ত্বক হাইড্রেট এবং দাগ মুক্ত রাখতে জেনে নিন শসা ব্যবহারের উপকারিতা ও শসা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়। শসায় বিদ্যমান রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ৯০ শতাংশ পানি, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে ও ক্যাফিক এসিড।
এই উপাদানগুলো ত্বকের পানি শুন্যতা দূর করতে, ত্বক উজ্জ্বল এবং নরম করতে সাহায্য করে। নিয়মিত শসার রস ব্যবহার করলে ত্বকের চুলকানি এবং ব্রনের সমস্যা অনেকাংশে কমে আসে। শসার রসের সাথে নারকেল তেল মিশিয়ে তোকে ম্যাসাজ করলে ভালো মশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে।
তাছাড়া চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল দূর করতে, রোদে পোড়া এবং কালচে দাগ দূর করতে শসার রসের ফেসপ্যাক খুবই কার্যকরী। এছাড়া শসার পুষ্টিকর উপাদান ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে। চলুন তাহলে শসা ব্যবহারের উপকারিতা ও শসা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক:
শসা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
শসার গুণগত উপাদান গুলো ত্বক কিছুদিনের মধ্যেই ফর্সা হতে সাহায্য করে। শসা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় গুলো হলো:
শসা ও অ্যালোভেরা জেল এর ফেসপ্যাক
অর্ধেক পরিমাণ শসা ব্লেন্ড করে রস বের করে নিয়ে তার সাথে পরিমাণ মতো অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করুন। ১৫ মিনিট পর উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিলে ত্বকের রোদে পোড়া দাগ এবং কালচে দাগ দূর হবে।
শসা ভেজানো পানি
রাতে এক গ্লাস পানির ভেতর কয়েক টুকরো শসা ছেড়ে দিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন। পরের দিন সকালে শসা ভেজানো পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এতে করে সারাদিন ত্বক হাইড্রেট এবং উজ্জ্বল থাকবে।
শসার রস ও নারকেল তেলের ব্যবহার
একটি শসা ব্লেন্ড করে রস বের করে নিতে হবে। সেখান থেকে পরিমাণ মতো শসার রস নিয়ে তার সাথে কয়েক ফোঁটা নারিকেল তেল মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখতে হবে। এই ফেসপ্যাকটি রাতে ঘুমানোর আগে ব্যবহার করে সকালে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
গ্রিন টি ও শসা
এক কাপ গরম পানিতে গ্রিন টি মিশিয়ে কার সাথে এক টেবিল চামচ শসার রস মিশিয়ে নিন। একটি স্প্রে বোতলে ঢেলে প্রতিনিয়ত মুখ পরিষ্কার করতে এটি ব্যবহার করুন।
মুখে শসা ব্যবহারের উপকারিতা
প্রাকৃতিক পুষ্টিগুণে ভরপুর শসা ব্যবহারের নানাবিধ উপকারিতা রয়েছে। মুখে শসা ব্যবহারের উপকারিতা গুলো হল:
ত্বক দাগহীন রাখে
শসার রসে বিদ্যমান ব্লিচিং ত্বক দাগহীন রাখতে সাহায্য করে। সব থেকে ভালো ফল পাওয়ার জন্য শসার রসের সাথে দই এবং হলুদ গুঁড়া ব্যবহার করতে পারেন।
ত্বক হাইড্রেট রাখে
শসায় প্রচুর পরিমাণে পানি বিদ্যমান। শসার বিদ্যমান ৯৫ ভাগ পানি সারাদিন ত্বক হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে। শসার সাথে গোলাপজল মিশিয়ে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
ত্বক টানটান রাখে
ত্বকের টোনার হিসেবে শসার রসের সাথে পরিমাণ মতো গোলাপজল, মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে ১৫ মিনিট ত্বকে লাগিয়ে রাখতে হবে। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের কুঁচকানো ভাব, ফাইন লাইন্স দূর হবে।
ত্বকের ব্রেক আউট কমায়
এক কাপ শশান রসের সাথে কয়েক ফোটা টি ট্রি ওয়েল মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখলে ত্বক শুষ্ক না হয়েই অটোমেটিক্যালি ত্বকের ব্রেক আউট কমে যায়।
তৈলাক্ত ভাব দূর করে
শসার পেস্ট এর সাথে কাঁচা হলুদ এবং লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করতে এই ফেসপ্যাক টি খুবই কার্যকর।
জনপ্রিয় ব্লগ: ঘরোয়া পদ্ধতিতে বেসন দিয়ে রূপচর্চা
নখ শক্ত করে
শসায় বিদ্যমান সিলিকা নখ শক্ত এবং সুন্দর করতে সাহায্য করে। প্রতিনিয়ত খাবারের সাথে শসার সালাদ খেলে নখ প্রাকৃতিকভাবে শক্ত হয়।
শসা দিয়ে রূপচর্চা
লো ক্যালরি এবং ডায়েট্রি ফাইবারে সমৃদ্ধ শসা খাবার তালিকায় অনেক আগে থেকেই স্থান করে নিয়েছে। শসার বিভিন্ন গুনাগুন সম্পর্কে জেনে বর্তমানে অনেকেই শসা দিয়ে রূপচর্চা করেন। রূপচর্চায় শসা কিভাবে সাহায্য করে চলুন তা জেনে নেওয়া যাক:
ব্রণ কমাতে সাহায্য করে
