দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়

দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নিয়মিত শরীর চর্চা করা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। ‘আকাশ হেল্থকেয়ার’য়ের প্রধান পরামর্শক রাকেশ পন্ডিত এর মতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা একটি দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থাপনা, নিয়মিত ঔষধ গ্রহণের থেকে জীবনযাত্রা পরিবর্তন আনা খুবই জরুরী। 

খাদ্যাভাসে কিছু পরিবর্তন যেমন: চর্বি জাতীয় খাবার পরিত্যাগ করা, ফাস্টফুড এবং কোমল পানীয় পরিত্যাগ, আর্সেনিকমুক্ত পানি পান, যেকোনো প্রকার কার্বোহাইড্রেট গ্রহণে সচেতনতা, প্রতিদিনের খাবার তালিকায় মেথি, তেতো করলা, নিমতুলসী পাতা, কালোজাম, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি রাখলে দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসে। 

দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় সম্পর্কে আমরা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করব। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়লে এবং আমাদের দেওয়া টিপস গুলো মেনে চললে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করি।

 

Table of Contents

দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়

দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার কিছু উপায় রয়েছে। যেগুলো মেনে চললে মাস খানেকের মধ্যেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসতে বাধ্য। চলুন জেনে নেই দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় গুলো কি কি?

 

মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকুন

অযথা চিন্তা এবং মানসিক চাপ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস এর অন্যতম কারণ। এছাড়া অতিরিক্ত মানসিক চাপ রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে এবং ডায়াবেটিসের মাত্রা বৃদ্ধি করে।

 

পর্যাপ্ত পরিমান ঘুমান

ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। এতে করে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তাই ডায়াবেটিস এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পর্যাপ্ত সময় ঘুমাতে হবে।

 

পানি পান করুন

ডায়াবেটিস রোগীদের মূত্র ত্যাগ করার সময় শরীর থেকে অতিরিক্ত গ্লুকোজ বের হয়ে যায়। তাই শরীরে যাবতীয় পুষ্টি এবং ভিটামিন এর চাহিদা পূরণ করার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৪ লিটার পানি পান করুন।

 

ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন

ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যাভ্যাস অথবা শরীরচর্চা যেভাবেই হোক ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকলে প্রাকৃতিকভাবেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসবে।

 

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ

ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিসের মাত্রা অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ করতে হতে পারে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিদিন ঔষধ সেবন করা জরুরি।

 

কার্বোহাইড্রেট গ্রহনে সতর্কতা

প্রথম টাইপের কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যেমন চাল এবং চিনি অথবা চিনি তৈরি বিভিন্ন খাবার থেকে ডায়াবেটিস রোগীদের দূরে থাকতে হবে। অন্যদিকে ডায়াবেটিস রোগীরা গম এবং গমের তৈরি খাবার গ্রহণ করবেন।

 

নিয়মিত শরীর চর্চা করা

ডায়াবেটিস রোগীরা মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকার জন্য, রক্তে শর্করার লেভেল নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত হালকা থেকে ভারী শরীর চর্চা করতে পারেন।

 

প্রতিবেলায় পুষ্টিকর খাবার

ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিস এর লেভেল কত থাকবে তা নির্ভর করে প্রতিবেলায় সে কি ধরনের খাবার গ্রহণ করছে তার উপর। ডায়াবেটিস রোগীরা প্রতিবেলায় সুষম খাদ্য গ্রহণ করবে এবং খাবার তালিকা পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন রাখবে।

 

ব্লাড সুগার চেকআপ করুন

ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতি মাসে একবার করে ব্লাড সুগার চেকআপ করা জরুরী। ডায়াবেটিস এন্ড লেভেল সম্পর্কে জানতে পারবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

 

নেশা জাতীয় দ্রব্য পরিত্যাগ করা

যেসব ডাইবেটিস রোগীদের ধূমপান এবং মদ্যপানের অভ্যাস হয়েছে তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়। তাই সবার আগে এই অভ্যাস বাদ দিন।

 

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা

ডায়াবেটিস রোগীর জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার পাশাপাশি ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ও হবে কিছুটা ভিন্ন ধরনের। চলুন ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:

 

শ্বেতসার-জাতীয় খাবার গ্রহণ

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকায় নানা রকমের শাকসবজি এবং বিভিন্ন রং এর ফল থাকা জরুরী। পরিমান মতো এসব খাবার খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসে।

 

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ

উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ বিভিন্ন খাবার যেমন: মাছ, মাংস, শিম ও অন্যান্য বীন, ডাল, বিভিন্ন ধরনের বাদাম, ডিম ইত্যাদি ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকায় থাকা বাধ্যতামূলক।

 

স্নেহ জাতীয় খাবার গ্রহণ

ডায়াবেটিস রোগীরা খাবার তালিকায় তেল, মাখন, ঘি অথবা এগুলো দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার রাখতে পারেন। এগুলো ডায়াবেটিসের মাত্রা বৃদ্ধি করে না।

