ঘরোয়া উপায়ে মসুর ডাল দিয়ে রূপচর্চা

বাঙালির রান্নাঘরে মসুর ডালের ব্যাপক সমাদর রয়েছে। মসুর ডালে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকায় বাঙালির খাবার তালিকায় এই খাবারটি প্রায়শই থাকে। কিন্তু অনেকেই জানেন না মসুর ডাল দিয়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় রূপচর্চা করা সম্ভব। আজকের পোস্টে আপনারা জানতে পারবেন কিভাবে ঘরোয়া উপায়ে মসুর ডাল দিয়ে রূপচর্চা করা যায়। 

ত্বকের রোদে পোড়া দাগ দূর করতে, ত্বকের কালো দাগ এবং ছোপ দূর করতে এমনকি দীর্ঘদিনের ব্রণের দাগ দূর করতেও মসুর ডালের জুড়ি মেলা ভার। ত্বকের অতিরিক্ত পশম দূর করতে অথবা ত্বক এক্সফোলিয়েট করার কাজেও মসুর ডাল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

অনেকেই পার্লারে গিয়ে অথবা বাজার থেকে ক্ষতিকর কেমিক্যাল মিশ্রিত প্রোডাক্ট কিনে ত্বকের ক্ষতি করে থাকেন। তারা ঘরে বসে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য এবং অল্প সময়ে ফর্সা হওয়ার জন্য মসুর ডাল দিয়ে রূপচর্চা করতে পারেন। মসুর ডাল দিয়ে রূপচর্চা করার কিছু টিপস নিচে উল্লেখ করা হলো-

ত্বকে মসুর ডালের উপকারিতা

সকালে ঘুম থেকে উঠে ত্বকে মসুর ডালের পেস্ট লাগালে বিভিন্ন স্কিনের সমস্যা থেকে নিমিষেই পরিত্রাণ পাওয়া যায়। চলুন এক নজরে দেখে নেই ত্বকে মসুর ডালের উপকারিতা গুলো কি কি?

ত্বকের ট্যান দূর করে

দীর্ঘদিন ধরে ত্বক রোদে পুড়ে কালো হয়ে গেলে মসুর ডাল বাটা লাগাতে পারেন। ৩ টেবিল চামচ মসুর ডাল বাটা, ৩ টেবিল চামচ টক দই, সামান্য হলুদ গুঁড়া, ৩ টেবিল চামচ বেসন একসঙ্গে ভালোভাবে ফেটিয়ে নিন। মিশ্রণটি ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

ত্বকের শুষ্কতা দূর করে

২ টেবিল চামচ মসুর ডাল, ২ টেবিল চামচ মধু একসঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে করে ত্বক হবে কোমল এবং মসৃণ।

দীর্ঘদিনের কালো দাগ দূর করে

২ টেবিল চামচ মসুর ডাল বাটা এর সাথে কিছুটা পরিমাণ অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ত্বকে লাগিয়ে রাখতে হবে। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন মিশ্রণটি ত্বকে অ্যাপ্লাই করলে খুব তাড়াতাড়ি কালো দাগ দূর হবে।

ত্বক এক্সফোলিয়েট করতে সাহায্য করে

পার্লারে না গিয়ে ঘরে বসে ত্বক এক্সফোলিয়েট করতে চাইলে ২ টেবিল চামচ মসুর ডালের সাথে ২ চা চামচ দুধ মিশিয়ে মুখে এপ্লাই করুন। কিছুটা সময় মুখ ভালোভাবে ঘষে ঘষে মাসাজ করতে হবে। এতে করে ত্বকের মৃত কোষ দূর হবে এবং ত্বক হবে কোমল এবং নরম।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রাখে

ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রাখার জন্য সপ্তাহে অন্তত দুই দিন ৫০ গ্রাম মসুর ডাল বাটা এর সাথে ১ চা চামচ কাঁচা দুধ এবং পরিমাণ মতো বাদাম তেল ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে সবথেকে ভালো ফলাফল পাবেন।

ফেসওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করুন

ব্যস্ততার কারণে আমাদের ত্বকের যত্ন নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। এমন অবস্থায় কোন রকম কেমিক্যাল ছাড়া মসুর ডালের তৈরি ফেসওয়াশ হতে পারে একটি উত্তম ব্যবস্থা। ১ চা চামচ মসুর ডালের পেস্ট,২ চা চামচ কাঁচা দুধ, ৩ ফোঁটা নারিকেল তেল, এক চিমটি হলুদ গুঁড়া ভালোভাবে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। মিনিট খানেক মুখে ভালোভাবে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেললে ভালো ফল পাবেন।

ত্বকের অতিরিক্ত পশম পরিষ্কার করে

নারীদের ত্বকের অযাচিত পশম দূর করার জন্য ১ চামচ মসুর ডাল পেস্টের সাথে ১ চামচ চালের গুঁড়া, ১ চা চামচ দুধ এবং সমপরিমাণ বাদাম তেল মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন পাঁচ মিনিট করে এই মিশ্রণটি ত্বকে লাগিয়ে রাখলে অতিরিক্ত পশম দূর হবে।

