রূপচর্চা করার ক্ষেত্রে অনেকেই বাজারে থেকে প্রাপ্ত কেমিক্যাল যুক্ত প্রোডাক্ট গুলো ব্যবহার করতে চান না। এক্ষেত্রে মধু লেবু দিয়ে রূপচর্চা হতে পারে সব থেকে ভালো মাধ্যম। শরীরের বাড়তি মেদ ঝড়িয়ে ফেলতে, ত্বকের রং উজ্জ্বল করতে, ত্বকের তারুণ্যতা ধরে রাখতে, ত্বকের বলিরেখা দূর করতে, ব্রণের দাগ দূর করতে, দীর্ঘদিনের কালো দাগ ছোপ দূর করতে মধু এবং লেবু দিয়ে রূপচর্চা করতে পারেন।
আজকের এই পোস্টে আমরা মধু এবং লেবু দিয়ে রূপচর্চা বিষয়ক কয়েকটি টিপস আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। এই টিপসগুলো অনুসরণ করে আপনারাও খুব সহজে সুন্দর এবং উজ্জ্বল ত্বক পাবেন বলে আশা করি। চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে মধু লেবু দিয়ে রূপচর্চা করার পদ্ধতি গুলো জেনে নেওয়া যাক:
মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায়
মধুর প্রাকৃতিক উপাদান ত্বক নরম রাখতে, ত্বকের বলিরেখা দূর করতে এবং এন্টি এজিং এর ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করে থাকে। চিরকালের জন্য মুখ থেকে ব্রণ দূর করতে চাইলে মধু দিয়ে রূপচর্চা করতে হবে। খুব কম সময়ে মধু ও লেবু দিয়ে রূপচর্চা করার পদ্ধতি গুলো হল:
মধু ও লেবুর রসের ফেসপ্যাক
১ চা চামচ লেবুর রস এবং সমপরিমাণ মধু একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে হবে। ১০ থেকে ১৫ মিনিট ভালোভাবে এই মিশ্রণটি দিয়ে ত্বকে ম্যাসাজ করতে হবে। ১৫ মিনিট পর উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ভালো করে মুখ ধুয়ে ফেললে নিজেই পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন।
মধু ও টক দইয়ের ফেসপ্যাক
এক টেবিল চামচ টক দই এর সাথে এক টেবিল চামচ মধু ভালোভাবে ফেটিয়ে নিন। মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা সপ্তাহে এই মিশ্রণটি অন্তত দুইদিন ব্যবহার করুন। যাদের মুখে ব্রণের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এই ফেসপ্যাকটি খুবই ভালো।
মধু দিয়ে তৈরি স্ক্রাব
১ টেবিল চামচ মধু এর সাথে সমপরিমাণ চিনি মিশিয়ে একটি স্ক্রাব তৈরি করুন। দশ মিনিট সময় নিয়ে স্ক্রাব টি আলতো হাতে মুখে ঘষতে হবে। এই স্ক্রাবটি ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে এবং ত্বক উজ্জ্বল করে। তবে এই স্ক্রাবটি ব্যবহারের পর অবশ্যই মুখে একটি ভালো ব্র্যান্ডের ময়শ্চারাইজার এপ্লাই করতে হবে।
মধু ও পেঁপের তৈরি ফেসপ্যাক
২ টেবিল চামচ পাকা পেঁপে হাতের সাহায্যে ভালোভাবে চটকে নিয়ে এর সাথে ২ চা চামচ মধু মিশিয়ে একটি ফেস প্যাক তৈরি করুন। ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট হালকা হাতে ম্যাসাজ করতে হবে। এন্টি এজিং এর জন্য এই ফেসপ্যাকটি খুব ভালো কাজ করে থাকে।
মধু ও পাকা কলার ফেসপ্যাক
২ টেবিল চামচ পাকা কলার পেস্ট ও ১ টেবিল চামচ মধু ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট হালকা হাতে ম্যাসাজ করতে হবে। ১৫ মিনিট পর উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে একটি মশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। ত্বকের কালো দাগ এবং অন্যান্য দাগ ছোপ দূর করতে এই মিশ্রণটি খুবই কার্যকরী।
মধু, হলুদের গুঁড়া ও গোলাপজলের ফেসপ্যাক
১ টেবিল চামচ মধু এর সাথে এক চিমটি হলুদ গুঁড়া ও কয়েক ফোঁটা গোলাপজল মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। মিশ্রণটি ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর শুকিয়ে আসলে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। কিছুদিন নিয়মিত ব্যবহারেই তবে উজ্জ্বল এবং আকর্ষণীয়।
মধু ও চন্দন গুড়ার ফেসপ্যাক
১/২ চা চামচ মধু এর সাথে ৪ চা চামচ চন্দনগুলো মিশিয়ে একটি ঘন ফেসপ্যাক তৈরি করুন। মিশ্রণটি গলায়, ঘাড়ে এবং মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করে পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। তখন নরম এবং উজ্জ্বল রাখার জন্য এই ফেস প্যাকটি খুবই কার্যকরী।
