দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য রাসুল (স.) বিভিন্ন ধরনের দোয়া আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়েছেন। যেগুলো নিয়মিত স্মরণ করলে এবং মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলে দুশ্চিন্তা হতে রক্ষা পাওয়া যায়। হাদিসের দুশ্চিন্তা কাটানোর জন্য বিভিন্ন দোয়া শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
রাসুল (স.) আমাদেরকে এই দোয়া সকাল এবং সন্ধ্যায় এই দোয়া গুলো পাঠ করতে বলেন। তাই ইহকালের শান্তি এবং পরকালের মুক্তির জন্য দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া জেনে রাখা জরুরি। যারা দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া এবং মন ভালো করার দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান আশা করছি আমাদের আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া
যে কোন অবস্থায় মহান রাব্বুল আলামিন এই কাছে সাহায্য ভিক্ষা চাইলে এবং দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া পাঠ করলে আপনি পৃথিবীর যাবতীয় দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে বাধ্য। দুঃখ এবং দুর্দশা থেকে মুক্তির বিভিন্ন দোয়া রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম দোয়াটি হল:
ابْنُ أَمَتِكَ، نَاصِيَتِي
عَبْدُكَ، ابْنُ عَبْدِكَ،
مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ عَدْلٌ فِيَّ قَضَاؤُكَ
أَسْأَلُكَ بِكُــــلِّ اسْمٍ هُوَ سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ، أَوْ
أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ، أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَداً مِنْ خَلْقِكَ، أَوِ
اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الغَيْبِ عِنْدَكَ، أَنْ
رَبِيعَ قَلْبِي، وَنُورَ صَدْرِي، وَجَلاَءَ حُزْنِي، وَ
وَذَهَابَ هَمِّي
দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া বাংলা উচ্চারণ
আল্লা-হুম্মা ইন্নী ‘আবদুকা ইবনু ‘আবদিকা
ইবনু আমাতিকা, না-সিয়াতী বিয়াদিকা,
মা-দ্বিন ফিয়্যা হুকমুকা
আদলুন ফিয়্যা কাদ্বা-য়ুকা,
আসআলুকা বিকুল্লি ইসমিন্
হুয়া লাকা সাম্মাইতা বিহি নাফসাকা
আও আনযালতাহু ফী কিতা-বিকা আও
আল্লামতাহু আহাদাম্-মিন খালক্বিকা
আও ইস্তা’সারতা বিহী ফী ‘ইলমিল গাইবি ‘ইনদাকা
আন্ তাজ‘আলাল কুরআ-না রবী‘আ ক্বালবী
ওয়া নূরা সাদ্রী, ওয়া জালা’আ হুযনী ওয়া
যাহা-বা হাম্মী।।।
দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়ার বাংলা অর্থ
বাংলা অর্থ: হে মহান আল্লাহতালা! আমি আপনার একজন নেককার বান্দা এবং আমি আপনারই একজন বান্দার পুত্র। এবং আমি আপনার একজন বাদীর পুত্র। আমার ভাগ্য সম্পূর্ণ রূপে আপনার হাতে, আমার উপর আপনার যাবতীয় নির্দেশ আমি মেনে চলি। আমার ব্যাপারে আপনি যে ফয়সলা প্রদান করেন তা ন্যায়সঙ্গত।
আমি বিশ্বাস করি যে, আমার প্রার্থনা আপনার প্রতিটি নামের উসিলায়। এই নাম আপনি নিজের জন্য গায়েবি জ্ঞানে নিজের জন্য সংরক্ষণ করেছেন, আপনি এই নাম আপনার কিতাবেও নাযিল করেছেন, এবং সৃষ্টি জীবের মধ্যে কাউকে হয়তোবা এই জ্ঞান দান করেছেন এবং কাউকে করেন নি। আপনি আমার হৃদয় প্রশান্তি আনয়ন করুন কোরআনের মাধ্যমে। এবং আমার বক্ষের জ্যোতি এবং দুঃখ অপসারণকারি দুশ্চিন্তা দূর করতে জাগ্রত হন।
টেনশন দূর করার দোয়া
একটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছিলেন, আমি একটি দোয়া সম্পর্কে অবগত আছি যেই দোয়াটি আমার ভাই ইউনুস (আ.)-এর দোয়া। এই দোয়াটি পবিত্র আল কোরআনের আল আম্বিয়ায়ও (আয়াত: ৮৭) তে উল্লেখিত রয়েছে।
টেনশন দূর করার দোয়া হলো :
سُبْحَانَكَ، إِنِّي كُنْتُ مِنَ ا
إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ
لَاالظَّالِمِينَ
টেনশন দূর করার দোয়ার বাংলা উচ্চারণ
লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা
ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বালিমিন।
টেনশন দূর করার দোয়ার বাংলা অর্থ হলো
বাংলা অর্থ: হে মহান আল্লাহতালা! আপনি ছাড়া আমার আর কোন সত্য উপাস্য নেই, আমি সর্বদা আমার হৃদয় আপনাকে ধারণ করি। আমি আপনার পবিত্রতা সর্বাবস্থায় হৃদয়ে বহন করি, আপনার অনুগত বান্দা হয়ে আমি বিশ্বাস করি যে আমি নিজের প্রতি নিজে অবিচার করেছি।
টেনশন থেকে মুক্তির অন্য একটি দোয়া হলো:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الهَمِّ وَالحَزَنِ
