ব্রণের জন্য নিম পাতার ব্যবহার

নিম পাতা ব্যবহারের মাধ্যমে ফুসকুড়ি, দাগ ইত্যাদি দূর করতে হলে জেনে নিতে হবে ব্রণের জন্য নিম পাতার ব্যবহার। অনিয়মিত জীবনযাপন এবং ভেজাল যুক্ত প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে ত্বকের যে ক্ষতি হয় তা দূর করার জন্য নিমের ভেষজ উপাদান এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান খুবই কার্যকর। 

ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ব্রণ, রোদে পোড়া দাগ, এলার্জিজনিত সমস্যা ইত্যাদি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিমের সবুজ পাতা ব্যবহার করতে পারেন। নিমের বিভিন্ন ফেসপ্যাক যেমন: নিম ও হলুদের ফেসপ্যাক, নিম ও তুলসী পাতার ফেসপ্যাক, নিমের পাতা ও পাকা পেঁপের ফেসপ্যাক ব্রণের সমস্যা সারিয়ে তুলতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। 

ব্রণ থেকে চিরতরে রেহাই পাওয়ার জন্য নিম পাতার সাথে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। নিচে আমরা ব্রণের জন্য নিম পাতার ব্যবহার এবং নিমের বিভিন্ন ফেসপ্যাক সম্পর্কে আলোচনা করব:

 

Table of Contents

তৈলাক্ত ত্বকে নিম পাতার ব্যবহার

নিম পাতায় বিদ্যমান অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করার পাশাপাশি তৈলাক্ত ত্বকের বিশেষ যত্ন নিয়ে থাকে। এছাড়া তৈলাক্ত ত্বকের বলিরেখা এবং দাগ ছোপ দূর করতে নিম পাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। নিচে তৈলাক্ত ত্বকে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

নিম পাতার ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন

নিম পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে ঘরে সংরক্ষণ করুন। দুই টেবিল চামচ নিমপাতা গুঁড়া ও দুই টেবিল চামচ চন্দন গুড়া এর সাথে সামান্য দুধ অথবা পানি মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করুন। মুখে অন্তত ২০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এটি খুবই কার্যকরী।

নিম পাতার ক্লিনজার তৈরি করুন

নিমপাতা পানি তো ফুটাতে হবে যতক্ষণ না পর্যন্ত পানির রং সবুজ হয়। পানির রং সবুজ হয়ে আসলে পানি ঠান্ডা করে একটি শুকনো বোতলে সংরক্ষণ করুন। একটি তুলোর সাহায্যে দিনে অন্তত দুইবার মুখে এপ্লাই করুন। এতে করে তৈলাক্ত ভাব অনেকটা কমে আসবে।

নিম পাতার গুঁড়ো ও অ্যালোভেরা জেল এর ফেসপ্যাক

পরিমাণ মতো নিম পাতা গুড়া এর সাথে এক টেবিল চামচ এলোভেরা জেল মিশিয়ে একটি ফেস তৈরি করে ১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন। উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে ত্বকের তৈলাক্ত অংশগুলো পরিষ্কার থাকবে।

নিম পাতা ও মধুর তৈরি ফেসপ্যাক

২ টেবিল চামচ নিমপাতা বাটা এর সাথে এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে মুখে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেললে তোকে তৈলাক্ত ভাব কাটার পাশাপাশি ত্বক হবে উজ্জ্বল এবং ফর্সা।

নিম পাতা বেসন ও টক দই এর ফেসপ্যাক

১ চা চামচ নিমপাতা গুঁড়া, এক চা চামচ টক দই এবং এক চা চামচ বেসন নিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করুন। ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখলে ত্বকের সেবাম উৎপাদন হ্রাস পায় এবং ত্বকের ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়।

নিম পাতা ও গোলাপজলের ফেসপ্যাক

নিম পাতা কুরা এর সাথে পরিমাণ মতো গোলাপজল মিশিয়ে একটি পাতলা ধরনের চেষ্টা তৈরী করুন। ফেসপ্যাক টি সপ্তাহে অন্তত দুইদিন পনের মিনিট করে মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে। তকে তৈলকূপ ভাব কাটার পাশাপাশি ব্রণ ও দূর হবে।

তুলসী পাতা, নিম পাতা, পুদিনা পাতা, লেবুর রসের ফেসপ্যাক

পরিমাণ মতো তুলসী পাতা বাটা এর সাথে নিম পাতা পুদিনা পাতা বেটে মিশিয়ে তার সাথে সামান্য পরিমাণ লেবুর রস যোগ করে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করতে হবে। চাইলে এখানে হলুদের গুড়া ব্যবহার করতে পারবেন। এই ফেসপ্যাকটি ত্বকের অন্তত ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখতে হবে।

নিমের পাতার উপকারিতা 

নিমের পাতা দিয়ে রূপচর্চা সম্পর্কে কমবেশি অনেকেই জানেন। নিমের পাতার উপকারিতা সম্পর্কেও অনেকেই অবগত। চলুন নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক:

পেটের সমস্যা দূর করে

পেটের বিভিন্ন সমস্যা যেমন: ম্যালেরিয়া, পেট এবং অন্ত্রের আলসার, পেটে ব্যথার ইত্যাদি দূর করতে নিম পাতা সাহায্য করে।

