টনসিল অপারেশনের পর ইনফেকশন হলে কিভাবে বুঝবেন? করণীয় কি ? জেনে নিন !

টনসিল অপারেশন করার পর ইনফেকশনের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে, তাই জেনে নিন  টনসিল অপারেশনের পর ইনফেকশন হলে কিভাবে বুঝবেন? করণীয় কি ? জেনে নিন ! টনসিল গলার দু’পাশে থাকা লিস্ফয়েড টিস্যু।

গলার দু’পাশে থাকা এই গ্রন্থি শরীরের ইমিউন সিস্টেমের অংশ। কিন্তু গলার দুপাশে অবস্থিত এই গ্রন্থি বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে টনসিলের প্রদাহ জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাকে বলা হয় টনসিলাইটিস

সাধারণত ব্যাকটেরিয়া জনিত কারণে এবং মৌসুম পরিবর্তনের সময় টনসিলাইটিস এর সমস্যা দেখা দেয়। যার ফলে অনেক সময় টনসিলের অপারেশন করার দরকার হয়। টনসিল অপারেশনের পর ইনফেকশন হলে তীব্র জ্বর হয়, গলাব্যথা, খাবার গিলতে ও ঢোক গিলতে কষ্ট হতে পারে, মাথাব্যথা, কানব্যথা এর পাশাপাশি গলার স্বরে পরিবর্তন হয়। টনসিলের ইনফেকশন হলে অনেক সময় শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং মুখ থেকে দুর্গন্ধ ও লালা বের হয়। টনসিল অপারেশনের পর ইনফেকশন হলে কিভাবে বুঝবেন এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আমাদের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।

টনসিল অপারেশনের পর ইনফেকশন হলে কিভাবে বুঝবেন?

টনসিল অপারেশনের পর ইনফেকশন হলে কিভাবে বুঝবেন? 

টনসিল অপারেশনের পর ইনফেকশন হলে কিভাবে বুঝবেন?

টনসিল অপারেশনের (টনসিলেক্টমি) পর ইনফেকশন হলে সাধারণত কিছু লক্ষণ দেখা দেয়, যা দ্রুত সনাক্ত করা গেলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেয়া যায়। ইনফেকশন হলে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে:

টনসিল অপারেশনের পর ইনফেকশনের লক্ষণ:

১.অতিরিক্ত ব্যথা:

অপারেশনের পর সাধারণত গলা ও কান ব্যথা হতে পারে, তবে যদি ব্যথা দিনে দিনে বাড়তে থাকে এবং ওষুধেও আরাম না হয়, তাহলে ইনফেকশনের সম্ভাবনা থাকতে পারে।

২.ফোলা বা লালচে হওয়া:

গলার পেছনের অংশে (যেখানে টনসিল ছিল) অতিরিক্ত ফোলা বা লালচে রঙ দেখা গেলে ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে।

৩.পুঁজ বা দুর্গন্ধযুক্ত তরল বের হওয়া:

যদি সেলাই বা কাটা জায়গা থেকে পুঁজ বা দুর্গন্ধযুক্ত তরল বের হয়, এটি ইনফেকশনের পরিষ্কার লক্ষণ হতে পারে।

৪.জ্বর:

অপারেশনের পর সাধারণত তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যেতে পারে, কিন্তু যদি ১০১°F (৩৮.৩°C) বা তার বেশি জ্বর আসে, ইনফেকশনের সম্ভাবনা থাকে।

৫.শ্বাসকষ্ট বা গিলতে কষ্ট:

ইনফেকশনের কারণে গলার ফোলা এত বেশি হতে পারে যে শ্বাস নিতে বা খাবার গিলতে অসুবিধা হয়।

৬.গলা থেকে দুর্গন্ধ আসা:

টনসিলের অপারেশন পর কিছু সময়ের জন্য হালকা গন্ধ আসা স্বাভাবিক, তবে দীর্ঘ সময় ধরে যদি গলা থেকে দুর্গন্ধ আসে, এটি ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে।

৭.অবসাদ ও দুর্বলতা:

ইনফেকশন হলে শরীরে অস্বাভাবিক দুর্বলতা বা অবসাদ অনুভব হতে পারে।

ইনফেকশনের চিকিৎসা:

যদি উপরের লক্ষণগুলোর কোনোটি দেখা যায়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তার সাধারণত:

অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবেন।
শারীরিক পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে পরবর্তী চিকিৎসা নির্ধারণ করবেন।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:

যথাযথ পানি পান ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং অপারেশনের স্থানে হাত না দেওয়া।
ধুলাবালি বা ধোঁয়া এড়িয়ে চলা এবং বিশ্রাম নেওয়া।

ডাক্তারের পরামর্শমতো নিয়মিত চেকআপ করানোও গুরুত্বপূর্ণ।

টনসিল এর লক্ষণ কি কি?

