কানের রোগ টিনিটাস এর লক্ষণ কি? টিনিটাস থেকে মুক্তির উপায়!

ষাটোর্ধ্ব মানুষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কানের রোগ টিনিটাস এ ভুগে থাকেন, তাই জেনে নিন কানের রোগ টিনিটাস এর লক্ষণ কি? টিনিটাস থেকে মুক্তির উপায়!

 টিনিটাস শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে লাতিন শব্দ ‘টিনিয়ার’ থেকে। এর বাংলা অর্থ হল “ঘন্টার শব্দ”। সাধারণত বন্ধ ঘরে ফ্যান বন্ধ করলে মাথা ঝিমঝিম করে এবং কানের মধ্যে একপ্রকার শব্দ হয়। কোনরকম বাহ্যিক শব্দ ছাড়া কানের ভিতর ঝিঁঝিঁ পোকা ডাকার মত শব্দ হতে থাকে। 

আমাদের দেশে প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মানুষ প্রতিনিয়ত এই সমস্যায় ভুগছেন। এর মধ্যে কারো কারো এই সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টিনিটাস এ সমস্যা একখান দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তীতে দুই কানেই ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মহিলাদের তুলনায় পুরুষরা এই সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। কানের রোগ টিনিটাস এর লক্ষণ কি? টিনিটাস থেকে মুক্তির উপায়! সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আমাদের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।

কানের রোগ টিনিটাস এর লক্ষণ কি? টিনিটাস থেকে মুক্তির উপায়!

কানের রোগ টিনিটাস এর লক্ষণ কি? টিনিটাস থেকে মুক্তির উপায়!

কানের রোগ টিনিটাস এর লক্ষণ কি? টিনিটাস থেকে মুক্তির উপায়! :

টিনিটাস (Tinnitus) হল এমন একটি অবস্থা যেখানে মানুষ নিজের কানে অস্বাভাবিক আওয়াজ শুনতে পারে যা বাইরে থেকে আসে না। এই আওয়াজটি বিভিন্ন রকম হতে পারে, যেমন:

১.গুনগুন শব্দ
২.বাঁশির মতো শব্দ
৩.গর্জন
৪. গুঞ্জন
৫. সাঁই সাঁই শব্দ

  টিনিটাসের লক্ষণ:

  • কানে স্থায়ী বা অস্থায়ী ভাবে আওয়াজ শোনা
  • এক কানে বা দুই কানে শব্দ হতে পারে
  • ঘুমাতে বা মনোযোগ দিতে সমস্যা হতে পারে
  • মাঝে মাঝে মাথাব্যথা বা বমিভাবের সাথে থাকতে পারে
  • অতিরিক্ত আওয়াজে বা নিরিবিলি পরিবেশে শব্দ বেশি শোনা যায়

টিনিটাস থেকে মুক্তির উপায়:

কানের পরিচর্যা:
কানের মধ্যে জমে থাকা ময়লা বা ওয়াক (Earwax) পরিষ্কার করা।
উচ্চ আওয়াজ থেকে দূরে থাকা বা হেডফোনের সাউন্ড কমিয়ে ব্যবহার করা।

চিকিৎসা:
ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কোনো সংক্রমণ থাকলে তার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন।
কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT) এর মাধ্যমে মানসিক চাপ ও টিনিটাসের প্রতি আপনার প্রতিক্রিয়া কমানো।
হেয়ারিং এইডস (Hearing aids) বা মাস্কিং ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে টিনিটাসের আওয়াজকে ঢেকে রাখা।

জীবনযাত্রার পরিবর্তন:
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা।
ধূমপান ও ক্যাফেইন পরিহার করা।
পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নেওয়া।
টিনিটাসের কোনো স্থায়ী নিরাময় না থাকলেও সঠিক চিকিৎসা ও সচেতনতার মাধ্যমে এর লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

টিনিটাস কি? 

কোনরকম বাহ্যিক শব্দ উপস্থিত না থাকলেও অনুরূপ বাহ্যিক শব্দ যখন কানে শোনা যায় তখন তাকে টিনিটাস অথবা tinnire বলা হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নীরব পরিবেশে অনেকেই স্বাভাবিক টিনিটাস এর সমস্যা উপলব্ধি করেন। তবে এটি তেমন সমস্যার কারণ না। কিন্তু যখন এই সমস্যা শ্রবণশক্তিতে বাধার সৃষ্টি করে এবং সাথে অন্যান্য সমস্যা যুক্ত করে তখন উদ্বেগ এবং বিষন্নতা যুক্ত হয়। এই রোগের প্রধান জটিলতা গুলো হল: দুর্বল একাগ্রতা, উদ্বেগ, বিষণ্নতা। 