কফ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে

প্রতিদিন নিম পাতা সেবনে পিত্ত কমে, কফ নিয়ন্ত্রণে আসে। তাছাড়া কৃমি চিকিৎসার জন্য বহু আগে থেকে নিম পাতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ডায়াবেটিস ও অর্শ্বরোগ রোগ দূর করে

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিমপাতা খেলে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রনে আসে, ডায়াবেটিস এর মাত্রা অনেকাংশ কমে আসে এবং অর্শ্বরোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

চুল সুন্দর রাখে

নিম পাতা ভালো করে বেটে সপ্তাহে অন্তত একদিন  ৩০ মিনিটের জন্য চুলে লাগিয়ে রাখলে চুলের খুশকি দূর হয়, চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়, চুলের আগা ফাটা বন্ধ হয় এবং চুল কালো ও ঝলমলে হয়।

দাঁতের সমস্যা মোকাবেলা করো

নিমের ছাল থেকে তৈরি গুঁড়া দিয়ে প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ করলে দাঁতের যাবতীয় সমস্যা যেমন: দাঁতের গোড়ায় ব্যথা, মাড়িতে ব্যথা, মাড়ির ফোলা ভাব, মুখে দুর্গন্ধ জাতীয় সমস্যা দূর হয়। এক্ষেত্রে নিমের ডাল দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলেও ভালো ফল পাওয়া যায়।

কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে

পেটে কৃমি হলে শিশুরা রোগা হতে থাকে, পেট ফুলে থাকে এবং চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। এরূপ সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য শিশুদের এক চা চামচ নিম পাতার রস সকালে খালি পেটে খাওয়ানো যেতে পারে।

শরীরের টক্সিন দূর করে

প্রতিনিয়ত আমাদের শরীরের যেসব টক্সিন উপাদান প্রবেশ করে তা দূর করার জন্য নিম পাতা ফোটানো পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন এবং খালি পেটে নিম পাতার রস খেতে পারেন।

চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার

চুলকানিতে নিমপাতা লাগালে ঔষধ এর মত কাজ করে। যেভাবে চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার করা যেতে পারে তা হল:

  • চুলকানিতে নিমপাতা বেটে লাগিয়ে রাখতে পারেন।
  • নিম পাতার সাথে কাঁচা হলুদ বেটে চুলকানিতে লাগিয়ে রাখলে ভালো ফল পাওয়া যায়,
  • স্কিন ইরিটেশন এবং চুলকানি এর সমস্যা দূর করতে নিম পাতা ফোটানো পানি দিয়ে গোসল করুন,
  • মুখের এলার্জি দূর করার জন্য নিম পাতা সেদ্ধ করা পানি বোতলে ভোরে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন, এবং বিভিন্ন ফেসপ্যাক বানানোর সময় এই পানি ব্যবহার করুন।
  • চোখের চুলকানি দূর করার জন্য নিম পাতা সেদ্ধ করা পানি দিয়ে চোখে পানির ঝাপটা দিন,
  • যাদের চুলকানির ফলে রেশ সৃষ্টি হয় তারা কাঁচা নিমপাতা চুলকানির স্থানে ঘষতে পারেন।

 

এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার

যারা বিভিন্ন খাবার থেকে অথবা ধুলা ময়লা থেকে সৃষ্ট এলার্জিতে নিয়মিত ভোগেন তারা এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার করতে পারেন। এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার গুলো হলো:

  • খুবই সামান্য পরিমাণ নিম পাতার গুঁড়ো এর সাথে এক চা চামচ ভুষি ভেজানো পানি প্রতিদিন সকালবেলা খালি পেটে খেতে পারেন,
  • প্রতিদিন রাতে গাছ থেকে তোলা সদ্য নিম পাতা ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে নিমপাতা গুলো উঠিয়ে রেখে সেই পানি পান করুন,
  • নিম পাতা পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে সেই পানি দিয়ে এলার্জিজনিত স্থানে ম্যাসাজ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

 

আরো পড়ুন: কোরিয়ানদের মতো ফর্সা হওয়ার উপায়

উপসংহার

আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয় ব্রণের জন্য নিম পাতার ব্যবহার থাকলেও আমরা নিম পাতার বিভিন্ন উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। যারা বিভিন্ন সমস্যায় কেমিক্যালযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে চান না, প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে রোগ থেকে মুক্তি পেতে চান তারা নিম পাতা নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন।

 

সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১)নিম পাতা কিভাবে মুখে দেওয়ার নিয়ম?

উঃ নিম পাতা ফোটানো পানি ফ্রিজে সংরক্ষণ করে একটি তুলার সাহায্যে প্রতিদিন দুইবার মুখে লাগাতে পারেন। এটি টোনার এর কাজ করে।

 

২)মুখে নিম পাতা দিলে কি হয়?

উঃ মুখে নিমপাতা দিলে ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, ত্বকের ফোলা ভাব, ত্বকের এলার্জি জনিত সমস্যা দূর হয়।

৩)নিম পাতা বাটা চুলে দিলে কি হয়?

উঃ নিম পাতা বাটা তুলে দিলে চুলের খুশকি দূর হয়, চুল প্রাণবন্ত হয়, চুলের আগা ফাটা বন্ধ হয় এবং চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।

Spread the love

2 thoughts on “ব্রণের জন্য নিম পাতার ব্যবহার”

Leave a Comment