টনসিল কে সাধারণত আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ডা. হাসানুল হক বলেন, খাবারের মাধ্যমে আমাদের শরীরে যেসব রোগ জীবাণু প্রবেশ করে তাদেরকে প্রাকৃতিকভাবে ধ্বংস করতে টনসিল কাজ করে।

মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ এর ক্ষেত্রে টনসিল সর্বাধিক ভূমিকা পালন করে। 

সাধারণত সংক্রমনের তীব্রতার উপর টনসিলের আকার নির্ধারিত হয়। যৌবনারম্ভের শুরুতে টনসিল সবচেয়ে বড় আকার ধারণ করে। যদিও পরবর্তীতে আস্তে আস্তে টনসিল ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় বাচ্চাদের টনসিলের আকার বড় হয়।

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে টনসিলের আকার হবে ২.৫ সেন্টিমিটার লম্বা, ২.০ সেন্টিমিটার চওড়া। চলুন এবার জেনে নেই টনসিল এর লক্ষণ কি কি?

নিঃশ্বাসের সময় ভারি আওয়াজ

টনসিলের ইনফেকশন হলে নিঃশ্বাসের সময় ভারী আওয়াজ অর্থাৎ নিঃশ্বাসের সাথে ঘড়ঘড় আওয়াজ হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে নিঃশ্বাসের সাথে আওয়াজ অথবা ভারি নিঃশ্বাস এর সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

ঘাড়ে কঠিনতা ও মাথা ব্যথা

ছোট বাচ্চাদের টনসিল ইনফেকশন হলে ঘাড়ে কঠিনতা ও মাথা ব্যথা হতে পারে। খুব ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে ঘাড় ও মাথা ব্যথার ফলে কানের দু পাশ ফুলে যেতে পারে।

ঢোক গিলতে অসুবিধা হওয়া

যেহেতু টনসিল গলার দুপাশের গ্রন্থিতে অবস্থিত তাই টনসিলার ইনফেকশন হলে ঢোক গিলতে অসুবিধা হওয়া স্বাভাবিক।। বিশেষ করে শক্ত কোন খাবার এবং পানি পানের সময় ঢোক গিলতে অসুবিধা হলে টনসিল ডাক্তারের কাছ থেকে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরি।

টনসিলের উপর সাদা বা হলুদ রঙের আবরণ

টনসিলের ইনফেকশনের আরেকটি বড় লক্ষণ হল টনসিলের উপর সাদা বা হলুদ রঙের আবরণ সৃষ্টি হওয়া। সাদা বা হলুদ রঙের ছোপ ছোপ দাগ টনসিলের উপর দেখলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

পেটে ব্যথা

ছোট বাচ্চাদের টনসিল হলে পেটে ব্যথার সমস্যা সৃষ্টি হয়। এবং এই পেটে ব্যথার ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত চলতে পারে। এতে করে শিশুর শরীর অত্যাধিক পরিমাণে দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং শিশু অত্যাধিক কান্নাকাটি করার ফলে খিটখিটে আচরণ করতে পারে।

খাবারে অনিহা

শিশু অথবা প্রাপ্তবয়স্ক টনসিলের সমস্যায় যেই আক্রান্ত হোক না কেন খাবারে অনীহা দেখা দেওয়া একটি স্বাভাবিক লক্ষন। যেহেতু টনসিল হলে ঢোক গিলতে অসুবিধা হয় তাই এ সময় খাবারের প্রতি স্বাভাবিকভাবে অনীহা তৈরি হয়।

খিটখিটে মেজাজ

শিশুদের ক্ষেত্রে টনসিল হলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যেতে পারে। কারণ টনসিল হলে গলা ও কান ব্যথার কারণে শিশুরা অত্যাধিক কান্নাকাটি করে। তাই এ সময় বাচ্চারা খিটখিটে আচরণ করে।

নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা

টনসিল হলে রাতে ঘুমানোর সময় নিঃশ্বাস আটকে যাওয়া এবং নিশ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়ার মতো সমস্যা তৈরি হয়। এরকম অবস্থায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।

শিশুদের ক্ষেত্রে মুখ দিয়ে লালা পড়া

টনসিল হলে শিশুদের মুখে দুর্গন্ধ হয় এবং মুখ দিয়ে অনবরত ঝরতে থাকে। এবং এই লালা কিছুটা আঠালো ধরনের হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টনসিল হলে বাচ্চাদের তরল পাতলা লালা মুখ থেকে বের হয়।

তীব্র জ্বর ও কানে ব্যথা

টনসিলের কারণে ১০২-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এবং জ্বরের সাথে তীব্র কান ব্যথা থাকাও টনসিল ইনফেকশনের লক্ষণ। টনসিলের কারণে জ্বর আসলে বমি বমি ভাব তৈরি হতে পারে।

মুখ খুলতে অসুবিধা হওয়া

টনসিলের অত্যাধিক সংক্রমণের ফলে মুখ খুলতে অসুবিধা হয়। তবে অত্যাধিক মাত্রায় টনসিল ইনফেকশন না হলে এরূপ সমস্যা হয় না।

টনসিল অপারেশন 

টনসিল সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে।

  • একিউট টনসিলাইটিস,
  • ক্রনিক টনসিলাইটিস।

একিউট টনসিল সাধারণত একদিনই তৈরি হয় এবং এক সপ্তাহের মধ্যে প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ এই ভালো হয়ে যায়।

অন্যদিকে, ক্রনিক টনসিলাইটিস কোন কারণ ছাড়াই ঘন ঘন হয় এবং সংক্রমিত হওয়ার পাশাপাশি প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হয়। টনসিলের আরেকটি বড় সমস্যা হল Peritonsillar Abscess। এরূপ অবস্থা টনসিলের চার পাশে বড় বড় ফোড়া হয়।

লোকাল এনেস্থিসিয়ার মাধ্যমে পুঁজ বের করে দিলেই এরূপ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। এবং পুঁজ বের করার ১ থেকে দেড় মাস পর অপারেশন করে টনসিল ফেলে দেওয়া যায়।

 

টনসিল অপারেশন কখন করবেন?

ক্রনিক টনসিলাইটিস হলে অবশ্যই অপারেশন করতে হবে। কারণ এ জাতীয় টনসিল গুলো অপারেশন করে ফেলে না দিলে প্রতিমাসেই হতে পারে এবং ব্যথাসহ তীব্র সংক্রমণ হতে পারে।

ফোঁড়া বা পেরিটনসিলার এবসেস যদি টনসিলের চারপাশে হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই টনসিল অপারেশন করতে হবে। কারণ এই ধরনের ফোড়া গুলো টনসিলের চারপাশে দীর্ঘমেয়াদী থাকলে বড় ধরনের সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।

টনসিলে সংক্রমণ হওয়ার পর যদি তিন বছর ধরে একটা না কিছুদিন পর পর টনসিলের সমস্যা দেখা দেয় তাহলে টনসিলের অপারেশন করতে হবে। কারণ এই ধরনের ইনফেকশন পরবর্তীতে বড় ধরনের রোগের সৃষ্টি করে।

দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক ক্রিপটোকঙ্কাল ইনফেকশন এর ফলেও টনসিল অপারেশন করতে হবে। টনসিল কোন ইনফেকশনে আক্রান্ত হলে কোন কারণ ছাড়াই ক্রিপটোকঙ্কাল এ সমস্যা কয়েকদিন পর পর দেখা দেয়।

যারা টনসিল এ আক্রান্ত রয়েছেন এবং স্টাইলয়েড প্রসেস অপারেশন করাতে চান তারা ওই সময়ে টনসিল অপারেশন করিয়ে নিতে পারেন। এতে করে গলায় যে কোন সমস্যা থেকে আপনি মুক্তি পাবেন।

 

টনসিল অপারেশন কখন করবেন না?

