পিরিয়ড না হলে অনেকেই চিন্তিত থাকেন, পিরিয়ড না হলে কি প্রেগন্যান্ট ? যদিও প্রেগনেন্সির সর্বপ্রথম লক্ষণ হিসেবে পিরিয়ড মিস হওয়াকে ধরে নেওয়া হয়, কিন্তু প্রেগনেন্সির আরো কিছু লক্ষণ রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে অনেকেই অবগত নন। প্রেগনেন্সির সময় শারীরবৃত্তিয় ঘটনাগুলি ধীরে ধীরে পরিবর্তন হয়।
অনেক সময় মেনোপজের ঠিক আগে পিরিয়ড মিস হতে পারে। আবার কিছু কিছু সময় স্ট্রেস, জীবনযাত্রা, হরমোন, ওবেসিটি এর কারণেও পিরিয়ড বন্ধ থাকতে পারে। পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি প্রেগনেন্সির স্বাভাবিক লক্ষণ হল: বমি হওয়া, মাথা ঘোরা, সাদা স্রাব, ক্লান্তি, খাবারে অরুচি ও মর্নিং সিকনেস। পিরিয়ড না হলে কি প্রেগন্যান্ট? এ বিষয়ে যাবতীয় তথ্য জানার জন্য আমাদের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটির সাথেই থাকুন।
পিরিয়ড মিস হওয়ার কারণ
বর্তমান সময়ে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে মেয়েদের পিরিয়ড মিস হয়ে থাকে। তবে পিরিয়ড মিস হলেই যে একজন নারী প্রেগন্যান্ট এটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। চলুন জেনে নেই পিরিয়ড মিস হওয়ার কারণগুলো কি কি?
অতিরিক্ত ব্যায়াম অথবা জিম
অতিরিক্ত শারীরিক কসরত এর ফলে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যায়। এর ফলে অনিয়মিত পিরিয়ড এর মত সমস্যা তৈরি হয়।
অতিরিক্ত স্ট্রেস
যারা বিভিন্ন রকম মানসিক চাপে ভুগছেন তাদের শরীরে কর্টিসল হরমোন তৈরি হয়। এর ফলে পিরিয়ড মিস হবার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।
হঠাৎ করে ওজন বৃদ্ধি অথবা কমে যাওয়া
হঠাৎ করে ওজন বৃদ্ধি পেলে ওবেসিটির সমস্যা তৈরি হতে পারে। এবং অবশেষে সমস্যার কারণে পিরিয়ড বন্ধ থাকতে পারে কয়েক মাস অথবা অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে। যাদের কিডনি, উচ্চরক্তচাপ জাতীয় রোগের কারণে হঠাৎ করে ওজন কমে গেছে তাদেরও পিরিয়ড বন্ধ থাকতে পারে।
স্তন্যদানকারী মায়েদের মাসিক না হওয়া
স্তন্যদানকারী মায়েদের শরীরে অ্যামেনোরিয়া হওয়ার তীব্র আশঙ্কা থাকে। তাই যে সব স্তন্যদানকারী মায়েদের পিরিয়ড বন্ধ রয়েছে তাদের চিন্তার কোন কারণ নেই।
PCOS বা PCOD-এর সমস্যা
PCOS বা PCOD-এর সমস্যা, ডিম্বাশয়ে সিস্ট, ফ্যাটি লিভার, থাইরয়েড হরমোনের সমস্যার কারণে দীর্ঘদিন পিরিয়ড বন্ধ থাকতে পারে।
আর্লি প্রেগন্যান্সি লস
যারা সদ্য মিসক্যারিজ এর সম্মুখীন হয়েছেন তাদের ওই সময়ে হালকা বা ভারি রক্তপাতের কারণে পরবর্তীতে কিছুদিন মাসিক বন্ধ থাকতে পারে।
ফাইব্রয়েডস
জরায়ুতে টিউমার এর মত ফাইব্রয়েডস এর আকৃতি যখন বৃদ্ধি পায় তখন মাসিক চক্র অনিয়মিত হয়। এই বিষয়ে সচেতন থাকার জন্য নিয়মিত গাইনী ডাক্তারের চেকআপে থাকতে হবে।
জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহার
জন্মনিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন সামগ্রী যেমন পিল, প্যাচ, ইনজেকশন, আইইউডি ইত্যাদি দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে পিরিয়ড মিস হওয়া বা বেশ কিছুদিন পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার সমস্যা তৈরি হয়।
বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা
যারা মনোনিউক্লিওসিস, ঠান্ডা, সর্দি, গলার ইনফেকশন এ ভুগছেন তাদের পিরিয়ড মিস হওয়ার তীব্র ঝুঁকি রয়েছে। এ সময় পিরিয়ড বন্ধ থাকলে চিন্তার কিছু নেই।
পিরিয়ড না হলে করনীয়
যেসব কারণে পিরিয়ড দেরি তো হতে পারে বা বন্ধ থাকতে পারে সেসব কারণ নিয়ে আমরা ইতিমধ্যে আলোচনা করেছি। এই পর্যায়ে চলুন জেনে নেই পিরিয়ড না হলে করণীয় কি কি?