মধু ও বেসনের ফেসপ্যাক
হাফ চা চামচ বেসনের সাথে সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে ত্বকের কালো স্থানে লাগিয়ে রাখুন। পুরোপুরি শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এতে করে ত্বকের কালো দাগ নিমিষেই দূর হবে।
জনপ্রিয় ব্লগ: রূপচর্চায় দুধ ও কাঁচা হলুদের ব্যবহার
মধু ও লবণের তৈরি ফেসপ্যাক
কিছুটা পরিমাণ লবণ নিয়ে তার সাথে সামান্য পরিমাণ মধু যোগ করে আলতো হাতে মুখে ম্যাসাজ করতে হবে লবণ পুরোপুরি গলে যাওয়া পর্যন্ত। এখানে মোটা দানার লবণ ব্যবহার করা ভালো। ফেস প্যাকটি ব্যবহারের পর অবশ্যই মশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
মধু ও টমেটো দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক
একটি টমেটো পেস্ট এর সাথে সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করে মুখে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। ২০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেললে ত্বক বেশ উজ্জ্বল দেখাবে।
লেবু দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
ত্বকে লেবু ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায় এ সম্পর্কে আমরা কম বেশি সবাই জানি কিন্তু লেবু দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই। চলুন জেনে নেই লেবু দিয়ে রূপচর্চা করার উপায় গুলো কি কি?
- লেবুতে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মুখ পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করে থাকে,
- মধু ও লেবু একসাথে ত্বকে লাগালে প্রাকৃতিক ট্যান হিসেবে কাজ করে,
- লেবুতে বিদ্যমান প্রাকৃতিক উপাদান এন্টিফাঙ্গাল হিসেবে কাজ করে যা ত্বকের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে,
- লেবু ও মধু একসাথে ত্বকে লাগালে ত্বক দ্রুত ফর্সা হয়,
- শসার রসের সাথে সমপরিমাণ লেবুর রস ত্বকের এপ্লাই করলে ত্বকের শুষ্কতা দূর হয়,
- লেবুর রসের সাথে দুধ মিশিয়ে ত্বকে ম্যাসাজ করলে ত্বক হয়ে উঠে আকর্ষণীয়।
তবে লেবু দিয়ে রূপচর্চা করার আগে কয়েকটি বিষয় আপনার মাথায় রাখতে হবে। ত্বকের জন্য লেবু উপকারী হলেও এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। সেগুলো হলো:
- সেনসিটিভ ত্বকের জন্য লেবুর রস খুবই ক্ষতিকর,
- লেবুর রস এ বিদ্যমান সাইট্রিক এসিড ত্বকে চুলকানি তৈরি করতে পারে,
- পিগমেন্টেশনের সমস্যা তৈরি করার জন্য লেবুর রস দায়ী,
- শুধুমাত্র লেবুর রস ত্বকে কখনোই এপ্লাই করা যাবে না, লেবুর রস মুখে ব্যবহার করার সময় সমপরিমাণ পানি ব্যবহার করুন।
গরম পানিতে লেবু ও মধুর উপকারিতা
সকালে উঠে গরম পানিতে লেবু ও মধু মিশিয়ে খেলে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়। চলুন জেনে নেই গরম পানিতে লেবু ও মধুর উপকারিতা গুলো কি কি?
- দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে,
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে,
- প্রচুর পরিমাণে শক্তি পাওয়া যায়,
- বুকে ব্যথা এবং পাকস্থলীতে জমে থাকা টক্সিন দূর হয়,
- নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর হয়,
- পেট ফুলে থাকা এবং হজমের সমস্যা দূর হয়,
- ত্বকের বলি রেখা এবং ব্যাকটেরিয়া দূর হয়।
শেষ কথা
মধু লেবু দিয়ে রূপচর্চা সম্পর্কে যারা জানতে চাচ্ছিলেন আশা করি আমাদের আজকের পোস্টটি পড়ে তারা উপকৃত হবেন। আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১) মধু ও লেবুর রস মুখে দিলে কি হয়?
উঃ ত্বকের সংক্রমণ এবং ব্রণ দূর হয়।
২) লেবুর রস মুখে দিলে কি ক্ষতি হয়?
উঃ অন্য কোন উপাদানের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে এপ্লাই না করলে পি এইচ ভারসাম্য নষ্ট হয়।
৩) চিনি ও লেবুর রস মুখে দিলে কি হয়?
উঃ চিনি ও লেবুর রসের তৈরি স্ক্রাব ত্বকের জমে থাকা ময়লা দূর করতে এবং মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে।
1 thought on “মধু ও লেবু দিয়ে রূপচর্চা”