বর্তমানে ইন্টারনেটে যেসব বিউটি হ্যাকস গুলো পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম হলো বরফ দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার টোটকা হিসেবে কাজ করে বরফ। ত্বকের অযাচিত ছিদ্র খুব সহজেই বন্ধ করতে পারে বরফ। যাদের ত্বকে ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস সহ অতিরিক্ত ব্রণের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত বরফ দিয়ে ফেসিয়াল করতে পারেন।
সূর্যের প্রতিবেগুণ রশ্মির ফলে ত্বকে যে ট্যান হয় তা দূর করার জন্য বাইরে থেকে এসে মুখে বরফ ঘষতে পারেন। ত্বকে বরফ দিয়ে ম্যাসাজ করলে ত্বকের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। ফলে ত্বকের যাবতীয় সমস্যা কয়েকদিনের মধ্যেই কমতে শুরু করে। ত্বকে অযাচিত ব্রণ তৈরি হলে দিনে কমপক্ষে ২ বার মুখে বরফ ঘষতে হবে। যারা বরফ দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তারা আমাদের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
মুখে বরফ দিলে কি হয়
অনেকেই জেনে অথবা না জেনে বরফ দিয়ে রূপচর্চা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু মুখে বরফ এপ্লাই করার আগে অবশ্যই জেনে নিতে হবে মুখে বরফ দিলে কি হয়?
বরফ প্রদাহ বিরোধী হওয়ায় ব্রণের ব্যথা, ত্বকের চুলকানির জ্বালাপোড়া, ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত ত্বকের বরফ লাগালে ত্বক প্রশমিত থাকে এবং ওপেন পোরস গুলো ধীরে ধীরে ছোট হয়। ব্রণ উৎপাদনকারী সিবাম উৎপাদনের পরিমাণ কমিয়ে দেয় বরফ। চলুন শুরু দেখে নেই বরফ মুখে দিলে কি হয়?
- ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়,
- ত্বকে অক্সিজেনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে,
- নিয়মিত বরফ ব্যবহারে ত্বক পায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং ভিটামিন,
- চোখের নিচের ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করে বরফ,
- ডার্ক সার্কেল দূর করতে বরফের ব্যবহার সর্বাধিক,
- নিয়মিত মুখে বরফ লাগালে বার্ধক্যের ছাপ পড়তে পারেনা,
- মুখের ছিদ্রগুলো ধীরে ধীরে কমিয়ে আনে বরফ,
- নিয়মিত বরফ ব্যবহারে ত্বক বিভিন্ন সংক্রমণ এর হাত থেকে রক্ষা পায়,
- ত্বক এক্সফলিয়েট করতে বরফ সাহায্য করে,
- ত্বকের তৈলাক্ত ভাব নিয়ন্ত্রণ করে,
- ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে,
- ত্বকের ব়্যাশ নিয়ন্ত্রণ করে।
মুখে বরফ লাগানোর নিয়ম
গরমের তীব্র দাবদাহে ত্বক যখন নির্জীব হয়ে ওঠে তখন ব্যবহার করতে পারেন বরফ। তবে মুখে বরফ লাগানোর কিছু নিয়ম রয়েছে। চলুন জেনে নেই মুখে বরফ লাগানোর নিয়ম গুলো কি কি?
সরাসরি বরফ ব্যবহার করবেন না
বরফের উপর কোন পাতলা নরম সুতি কাপড় রেখে তারপর মুখে এপ্লাই করুন। এতে করে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ত্বক সুরক্ষিত থাকে এবং ত্বকে লালচে ভাব হয় না।
দীর্ঘমেয়াদি মেকআপ এর ক্ষেত্রে
যারা লং লাস্টিং অথবা দীর্ঘমেয়াদী মেকআপ নিতে চাচ্ছেন তারা অবশ্যই মেকআপ এর পূর্ব মুহূর্তে বরফ দিয়ে মুখ ম্যাসাজ করুন। এতে করে ত্বকে ট্যানিংয়ের এর সমস্যা বিদায় নিবে।
থ্রেডিং- হোয়াক্সিংয়ের পরে বরফ
থ্রেডিং করতে গিয়ে অনেক সময় ত্বকে লালচে ভাব সৃষ্টি হয় এবং ত্বক লাল হয়ে আসে। ফলে এই সময় ত্বক হালকা ভাবে মুছে নিতে হবে এবং থ্রেডিং- এর কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
ফলের রস ও বরফ
বিভিন্ন রকমের ফলের রস একত্রে নিয়ে তার সাথে কয়েকটি গোটা তেতুল যোগ করুন। এতে করে ত্বক আগে তুলনায় ফর্সা হবে এবং ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়বে না।
বরফ, নিম পাতা ও পুদিনা পাতা
বরফের সাথে নিমপাতা ও পুদিনা পাতা থেকে রস বের করে মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ত্বক প্রাকৃতিক ভাবে উজ্জ্বল হয়। আপনি চাইলে নিমপাতা এবং পুদিনা পাতা একসঙ্গে পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে তারপর বরফ আইস কিউব এ রেখে বরফ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বরফ
