কোমর ছাপানো সুন্দর, মসৃণ চুল পাওয়ার জন্য আপনাকে জানতে হবে চুলের যত্ন ও চুল লম্বা করার উপায়। বাজারে পাওয়া বিভিন্ন প্রোডাক্ট ব্যবহার করেও অনেকেই চুল লম্বা করতে পারছেন না। বাজার থেকে কেনা প্রোডাক্ট ব্যবহার না করে কাঠবাদাম তেল, আমলকি, ডিম, লেবু, নিম পাতা ইত্যাদি ব্যবহার করে চুল দ্রুত লম্বা করা যায়।
চুল দ্রুত লম্বা করার আরেকটি সহজ পদ্ধতি হলো চুল কয়েক দিন পর পর ট্রিমিং করতে হবে। তাছাড়া চুল দ্রুত লম্বা করার জন্য শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার অবশ্যই ব্যবহার করা উচিত। মাথার স্কাল্পে গরম তেল মালিশ করলেও দ্রুত চুল লম্বা হয়। এছাড়া ডিম দিয়ে তৈরি হিয়ার মাস্ক সপ্তাহে অন্তত দুই দিন চুলে ব্যবহার করলে চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। চুলের যত্ন ও চুল লম্বা করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
চুলের যত্ন নেওয়ার উপায়
চুলের প্রাকৃতিক জৌলস বজায় রাখার জন্য নিচে থাকলো কিছু টিপস। চলুন জেনে নেই চুলের যত্ন নেওয়ার উপায় গুলো কি কি?
কন্ডিশনার ব্যবহার করুন
শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করার পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। তবে কোনভাবেই কন্ডিশনার চুলের গোড়ায় এপ্লাই করবেন না। চুলের গোড়া থেকে অন্তত এক ইঞ্চি দূর থেকে চুলের আগা পর্যন্ত কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
হেয়ার প্রোডাক্ট পরিবর্তন করবেন না
সচরাচর হেয়ার প্রোডাক্ট প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করলে চুলে বিভিন্ন রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই আপনি যে ধরনের হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহারে অভ্যস্ত তা চলমান রাখুন।
স্ট্রেটনার ব্যবহার কমিয়ে আনুন
অতিরিক্ত হিট এর কারণে চুল ভেঙে যেতে পারে এবং ঝরে পড়তে পারে। স্ট্রেটনার ব্যবহারে অনেক সময় চুল ভেঙ্গে যায়। তাই স্ট্রেটনার এর ব্যবহার যতটা সম্ভব কমিয়ে আনুন।
নিয়মিত তেল ম্যাসাজ করুন
নিয়মিত চুলে তেল ম্যাসাজ করলে চুলের গোড়া মজবুত হয় এবং চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। কিন্তু প্রয়োজনের বেশি তেল ব্যবহার করবেন না এতে করে চুল দুর্বল হয়ে পড়ে।
চুলে টিজিং করবেন না
চুলে টিজিং করে খুব দ্রুত চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা যায়। কিন্তু এই পদ্ধতি চুলের জন্য মোটেও শুভকর নয়। তাই চুলে টিজিং করা পরিহার করুন।
নিয়মিত চুল আঁচড়ান
নিয়মিত চুল আঁচড়ালে স্কাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। তাই প্রতিদিন অন্তত ২ থেকে ৩ বার চিরুনি দিয়ে সময় নিয়ে চুল আঁচড়ান।
স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন
প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ভিটামিন, লৌহ এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার রাখার চেষ্টা করুন। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ-মাংস এবং শাকসবজি থাকলে চুলের বৃদ্ধি প্রাকৃতিকভাবে ত্বরান্বিত হয়।
কৃত্রিম হেয়ার প্রোডাক্ট এর ব্যবহার কমান
বাজারে যেসব কৃত্রিম হেয়ার প্রোডাক্ট পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহারে স্বল্পমেয়াদি চুল সুন্দর দেখালেও স্থায়ীভাবে তা চুলের জন্য মারাত্মক ক্ষতি করে।
চুল লম্বা করার উপায়
প্রাকৃতিকভাবে চুল লম্বা করার জন্য ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করতে পারেন। চলুন জেনে নেই ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করে চুল লম্বা করার উপায় গুলো কি কি?