সাধারণত অডিওগ্রাম, স্নায়বিক পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে এই রোগ চিহ্নিত করা হয়। কাউন্সেলিং, সাউন্ড জেনারেটর, শ্রবণ যন্ত্র এর উপর ভিত্তি করে এই রোগের চিকিৎসা প্রদান করা হয়। টিনিটাস রোগের প্রধান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গুলো হল: দীর্ঘস্থায়ী বা বর্ধিত উচ্চ শব্দের এক্সপোজার এড়িয়ে চলা, অটোটক্সিক ওষুধ এর ব্যবহার সীমিতকরণ, পদার্থের এক্সপোজার এর ব্যবহার কমিয়ে আনা।

জনপ্রিয় ব্লগ: টনসিল অপারেশনের পর ইনফেকশন

টিনিটাস এর লক্ষণ গুলো

আমাদের কানের ভিতর ক্ষুদ্র একটি কোষ থাকে। এই কোষের আকার একটি ছোট চুলের মতো। শব্দ তরঙ্গের সাথে এই কোষ যখন নড়াচড়া করে তখন আমরা বাহ্যিক শব্দ শুনতে পাই। কোষ টি অনেক সময় ছিড়ে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে। যখন এটি ছিড়ে যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন আমাদের মস্তিষ্কে অনিয়মিত ইলেকট্রিক্যাল ইমপালস পৌঁছাতে শুরু করে। এই সময় আমরা কিছু অস্বাভাবিক শব্দ শুনে থাকি যাকে টিনিটাস বলা হয়। টিনিটাস রোগের কিছু লক্ষণ রয়েছে। যেগুলো এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথেই প্রকাশ পেতে থাকে। টিনিটাস এর লক্ষণ গুলো হল:

  • কানের ভেতর ফড়ফড় আওয়াজ হতে পারে,
  • কানের ভেতরের অংশে রিঙের মতো শব্দ হয়,
  • কানের ভেতরে ক্লিকের মতো শব্দ হয়,
  • ‘হিস’ জাতীয় শব্দ অনুভূত হতে পারে,
  • কানে কম শুনতে পারা বা একেবারেই শুনতে না পারা,
  • অতিরিক্ত মাথা ঘোরানো,
  • উৎকণ্ঠা এবং অবসাদ তৈরি হওয়া।

কানের ভেতর এই জাতীয় সমস্যা দেখা দিলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। 

টিনিটাস এর লক্ষণ গুলো

টিনিটাস কেন হয়?

টিনিটাস রোগটি প্রাথমিকভাবে যখন শুরু হয় তখন রোগী কিছু সময় পরপর কানে ঝিঁঝিঁ পোকা রাখার মতো আওয়াজ শুনতে পারেন। কিন্তু রোগের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে রোগী প্রায় ২৪ ঘন্টাই কানে অনিয়মিত আওয়াজ শুনতে পান। টিনিটাস রোগে আক্রান্ত হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। টিনিটাস কেন হয় তা নিচে আলোচনা করা হলো: 

বহিঃকর্ণজনিত সমস্যা

কানের বাইরের অংশে ময়লা জমলে অথবা খইল জমা হলে অনেক সময় কানের ভেতরের অংশে শো শো শব্দ অথবা ঝিঁঝি পোকা ডাকার মতো শব্দ অনুভূত হতে পারে।

মধ্যকর্ণজনিত সমস্যা

কানের ভেতরের মাঝখানের অংশে পানি ঢুকলে, কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হলে, কান পাকা জনিত সমস্যার সৃষ্টি হলে টিনিটাস রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।

অন্তঃকর্ণজনিত সমস্যা

কানের ভেতরে অগণিত কোষ বিদ্যমান। এই কোষে কোনরকম সমস্যা দেখা দিলে কানের ভেতরের অংশে শো শো শব্দ অথবা ঝিঁঝি পোকা ডাকার মতো শব্দ অনুভূত হতে পারে। এরকম অবস্থায় খুব দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

কানের জন্য ক্ষতিকারক ওষুধ এর ব্যবহার

কানের জন্য ক্ষতিকারক এমন বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক ঔষধ যেমন: অ্যাসপিরিন, ফ্রুসেমাইড, অ্যামাইনোগ্লাইকোসাইড জাতীয় ঔষধ দীর্ঘদিন সেবন করলে টিনিটাস রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।

রক্তশূন্যতা

টিনিটাস রোগের আরেকটি বড় কারণ হলো রক্তশূন্যতা। শরীরের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম অথবা উচ্চ রক্তচাপের ফলে ও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

মাইগ্রেনের সমস্যা

দীর্ঘদিন যেসব ব্যক্তি মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগছেন অথবা অন্যান্য কারণে মাথাব্যথা রয়েছে তাদের টিনিটাস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পান

যেসব পানীয় তে ক্যাফেইনন যুক্ত রয়েছে সেসব পানীয় দীর্ঘদিন ধরে প্রতিনিয়ত পান করলে টিনিটাস হতে পারে।

রেডিওথেরাপি প্রয়োগ

শরীরে কোন কারণে রেডিও থেরাপির প্রয়োগ করলে এটি কানের উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। যার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে কানে বিভিন্ন অস্বাভাবিক শব্দ শোনা, কানে ব্যথা ইত্যাদি রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।