তৈলাক্ত তাদের জন্য বরফ সবসময় টোনারের কাজ করে থাকে। ত্বকের যে ছিদ্রগুলো থেকে তেল নিঃসরণ হয় বরফ ব্যবহারে সেই ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে ব্রণ ধীরে ধীরে নির্মূল হয় এবং ত্বকের লালচে ভাব কমে আসে।
মুখে বরফ মাখার উপকারিতা
মুখে বরফ মাখার রয়েছে নানাবিদ উপকারিতা। নিচে মুখে বরফ মাখার উপকারিতা গুলো তুলে ধরা হলো:
সিবাম উৎপাদন হ্রাস করে
ত্বকের ব্রণ সৃষ্টিকারী উপাদান হল সিবাম। ত্বক থেকে অতিরিক্ত সিবাম উৎপাদনের ফলে মুখে ব্রণ তৈরি হয়। ত্বকে নিয়মিত বরফ পড়লে সিবাম উৎপাদন বাঁধাগ্রস্ত হয় এবং ব্রণের প্রকোপ কমে আসে।
ত্বকের দুর্গন্ধ দূর করে
তৈলাক্ত তাঁতের লেবুর রস এর সাথে ব্যবহার করলে দুর্গন্ধ দূর হয়। বিশেষ করে ‘আন্ডারআর্মে’ বরফ ও লেবুর রস একসাথে ব্যবহার করলে অতিরিক্ত ঘাম এবং গন্ধ দূর হয়।
রোদে পোড়া দাগ দূর করে
অ্যালোভেরা জেল এর সাথে বরফ একসাথে মিশিয়ে কনুই, গলা, ঘাড় এ ঘষতে পারেন। কিছু সময় ম্যাসাজ করার পর ১৫ থেকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেললে রোদে পোড়া দাগ দূর হবে।
রিংকেল দূর করে
রিংকেল তৈরি হয়েছে এমন স্থানে একটি নরম কাপড়ের বরফ পেঁচিয়ে ঘষতে থাকুন। ১০ মিনিট ম্যাসাজ পর একটি শুকনো নরম টাওয়াল এর সাহায্যে পানি মুছে নিন। বরফ ব্যবহারের পর মশ্চারাইজার লাগালে রিংকেল দূর হবে।
ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন দূর করে
বিশেষ করে গরমকালে ত্বক বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন এ আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই সময় গুলোতে নিয়মিত বরফ মুখে লাগালে ব্যাকটেরিয়া জনিত ইনফেকশনগুলো সহজেই দূর হয়।
আরো পড়ুন: কোরিয়ানদের মতো ফর্সা হওয়ার উপায়
বরফ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু টিপস
- বরফ দিয়ে টোনার এর কাজ করতে হলে বরফ ব্যবহারের সময় এর সাথে গোলাপজল মিশিয়ে নিন,
- বরফ সহনীয় মাত্রায় ব্যবহার করুন,
- এক জায়গায় বরফ বেশি সময় চেপে ধরে রাখবেন না, এতে করে ত্বক লাল হয়ে যেতে পারে,
- বরফ কখনোই সরাসরি মুখে এপ্লাই করবেন না, একটি নরম কাপড়ে বরফ পেঁচিয়ে ব্যবহার করুন,
- বরফ ব্যবহারে মুখে কোন ফুসকুড়ি দেখা দিলে বরফ ব্যবহার বন্ধ করুন,
- বরফ ব্যবহারে ত্বকে অতিরিক্ত এলার্জি উঠলে ধরে নিবেন বরফ আপনার জন্য শুভকর নয়।
বরফ দিয়ে ত্বকের যত্ন
বরফ দিয়ে ত্বকের যত্ন কিভাবে নিতে হয় তা আমরা ইতিমধ্যে আলোচনা করেছি। বরফ ব্যবহারে কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। নিচে আমরা বরফ এর অথেন্টিক কার্যাবলী গুলো তুলে ধরছি:
- বরফ মুখের ছিদ্রগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করে না,
- বরফের শীতলতার ফলে লোমকূপ সংকুচিত হয়,
- বরফ ব্যবহারে ত্বক সাময়িক টানটান লাগলেও এটা স্থায়ী নয়,
- বরফ দীর্ঘমেয়াদি ত্বকের কালো দাগ দূর করতে পারে না,
- সংবেদনশীল ত্বকের অধিকারীরা বরফ ব্যবহার না করাই ভালো,
- চোখের ফোলা ভাব দূর করতে এবং দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখতে প্রতিদিন চোখের চারপাশে বরফ ঘসতে হবে,
- মুখে যে বরফ ব্যবহার করছেন তা খুবই নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর হতে হবে।
উপসংহার
বরফ আমাদের সবারই হাতের নাগালে থাকে। অনেকেই ত্বকে ব্রণ উঠলে তা বরফ দিয়ে সারিয়ে তুলতে চান। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা বরফ দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। যারা রূপচর্চায় বরফ ব্যবহার করতে চাচ্ছেন আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।
সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১)প্রতিদিন মুখে বরফ দিলে কি হয়?
উঃ প্রতিদিন মুখে বরফ দিলে ত্বকের অযাচিত ছিদ্রগুলো দূর হয়, ব্রণ কমে, ত্বক টান টান হয়, ত্বকের নির্জিবতা দূর হয়।
২)মুখে বরফ দিলে কি ক্ষতি হয়?
উঃ সংবেদনশীল ত্বকের জন্য বরফ দিয়ে রূপচর্চা করা ঠিক নয়। কারণ সংবেদনশীল ত্বকে বরফ ব্যবহারে ত্বকে লালচে ভাব হতে পারে, এলার্জি এবং চুলকানি তৈরি হতে পারে।
৩)ব্রণে বরফ দিলে কি হয়?
উঃ ব্রণে বরফ দিলে সিবাম উৎপাদন ধীরে ধীরে কমে আসে। ফলে ব্রণে বরফ দিলে দুই একদিনের মধ্যেই ব্রনের আকার ছোট হয়ে আসে।