নিম পাতাও কাঁচা হলুদ দুটোই প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান হিসেবে কাজ করে থাকে। শরীরে ডিটক্স এর কাজ পালন করতে কাঁচা হলুদের জুড়ি মেলা ভার। পাতা ছাড়া কাঁচা হলুদ প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক এবং প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে থাকে।
আমরা সবাই জানি নিমপাতা শক্তিশালী জীবাণু নাশক হিসেবে কাজ করে। ত্বকে নিয়মিত নিম পাতা ব্যবহারে ঘামাচি এবং এলার্জি, ব্রণ, চুলকানি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে না। নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ মুখে দিলে কি হয় এ সম্পর্কে অনেকেই বিস্তারিত জানতে চান।
নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ একসাথে মুখে দিলে ত্বকের জৈব টক্সিন গুলো বের হয়ে যায় এবং ত্বকের এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে থাকে। চলুন তাহলে নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ দিয়ে রূপচর্চা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক:
নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
নিম পাতার তেতো স্বাদের কারণে অনেকেই নিম পাতার ধারের কাছেও ঘেঁষতে চান না। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী ত্বকের যত্নে নিম পাতার বিশেষ অবদান রয়েছে। নিয়মিত নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ ব্যবহারে ত্বক হবে দুধের মত সাদা। চলুন জেনে নেই নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়:
নিম পাতা, কাঁচা হলুদ ও পানি
১ চা চামচ নিম পাতা বাটা, ১ চা চামচ হলুদ বাটা পরিমাণ মতো পানি নিয়ে একটি পেষ্ট তৈরি করে ১০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে অন্তত দুইদিন ব্যবহারে ত্বকের উজ্জ্বলতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে।
নিম পাতা বাটা, কাঁচা হলুদ বাটা, মুলতানি মাটি ও লেবুর রস
১ চা চামচ নিম পাতা বাটা, ১ চা চামচ হলুদ বাটা, পরিমাণ মতো মুলতানি মাটি, ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করুন। ৩০ মিনিট পর পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেললে ত্বকের রোদে পোড়া দাগ পুরোপুরি দূর হবে।
নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ সিদ্ধ
কয়েকটি নিমপাতা, এবং দুই থেকে তিন টুকরো কাঁচা হলুদ একসাথে সিদ্ধ করে পানি ছেঁকে আলাদা করে নিন। সিদ্ধ করা পানিতে সামান্য পরিমাণ কাঁচা হলুদ বাটা মিশিয়ে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। একটি তুলার সাহায্যে প্রতিদিন চোখের নিচে দুইবার এপ্লাই করলে ডার্ক সাইকেল দূর হবে।
নিম পাতা, কাঁচা হলুদ ও মধু
পরিমাণ মতো নিমপাতায় এবং কাঁচা হলুদ একসাথে ব্লেন্ড করে এর সাথে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে মুখে, ঘাড়ে এবং গলায় লাগাতে পারেন। টানা দুই সপ্তাহ ব্যবহার করলে ব্রণের প্রকোপ অনেকটা কমে আসবে।
নিম পাতা, কাঁচা হলুদ মধু ও লেবু
কয়েকটি সিদ্ধ করা নিমপাতা, কয়েক টুকরো কাঁচা হলুদ, ৩ চা চামচ মধু এবং এক টেবিল চামচ লেবুর রস একসাথে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। এই প্যাকটি মুখ, গলা, ঘাড় সহ হাত-পায়েও লাগাতে পারেন। শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে পরিষ্কার পানি দিয়ে গোসল করে ফেলুন। ত্বক সতেজ রাখার জন্য প্যআক টি ব্যবহারের পর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
নিম পাতা, কাঁচা হলুদ ও চন্দন গুঁড়া
এক টেবিল চামচ নিমপাতা বাটা, ২ চা চামচ কাঁচা হলুদ বাটা, আধা চা চামচ চন্দনের গুঁড়ো একসাথে ভালো করে মিশিয়ে মুখে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন ব্যবহারেই ত্বক দুধের মত সাদা হবে।
নিমপাতা, কাঁচা হলুদ, দুধ এবং গোলাপ জল
এক টেবিল চামচ নিম পাতা বাটা, ২ চা চামচ কাঁচা হলুদ বাটা, ২ চা চামচ দুধ এবং এক চা চামচ গোলাপ জল একসাথে ভালো করে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। মিশ্রণটি ত্বকে ১৫ মিনিট লাগিয়ে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। আশা করি কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই ত্বক ঝকঝকে পরিষ্কার হবে।
নিম পাতা, কাঁচা হলুদ ও অ্যালোভেরা জেল
পরিমাণ মতো নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ বাটার সাথে দুই চা চামচ এলোভেরা জেল ভালোভাবে মিশিয়ে ত্বকের কালো স্থান গুলোতে লাগিয়ে রাখতে পারেন। রোদে পুড়ে যাওয়া স্থানগুলো আবার আগের মতো সাদা হয়ে যাবে বলে আশা করি।
উপরিউক্ত যে কোন একটি টিপস আপনি আপনার স্কিনের জন্য অনুসরণ করতে পারেন। তবে স্ক্রিনে কোন কিছু এপ্লাই করার আগে ভেবে নিবেন ঐ উপাদানটি আপনার ত্বকের সাথে মানানসই কিনা। আমরা উপরে যে সব উপাদান মুখে এপ্লাই করার কথা বলেছি সেগুলো ২০ মিনিটের বেশি মুখে লাগিয়ে না রাখাই ভালো।
শুধু কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম
কাঁচা হলুদের নিজস্ব শক্তিশালী জীবাণু নাশক ক্ষমতা রয়েছে বলে শুধু কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়া একদমই উচিত নয়। এতে করে বিপরীত লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। যারা শুধু কাঁচা হলুদ মুখে এপ্লাই করেন তাদের জেনে রাখা উচিত শুধু কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম গুলো কি কি?