 

দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার

ডায়াবেটিস রোগীরা সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন দই, ছানা ও পনির জাতীয় খাবার খেতে পারেন। তবে মিষ্টি দই এর পরিবর্তে টক দই খাওয়া ভালো।

 

স্যাচুরেটেড ফ্যাট জাতীয় খাবার

স্বাস্থ্যকর চর্বি জাতীয় বিভিন্ন খাবার যেমন: অলিভ অয়েল অথবা অন্যান্য ভেজিটেবল অয়েল, পিনাট বাটার ও আমন্ড বাটার খেতে পারেন।

 

উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন

ডায়াবেটিস রোগীরা খাবার তালিকায় ভাত, আলু, গাজর, পাউরুটি এবং কলা এড়িয়ে চলুন অথবা কম পরিমাণে গ্রহণের চেষ্টা করুন।

 

চা এবং কফি পরিত্যাগ

ডায়াবেটিস রোগীদের চাও অথবা কফি নেশা থাকলে আয়ুর্বেদিক চা গ্রহন করতে পারেন। তবে চিনি দিয়ে চা অথবা কফি খাওয়া যাবেনা।

 

ময়দার তৈরি বিভিন্ন খাবার

ডায়াবেটিস রোগীরা সকালের নাস্তায় ময়দা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার রাখতে পারেন। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।

 

লাল মাংস পরিত্যাগ করুন

ডায়াবেটিস রোগীরা লাল মাংস যেমন: গরুর মাংস, খাসির মাংস, ভেড়ার মাংস ইত্যাদি গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।

 

লবণ গ্রহণের সচেতনতা

ডায়াবেটিস রোগীদের খাবারে যথেষ্ট পরিমাণ লবণ দিয়ে রান্না করা যাবে কিন্তু কোনভাবেই কাঁচা লবণ খাওয়া যাবে না।

 

ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল

খালি পেটে ডায়াবেটিস মাপলে যদি ৯৯ mg/dL সুগার লেভেল থাকে তাহলে এটি স্বাস্থ্যকর বলে বিবেচনা করা হয়। ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত খালি পেটে সুগার লেভেল ৯০ থেকে ১৩০ mg/dL হলে এটা স্বাভাবিক। অপরদিকে রাতে খাবারের পর এইমাত্রা থাকতে হবে ১৫০ mg/dl। এবং সকালে খাবারের পর সুগার লেভেল ১৪০ mg/dl এর মধ্যে থাকলে স্বাভাবিক বলে ধরা হয়।

 

ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ

সকালের নাস্তা গ্রহণ এর ২ ঘণ্টা পর সুগার লেভেল এর মাত্রা যদি ১১.১ থাকে অথবা এর চেয়ে বেশি হয় তাহলে বুঝতে হবে ব্যক্তি ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত। খালি পেটে সুগার লেভেল এর মাত্রা যদি ৫.৫ থেকে ৬.৯ এর মধ্যে থাকে তাহলে তাকে প্রি-ডায়াবেটিস বলা হয় এবং এই মাত্রা যখন ৭ পয়েন্ট অথবা তার উপরে চলে যায় তখন তাকে ডায়াবেটিস বলে ধরা হয়।

Popular Post: সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ

 

কি খেলে ডায়াবেটিস হবে না

কিছু খাবার খেলে ডায়াবেটিস থেকে দূরে থাকা যায়। চলুন জেনে নেই কি খাবার খেলে ডায়াবেটিস হবে না?

  • সেদ্ধ সবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন,
  • উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান,
  • প্রতিদিন সকালে নিম পাতার রস অথবা তুলসী পাতার রস খেতে হবে,
  • খাবার তালিকাতে তেতো করলা রাখুন,
  • প্রতিবেলে খাবারের সাথে সালাদ রাখুন,
  • প্রতিদিন খাবার তালিকায় কমলে লেবু অথবা লেবুর তৈরি শরবত রাখুন।

 

উপসংহার

যারা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস এ ভুগছেন তারা অনেকেই দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় সম্পর্কে জানতে চান। আজকের এই পোস্টে আমরা এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসলেই আমাদের সার্থকতা।

 

সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১)ডায়াবেটিস কেন হয়? 

উঃ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দীর্ঘ সময় ধরে বেশি থাকার কারণে ডায়াবেটিস হয়।

 

২)ডায়াবেটিস কি? 

উঃ শরীর যখন যথেষ্ট পরিমাণে ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না এবং উৎপাদিত ইস্কুলেন কার্যকর ভাবে ব্যবহার করতে পারেনা তখন তাকে ডায়াবেটিস বলে।

 

৩)সুগার লেভেল কত হলে ডায়াবেটিস? 

উঃ সুগার লেভেল ১১.১ হলে ডায়াবেটিস বলে ধরা হয়।

Spread the love

Leave a Comment