যাদের শরীরে অ্যাকিউট ইনফেকশন এর সমস্যা রয়েছে তারা টনসিল অপারেশন করবেন না। অ্যাকিউট ইনফেকশন সাধারণত শরীরে খুব দ্রুত ছড়িয়ে যায়। এবং অপারেশনের সময় ইনফেকশন শরীরে ছড়িয়ে গেলে রক্তপাত বন্ধ না হয়ে রোগী মৃত্যুবরণও করতে পারে।

যারা কোন কারনে জ্বর এবং মাথা ব্যথায় ভুগছেন তারা কোন অবস্থাতেই টনসিল অপারেশন করবেন না। মাথাব্যথা ছাড়াও শরীরের যেকোনো অংশে ব্যথা থাকলেও টনসিল অপারেশন করা যাবে না।

যারা নতুন থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছেন অথবা দীর্ঘদিন ধরে থ্যালাসেমিয়ায় ভুগছেন তারা  প্রয়োজনীয় কারণবশত ছাড়া টনসিল অপারেশন করবেন না। টনসিল অপারেশন করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

তিন বছরের কম শিশুদের টনসিল অপারেশন করা যাবে না। যদি কারো রক্তের পরিমাণ কম থাকে অথবা হিমোগ্লোবিন কম থাকে তাহলে তারা ও টনসিলের অপারেশন করতে পারবেন না।

যাদের রক্তে হিমোফিলিয়া এর ইতিহাস রয়েছে তারাও টনসিলের অপারেশন করতে পারবেন না। নারীদের পিরিয়ড চলাকালীন তিন থেকে চার দিন পর্যন্ত টনসিলের অপারেশন করা যাবে না।

 

টনসিল অপারেশনের পর ইনফেকশন হলে কিভাবে বুঝবেন?

টনসিল অপারেশনের পর হালকা অথবা তীব্র ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। তীব্র ইনফেকশনের লক্ষণগুলো হল:

  • তীব্র জ্বর (১০৩ থেকে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট) তাপমাত্রা এবং মাথা ব্যথা ও কান ব্যথা,
  • তীব্র গলা বথার পাশাপাশি খাবার গিলতে অসুবিধা হওয়া,
  • বাচ্চাদের টনসিল জনিত সমস্যায় মুখ দিয়ে লালা পড়া,
  • বাতজ্বর রিউমেটিক ফিভার দেখা দেওয়া,
  • টনসিলের চারপাশে ফোড়া হওয়া,
  • টনসিলের জীবাণু রক্তে ছড়িয়ে পড়া,
  • কানের ভিতর ইনফেকশন দেখা দেওয়া,
  • শ্বাসনালী ফুলে যাওয়া এবং শ্বাসকষ্ট হওয়া,
  • টনসিল বা ফোঁড়ার চারপাশ দিয়ে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়া।

মৌসুম পরিবর্তন জনিত কারণে টনসিলের সমস্যা দেখা দিলেও অবহেলা করা উচিত নয়। আর যদি অপারেশনের পরে টনসিলের ইনফেকশন দেখা দেয় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

আমাদের দেশে টনসিলের অপারেশন খুবই নিরাপদ ভাবে করা হয়, যা খুবই ফলপ্রসূ হয়ে থাকে। রোগী সকালে টনসিলের অপারেশন করলে বিকালেই বাসায় চলে যেতে পারে এবং পরদিন থেকেই মুখে খাবার গ্রহণ করতে পারেন।

 

টনসিল অপারেশনের পর ইনফেকশন হলে করণীয় কি? 

টনসিল অপারেশনের পর তীব্র সংক্রমণ দেখা দিলে অবশ্যই পুনরায় ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। তীব্র সংক্রমণের লক্ষণ কি কি তা আমরা ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি।

কিন্তু সংক্রমনের তীব্রতা কম থাকলে কিছু কিছু ঘরোয়া টোটকা তেও উপকার মেলে। চলুন জেনে নেই টনসিল অপারেশনের পর ইনফেকশন হলে করনীয় কি?

