বর্তমানে বেশিরভাগ নারী সিজারের পর ইনফেকশনে ভুগে থাকেন, তাই সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ জেনে রাখা জরুরী। বর্তমানে বাংলাদেশের পেক্ষাপটে নরমাল ডেলিভারি তুলনাই সিজার কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু লাখ লাখ প্রসবোত্তর সময়ে নারীরা ইনফেকশনে আক্রান্ত হচ্ছে।
বিভিন্ন হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন বলছেন, সিজারের সময় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির বিভিন্ন সমস্যা, প্রসূতি মায়ের অপুষ্টি, শারীরিক বিশ্রাম না পাওয়া এবং সচেতনতার অভাবে প্রসবোত্তর সময়ে মায়েরা ইনফেকশনে আক্রান্ত হচ্ছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৩ লাখ প্রসবের ঘটনা ঘটে এবং এর মধ্যে সিজারে সন্তান প্রসব করেছে এমন ২ লাখ মায়েরা সিজারের পর ইনফেকশনে আক্রান্ত হন।
সিজারের পরবর্তী ইনফেকশন হলে ড্রেসিং ও পুনঃসেলাই মারাত্মক কষ্টকর হয়ে থাকে। আর কোন মায়েরা যাতে এমন কষ্টকর পরিস্থিতির সম্মুখীন না হয় তার জন্য সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের আর্টিকেল সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ। আমাদের দেওয়া ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো পরিলক্ষিত হওয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ
কয়েকটি লক্ষণ দেখলেই বোঝা যায় সিজারের পর ইনফেকশন হতে চলেছে। তবে প্রথম থেকেই চিকিৎসা নিলে পুনঃ সেলাই এর দরকার পড়ে না। চলুন জেনে নেই সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো কি কি?
- সিজারে কাটা জায়গা চারপাশ দিয়ে লাল হয়ে ফুলে যাওয়া,
- কাটা জায়গায় ব্যাথার কারনে মৃদু অথবা তীব্র জ্বর অনুভূত হওয়া,
- ক্ষতস্থান থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়া,
- ক্ষতস্থান থেকে আঠালো প্রকৃতির পুঁজ অথবা রস বের হওয়া,
- প্রসবের সময় জ্বালাপোড়া করা এবং টয়লেটে বসতে কষ্ট হওয়া,
- ক্ষতস্থানে ব্যথার পাশাপাশি সম্পূর্ণ পেট জুড়ে ব্যথা অনুভূত হওয়া,
- মাসিকের রাস্তা দিয়ে রক্ত আসা অথবা সাদা ধরনের তরল পদার্থ বের হওয়া,
- শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় পেটে ব্যথা অনুভূত হওয়া,
- সিজারের জায়গায় কিছুটা সময়ের জন্য অবশ হয়ে আসা,
- যোনি পথ দিয়ে চাকা চাকা রক্ত আসা,
- একটানা এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ব্যথা অনুভূত হওয়া,
- প্রস্রাবের ইনফেকশন তৈরি হওয়া,
- হঠাৎ করে পা ফুলে যাওয়া।
সিজারের পর খাবার তালিকা
সিজারের পর নতুন মা এবং সদ্য জন্মানো শিশুকে সুস্থ রাখার জন্য খাবার তালিকায় বিশেষ পরিবর্তন আনা জরুরি। চলুন জেনে নেই সিজারের পর খাবার তালিকা কেমন হবে?
ব্রাউন ব্রেড ও ব্রাউন রাইস
ব্রাউন ব্রেড ও ব্রাউন রাইস থেকে মা খুব তাড়াতাড়ি প্রচুর পরিমাণে শক্তি পেয়ে থাকেন। যা নতুন মায়ের শরীরে শক্তি যোগান দেয় এবং দীর্ঘক্ষণ শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে।
মাংস
সিজার পরবর্তী সময়ে মায়েদের শরীরে আয়রনের অভাব দেখা দেয়। এ সময় মুরগির মাংস, কোয়েল পাখির মাংস, কবুতরের মাংস খেলে মায়েদের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং আয়রনের চাহিদা পূরণ হয়।
তরমুজ এবং আঙ্গুর
সিজারের পর টিস্যু উৎপাদন করার জন্য এবং কোলাজেন উৎপাদন করার জন্য তরমুজ এবং আঙ্গুর এর মতো ফলগুলো খাওয়া যেতে পারে। এতে করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সিজারের ইনফেকশন দূর হবে।
বিভিন্ন ধরনের ডাল
সিজারের পরবর্তী সময়ে মায়ের শরীরে প্রোটিন, ফাইবার এবং খনিজ পদার্থ এর ঘাটতি দেখা দেয়। এসব ঘাটতি পূরণের জন্য নতুন মায়েরা বিভিন্ন ধরনের ডাল খাবার তালিকায় রাখুন।
সবুজ শাকসবজি
নতুন মায়েদের শরীরে ভিটামিন এ, সি এবং ক্যালসিয়াম এর প্রচুর পরিমাণে ঘাটতি থাকে। এসব ঘাটতি পূরণ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সবুজ শাক এবং সবজি প্রতিবেলায় খাবার তালিকায় রাখুন।
কমলা ও মালটা
একজন স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য কমলা লেবু খুবই উপকারী। তাই ডেলিভারি পরবর্তী সময়ে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কমলা লেবু অথবা মালটা রাখুন।
আদা
আদায় বিদ্যমান ভিটামিন বি৬, ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম সিজারের পরবর্তী ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
হলুদ
সিজারে পরবর্তী শরীরে ফোলা ভাব এবং সিজারের ক্ষত তাড়াতাড়ি শুকানোর জন্য দুধের সাথে হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে খেতে পারেন।