শসার রস, গোলাপ জল এবং মুলতানি মাটির
তৈরি ফেসপ্যাক রাতারাতি ব্রণ কমাতে সাহায্য করে।
চুলের বৃদ্ধি নিশ্চিত করে
শসায় বিদ্যমান ফসফরাস এবং ক্যালসিয়াম চুলের বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। শসা রসের সাথে একটি ডিম মিশিয়ে চুলে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু করুন। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন ব্যবহারে চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে।
চুলের গোড়া মজবুত করে
শসার পেস্ট এর সাথে একটি ডিম এবং ৩ চা চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে একটি হেয়ার প্যাক তৈরি করুন। ২০ মিনিট চুলে লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু করে ফেললে চুলের গোড়া মজবুত হবে এবং চুল প্রাণবন্ত হবে।
ঘাড়ের কালো দাগ দূর করে
পরিমাণ মতো শসার পেস্ট এর সাথে ২চা চামচ লেবুর রস, ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে ঘাড়ে লাগিয়ে রাখলে ঘাড়ের কালো দাগ দূর হয়।
শসা মুখে দিলে কি হয়
শসা মুখে দিলে কি হয় এ সম্পর্কে অনেকে অনলাইনে সার্চ করে জানতে চান। শসা মুখে দিলে কি হয় চলুন তা জেনে নেওয়া যাক:
- রোদে পোড়া দাগ এবং ব্রণের দাগ দূর হয়,
- ত্বককে ধীরে ধীরে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করে,
- প্রাকৃতিকভাবে ত্বক হাইড্রেট রাখে,
- ত্বকের টোনার হিসেবে কাজ করে,
- ত্বকের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে,
- ত্বকের ফুসকুড়ি, ব্রণ, এলার্জি দূর করে,
- শসার তৈরি ক্রিম ত্বকের জেল্লা বাড়াতে সাহায্য করে,
- অ্যান্টি রিংকল মাক্স হিসেবে কাজ করে,
- শসার রস এবং চিনি সুদিং স্ক্রাব হিসেবে কাজ করে,
- শসার রস এবং এলোভেরা এর মিশ্রণ কুলিং লোশন হিসেবে কাজ করে।
চোখে শসা দিলে কি হয়
শসার থায়ামিন, রিবোফ্লোবিন, ভিটামিন বি৬, ক্যালসিয়াম চোখের দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া শসার জলীয় অংশ চোখের শুষ্ক ভাব অথবা চোখের ময়লা দূর করতে সাহায্য করে। চলুন এক নজরে দেখে নেই চোখে শসা দিলে কি হয়?
চোখের ফোলা ভাব দূর করে
শসার রয়েছে প্রদাহনাশক উপাদান যা চোখের চারপাশের ফোলা ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
চোখের ক্লান্তি দূর করে
শসায় অতিরিক্ত জলীয় অংশ থাকায় এটি চোখের ক্লান্তি দূর করে চোখ সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
চোখের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে
শসায় বিদ্যমান অ্যাসকরবিক ও ক্যাফেইক অ্যাসিড চোখের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে। টুকরো শসা ফ্রিজে রেখে চোখে ব্যবহার করলে চোখ বিশ্রাম পায়।
ডার্ক সার্কেল দূর করে
শসার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও সিলিকা চোখের নিচে জমে থাকা দীর্ঘ দিনের ডার্ক সার্কেল দূর করতে সাহায্য করে।
দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখে
যারা দীর্ঘ সময় ধরে গেজেটের দিকে তাকিয়ে থাকেন তাদের দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখার জন্য এক টুকরো শশা প্রতিদিন চোখে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এতে করে দৃষ্টি শক্তি স্বাভাবিক থাকবে।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক পাঠিকা, আমাদের আজকের পোস্টে আমরা শসা ব্যবহারের উপকারিতা ও শসা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় এবং শসার তৈরি ফেসপ্যাক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। যারা বাজারের প্রক্রিয়াজাত উপঢৌকন ব্যবহার করতে চান না তারা শসা দিয়ে রূপচর্চা করতে পারেন ঘরে বসেই। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১)শসা খেলে কি ফর্সা হয়?
উঃ শসা খেলে ধীরে ধীরে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং তৈরি বিভিন্ন ফেসপ্যাক ত্বকে লাগালে ত্বক ফর্সা হয়।
২)শসা মুখে কিভাবে লাগাবেন?
উঃ শসা থেকে রস বের করে তার সাথে গোলাপ জল, লেবুর রস, মধু, অলিভ অয়েল, মুলতানি মাটি ইত্যাদি মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ত্বক স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা ফিরে পায়।
৩) শসা দিয়ে কি মুখে ঘষা যায়?
উঃ শসা মুখে দিলে ত্বকের উপর থেকে কালো আস্তরণ কেটে যায়, ত্বক টান টান থাকে, বার্ধক্য জনিত ছাপ দূর হয় এবং ত্বক ফর্সা হয়।