আমলকির হেয়ার প্যাক
৩ টেবিল চামচ আমলকি গুড়ার সাথে ১ টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েল, একটি ডিমের সাদা অংশ ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি চুলে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করলে চুল আগের তুলনায় লম্বা হবে।
লেবুর রস
শ্যাম্পু করার পর চুল কিছুটা শুকিয়ে আসলে সামান্য পরিমাণ পাতি লেবুর রস চুলের গোড়ায় মাখিয়ে নিন। পরের দিন শ্যাম্পু করে নিতে হবে। কয়েকদিন ব্যবহার এই চুল দ্বিগুণ লম্বা হবে।
কাঠ বাদাম তেল ব্যবহার করুন
খাঁটি কাঠ বাদাম তেল বানিয়ে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন মাথায় লাগাবেন। এতে করে চুল ঘন এবং লম্বা হবে।
অ্যাপল সাইডার ভিনিগার
অ্যাপল সাইডার ভিনিগার এর সাথে পরিমান মত পানি যোগ করে চুল ধুয়ে নিলে চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। কিন্তু কিছু কিছু সময় ব্যবহারের ফলে চুল পড়া বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই ব্যবহারের পূর্বে সতর্ক হোন।
ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করুন
এক চা চামচ ক্যাস্টর অয়েল এর সাথে সমপরিমাণ জলপাইয়ের তেল এবং একই পরিমাণ কাঠ বাদাম তেল মাথার ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করুন। পরবর্তীতে শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
৭ দিনে চুল লম্বা করার উপায়
খুব দ্রুত চুল লম্বা করার জন্য কিছু প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা যেতে পারে। চলুন জেনে নেই ৭ দিনে চুল লম্বা করার উপায় গুলো কি কি?
দারচিনি ভেজানো পানি পান করুন
দারচিনি পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এবং পেট পরিষ্কার থাকলে শরীরে কোনরূপ ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না। ফলে চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।
ডায়েটে নজর দিন
প্রতিদিনের খাবার তালিকায় প্রোটিন এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার রাখার চেষ্টা করুন। ফ্ল্যাক্সসিড, চিয়া সিড, রাজমা, জিরে, এবং মেথি ভেজানো পানি প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখলে চুল কয়েক দিনেই বড় হবে।
বালিশের কভার পরিবর্তন করুন
আপনি যদি সুতির কভার ব্যবহার করেন তাহলে তা বাদ দিয়ে সিল্ক, সাটিন কাপড়ের বালিশের কভার ব্যবহার করুন। সুতির কাপড়ে চুল বেশি ঘর্ষণ প্রাপ্ত হয় এবং চুলের গোড়া দুর্বল হতে থাকে। সিল্ক এবং সাটিন এর কাপড়ে চুল কম ঘর্ষণ প্রাপ্ত হয়।
কোন ত্বকের জন্য কোন সিরাম জেনে নিন
অ্যালোভেরা হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন
৩ টেবিল চামচ এলোভেরা জেল এর সাথে তিন চামচ অলিভ অয়েল যোগ করুন। চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ভালোভাবে ২০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ২০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
চুলের যত্নে পেঁয়াজের উপকারিতা
পেঁয়াজের রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, ই, অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা চুলের গোড়া মজবুত করে, চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে, চুল কালো এবং মসৃণ করে, চুলের অকালপক্কতা রোধ করে, চুলে খুশকি এবং আগা ফাটা বন্ধ করে।
পেঁয়াজের তেল যেভাবে বানাবেন
দুইটি পেঁয়াজ ভালোভাবে কুচি করে নিয়ে তার সাথে ৬ থেকে ৭ টেবিল চামচ নারিকেল তেল, ৩-৪ কোয়া রসুন ভালো করে ফুটিয়ে গরম করে নিন। মিশ্রণটি পুরোপুরি ঠান্ডা হলে বোতলে ভরে সংরক্ষণ করুন। তেলটি যখন ব্যবহার করবেন তখন এর সাথে কয়েক ফোটা এসেনশিয়াল ওয়েল মিশিয়ে মাথায় লাগিয়ে পরবর্তীতে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। চুল পড়া পুরোপুরি বন্ধ করতে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন ব্যবহার করুন।
উপসংহার
যারা চুল নিয়ে বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য আমাদের আজকের পোস্টটি চুলের যত্ন ও চুল লম্বা করার উপায় খুবই উপকারে আসবে বলে আশা করছি। চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে যেসব টিপস গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করা হয়েছে তা ব্যবহারের আগে আপনার চুলের কন্ডিশন প্রথমে জেনে নিন। আপনার সুবিধামতো এবং চুলের গঠন অনুযায়ী যেকোনো একটি হেয়ার প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
সর্বাধিক জিজ্ঞেসিত প্রশ্নাবলী
১)চুলে তেল দিয়ে কতক্ষণ রাখা উচিত?
উঃ চুলে তেল দিয়ে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা রাখা উচিত। এবং চুলে তেল দিয়ে ম্যাসাজ করে শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে।
২)তেল দেওয়ার পর কি শ্যাম্পু করা উচিত?
উঃ তেল দেওয়ার পর এক ঘন্টা চুলে তেল লাগিয়ে রেখে ঐ দিন শ্যাম্পু করে চুল পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
৩)চুল না ধুয়ে মেথির পানি দেওয়া যাবে কি?
উঃ মেথি থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি পাওয়ার জন্য চুল শ্যাম্পু করা অবস্থায় মেথির পানি দেওয়া উচিত। চুলে তেল লাগানো থাকলে চুল মেথি থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না।
1 thought on “চুলের যত্ন ও চুল লম্বা করার উপায়”