নিয়মিত ওটস খাচ্ছেন! জেনে নিন উপকার পেতে যে পরিমাণ ওটস খাওয়া উচিত ও ওটস কিভাবে খেতে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন নিউট্রিশন’ ২০১৯ সালে প্রকাশ করে, ওটসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বেটা গ্লুকান। তাছাড়া রয়েছে পরিমিত পরিমানে দ্রবীভূত আঁশ, স্যাচুরেটেইড চর্বি ও কোলেস্টেরল। কাঁচা আধা কাপ এবং ভেজানো এক কাপ ওটস থেকে দুই গ্রাম দ্রবণীয় আঁশ পাওয়া যায়।
এক কাপ রান্না করা ওটস থেকে পাওয়া যায় ১৬০ ক্যালোরি, ৬ গ্রাম প্রোটিন, ২৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেইট, ৪ গ্রাম আঁশ, সাড়ে তিন গ্রাম চর্বি, ০.৭ গ্রাম স্যাচুরেইটেড চর্বি এবং এক গ্রামের কিছুটা কম শর্করা। যেহেতু ওটমিলে প্রচুর পরিমাণে উপকারিতা রয়েছে তাই প্রতিদিন সর্বোচ্চ দেড় কাপ রান্না করা ওটস অথবা কাঁচা তিন থেকে চার কাপ ওটস খাওয়া যেতে পারে। প্রয়োজন অনুযায়ী ওটস খেলে হৃদযন্ত্র এবং অন্ত্র ভালো থাকে। শরীর থেকে ব্যাকটেরিয়া দূর হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
ওটস কিভাবে খেতে হয়
ওটস রান্না করে খাওয়া যায়, অথবা অনেকে কাঁচা ওটস খেতেও পছন্দ করেন। ওটস কিভাবে খেতে হয় চলুন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:
- আগের দিন রাতে এক কাপ ওটস ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে খাওয়া যেতে পারে।
- ওটস স্বাদহীন হওয়ায় এরসাথে মেশাতে পারেন আপেল, কলা, আম কিংবা বিভিন্ন ধরনের বাদাম।
- ওটস এর সাথে টক দই অথবা মিষ্টি দই মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। স্বাদ বাড়ানোর জন্য মধু যোগ করতে পারেন।
- ওটস এর সাথে পিনাট বাটার, খেজুর মিশলে স্বাদ দ্বিগুণ হয়ে যায়।
- ওটস এর সাথে বিভিন্ন ধরনের সবজি মিশিয়ে খিচুড়ি তৈরি করে খেতে পারেন। তবে ওটস এর সাথে কোনোভাবেই চিনি মেশানোর চেষ্টা করবেন না।
রাতে ওটস খাওয়ার নিয়ম
ওটসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, রাইবোফ্লাভিন, ভিটামিন বি-৬, প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, সেলেনিয়াম। অনেকেই মনে করেন রাতের বেলায় ওটস খেলে হজমে এবং পেটে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল।
ওটস খাওয়ার নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। আপনি চাইলে রাতের বেলায় ভারী মিল হিসেবে ওটস খেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ওটস দিয়ে তৈরি খিচুড়ি অথবা ওর মিষ্টি অথবা টক দই এর সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে ওটস একটি ভারী খাবার হওয়ায় সামান্য খেলেও পেট ভরে যায়। তাই রাতে ডিনারে পরিমিত পরিমাণে ওটস খাওয়ার চেষ্টা করুন। রাতের বেলায় প্রয়োজনের অধিক ওটস খেলে পেটে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে।
সকালে ওটস খাওয়ার নিয়ম
যারা বিভিন্ন রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য এবং ডায়েটে ওটস রাখতে চাচ্ছেন তাদের জন্য ওটস খাওয়ার সব থেকে ভালো সময় হলো সকালবেলা। সকালবেলা ওডস খেতে হলে অবশ্যই আগের রাতে ভিজিয়ে রেখে দিন। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য সবচেয়ে উপকারী ওটসগুলো হলো: স্টিল কাট ওটস, রোল্ড ওটস (ওল্ড ফ্যাশন্ড নামে পরিচিত), ইন্সট্যান্ট ওটস ইত্যাদি। তবে যারা ওজন কমানোর জন্য সকালবেলা ওটস খেতে যাচ্ছেন তারা নিয়মিত খান এবং রান্না করা ওটস এড়িয়ে চলুন। চলুন এক নজরে দেখে নেই সকালে ওটস খাওয়ার নিয়ম গুলো কি কি?