লবণ পানিতে গার্গল করুন

যেহেতু ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে টনসিল হয়, তাই লবণ পানিতে গার্গল করলে ব্যাকটেরিয়ার জীবাণু মরে যায় এবং টনসিল থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

মধু আর জ্যোষ্ঠিমধু বেটে খান

মধুর সাথে তুলসী পাতা বাটা মধুর সাথে যষ্টিমধু বেটে খেলে টনসিলের সংক্রমণ দূর হয়। খুব তাড়াতাড়ি টনসিলের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য গরম পানিতে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।

ক্যামোমাইল চা খেতে পারেন

ক্যামোমাইল চা এ প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকায় গলার ভিতর যে কোন সংক্রমণের হাত থেকে দ্রুত পরিত্রাণ পাওয়া যায়। ক্যামোমাইল চা খেতে না চাইলে এর ভেপার নিলেও ভালো ফল পাওয়া যায়।

বেকিং সোডা দিয়ে গার্গল করুন

যেকোনো ধরনের জীবাণু সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে চাইলে বেকিং সোডা দিয়ে গার্গল করতে পারেন। পরিমাণ মতো গরম পানির সাথে এক চিমটি পরিমাণ বেকিং সোডা যোগ করে দিনে দুই থেকে তিনবার গার্গল করতে পারেন।

রসুন খান

গরম ভাতের সাথে রসুন সেদ্ধ অথবা ভাজা রসুন মিশিয়ে খেলে টনসিল এর সমস্যা থেকে দ্রুত রেহাই মেলে। তাছাড়া রসুনের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে এন্টিবায়োটিক এর কাজ করে। গলার যেকোনো সমস্যায় অবশ্যই গরম ভাতের সাথে রসুন খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

মেথি খেতে পারেন

মেথি ভেজানো গরম পানি টনসিল এর বিরুদ্ধে কাজ করে। গরম পানিতে মেথি ফুটিয়ে এর মধ্যে পরিমাণ মতো চা পাতা দিয়ে চা তৈরি করে নিন। কিছু সময় রেখে দিয়ে ছেকে চা পাতা এবং মেথি আলাদা করে নিয়ে পানিটুকু খেয়ে নিন আশা করি টনসিলের সমস্যা থেকে দ্রুত রেহাই পাবেন।

 

টনসিল অপারেশন করার পর করণীয়

টনসিল অপারেশন করার পর করণীয়!

টনসিল অপারেশন করার পর কিছু সতর্কতা মেনে চলতে হবে। টনসিল অপারেশন করার পর করণীয় বিষয়গুলো হল:

  • খাবার গ্রহণে সচেতনতা অবলম্বন করুন,
  • অস্ত্রোপচারের পর ভালো মানের ব্যথা নাশক ওষুধ খেতে পারেন,
  • এন্টিবায়োটিক এর ডোজ শেষ করুন,
  • টনসিল অপারেশন করার পর প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি করে খাওয়া উচিত,
  • অস্ত্রোপচারের পর ব্যথা হলে ভালো মানের সাপোজিটরি ব্যবহার করতে পারেন,
  • অস্ত্রচারের পর রোগী নিয়মিত গোসল করতে পারবেন,
  • অস্ত্রোপচারের পর বারবার ঠান্ডা জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত নয়,
  • অপারেশন পরবর্তী ব্যথা হলে খুব দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

 

টনসিল অপারেশনের পর খাবার তালিকা

টনসিল অপারেশনের পর খাবার তালিকা এমন হতে হবে যাতে গলায় কোনরকম আঘাত না লাগে এবং টনসিল খুব দ্রুত কমে যায়। টনসিল অপারেশনের পর খাবার তালিকা নিম্নরূপ হবে:

  • নরম পাউরুটি দুধে ভিজিয়ে খেতে হবে, দুধের সাথে অতিরিক্ত পরিমাণে চিনি মিশিয়ে খাবেন না।
  • জাওভাত বা নরম খিচুড়ি খেতে হবে কয়েকদিন পর্যন্ত।
  • সেমাই, ফিরনি, স্যুপ ইত্যাদি তরল জাতীয় খাবার টনসিল কমাতে সাহায্য করে।
  • শক্ত, মসলাদার জাতীয় সব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে অন্তত সাত দিন।
  • চানাচুর, ফুচকা, শক্ত পিঠা, মাংসের হাড় এবং কাঁটাযুক্ত মাছ টনসিল ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই টনসিল অপারেশন করলে এসব খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • টনসিল অপারেশন করার পর প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে।

 