ত্বকের শুষ্কতা রোধ করে

২ টেবিল চামচ মসুরের ডালের পেস্ট এর সাথে সমপরিমাণ গাঁদা ফুল একসাথে ভালোভাবে বেটে নিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। ১৫ মিনিট মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে রেখে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ফেলুন। এই মাস্কটি ব্যবহারের ফলে ত্বক হয়ে উঠবে নরম এবং তুলতুলে।

স্কিনের আদ্রতার ঘাটতি দূর করে

ত্বকের বলিলেখা দূর করতে এবং স্কিনের আদ্রতার ঘাটতি পূরণ করতে পরিমাণ মতো মসুর ডালের পেস্ট এর সাথে সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে কয়েকদিন ত্বকে এপ্লাই করুন। এতে করে স্কিনের আদ্রতার ঘাটতি পুরোপুরি পূরণ হবে।

ব্রণের দাগ দূর করতে মসুর ডাল

ত্বকের ধরন অনুযায়ী ব্রণের দাগ কমাতে বিভিন্নভাবে মসুর ডাল ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে মসুর ডাল ভেজানো পানি ও ব্রণ প্রতিরোধে বেশ চমৎকার কাজ করে। চলুন জেনে নেই ব্রণের দাগ দূর করতে মসুর ডাল এর ব্যবহার-

  • মসুরের ডাল পেস্টের সাথে এক চা চামচ দুধ এবং ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে ত্বকে এপ্লাই করলে ব্রনের দাগ দূর হয়।
  • ত্বকে জমে থাকা দীর্ঘদিনের ব্রনের দাগ দূর করতে পরিমাণ মতো মসুর ডাল বাটা এর সাথে এক চা চামচ চালের গুড়া মিশিয়ে মুখে লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায়।
  • মসুর ডালের পেস্ট ত্বকে লাগিয়ে ৫ মিনিট ম্যাসাজ করলে ব্রণের বিরুদ্ধে ভালো কাজ করে।
  • মসুর ডালের পেস্ট এর সাথে পরিমাণ মতো সাদা ভিনেগার এবং লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করলে ব্রণ এবং ব্রণের দাগ নিমিষেই দূর হয়।
  • এক রাতেই ব্রণ দূর করতে চাইলে মসুরের ডালের গুড়া এর সাথে পরিমাণ মতো মটরের ডালের পেস্ট, গ্লিসারিন, গোলাপজল, কাঠবাদাম এর তেল ভালোভাবে মিশিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। সকালে উঠে ধুয়ে ফেললে ভালো ফল পাবেন।

মসুর ডাল দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়

মসুর ডাল দিয়ে বিভিন্ন ফেসপ্যাক তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে ত্বকে লাগাতে ব্যবহার করলে ত্বক ফর্সা হয়ে ওঠে। তবে সপ্তাহের মুসুরির ডাল দুইবারের বেশি ত্বকে ব্যবহার করা ঠিক নয়। চলুন জেনে নেই মসুর ডাল দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় গুলো কি কি?

মসুর ডাল ও মধুর ফেসপ্যাক

১ চা চামচ মসুর ডাল বাটা এবং সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে ত্বকে ১৫ থেকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখতে হবে। ২০ মিনিট পর হালকা হাতে ম্যাসাজ করে মুখ পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। কয়েক সপ্তাহে নিয়মিত দুইবার ব্যবহারে ত্বক হয়ে উঠবে ফর্সা এবং আকর্ষণীয়।

মসুর ডাল, টক দই ও বেসনের মিশ্রণ

এক চা চামচ মসুর ডাল বাটা, এক চা চামচ টক দই, এক চা চামচ বেসন এবং এক চিমটি পরিমাণ হলুদ গুঁড়া ভালোভাবে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। ত্বকে অন্তত ১৫ মিনিট লাগিয়ে রেখে হালকা হাতে ম্যাসাজ করে মুখ পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এক্ষেত্রে উষ্ণ গরম পানি ব্যবহার করা ভালো। কিছুদিন ব্যবহারই ত্বক হয়ে উঠবে ফর্সা এবং কোমল।

চালের গুড়া ও মসুর ডালের ফেসপ্যাক

ত্বকের রোদে পোড়া দাগ দূর করতে, দীর্ঘদিনের ব্রণের কালো দাগ দূর করতে পরিমাণমতো মসুর ডালের পেস্ট এর সাথে সমপরিমাণ চালের গুড়া মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন ব্যবহারে টক হয়ে উঠবে আকর্ষণীয়, কোমল এবং উজ্জ্বল।

আমাদের শেষ কথা

প্রিয় পাঠক পাঠিকা, আপনারা যারা বাজারের ক্ষতিকর কেমিক্যালযুক্ত প্রোডাক্ট ত্বকে এপ্লাই করতে চাচ্ছেন না তারা মসুর ডাল দিয়ে রূপচর্চা করতে পারেন ঘরে বসেই। এতে করে ত্বকে কোনরকম ক্ষতি হবেনা এবং প্রাকৃতিক উপায়েই ত্বক থাকবে সুন্দর এবং মসৃণ। স্কিনের ব্রাইটনেস বাড়াতে, স্কিনের বাড়তি পশম দূর করতে এবং ত্বক ও সুন্দর রাখার জন্য আমাদের টিপস গুলো অনুসরণ করতে পারেন।

Spread the love

Leave a Comment