ডায়াবেটিস একটি মেটাবলিক রোগ, যা শরীরে ইনসুলিনের অভাব কিংবা ইনসুলিনের প্রতি শরীরের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার ফলে সংঘটিত হয়। যদিও অনেক ডায়াবেটিক রোগীকে নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করতে হয়, তবুও জীবনধারায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমে এই রোগকে ওষুধ ছাড়াই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এই পরিবর্তনগুলির মধ্যে অধিকাংশই খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক ব্যায়াম এবং সামগ্রিকভাবে জীবনযাত্রার মান উন্নত করার উপর নির্ভর করে। আজকের ব্লগে আমরা জানবো : ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায়, ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পাওয়ার ৭ টি উপায়, ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায়, কি খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে, ডায়াবেটিস হলে কি কি সবজি খাওয়া যাবে না, দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়, ডায়াবেটিস মাপার নিয়ম..
একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর জন্য সুষম ও ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। এছাড়াও খাদ্য তালিকায় উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। এই ধরনের খাবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়িয়ে দেয়, যা ইনসুলিনের মাত্রাকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। ওষুধ ছাড়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে শারীরিক ব্যায়াম অনেকটা অপরিহার্যই বলা চলে।
ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পাওয়ার ৭ টি উপায়
ডায়াবেটিস থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পাওয়া কঠিন হলেও এর ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করা খুবই সম্ভব। এখানে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সাতটি উপায় দেওয়া হলঃ
- সুষম খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করাঃ
- ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন ফলমূল, সবজি, বীজ ও বাদাম নিয়মিত খান।
- সম্পূর্ণ শস্যজাত খাবার এবং কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যুক্ত খাবার গ্রহণ করুন।
- চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
- নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামঃ
- সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট স্বাভাবিক থেকে জোরালো ব্যায়াম যেমন হাঁটা, সাঁতার কাটা বা সাইকেল চালানো অনুশীলন করুন।
- ব্যায়াম করা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং শরীরকে গ্লুকোজ ব্যবহার করতে সাহায্য করে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণঃ
- স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন, কারণ স্থূলতা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
- যথেষ্ট ঘুম নিনঃ
- প্রতি রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিন। ঘুমের অভাব হরমোনাল ভারসাম্য নষ্ট করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
- চাপ কমানোঃ
- মানসিক চাপ ব্লাড সুগারের মাত্রা বাড়াতে পারে, তাই ধ্যান, যোগ অথবা অন্যান্য মানসিক চাপ কমানোর পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
- ধূমপান ত্যাগ করা:
- ধূমপান ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকারক, কারণ এটি হৃদরোগ ও অন্যান্য জটিলতার ঝুঁকি বাড়ায়।
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা:
- ডায়াবেটিসের জটিলতা এড়াতে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ ও পরীক্ষা সুনিশ্চিত করুন।
এই উপায়গুলি অনুসরণ করে আপনি সহজেই ডায়াবেটিসের প্রভাব কমাতে পারেন। তবে সর্বদা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলার কোনো বিকল্প নেই, কারণ একেক ব্যক্তির চিকিৎসার ধরন ও প্রয়োজন একেক রকম হতে পারে।
ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে, যা স্বাস্থ্যকর এবং কার্যকর ভূমিকা পালনে সক্ষম। যেমনঃ
- খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুনঃ
- কম কার্বোহাইড্রেট এবং উচ্চ ফাইবার যুক্ত খাবার খান। ফাইবার ধীরে ধীরে হজম হয় এবং রক্তে চিনির মাত্রা তুলনামূলক ধীর গতিতে বৃদ্ধি করে।
- চিনি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। প্রাকৃতিক মিষ্টি উৎস যেমন মধু কিংবা ফল গ্রহণ করুন।
- নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামঃ
- শারীরিক ব্যায়াম নিয়মিত করুন যেমন হাঁটা, জগিং, সাইক্লিং বা সুইমিং। এগুলি শরীরকে ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীল করে তোলে এবং ক্যালোরি বার্ন করতে সাহায্য করে।
- ওজন হ্রাস করুনঃ
- শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেললে ইনসুলিন ব্যবহার করার ক্ষমতা বাড়ে। ওজন হ্রাস করার জন্য সুষম ডায়েট ও নিয়মিত ব্যায়াম অনুসরণ করুন।
- পর্যাপ্ত ঘুমঃ
- প্রতি রাতে ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানো আবশ্যক। অপর্যাপ্ত ঘুম ইনসুলিন প্রতিরোধ বাড়িয়ে দেয় এবং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ কঠিন করে তোলে।
- চাপ কমানোঃ
- স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট করুন যেমন ধ্যান, প্রাণায়াম, অবসর সময় কাটানো, পছন্দের কাজ করা। মানসিক চাপ ব্লাড সুগার লেভেল প্রভাবিত করে।
- ধূমপান ও মদ্যপান এড়ানোঃ
- ধূমপান ও মদ্যপান ডায়াবেটিসের জটিলতা বৃদ্ধি করে। এগুলি ছেড়ে দিলে সহজেই আপনার স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটবে।
- নিয়মিত মেডিক্যাল চেকআপঃ
- নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। এটি আপনাকে আপনার স্বাস্থ্যের অবস্থার উপর খেয়াল রাখতে সাহায্য করে এবং যেকোনো সমস্যা সময়মত চিহ্নিত করতে ভূমিকা রাখে।
উপরোক্ত উপায়গুলো অনুসরণ করে আপনি খুব সহজেই ডায়াবেটিসকে কার্যকরী উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। তবে এ সংক্রান্ত কিছু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত।
কি খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে, এমন কিছু খাবারের তালিকা নিচে দেওয়া হলঃ
- সম্পূর্ণ শস্যজাত খাবারঃ সম্পূর্ণ শস্য যেমন বাদামী চাল, কোয়ানো, ওটমিল এবং সম্পূর্ণ গমের রুটি। এগুলি উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ এবং ধীরে ধীরে গ্লুকোজ নিঃসরণ করে, যা রক্তে চিনির মাত্রা স্থিতিশীল রাখে।
- ফলমূল: বেরি, সাইট্রাস ফল, আপেল, নাশপাতি যেগুলো ফাইবার সমৃদ্ধ এবং স্বাস্থ্যকর। তবে, ফলের রস এড়িয়ে চলা উচিত কারণ এতে উচ্চ মাত্রায় চিনি থাকে।
- সবজি: লাল, হলুদ, সবুজ সবজি যেমন ব্রোকলি, পালং শাক, ক্যাপসিকাম এবং গাজর। এগুলি কম ক্যালরি এবং উচ্চ পুষ্টি সমৃদ্ধ।
- মাছ ও সি-ফুড: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ যেমন স্যামন, ম্যাকারেল, এবং টুনা। এগুলি হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
- প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার: ছোট বীজ (যেমন ডাল, বিনস), চিকেন ব্রেস্ট এবং ডিম। এগুলি খাদ্য থেকে ধীরে ধীরে এনার্জি নিঃসরণ করে এবং ব্লাড সুগার লেভেল স্থিতিশীল রাখে।
- স্বাস্থ্যকর ফ্যাট: অ্যাভোকাডো, বাদাম, বীজ এবং জলপাই তেল। এগুলি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে যা ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- পানীয়: পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং চিনি যুক্ত পানীয় এবং কৃত্রিম সুইটেনার ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। গ্রীন টি বা হার্বাল চা পান করা ভালো যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ।
ডায়াবেটিসের প্রবণতা কমাতে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই খাবারগুলি অত্যন্ত সহায়ক। আপনি যদি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে এবং সুস্থ থাকতে চান, উপর্যুক্ত ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ করুন।
ডায়াবেটিস হলে কি কি সবজি খাওয়া যাবে না
ডায়াবেটিস থাকলে সাধারণত সবজি খাওয়া উপকারী মনে করা হয়, কারণ এগুলো ফাইবার, ভিটামিন, এবং খনিজ সমৃদ্ধ। তবে, কিছু বিশেষ সবজি যেগুলো উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) বিশিষ্ট এবং স্টার্চযুক্ত, সেগুলো কম পরিমাণে খাওয়া উচিত। এই সবজিগুলি খুব দ্রুত রক্তে চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে, যেমনঃ
- আলুঃ আলু স্টার্চযুক্ত এবং উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের সবজি। এটি খুব দ্রুত গ্লুকোজে পরিণত হয় এবং রক্তে চিনির মাত্রা বৃদ্ধি করে।
- মিষ্টি আলুঃ: এটি সাধারণ আলুর চেয়ে কিছুটা ভালো, কারণ এতে ফাইবার বেশি এবং ভিটামিন এ সমৃদ্ধ, তবে এটিও স্টার্চযুক্ত। তাই, মিষ্টি আলু সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
- মটরশুঁটি: মটরশুঁটি এবং অন্যান্য মটর জাতীয় সবজি স্টার্চযুক্ত হওয়ায় এগুলি খাওয়ার সময় নিয়ন্ত্রিত পরিসীমা অনুসরণ করা উচিৎ।
- ভুট্টা: ভুট্টা একটি উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের স্টার্চযুক্ত সবজি। অতিরিক্ত পরিমাণে ভুট্টা খেলে রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
যদিও এই সবজিগুলো ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত, তবে এগুলি সম্পূর্ণভাবে বর্জন করার প্রয়োজন নেই। সবজিগুলির পুষ্টিগুণ এবং ফাইবার উপাদান বিবেচনা করে স্বাস্থ্যকর ভাবে ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। সবজি গ্রহণের পরিমাণ ও পদ্ধতি নির্ধারণের জন্য ডায়াবেটিস কাউন্সেলর বা ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া অত্যাবশ্যকীয়।
জনপ্রিয় ব্লগ: টনসিল অপারেশনের পর ইনফেকশন হলে কিভাবে বুঝবেন? করণীয় কি ? জেনে নিন !
দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
ডায়াবেটিস দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করতে পারেনঃ
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসঃ খাদ্যতালিকায় উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ ও কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের খাবার যোগ করুন। চিনি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
- নিয়মিত ব্যায়ামঃ প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন, যেমন হাঁটা, জগিং বা সাইক্লিং।
- ওজন নিয়ন্ত্রণঃ আদর্শ ওজন বজায় রাখুন। অতিরিক্ত ওজন কমাতে পারলে তা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- পর্যাপ্ত ঘুম ও স্ট্রেস কমানোঃ প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন এবং ধ্যান, প্রাণায়াম বা অন্যান্য মাধ্যমে মানসিক চাপ কমান।
- নিয়মিত চিকিৎসা পরীক্ষাঃ: নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনে রক্তের গ্লুকোজ লেভেল পরীক্ষা করান।
এই পদক্ষেপগুলি মেনে চললে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে দ্রুত উন্নতি দেখা যাবে আশা করা যায়।
খালি পেটে ডায়াবেটিস মাপার নিয়ম
খালি পেটে ডায়াবেটিস মাপতে হলে নিম্নলিখিত ধাপগুলি মেনে চলতে হবেঃ
১. প্রস্তুতিঃ
রক্ত সুগার পরীক্ষা করার আগে অন্তত ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কিছু না খাওয়া উচিত। সাধারণত, রাতে শেষ খাবার খাওয়ার পর পরের দিন সকালে পরীক্ষা করা হয়।
পানি পান করা যাবে, তবে অন্য কোনো খাবার বা পানীয় (যেমন কফি, চা বা জুস) এড়িয়ে চলতে হবে।
২.রক্ত সুগার পরীক্ষার যন্ত্র প্রস্তুত করাঃ
গ্লুকোমিটার এবং টেস্ট স্ট্রিপগুলি প্রস্তুত রাখুন।
আপনার হাত সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন এবং শুকিয়ে নিন।
৩.রক্ত সংগ্রহঃ
একটি ল্যানসেট ব্যবহার করে আপনার আঙুলের টিপে একটি ছোট ছিদ্র করুন।
প্রথম ফোঁটা রক্তটি মুছে ফেলুন, তারপর দ্বিতীয় ফোঁটাটি টেস্ট স্ট্রিপে লাগান।
৪.রিডিং নেওয়াঃ
টেস্ট স্ট্রিপটি গ্লুকোমিটারে প্রবেশ করান।
কয়েক সেকেন্ড পর মিটারে আপনার রক্তের সুগারের পরিমাপ দেখাবে।
৫.ফলাফল ব্যাখ্যাঃ
সাধারণত খালি পেটে রক্ত সুগারের স্বাভাবিক মাত্রা হল ৭০ থেকে ৯৯ মিলিগ্রাম ডেসিলিটার (mg/dL)।
১০০ থেকে ১২৫ mg/dL হল প্রি-ডায়াবেটিক অবস্থা, এবং ১২৬ mg/dL বা তার বেশি হলে ডায়াবেটিসের লক্ষণ।
ডায়াবেটিস নির্ণয়ের জন্য এই পরীক্ষাটি নিয়মিত করা উচিত। যদি আপনি পরীক্ষার ফলাফলে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখতে পান, তাহলে অনতিবিলম্বে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
জনপ্রিয় ব্লগ: কানের রোগ টিনিটাস এর লক্ষণ কি? টিনিটাস থেকে মুক্তির উপায়!
ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল
ভরা পেটে ডায়াবেটিসের মাত্রা মূলত খাবার খাওয়ার দুই ঘণ্টা পরে নেওয়া হয়ে থাকে। এই পরীক্ষাকে পোস্টপ্র্যান্ডিয়াল গ্লুকোজ টেস্ট (PPG) বলা হয়। সাধারণত খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর রক্তে গ্লুকোজের নরমাল মাত্রা হলোঃ
- অ-ডায়াবেটিক ব্যক্তিদের জন্যঃ ৭০ থেকে ১৪০ মিলিগ্রাম ডেসিলিটার (mg/dL) পর্যন্ত।
যদি মাত্রা ১৪০ mg/dL এর নিচে থাকে, তাহলে তা নরমাল বলে বিবেচিত হয়। একজন ব্যক্তি যদি ডায়াবেটিক না হয়ে থাকেন, তাহলে তার রক্তে চিনির পরিমাণ খাবার খাওয়ার পর দুই ঘণ্টায় সাধারণত ১৪০ mg/dL এর নিচে থাকে। তবে, এই মান কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে, যেমনঃ
- ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য: অনেক চিকিৎসক ও দিকনির্দেশনা অনুযায়ী, খাওয়ার দুই ঘণ্টা পরে রক্তে চিনির মাত্রা ১৮০ mg/dL এর নিচে রাখার জন্য বলা হয়ে থাকে।
ডায়াবেটিস ম্যানেজমেন্টের লক্ষ্য হলো রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা একটি স্বাভাবিক পরিসীমায় রাখা। তাই আপনার নিজস্ব শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সবসময় একজন চিকিৎসক বা ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
খালি পেটে ডায়াবেটিস কত পয়েন্ট হলে নরমাল
খালি পেটে ডায়াবেটিসের নরমাল মাত্রা বুঝতে হলে আপনাকে ফাস্টিং ব্লাড গ্লুকোজ পরীক্ষার মানদণ্ড জানতে হবে। এই পরীক্ষাটি সাধারণত রাতের খাবারের পর ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কিছু না খেয়ে থাকার পর করা হয়। খালি পেটে রক্ত চিনির নরমাল মাত্রা হলোঃ
- নরমাল মাত্রাঃ ৭০ থেকে ৯৯ মিলিগ্রাম প্রতি ডেসিলিটার (mg/dL)।
- প্রি-ডায়াবেটিস মাত্রাঃ ১০০ থেকে ১২৫ mg/dL।
- ডায়াবেটিস মাত্রাঃ ১২৬ mg/dL বা তার বেশি।
যদি আপনার ফাস্টিং ব্লাড গ্লুকোজের মাত্রা ৭০ থেকে ৯৯ mg/dL এর মধ্যে থাকে, তাহলে তা নরমাল হিসেবে ধরা হয়। পরীক্ষার ফলাফল যদি এর বাইরে চলে যায়, বিশেষ করে যদি প্রি-ডায়াবেটিস বা ডায়াবেটিসের পরিসীমায় পড়ে, তাহলে অনতিবিলম্বে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং ফলে রক্তের গ্লুকোজ সঠিক মাত্রায় দেহের সর্বোপরি ব্যবহৃত হয়। নিয়মিত হাঁটা, সাঁতার কাটা বা সাইকেল চালানো ইত্যাদি ব্যায়াম এই লক্ষ্যে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। এছাড়াও মানসিক চাপ বা স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করা এবং যথেষ্ট ঘুম নিশ্চিত করাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক চাপ এবং ঘুমের অভাব- উভয়ই ব্লাড সুগার লেভেলে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
তাই এক্ষেত্রে নিয়মিত লক্ষ্য রাখা অতীব জরুরি। যদিও এসকল পদক্ষেপ অনুসরণ করে ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, তবুও নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ও সে অনুযায়ী চলার প্রয়োজনীয়তাকে উপেক্ষা করার কোনো অবকাশ নেই।