ডিম
প্রসবের পর কম করে দুই মাস প্রসূতি মাকে প্রতিদিন একটি করে ডিম খেতে হবে। এতে করে মায়ের শরীরে যাবতীয় প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হবে।
গমের রুটি
গমের রুটি, মায়ের আয়রন এবং ফাইবার এর চাহিদা সম্পূর্ণরূপে পূরণ করে। তাই প্রসূতি মায়েরা সকালবেলা গমের রুটি খেতে পারেন।
দুগ্ধজাত খাবার
দুধ ও দুগ্ধজাত বিভিন্ন খাবার যেমন: পনির , দই ইত্যাদি প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখুন।
তরল জাতীয় খাবার
তরল জাতীয় বিভিন্ন খাবার যেমন অধিকতার পানি, স্যুপ, তাজা মাছের ঝোল ইত্যাদি খাবার তালিকায় রাখা উচিত।
কালোজিরা
কালোজিরা সিজারিয়ান মায়ের হত শুকানোর পাশাপাশি দুধ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায়
সিজারের কাটা জায়গা পুরোপুরি শুকাতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগে। তবে মোটামুটি কাঁচা ভাব দূর হতে কমপক্ষে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। তবে সিজারের সময় যে সুতা ব্যবহার করা হয় সেই সুতা ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যেই খুলে ফেলা হয়। তবে এই সাতদিন সময় থেকে সাত সপ্তাহ সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় ঢিলেঢালা কাপড় পড়ে থাকতে হবে। এবং নিয়মিত সিজারের জায়গা পরিষ্কার করলে সিজারের ক্ষত তাড়াতাড়ি শুকায়। খাবার তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে লেবু রাখলে সিজারিয়ান মায়ের পেট বাড়ার সম্ভাবনা থাকে না এবং ক্ষত দ্রুত শুকায়।
সিজারের কতদিন পর ভারী কাজ করা যায়
সিজারের অন্তত ৪৫ দিন পর্যন্ত কোনো ভারি কাজ করা যাবে না। এই সময় সহবাস করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে ৪৫ দিন অর্থাৎ দেড় মাস পর থেকে সিজারিয়ান মায়েরা দ্রুত হাঁটা, হালকা-পাতলা জকিং এবং মৃদু ব্যায়াম করতে পারবেন। তবে সাইকেল চালানো, দৌড়ানো, ভারি কোন জিনিস কোমরে অথবা হাতে তোলা ইত্যাদি কাজ করার জন্য অন্তত তিন মাস সময় নিতে হবে। ভারী ব্যায়াম, খুব জোরে দৌড়ানো ইত্যাদি করার জন্য অন্তত ৬ মাস সময় নিন।
সিজারের পর কি কি খাওয়া যাবে না
সিজারের পর বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার খেতে বলা হলেও কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। চলুন জেনে নেই সিজারের পর কি কি খাওয়া যাবে না?
- এ সময় অতিরিক্ত গ্যাস হওয়ায় ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন,
- চা কফি এবং অ্যালকোহল জাতীয় খাবার সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলুন,
- বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি, ডাল, পেঁয়াজ ও ঢেঁড়স ইত্যাদি খাবারগুলো অন্তত দুই মাস খাবেন না,
- কার্বনেটেড ড্রিংক বা কোমল পানীয় মা এবং শিশু উভয়ের জন্য ক্ষতিকর,
- যেকোনো ঠান্ডা অথবা ফ্রিজের খাবার এড়িয়ে চলুন,
- সব ধরনের ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন,
- সিজারের মায়েরা কমপক্ষে এক মাস কাঁচা অথবা পাকা কাঁঠাল খাবেন না।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক পাঠিকা, সিজারের পর ইনফেকশন হলে একটি মায়ের যে কতটা কষ্ট হয় তা মোটামুটি সবার বোধগম্য। সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ বুঝতে পারলেই সাথে সাথে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। এ সময় নিজেরা কোনরকম ঘরোয়া টোটকা অথবা কারো কথা না শুনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলুন।
১)সিজারের পর কি কি সমস্যা হতে পারে?
উঃ সিজারের পর ক্ষতস্থানে ব্যথা, অতিরিক্ত পরিমাণে ব্লিডিং হওয়া, সিজারের জায়গা ফুলে ওঠা অথবা সমস্ত শরীর ফুলে ওঠা, মৃদু বা তীব্র জ্বর অনুভূত হওয়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
২)সিজারের পর পেট কমানোর উপায়?
উঃ সিজারের পর পেট কমানোর জন্য খাবার তালিকায় নিয়মিত লেবু রাখুন, আস্তে আস্তে অন্তত আধাঘন্টা হাঁটার চেষ্টা করুন, নিয়মিত বেল্ট ব্যবহার করুন।
৩)সিজার করলে কি কি সমস্যা হয়?
উঃ সিজার করলে দীর্ঘমেয়াদি বা স্বল্পমেয়াদী কোমরে ব্যথা অনুভূত হয়, পেটের আকৃতি বাড়ার সম্ভাবনা থাকে, শরীর মুটিয়ে যায়, এবং এক বছর সময় পর্যন্ত মাসিক অনিয়মিত হতে দেখা যায়।
Thanks for the valuable information ❤️
You’re welcome!
সিজারের পর ৯ দিন হইসে একটি অংশ পেকে জাচ্ছে বার বার
ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন