রূপচর্চায় যুগ যুগ ধরে দুধ এবং কাঁচা হলুদ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অনেকেই রয়েছে যারা বাজারের ক্ষতিকর প্রোডাক্ট দিয়ে রূপচর্চা করতে চান না। আবার অনেকের সময়ের অভাবে পার্লারে যাওয়া সম্ভব হয় না।
ঘরে বসেই কার্যকর উপায়ে দুধ এবং কাঁচা হলুদ দিয়ে রূপচর্চা করতে পারবেন। কাঁচা হলুদের উপকারী উপাদান ত্বকের ব্রণ, র্যাশ, অ্যালার্জি এবং ত্বকের পোড়া দাগ দূর করতে সাহায্য করে। আর কাঁচা দুধ তোকে এপ্লাই করলে ত্বক হয়ে ওঠে উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত এ সম্পর্কে আমরা কমবেশি সবাই জানি।
তাহলে দুধ এবং কাঁচা হলুদ যখন একসাথে ত্বকে এপ্লাই করা হয় তখন এর থেকে কতটুকু উপকারিতা পাওয়া যায় তা একবার ভেবে দেখুন! আজকের এই পোস্টে আমরা রূপচর্চায় দুধ এবং কাঁচা হলুদের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
কাঁচা হলুদের ফেসপ্যাক
সপ্তাহে অন্তত দুই দিন কাঁচা হলুদ দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক ত্বকের নানা রকম সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। কারণ কাঁচা হলুদের অন্য নাম হলো ‘গোল্ডেন স্পাইস অফ লাইফ’। কাঁচা হলুদ নিয়মিত ব্যবহারে রোদে পোড়া দাগ, ব্রণের সমস্যা, স্কিনের বিভিন্ন ইনফেকশন নিমিষেই দূর হয়। চলুন জেনে নেই কাঁচা হলুদের ফেসপ্যাক গুলো কিভাবে তৈরি করতে হয়?
হলুদ মধু এবং কাঁচা দুধের ফেসপ্যাক
১/৪ কাঁচা হলুদ বাটা, এক চা চামচ মধু এবং এক চা চামচ কাঁচা দুধ ভালোভাবে মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করে ত্বকে লাগিয়ে রাখতে হবে। প্যাকটি শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার ব্যবহার করলে ব্রণের সমস্যা অনেকটা কমে আসবে। এই ফেসপ্যাকটি ত্বকের মৃত কোষ দূর করে ত্বক উজ্জ্বল করবে।
হলুদের পেস্ট, অ্যাভোকাডো এবং টকদই
১/৪ চামচ কাঁচা হলুদের পেস্ট, এক টেবিল চামচ অ্যাভোকাডোর পেস্ট এবং এক চা চামচ টক দই ভালোভাবে মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে ত্বকে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। ১৫ মিনিট পর ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে ত্বক পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই মিশ্রণটি ত্বকের এন্টি এজিং হিসেবে কাজ করে। এবং তোকে তাকানো দীর্ঘদিন ধরে রাখতে সাহায্য করে।
কাঁচা হলুদের পেস্ট, লেবুর রস ও মধু
১/৪ চামচ কাঁচা হলুদের পেস্ট, হাফ চা চামচ লেবুর রস এবং এক টেবিল চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে ত্বকে ১০ মিনিট লাগিয়ে রাখতে হবে। মিশ্রণটি ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত একদিন ব্যবহার করলেও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
কাঁচা হলুদের পেস্ট, গোলাপজল এবং বেসন
পরিমাণ মতো কাঁচা হলুদ বাটা এর সাথে ২ টেবিল চামচ গোলাপ জল এবং ২ টেবিল চামচ বেসন ভালোভাবে মিশিয়ে একটি ফেস প্যাক তৈরি করুন। ১৫ মিনিট এই ফেস প্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে রাখার পর উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত দুইদিন ব্যবহারে ব্রণের প্রবণতা অনেকটা কমে আসবে।
কাঁচা হলুদের পেস্ট, টক দই এবং টমেটো
ত্বকের রোদে পোড়া দাগ দূর করতে ১/৪ চমচ কাঁচা হলুদ বাটা, ১ টেবিল চামচ টক দই এবং সমপরিমাণ টমেটো পিউরি ভালোভাবে মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করুন। এই প্যাকটি ত্বকে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রেখে পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
কাঁচা হলুদ, চালের গুঁড়ো, অলিভ অয়েল ও দুধের ফেসপ্যাক
ব্রণের সমস্যা চিরতরে দূর করার জন্য ২ টেবিল চামচ কাঁচা হলুদ বাটা, ১ টেবিল চামচ চালের গুঁড়ো, ২ টেবিল চামচ দুধ ও এক চা চামচ অলিভ অয়েল দিয়ে একটি পেষ্ট তৈরি করুন। মিশ্রণটি ত্বকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। মুখ ধোয়ার পর ত্বকে যে কোন ব্রান্ডের একটি ভালো মশ্চারাইজার এপ্লাই করতে হবে।
রূপচর্চায় দুধের ব্যবহার
ত্বকের জেল্লা বাড়াতে, কালো দাগ দূর করতে, ডার্ক সার্কেল দূর করতে, ব্রণের সমস্যা দূর করতে কাঁচা দুধের জুড়ি মেলা ভার। অনেক কাল আগে থেকেই প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে কাঁচা দুধের ব্যবহার হয়ে আসছে রূপচর্চার জন্য। চলুন জেনে নেই রূপচর্চায় দুধের ব্যবহার গুলো কি কি?
- কাঁচা দুধে বিদ্যমান ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বকের প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েটর হিসেবে কাজ করে এবং ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে।
- কাঁচা দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ডি এবং ই। এটি বার্ধক্যের ছাপ দূর করতে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
- ত্বকের ব্রণের সমস্যা এবং দাগ ছোপ দূর করতে হলুদের গুড়োর সাথে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে ব্যবহার করুন।
- কাঁচা দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগালে প্রাকৃতিকভাবে মশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। ত্বক নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে ক্লিনজার হিসেবেও এই উপাদানটি ব্যবহার করতে পারেন।
- ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখার জন্য মুলতানি মাটির সাথে পরিমাণ মতো কাঁচা দুধ মিশিয়ে ত্বকে এপ্লাই করতে পারেন। এতে করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
- সামান্য কাঁচা দুধের সাথে পরিমাণমতো চিনি এবং বেসন মিশিয়ে একটি স্ক্রাব তৈরি করে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বক নরম রক্ত সাহায্য করে।
- ২ চা চামচ কাঁচা দুধ অর্ধেক পাকা কলা একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে ২০ মিনিট ত্বকে লাগিয়ে রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের মশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে।
- যদি কোন উপাদান হাতের কাছে না থাকে অথবা ব্যবহার করতে ইচ্ছা না করে তাহলে শুধু কাঁচা দুধ অথবা দুধের সর ত্বকে লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন ১৫ মিনিট। এটি ত্বকের টোনার হিসেবে কাজ করবে এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে।
জনপ্রিয় ব্লগ: কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা
ত্বকে কাঁচা হলুদের ব্যবহার
ত্বকে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করার আগে আপনাকে অবশ্যই জেনে নিতে হবে আপনার কোন স্কিনের সমস্যা আছে কিনা? কোন ধরনের স্কিনের সমস্যা থাকলে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। তবে আপনি যদি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে থাকেন তবে ত্বকে কাঁচা হলুদের ব্যবহার নিয়মিত করলে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে আকর্ষণীয় এবং সুন্দর। চলুন ত্বকে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করলে কি হয় তা জেনে নিই:
- বলি রেখার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করা খুবই যুক্তিযুক্ত।
- ত্বকের হারিয়ে যাওয়া জেল্লা বা উজ্জ্বলতা ফিরে পাওয়ার জন্য উপরিউক্ত নিয়মে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করতে পারেন।
- ব্রণের সমস্যা নিরাময়ে কাঁচা হলুদ খুবই ভালো কাজ করে।
- সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বক ভালো রাখতে কাঁচা হলুদের জুড়ি মেলা ভার।
- কাঁচা হলুদ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ফেসপ্যাক ডার্ক সার্কেল এবং রোদে পোড়া দাগ দূর করে।
আমাদের শেষ কথা
প্রিয় পাঠক / পাঠিকা, আপনারা যারা রূপচর্চায় দুধ ও কাঁচা হলুদের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিলেন আশা করি আমাদের আজকের পোস্টটি পড়ে তারা উপকৃত হয়েছে। আমাদের পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে আমাদের দেওয়া টিপসগুলো অনুসরণ করতে পারেন। আশা করি এতে করে আপনারা একটি ঝলমলে উজ্জ্বল ত্বক পাবেন।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১) দুধ আর হলুদ মুখে দিলে কি হয়?
উঃ দুধ এবং হলুদ একসাথে মুখে লাগালে ত্বক উজ্জ্বল দেখা যায় এবং ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
২) কোন দুধ খেলে ত্বক ফর্সা হয়?
উঃ কাঁচা দুধ ত্বক ফর্সা করতে সাহায্য করে।
৩) ত্বক সাদা করার জন্য হলুদ কিভাবে ব্যবহার করবেন?
উঃ কাঁচা হলুদ এবং লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে ত্বকের ব্যবহার করলে ত্বকের কালো দাগ দূর হয় এবং ত্বক সাদা হয়।
৪) হলুদ খেলে কি ত্বক ভালো হয়?
উঃ নিয়মিত হলুদের গুড়া দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে বার্ধক্য প্রতিরোধ হয়।
6 thoughts on “রূপচর্চায় দুধ ও কাঁচা হলুদের ব্যবহার”