প্রতিদিন কিসমিস খাওয়ার আগে জেনে নিতে হবে কিসমিস খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা গুলো কি কি? প্রতিদিন কিসমিস খেলে আয়রন এবং লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ বাড়ে। এছাড়া রক্ত পরিষ্কার রাখতে, এসিডিটি দূর করতে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণ করতে প্রতিদিন কিসমিস খেতে পারেন।
কিসমিসে বিদ্যমান ভিটামিন এবং খনিজ, আয়রন, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার ত্বক সুন্দর রাখতে, হাড় ও দাঁত মজবুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে কিসমিস কাঁচা খাওয়ার থেকে আগের দিন রাতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন ভেজানো কিসমিস খাওয়া শরীরের জন্য বেশি উপকারী। প্রতিদিন সকালে ভেজানো কিসমিস খেলে লিভার, কিডনি, রক্ত পরিষ্কার থাকে। কিসমিস খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি জুড়ে আমাদের সাথেই থাকুন।
কিসমিস
আঙ্গুর শুকিয়ে তৈরি করা হয় কিসমিস। ইংরেজিতে একে রেইসিন বলা হয়ে থাকে। আঙ্গুর বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত হয়, এবং এই আঙ্গুরকে শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে কিসমিস তৈরি করা হয়। আমাদের দেশে সাধারণত কিসমিস কাঁচা খাওয়া হয় অথবা বিভিন্ন রান্নার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
প্রতি ১০০ গ্রাম কিসমিস থেকে পাওয়া যায় ৭৯.১৮ g শর্করা, ৫৯.১৯ g চিনি, ০.৪৬ g স্নেহ পদার্থ, ৩.০৭ g প্রোটিন, ১১.১ মিগ্রা কোলিন, ৫০ মিগ্রা ক্যালসিয়াম, ৩২ মিগ্রা ম্যাগনেসিয়াম, ৭৪৯ মিগ্রা পটাশিয়াম, ১.৮৮ মিগ্রা লৌহ, ০.২২ মিগ্রা জিংক পাওয়া যায়। যেসব কিসমিস সোনালী-বাদামী রংয়ের হয়ে ভাঁজ হয়ে চুপসে যায় সেই কিসমিস গুলো শরীরের জন্য অধিকতর উপযোগী।
কিসমিস খাওয়ার নিয়ম
কিসমিস একটি শুকনো ফল হলেও খেতে খুবই সুস্বাদু। শুকনো এবং শীতল পরিবেশে অনেকদিন সংরক্ষণ করে কিসমিস খাওয়া যায়। কিসমিস খাওয়ার নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। চলুন কিসমিস খাওয়ার নিয়ম গুলো জেনে নেওয়া যাক:
- প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে ৬ থেকে ৭টা কিসমিস খাবার পানিতে ভিজিয়ে রাখুন, সকালে উঠে এটি খালি পেটে খান।
- সকালের নাস্তায় আপনি যদি কলা, দুধ, রুটি ইত্যাদি রাখেন তাহলে এগুলোর সাথে কিসমিস মিশিয়ে খেতে পারেন।
- সকালের নাস্তায় যদি ওটমিল খান তাহলে ওটমিল এর উপরে ভেজানো কিসমিস ছড়িয়ে খেলে ভালো ফল পাবেন।
- বিভিন্ন ধরনের স্মুদি, ফালুদা, দুধের তৈরি পায়েস, সেমাই, চাটনি ইত্যাদি বানানোর সময় কিসমিস যোগ করুন।
- ঘরে যদি কেক এবং বিস্কুট তৈরি করেন তাহলে ব্যাটার এর সাথে কিসমিস যোগ করুন।
- সালাদ এর সাথে কিসমিস যোগ করতে পারেন।
- মিক্স দেশি সবজি, মিক্স চাইনিজ ইত্যাদি তৈরিতে ঘি এ ভাজা কিসমিস ব্যবহার করতে পারেন।
- বিভিন্ন ধরনের পুডিং তৈরিতে কিসমিস ব্যবহার করুন।
- যে প্রক্রিয়াতে কিসমিস খান না কেন ১০০ গ্রামের বেশি কিসমিস একদিনে খাওয়া যাবেনা।
- কিসমিস সপ্তাহে সাত দিন না খেয়ে পাঁচ দিন খেলে ভালো হয়।
কিসমিস এর উপকারিতা কি কি ?