وَالعَجزِ وَالكَسَلِ، وَالبُخلِ وَالجُبنِ،وَضَلَعِ
الدَّينِ وَقَهْرِالرِّجَالِ
দোয়াটির বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাল
হাম্মি ওয়াল হুযনি,
ওয়া আউজু বিকা মিনাল আজযি ওয়াল-কাসালি
ওয়া আউজু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি
ওয়া আউজু বিকা মিন গালাবাতিদ
দাইনি ওয়া কাহরির রিজাল।।।
টেনশন থেকে মুক্তির দোয়ার বাংলা অর্থ
বাংলা অর্থ: হে মহান আল্লাহতালা! আমি আপনার কাছে আশ্রয় নিচ্ছি সকল প্রকার দুশ্চিন্তা, অপরগতা, অলসতা, কৃপণতা ও ভীরুতা, মানুষের অত্যাচার, দমন এবং নিপীড়ন, সকল প্রকার ঋণের ভার থেকে। হযরত আনাস (রা.) বলতেন, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স), দুশ্চিন্তাগ্রস্থ অবস্থায় এবং বিভিন্ন বিপদ থেকে মুক্তির জন্য এই দোয়াটি পাঠ করতেন।
হতাশা থেকে মুক্তির উপায়
হতাশা আমাদের আনন্দ কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি আমাদের উৎসাহ, উদ্দীপনা এবং সৎ সাহস এর পথে ও বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আমরা ন্যায় পথে ভালোভাবে চলতে পারি না হতাশার জন্য। তবে হতাশা থেকে মুক্তির জন্য ইস্তিগফার করতে পারেন। এতে করে সকল ধরনের বিপদ আপদ দূর হবে।
হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, তোমাদের রব তোমাদের উপর সর্বদা ক্ষমাশীল, তাই তোমরা নিয়মিত রবের কাছে ক্ষমা চাও। তোমাদের রব তোমাদের ধন-সম্পত্তি এবং সন্তান-সন্ততিতে সমৃদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহতালা তোমাকে সব সংকটের পথ থেকে উত্তরণ করবেন যদি তুমি নিয়মিত ইস্তিগফার কর। আল্লাহর কাছে নিয়মিত ইস্তিগফার করলে আল্লাহ তা’আলা সব অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেন। তাছাড়া প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে দরুদ শরিফ পাঠ করলে গুনাহ থেকে মাফ পাওয়া যায় এবং সকল ধরনের দুশ্চিন্তা থেকে মন দূরে থাকে। তাই হতাশা থেকে মুক্তির জন্য সর্বদা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা চান, টেনশন থেকে মুক্তির দোয়া পাঠ করুন।
মন ভালো করার দোয়া
বিভিন্ন খারাপ বিষয় থেকে মনকে দূরে রাখতে এবং সকল ধরনের গুনাহ থেকে মাফ পাওয়ার জন্য আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকটি দোয়ার কথা বলে গিয়েছেন। তিনি বলেন- কোন বিপদগ্রস্ত মানুষ যদি এই দোয়া পাঠ করে তাহলে তিনি তৎক্ষণাৎ বিপদ থেকে রক্ষা পাবেন।
মন ভালো করার দোয়ার আরবি উচ্চারণ
لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ، إِنِّي كُنْتُ مِنَا لظَّالِمِينَ
জনপ্রিয় ব্লগ: খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম
মন ভালো করার দোয়ার বাংলা উচ্চারণ
লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা
ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বালিমিন
মন ভালো করার দোয়ার বাংলা অর্থ
বাংলা অর্থ: হে মহান আল্লাহতালা! তুমি ছাড়া আমার আর কোন সত্য উপাস্য নেই, আমি তোমার পবিত্রতা সর্বদা আমার হৃদয়ে বহন করি। আমি স্বীকার করি যে আমি নিজের প্রতি অবিচার করেছি।
উপসংহার
যাদের বিভিন্ন সমস্যা এবং দুঃখ দুর্দশার জন্য জীবন উলটপালট হয়ে যাচ্ছে তারা দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া পাঠ করতে পারেন প্রতিদিন। এতে করে মনের মানসিকভাবে শান্তি পাবেন এবং ঋণের বোঝা, সকল ধরনের অন্যায় অপকর্ম থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারবেন। আমাদের আজকের আর্টিকেলে প্রদত্ত টেনশন থেকে মুক্তির দোয়া আপনাদের প্রাত্যহিক জীবনে কাজে আসবে বলে আশা করছি।
সর্বাধিক জিজ্ঞেসিত প্রশ্নাবলী
১)অতিরিক্ত টেনশনের কারণে কি হয়?
উঃ অতিরিক্ত টেনশনের কারণে হৃদযন্ত্র ভালো ভাবে কাজ করতে পারে না, মস্তিষ্কের বিকল্প ঘটে এবং স্ট্রোক এর প্রবণতা বাড়ে।
২)অতিরিক্ত চিন্তার ক্ষতিকর প্রভাব কি?
উঃ অতিরিক্ত চিন্তার ফলে মস্তিষ্কের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, মস্তিষ্কে গ্লুটামেট জমা হয় যার ফলে রাতে ঘুমে অসুবিধা সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হয়।
৩)অতিরিক্ত চিন্তা ও নেতিবাচক চিন্তার কারণ কি?
উঃ অতিরিক্ত চিন্তার ও নেতিবাচক চিন্তার কারণ হলো:
- মনোযোগের চর্চা কমে আসা,
- ভাবনার গতি ত্বরান্বিত না হওয়া,
- গঠনমূলক সমালোচনা না করা,
- যুক্তি দিয়ে চিন্তা ভাবনা না করা।