নিয়মিত গাজর খাচ্ছেন! জেনে নিন প্রতিদিন গাজর খেলে কি হয়? উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো কি কি? গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ। নিয়মিত গাজর খেলে ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং হজম শক্তি ও চোখের শক্তি উভয়ই বাড়ে। জেরোফথালমিয়া একটি চোখের রোগ।
নিয়মিত গাজর খেলে এই রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। নিয়মিত গাজর খেলে চুলের লকগুলি আগের চেয়ে শক্তিশালী এবং ঘন হয়। গাজরে বিদ্যমান ভিটামিন “A” ত্বকের টোনার হিসেবে কাজ করে।
এছাড়া ত্বকের বিভিন্ন দাগ কমাতে এবং দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রতিদিন খাবার তালিকায় গাজর রাখুন। যৌন শক্তি বাড়াতে এবং হার্ট ভালো রাখতেও গাজর খাওয়া উচিত। তাহলে চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেই প্রতিদিন গাজর খেলে কি হয়? উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
প্রতিদিন গাজর খেলে কি হয়? উপকারিতা ও অপকারিতা
গাজর একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি, যা প্রতিদিন খেলে শরীরে বিভিন্ন উপকারিতা পাওয়া যায়। তবে অতিরিক্ত খেলে কিছু সমস্যা হতে পারে। প্রতিদিন গাজর খেলে কি হয়? উপকারিতা ও অপকারিতা :
গাজর খাওয়ার উপকারিতা
গাজরের পুষ্টিগুণ বলে শেষ করা যাবে না। গাজরের নানাবিধ উপকারিতার মধ্যে কয়েকটি উপকারিতা আমরা নিচে তুলে ধরবো। তাহলে চলুন জেনে নেই গাজর খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি?
ত্বকের দাগ দূর করে
গাজর থেকে রস বের করে নিয়ে প্রতিদিন এক কাপ গাজরের রস খেতে পারেন। এতে করে ব্রণের দাগ, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে তৈরি হওয়া দাগ খুব দ্রুত নিরাময় হয়।
ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করে
যাদের ত্বক তৈলাক্ত তাদের জন্য রেটিনয়েড এবং ট্রেটিনোইন উপাদান দুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাজের থেকে এই দুটি উপাদান পরিমিত পরিমাণে পাওয়া যায়। তাই নিয়মিত গাজর খেলে ত্বকের কবীর থেকে তৈলাক্ততা দূর হয়।
যৌন শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে
গাজরের জুস অথবা গাজর দিয়ে তৈরি পুডিং খেলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায়। যেসব পুরুষের শুক্রানুর সংখ্যা কম তারা তাদের খাবার তালিকায় প্রতিদিন এক গ্লাস গাজরের জুস রাখুন। মহিলাদের ও ডিম্বানুর পরিমাণ বৃদ্ধি করতে গাজর সাহায্য করে।
হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে
যারা হার্টের বিভিন্ন রকম সমস্যায় ভুগছেন, বিশেষ করে দ্রুত হার্টবিট জনিত সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন সালাদ হিসেবে ২-৩ টি গাজর খেতে পারেন। এতে করে হার্ট সুস্থ থাকার পাশাপাশি শ্বাস-প্রশ্বাস জন্যই তো সমস্যা দূর হবে।
জন্ডিস ও রক্তস্বল্পতা দূর করে
যারা জন্ডিস এর সমস্যায় ভুগছেন তারা গাজর সিদ্ধ করে অথবা গাজর থেকে রস বের করে খেতে পারেন। এতে করে জন্ডিস খুব দ্রুত নিরাময় হয়। এছাড়া যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন তারা প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ২টি করে গাজর যখন। কারণ গাজরে বিদ্যমান আয়রন রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
হাড় এবং দাঁত মজবুত রাখে
গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি এবং ক্যালসিয়াম। এই দুটি উপাদানই হাড় এবং দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া গাজরে রয়েছে প্লাক-ফাইটিং, কেরাটিন এবং ভিটামিন এ। এই উপাদানগুলো দাঁতের প্রাকৃতিক টুথপেস্ট হিসেবে কাজ করে।
চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, যারা নিয়মিত গাজর খান তাদের চুল হয় ঝলমলে এবং স্বাস্থ্যজ্জ্বল। নিয়মিত গাজর খেলে চুলের লকগুলো পূর্বের তুলনায় শক্তিশালী হয় এবং চুলের আগা ফাটা রোধ হওয়ার পাশাপাশি চুল লম্বা করতে সাহায্য করে গাজর।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এবং এই দুইটি উপাদান গাজরে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। প্রতিদিন যদি একটি করে গাজর খেতে পারেন তাহলে দেখবেন আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আগে তুলনায় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিদিন গাজর খেলে কি হয়
প্রতিদিন গাজর খাওয়ার নানাবিধ উপকারিতা সম্পর্কে আমরা ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি। চলুন প্রতিদিন গাজর খেলে কি হয়? উপকারিতা ও অপকারিতা সে সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক:
অন্ধত্ব দূর করে
গাজরে বিদ্যমান বিটা ক্যারোটিন চোখের রেটিনায় অবস্থিত রড ও কোন কোষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাদের রাতকানা রোগের সমস্যা রয়েছে তারাও কয়েক মাস নিয়মিত গাজর সেবনেই ভালো ফল পাবেন। তাছাড়া যারা ইতোমধ্যে অন্ধত্ব রোগে ভুগছেন তারা নিয়মিত গাজর খেতে ভুলবেন না।
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে
গাজরে বিদ্যমান “ভিটামিন এ” দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাছাড়া চোখের যে কোন সমস্যায় নিয়মিত গাজর খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে কোন রোগ কমানোর জন্য পরিমাণের বেশি গাজর খাওয়া যাবেনা।
ত্বকের শুষ্কতা দূর করে
অনেকেরই ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে শীতকালে এই সমস্যা বেশি হয়। গাজরের উপকারি উপাদান পটাশিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে। ফলে শীতকালেও ত্বকের আদ্রতা বজায় থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেটে ব্যথা কমায়
যাদের হজমে গোলমাল হয় অথবা একটু খেলেই পেটে গ্যাস হয় তারা নিয়মিত গাজরের রস পান করুন। নিয়মিত গাজরের রস আপনার হজম শক্তি উন্নত করার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা মোকাবেলা করে। তাছাড়া পেটে ব্যথা কমানোর জন্য যে কোন বয়সের মানুষ গাজরের রস খেতে পারেন।
লিভার সুস্থ রাখে
কাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ। এই উপাদানটি শরীর থেকে যাবতীয় টক্সিন পদার্থ দূর করে দিতে সাহায্য করে। শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দিলে লিভার প্রাকৃতিকভাবেই সুস্থ থাকে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
গাজরে বিদ্যমান ফ্যালকেরিনল এবং ফ্যালকেরিনডায়ল উপাদান ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। অর্থাৎ এই দুটি উপাদান আন্টি ক্যান্সার উপাদান গুলোকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
প্রতিদিন কতটুকু গাজর খাওয়া উচিত?
আপনি যদি প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে থাকেন তাহলে প্রতিদিন সর্বোচ্চ এক গ্লাস গাজরের রস পান করতে পারেন। আপনি যদি কাঁচা গাজর চিবিয়ে খেতে চান তাহলে সর্বোচ্চ ৫ টি গাজর একদিনে খাওয়া যেতে পারে।
তবে একদিনে চার থেকে পাঁচটি গাজর খাওয়ার পর আপনার যদি শারীরিক কোন দুর্বলতা অনুভূত হয় তাহলে গাজর খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিন।
গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
কাজর কৃমি নাশক হিসেবে খুব ভালো কাজ করে থাকে। তাছাড়া গাজোল সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং পাচনতন্ত্র উন্নত করতে সাহায্য করে।
গাজরের অপকারিতা:
প্রয়োজনের অধিক গাজর খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে তা হলো:
- গ্যাস,
- ডায়রিয়া,
- পেট,
- পাকস্থলির ,
- পাচনজনিত ব্যাধি,
- বুকের দুধের স্বাদ পরিবর্তন
- নিয়মিত প্রয়োজনের তুলনায় বেশি গাজর খেলে অন্ত্রে ক্যান্সারের জীবাণু তৈরি হতে পারে, ইত্যাদি।
জনপ্রিয় ব্লগ: ওটস কিভাবে খেতে হয়?
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১)গাজর সকালে খালি পেটে খেলে কি হয়?
উঃ সকালে খালি পেটে গাজর খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, হজম শক্তি উন্নত হয়, দৃষ্টিশক্তি উন্নত হয়, শরীর থেকে যাবতীয় ক্ষতিকর জীবাণু দূর হয়, পেটের যাবতীয় সমস্যা দূর হয়।
২)গাজর কি ওজন কমাতে সাহায্য করে?
উঃ গাজর খেলে শরীরে বিপাক প্রক্রিয়া উন্নত হয়, এবং গাজর লো ক্যালরিযুক্ত ফুড হওয়ায় নিয়মিত গাজর খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে।
৩)গাজরে কি কি ভিটামিন আছে?
উঃ গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ।
৪)গাজরের জুসের উপকারিতা?
উঃ গাজর দিয়ে তৈরি জুস এবং কাঁচা গাজর খাওয়ার উপকারিতা প্রায় একই। নিয়মিত সকালে গাজরের দুধ খেলে চুল সুন্দর হয়, ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, লিভার ও হার্ট সুস্থ থাকে, রক্তস্বল্পতা দূর হয় এবং জন্ডিস নিরাময় হয়।
৫)গাজরের জুস খেলে কি রক্ত বাড়ে?
উঃ গাজরের জুস অথবা কাঁচা গাজর রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে গাজরের জুস খেলে রক্ত দ্রুত বাড়ে।