কিসমিসের রয়েছে নানান স্বাস্থ্য উপকারিতা। চলুন জেনে নেই কিসমিস এর উপকারিতা :
রক্তশূন্যতা দূর করে
কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে লৌহ যা লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত কিসমিস খেলে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি পায়।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, যা উচ্চ রক্তচাপের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমিয়ে আনে। তবে উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা কিসমিস খাওয়াকালীন ঔষধ বন্ধ করবেন না।
হজম শক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
নিয়মিত সকালে ভেজানো কিসমিস খেলে হজম শক্তি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। কিশমিশে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সকল ধরনের রোগ থেকে শরীরকে দূরে রাখে।
জীবাণু দূর করে
শরীরকে বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে দূরে রাখার জন্য প্রতিদিন এক মুঠো কিসমিস খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে রক্ত পরিষ্কার থাকবে এবং শরীর বিষমুক্ত রাখতে সাহায্য করবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
যারা অনেকদিন যাবত কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন এবং কোন ঔষধ ব্যবহারে ভালো ফল পাচ্ছেন না তারা প্রতিদিন সকালে ভেজানো কিসমিস খান। যাদের অনেকদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা রয়েছে আশা করি তারাও ভালো ফল পাবেন।
ধীরে ধীরে ওজন বাড়ায়
যাদের ওজন কিছুতেই বৃদ্ধি পায় না এবং প্রয়োজনের তুলনায় ওজন অনেক কম তারা প্রতিদিন নিয়ম করে সকালে খালি পেটে কিসমিস খান। এতে করে ধীরে ধীরে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পাবে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
কিসমিসে বিদ্যমান ক্যাটেচিন উপাদান ফ্রি র্যাডিকলগুলো এর বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্তভাবে লড়াই করতে পারে। ফলে ক্যান্সারের জীবাণু ধীরে ধীরে মরে যায় এবং মেটাস্টাসিসেও সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
কিসমিসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস অক্সিডেটিভ রোধ করে এবং ইমিউন সিস্টেম স্থিতিশীল এবং ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে।
হাড় মজবুত করে
কিসমিসের বিদ্যমান ক্যালসিয়াম এবং বোরন হাড় ও জয়েন্ট মজবুত রাখতে সাহায্য করে।
ঘুমের সমস্যা দূর করে
কিসমিস খেলে মানসিক অবসাদ দূর হয় এবং রাতে ঘুম ভালো হয় বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা।
কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা
সাধারণত পরিমিত পরিবারে কিসমিস খেলে স্বাস্থ্যের তেমন কোন ক্ষতি হয় না। তবে প্রতিদিন অধিক মাত্র কিসমিস সেবনের ফলে শরীরের কিছু ক্ষতি হতে পারে। চলুন জেনে নেই কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা গুলো কি কি?
- ডায়াবেটিসের মাত্রা বাড়তে পারে,
- এলার্জিজনিত সমস্যা তৈরি হতে পারে,
- পরিমাণের বেশি কিসমিস খেলে হজমে ব্যাঘাত, পেটে ব্যথা, অম্বলের সমস্যা তৈরি হতে পারে,
- উচ্চ রক্তচাপ গ্রস্থ ব্যক্তিদের সপ্তাহে এক থেকে দুই দিনের বেশি কিসমিস খাওয়া উচিত নয়,
- কিসমিস ওজন বৃদ্ধি করে। যাদের ওজন অনেক কম তাদের জন্য এটি উপকারী হলেও যাদের ওজন অতিরিক্ত তারা কিসমিস থেকে দূরে থাকুন।
- অধিক পরিমাণে কিসমিস খেলে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে,
- অধিক সেবনে বমি, ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যা তৈরি হয়।
শুকনো কিসমিস খেলে কি হয়
শুকনো কিসমিসের রয়েছে নানান স্বাস্থ্য উপকারিতা। রোদের মাধ্যমে অথেনটিক উপায়ে যেসব কিসমিস তৈরি করা হয় সেগুলো হৃদপিণ্ড ভালো রাখতে এবং রক্ত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। চলুন এক নজরে দেখে আসি শুকনো কিসমিস খেলে কি হয়?
- দেহে দ্রুত গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজ এর মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে শক্তি উৎপাদিত হয়,
- শুকনো কিসমিস দৃষ্টিশক্তির জন্য ভালো কাজ করে, যাদের চোখে ছানি পড়েছে তাদের জন্য শুকনো কিসমিস খুবই ভালো,
- যাদের রক্তের সমস্যার কারণে চর্ম রোগ, হৃদরোগ ইত্যাদি হয়েছে তাদের রক্তের এসিডিটি দূর করার জন্য কিসমিস খেতে হবে,
- কিশমিশে বিদ্যমান অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিইনফেমেটরি উপাদান শরীরে ঢুকে পড়া যে কোন জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করে,
- বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে,
- লিভারে জমাকৃত কোলেস্টেরল দূর করতে কিসমিস খান।
জনপ্রিয় ব্লগ: কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
উপসংহার
যারা কিসমিস খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাচ্ছিলেন, আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে আশা করি তারা উপকৃত হয়েছেন। কিসমিস খাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা যেসব নিয়ম উল্লেখ করেছি সেগুলো মেনে চললে আশা করি আপনারা ভাল ফলাফল পাবেন।
সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১)কিসমিস কখন খেলে ভালো হয়?
উঃ সকালে ঘুম থেকে উঠে ভেজানো কিসমিস অথবা কিসমিস ভেজানো পানি খেলে ভালো ফল পাবেন।
২)কিশমিশ খেলে কি মোটা হয়?
উঃ কিসমিস স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাই যারা কম ওজনের অধিকারী তারা প্রতিদিন এক মুঠো কিসমিস খেতে পারেন। তবে যাদের ওজন বেশি তারা কিসমিস খাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতনতা অবলম্বন করুন।
৩)কিসমিসে শর্করার পরিমাণ বেশি কেন?
উঃ কিসমিসে শর্করার পরিমাণ বেশি কারণ, এতে রয়েছে গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজের এর মতো প্রাকৃতিক শর্করার উপাদান।