- ভিটামিন সি জাতীয় বিভিন্ন খাবার টমেটো, কমলালেবু, ব্রোকলি খাবার তালিকায় রাখুন,
- তলপেটে এবং কোমরের নিচের অংশে গরম পানির ছেক দিন।
- বিবাহিত মহিলারা নিয়মিত যৌন মিলন করুন,
- আদা দিয়ে চা খেলে ঋতুস্রাব দ্রুত হয়,
- খাবার তালিকায় কাঁচা পেঁপে অথবা পাকা পেঁপে রাখলে দ্রুত ঋতুস্রাব হবে,
- কিছু মসলা যেমন: মেথির বীজ, তিলের বীজ, মৌরি ভেজানো পানি খেলে ঋতুস্রাব দ্রুত হয়,
- ঋতুস্রাব এর হরমোন লেভেল স্বাভাবিক রাখার জন্য টেনশন মুক্ত থাকুন,
- জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল এর পাতা থেকে বাদামি বর্ণের পিল খেতে পারেন,
- প্রচুর পরিমাণে পানি এবং সুষম খাবার গ্রহণ করুন,
- পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম এর মত সমস্যা আছে কিনা তা পরীক্ষা করুন,
- থাইরয়েড এর সমস্যা থাকলে নিয়মিত ঔষধ গ্রহণ করুন।
কতদিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হয়
যারা যৌন মিলনের ক্ষেত্র কোনরূপ জন্মনিরোধক পদ্ধতি ব্যবহার করেন না, তারা পিরিয়ড মিস হওয়ার ৭-১০ দিন পর প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে পারেন। আর যারা যৌন মিলনের ক্ষেত্রে জন্মনিরোধক পদ্ধতি ব্যবহার করেন, তারা পিরিয়ড মিস হওয়ার প্রথম দিন থেকেই প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে পারবেন।
তবে পিরিয়ডের ডেট মিস হওয়ার আগে থেকেই যদি কেউ প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে ফলাফল নেগেটিভ আসতে পারে। সবথেকে ভালো ফল পাওয়ার জন্য অনিরাপদ সহবাসের ২১ দিন পর প্রেগনেন্সি টেস্ট করা ভালো। আধুনিক টেস্ট কিট ব্যবহারের মাধ্যমে প্রেগনেন্সি টেস্ট করলে আশা করি আপনার কাঙ্খিত ফলাফল পাবেন।
প্রেগন্যান্সি টেস্ট
ঘরে বসে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার জন্য ফার্মেসি থেকে একটি প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট কিনে নিতে হবে। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের টেস্ট কিট পাওয়া যাচ্ছে। এগুলোর দাম সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকার হয়ে থাকে। তবে অনেক সময় প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট ব্যবহারেও সঠিক ফলাফল জানা যায় না। এক্ষেত্রে সঠিক ফল জানার জন্য ডাক্তারের মতামত অনুযায়ী আলট্রা সাউন্ড করে দেখতে পারেন। গর্ভের সন্তানের হার্টবিট এর উপর ভিত্তি করে ডাক্তার নিশ্চিত হন যে আপনি আসলেই গর্ভবতী কিনা!
সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ
প্রেগনেন্সি টেস্ট কিটের ফলাফল কি সঠিক হয়
প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সঠিক ফলাফল প্রদান করলেও কিছু সময় ফলাফল সঠিক হয় না। চলুন জেনে নেই কখন প্রেগনেন্সি টেস্ট কি সঠিক ফলাফল প্রদান করতে পারে না-
- যারা অনিয়মিত মাসিকের সমস্যায় বলবেন তাদের ক্ষেত্রে টেস্ট কিট নেগেটিভ ফলাফল প্রদান করে,
- প্যাকেটের নির্দেশনা অনুযায়ী সঠিক নিয়মে প্রেগনেন্সি টেস্ট করলে ফলাফল নেগেটিভ আসবে,
- গর্ভাবস্থার একদম শুরুর দিকে পরীক্ষা করলে ফলাফল নেগেটিভ আসবে,
- ভরা পেটে প্রেগনেন্সি টেস্ট করলে নেগেটিভ আসতে পারে,
- টেস্ট কিটে কোন সমস্যা থাকলে ফলাফল নেগেটিভ আসে।
প্রেগনেন্সি টেস্ট করার পর আপনার ফলাফল যদি নেগেটিভ থাকে আবার আপনার পিরিয়ড ও যদি বন্ধ থাকে তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সব ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করুন এবং তার মতামত মত চলুন।
প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার সঠিক সময়
সকালবেলা খালি পেটে আপনি যখন প্রথম প্রস্রাব এর জন্য টয়লেটে যান তখন সেই প্রসব সংগ্রহ করে প্রেগনেন্সি টেস্ট করলে সব থেকে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। আপনি যদি কয়েক মাসের গর্ভবতী হয়ে থাকেন তাহলে দিনের যেকোনো সময়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে পারবেন। তবে সদ্য গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে সকালবেলা খালি পেটের প্রসাব পরীক্ষা করা ভালো। এক্ষেত্রে ভালো ফলাফল প্রদান করে।
উপসংহার
পিরিয়ড না হলে কি প্রেগন্যান্ট ? জেনে নিন সংবলিত আজকের পোস্টে আমরা আরো আলোচনা করেছি পিরিয়ড না হওয়ার কারণ, প্রেগনেন্সি টেস্ট করার সঠিক সময়, প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট এর ফলাফল কি সঠিক হয় ইত্যাদি সম্পর্কে। যারা পিরিয়ড না হওয়া নিয়ে বিভিন্ন চিন্তায় ছিল না আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে তারা উপকৃত হয়েছেন।
জনপ্রিয় ব্লগ: টনসিল অপারেশনের পর ইনফেকশন হলে কিভাবে বুঝবেন? করণীয় কি ? জেনে নিন !
সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নগুলো
১)প্রেগন্যান্সির প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ গুলো কি কি?
উঃ প্রেগনেন্সির প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ হল: মাথা ঘোরা, মর্নিং সিকনেস, খাবারে অরুচি এবং তলপেটে হালকা ব্যথা।
২)মাসিকের প্রথম মাসে কি গর্ভবতী হতে পারে?
উঃ মাসিক শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকে ১১-১৪ দিনের মধ্যে যে কোনদিন ও নিরাপদ যৌন মিলন করলে গর্ভবতী হওয়ার ঝুঁকি কয়েক গুণ বেশি থাকে।
৩)মিস পিরিয়ড কি?
উঃ সম্ভাব্য মাসিকের তারিখ পিছিয়ে যাওয়া বা ওই মাসে মাসিক না হওয়াকে মিস পিরিয়ড বলা হয়ে থাকে।।
1 thought on “পিরিয়ড না হলে কি প্রেগন্যান্ট ? জেনে নিন”