- ওটসে প্রচুর পরিমাণে ‘রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ’ পাওয়া যায়। এটি হজম শক্তি উন্নত করার জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তাই সারারাত ওরস ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা মধু যোগ করে ওটস খেয়ে নিন একবাটি। এতে করে আপনার সারাদিনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
- ওটস এর সাথে বিভিন্ন রকমের ফল যেমন: আপেল, কলা, আম ইত্যাদি যোগ করলে ওটস এর টেস্ট বেড়ে যায়। শিশুদেরকে ওটস খাওয়াতে চাইলে ও এই ফলগুলো যোগ করতে পারেন। আপনি চাইলে যে কোন সিজনাল ফল ওটসে যোগ করে খেতে পারেন।
- ওটস এর সাথে বিভিন্ন রকমের বাদাম যোগ করে খেতে পারেন। এতে করে পুষ্টি কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। ওটস এবং বাদাম শক্তির একটি ভালো উৎস।
- ওটস এর সাথে বিভিন্ন রকম সবজি যোগ করে খিচুড়ি তৈরি করে খান। বিভিন্ন রকম সবজির যোগ করলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার পাবেন। যাও হজম শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করবে।
- সকাল বেলার নাস্তা হিসেবে ওটস এর সাথে পরিমাণ মতো দুধ যোগ করে উপরে এক চিমটি চিয়া সিড ছড়িয়ে খেতে পারেন।
- ভেজানো ওটসে কোকো পাউডার যোগ করে খাওয়া যেতে পারে। এতে করে টেস্ট কয়েকগুন বেড়ে যায়।
- সকাল বেলা পার্ফেক্ট নাস্তা হিসেবে ওটস এর সাথে এক মুঠো ড্রাই ফ্রুট মিশিয়ে খেতে পারে।
উপরিউক্ত সবগুলো প্রক্রিয়াতেই সকালবেলা ওটস খাওয়া যেতে পারে। আপনি আপনার রুচি অথবা টেস্ট অনুযায়ী যেকোনো একটি রেসিপি পছন্দ করুন এবং সেই অনুযায়ী নিয়মিত সকালে জলখাবার হিসেবে ডায়েট রুটিনে ওটস রাখুন।
ওটস ডায়েট রেসিপি
সাধারণত আমরা বেশিরভাগ সময় ওটস দুধ, কলা, আপেল এবং খেজুর এর সাথে খেয়ে থাকি। কিন্তু আপনি যদি ওটস ডায়েট রেসিপি ফলো করতে চান তাহলে অবশ্যই ওটস দিয়ে তৈরি খিচুড়ি খাবার তালিকায় রাখুন। চলুন এক নজরে দেখে আসি ওটস দিয়ে কিভাবে খিচুড়ি তৈরি করতে হয়?
ওটস এর সাথে আপনি যে সবজিগুলো খেতে পছন্দ করবেন তা ছোট টুকরো করে কেটে নিন। এই পর্যায়ে একটি বড় সাইজের টমেটো, দুইটি মাঝারি সাইজের পেঁয়াজ এবং পরিমাণ মতো আদা কুঁচি নিয়ে নিন। শুকনো কড়াইতে ওরস নাড়াচাড়া করে ভেজে নিন। তবে যেন পুড়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন। পরিমাণ মতো মুগ ডাল আগে থেকে সেদ্ধ করে নিতে হবে। এবার একটু কড়াইতে তেল গরম করে তাতে পরিমাণমতো গোটা জিরে, একটি তেজপাতা, কুচানো পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ এবং আদা কুচি দিয়ে দিন।
এবার এই তেলের মধ্যেই সবজিগুলো ভেজে নিন। ভাজা সবজির মধ্যে রোস্ট করা ওটস এবং সেদ্ধ করার ডাল দিয়ে মিনিট খানেক নাড়াচাড়া করুন। এই পর্যায়ে পরিমাণ মতো লবণ, চিনি এবং হলুদ গুঁড়া দিয়ে কিছুটা সময় নাড়াচাড়া করুন। এই পর্যায়ে পরিমাণ মতো পানি দিয়ে পাঁচ মিনিট রান্না করলেই তৈরি মজাদার ওটস খিচুড়ি। ওটস দিয়ে ডায়েট করতে হলে অবশ্যই খাবার তালিকায় ওটস দিয়ে তৈরি খিচুড়ি রাখুন।
ডায়েটে ওটস খাওয়ার নিয়ম
ডায়েটে প্রতিদিন সকালবেলায় ওটস রাখুন। খুব দ্রুত ওজন কমাতে চাইলে প্রতিদিন ওটস এর সাথে টক দই খান। ওটস এর সাথে ব্ল্যাকবেরি মিশিয়ে খেলে খুব দ্রুত ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রতিদিন সকালে পরিমাণ মতো ভেজানো ওটস এর সাথে দুধ এবং সামান্য মধু মিশিয়ে খান। তবে ডায়েটে ওটস খেতে হলে এর সাথে কখনোই চিনি মেশাবেন না।। প্রতিদিন সকালের নাস্তা অথবা দিনের যেকোনো সময় স্নাক্স হিসেবে ওটস এর সাথে বাদামের বাটার, চিয়া বীজ, তিসির বীজ, বাদাম বা মুরগির মাংস ও ডিম মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এতে করে শরীর বাড়তি প্রোটিন পায়।
জনপ্রিয় ব্লগ: কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১)ওটস কি ধুয়ে রান্না করতে হয়?
উঃ কোর্স রান্নার সময় না ধুয়ে বরং আগের দিন রাতে ভিজিয়ে পরের দিন খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
২)ওটস খেলে কি মোটা হওয়া যায়?
উঃ ওটস সাধারণত ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে ওটস খান।
৩)ওজন কমাতে কোন ওটস ভালো?
উঃ ওজন কমানোর জন্য স্টিল কাট ওটস, রোল্ড ওটস (ওল্ড ফ্যাশন্ড নামে পরিচিত), ইন্সট্যান্ট ওটস খুবই ভালো।
৪)প্রতিদিন কত গ্রাম ওটস খাওয়া উচিত?
উঃ প্রতিদিন সর্বোচ্চ রান্না করা এক কাপ ওটস খাওয়া যেতে পারে।
৫)১ চা চামচ ওটসে কত ক্যালরি?
উঃ এক চা চামচ ওটস থেকে প্রায় ৯ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়।
2 thoughts on “যে পরিমান ওটস খাওয়া উচিত , ওটস কিভাবে খেতে হয়?”