কাঁচা হলুদ মুখে মাখার সময় অবশ্যই এর সাথে নিম পাতা বাটা, মুলতানি মাটি, চন্দনের গুঁড়ো, টক দই, লেবুর রস, এলোভেরা জেল, দুধ অথবা বেসন এই উপাদান গুলোর মধ্যে যেকোনো একটি রাখার চেষ্টা করবেন। কারণ শুধুমাত্র কাঁচা হলুদ মুখে দিলে ত্বকে ক্ষতিকর প্রভাব দেখা দিতে পারে। কিন্তু এর সাথে যখন অন্যান্য উপকরণ মেশানো হয় তখন এর উপকারিতা বেশি প্রকাশ পায়।
তাছাড়া ত্বকের উজ্জ্বলতা দ্বিগুণ করার জন্য শুধু কাঁচা হলুদের সাথে অলিভ অয়েলে, গাজরের রস অথবা টমেটোর রস মিশাতে পারেন। কাঁচা হলুদ ব্যবহারের পর মুখ উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধোয়ার চেষ্টা করবেন। এবং মুখ ধোয়ার পর একটি মশ্চারাইজার লাগাতে ভুলবেন না।
জনপ্রিয় ব্লগ: চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা- চিয়া সিড সম্পর্কে সকল তথ্য
নিম পাতা মুখে দিলে কি হয়
নিম পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে কমবেশি আমরা সবাই জানি। কিন্তু নিম পাতা মুখে দিলে কি হয় এ সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। চলুন জেনে নিই নিমপাতা মুখে দেওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি?
- ব্রণ এবং ব্ল্যাকহেডস দূর করতে সাহায্য করে,
- ত্বকের অতিরিক্ত তেল পরিষ্কার করে ফেলে,
- লোমকূপের ভেতরে দীর্ঘদিনের লুকিয়ে থাকা ময়লা দূর করতে নিম পাতা কার্যকরী,
- প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে নিম পাতা ব্যাপক সমাদৃত,
- নিমপাতা দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক মশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহৃত হয়,
- নিম পাতা দিয়ে তৈরি মাস্ক ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে,
- স্কিনের বিভিন্ন ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে নিম পাতা,
- ব্রণের দাগ এবং রোদে পোড়া দাগ দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে,
- বলে রেখা দূর করতে চমৎকার কাজ করে,
- এন্টি এজিং এর কাজ করে এবং ত্বকের তারুণ্যতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক বৃন্দ, অনেকেই অনলাইনে সার্চ করে জানতে চান নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ মুখে দিলে কি হয় এবং নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ মুখে দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। আপনারা যারা এই তথ্য জানতে আগ্রহী ছিলেন আশা করি আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১) নিম পাতার রস মাথায় দিলে কি হয়?
উঃ চুলের গ্রোথ বৃদ্ধি পায় এবং খুশকি দূর হয়।
২) নিম পেস্ট মুখে লাগানো কি ভালো?
উঃ নিম পাতার পেস্ট তোকে শুষ্কতা দূর করতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন টক্সিক উপাদান বের করে দেয়।
৩) নিম পাতা আর হলুদ মুখে দিলে কি হয়?
উঃ ত্বক দ্রুত ফর্সা হয়, রোদে পোড়া দাগ দূর হয়, জীবাণুনাশক আসুক হিসেবে কাজ করে, ব্রণের সমস্যা কমায়, তৈলাক্ত ভাব দূর করতে সাহায্য করে।