টনসিল অপারেশনের পর কি কি খাওয়া উচিত না

অপারেশনের পর যেসব খাবার খাওয়া উচিত না-

  • কাঁটা যুক্ত মাছ ও শক্ত মাংসের হাড় এড়িয়ে চলুন।
  • ফাস্টফুড ও ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন,
  • মাখন, চিজ, ভাজা খাবার, ফ্রাইড চিকেন ইত্যাদি খাবার না খাওয়াই ভালো,
  • কাঁচা যে কোন খাবার যেমন: সালাদ, ফল, শাকসবজি, মাশরুম, ব্রকোলি, কাঁচা পেঁয়াজ ও রসুন এড়িয়ে চলুন,
  • চকলেট, আইসক্রিম, মাখন, চিজ, রুটি ইত্যাদি খাবার অন্তত সাত দিন এড়িয়ে চলুন,
  • অতিরিক্ত ঠাণ্ডা এবং অতিরিক্ত গরম খাবার এক সপ্তাহ খাওয়া যাবে,
  • এসিডযুক্ত বিভিন্ন খাবার যেমন: লেবু, কমলা, টমেটো, আঙ্গুর, কুল, আচার, কফি, সোডা এড়িয়ে চলতে হবে।

 

টনসিল অপারেশন না করলে কি হয়

টনসিল থেকে শুকনো পুঁজ বের হলে টনসিল অপারেশন করাতে হবে। যাদের দীর্ঘদিন যাবৎ টনসিল ফুলে রয়েছে তাদের টনসিল অপারেশন করাতে হবে। যাদের এক বছরে পাঁচবারের বেশি টনসিলা ইনফেকশন হয়েছে তাদের টনসিল অপারেশন করাতে হবে। যাদের ঘনঘন গলা ব্যথার পাশাপাশি জ্বর হয় তাদের দ্রুত টনসিল অপারেশন করাতে হবে। টনসিল অপারেশন করার আগে পরীক্ষা করে নিন টনসিলে ক্যান্সার রয়েছে কিনা।

 

টনসিল অপারেশনের পর ব্যাথা কত দিন থাকে?

টনসিল অপারেশনের পর ব্যথা একটু বেশি থাকে কারণ টনসিল একদিনের বেশি বিশ্রাম পাইনা। একজন প্রাপ্তবয়স্কের ক্ষেত্রে টনসিলের ব্যথা সর্বোচ্চ ১৫ দিন থাকতে পারে। তবে টনসিলের ব্যথার সবচেয়ে বেশি প্রকোপ থাকে অপারেশনের পরে ৭ দিন। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এই ব্যথা আরো কম বা বেশি দিন স্থায়ী হতে পারে।

 

টনসিল অপারেশন করলে কি কি সমস্যা হয়?

টনসিল অপারেশনের পর বমি বমি ভাব অথবা বমি হতে পারে। কানে ব্যথা এবং স্বাদের তারতম দেখা দিতে পারে। কথা বলতে অসুবিধা এবং ডিহাইড্রেশনের সমস্যা হতে পারে। টনসিল অপারেশনের পর এই সমস্যাগুলো মোটামুটি সবারই দেখা দিতে পারে। তবে কয়েকদিন অপেক্ষা করলেই কোন ঔষধ ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে ঠিক হয়ে যায়।

লেখকের শেষ কথা

আমাদের আজকের আর্টিকেল সাজানো হয়েছে টনসিল অপারেশনের পর ইনফেকশন হলে কিভাবে বুঝবেন এ সম্পর্কে। টনসিল খুব স্বাভাবিক রোগ মনে হলেও টনসিল ইনফেকশন খুবই মারাত্মক হয়ে থাকে। তাই টনসিলের যে কোন সমস্যায় দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।

জনপ্রিয় ব্লগ: রুট ক্যানেল কিভাবে করা হয়? করার পর ব্যথা হলে করণীয়

FAQ: 

১)টনসিল বড় হলে কি সমস্যা হয়?

উঃ টনসিল বড় হলে সাধারণ জ্বর, গলা ব্যথা, সার্ভিকাল লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া এবং লিভারের সমস্যা দেখা দেয়।

২)টনসিল অপারেশন করতে কত টাকা খরচ হয়?

উঃ বেসরকারি হাসপাতালে ৩০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে সরকারি হাসপাতালে খরচ কম হয়।

৩)টনসিল অপারেশন করতে কত সময় লাগে? 

উঃ টনসিল এর আকার অনুযায়ী ১০ থেকে সর্বোচ্চ ২০ মিনিট সময় লাগতে পারে।

Spread the love

7 thoughts on “টনসিল অপারেশনের পর ইনফেকশন হলে কিভাবে বুঝবেন? করণীয় কি ? জেনে নিন !”

Leave a Comment