দাঁত ও চোয়ালের সমস্যা

দাঁত এবং চোয়ালের সাথে কান ওতপ্রোতভাবে  জড়িত। তাই দাঁত ও চোয়াল বিভিন্ন সমস্যা যেমন: দাঁতে ক্যাভিটি, দাঁত ও মাড়ি ফুলে থাকা, দাঁত ও মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া ইত্যাদি সমস্যায় টিনিটাস হতে পারে।

শব্দদূষণজনিত বধিরতা

অতিরিক্ত শব্দ দূষণের কারণে অনেকেই শ্রবণ শক্তি হারান। তবে বধির হয়ে যাওয়ার পরেও অনেক ক্ষেত্রে টিনিটাস হতে পারে। যার ফলশ্রুতিতে বধির ব্যক্তি ও কানে অস্বাভাবিক শব্দ শুনতে পান।

বয়সজনিত  সমস্যা

নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে বয়স ৬০ এর বেশি হলে টিনিটাস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে বাংলাদেশের পরিপেক্ষিতে নারীদের তুলনায় পুরুষদের এই সমস্যা বেশি হয়।

কানে মাথায় ও ঘাড়ে আঘাত

কোন কারনে কানে, মাথায় এবং ঘাড়ে আঘাত পেলে রোগী খুব দ্রুত কানে অস্বাভাবিক শব্দ শুনতে পান। এবং এই ধরনের সমস্যা খুব দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে।

মাথায় এবং ঘাড়ে টিউমার

মাথায় এবং ঘাড়ে টিউমার হলে অথবা টিউমার অপারেশন করার পরেও টিনিটাস রোগটি থেকে যায়।

বিষন্নতা, মানসিক চাপ এবং মাদকদ্রব্য গ্রহণ

কোন ব্যক্তি দীর্ঘদিন বিষন্ন থাকলে অথবা কোন কারণে মানসিক চাপ থাকলে টিনিটাস হতে পারে। আর মাদকাসক্ত ব্যক্তির টিনিটাস হওয়া খুবই স্বাভাবিক।

 

টিনিটাস থেকে মুক্তির উপায় 

টিনিটাস থেকে মুক্তির নির্দিষ্ট কোন উপায় নেই। তবে এর সাধারন কিছু চিকিৎসা রয়েছে যেগুলো অনুসরণ করলে এই রোগের প্রভাব থেকে কিছুটা হলে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। টিনিটাস থেকে মুক্তির উপায় গুলো হল:

  • কানের ওয়াক্স, ইনফেকশন, পানি জমা, টনসিল ইত্যাদির কারণে সাধারণত টিনিটাস হয়। তাই সর্বপ্রথম এসব রোগের চিকিৎসা করতে হবে।
  • অ্যান্ডোস্কোপের মাধ্যমে কানের পর্দা লাগালে টিনিটাস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • স্প্যাপিস সার্জারি, ককলিয়ার ইমপ্লান্ট, কানের টিউমার এর সার্জারি করার মাধ্যমে টিনিটাস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
  • টিনিটাস মাসকার বা হিয়ারিং এইড ব্যবহার করলে সম্পূর্ণরূপে অথবা আংশিকভাবে টিনিটাস দূর হয়।
  • টিনিটাস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য শব্দ থেরাপি বা পিচমেচিং করা যেতে পারে।
  • ঘরে অল্প সাউন্ডে গান বাজিয়ে, বা রেডিও রেডিও চালিয়ে রাখলে এই সমস্যা দূর হতে পারে।
  • ধূমপান, মদ্যপান, অত্যধিক দুশ্চিন্তা টিনিটাস এর অন্যতম কারণ। তাই এগুলো থেকে দূরে থাকাই ভালো।
  • নিয়মিত রিলাক্সেজশন থেরাপি এবং যোগ ব্যায়ামের মাধ্যমে টিনিটাস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

জনপ্রিয় ব্লগ: সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ

টিনিটাস মাসকার 

টিনিটাস মাসকার বা হিয়ারিং এইড হলো এমন এক ধরনের যন্ত্র যা শ্রবণ সহায়ক। যখন মানুষের শ্রবণশক্তির তারতম ঘটে তখন হিয়ারিং এইড একটি চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হিয়ারিং এইড সাধারণত বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে কিন্তু এর মৌলিক গঠন সম্পূর্ণরূপে এক। যারা কানে শুনতে পান না অথবা কম শুনতে পান তাদের শ্রবণশক্তির অন্তত ৯৫% উন্নতি ঘটায় এই টিনিটাস মাসকার অথবা হিয়ারিং এইড । এটি সাধারণত একটি ব্যাটারিচালিত যন্ত্র যা তিনটি অংশে বিভক্ত থাকে। ১ টি এমপ্লিফায়ার, ১ টি মাইক্রোফোন এবং, ১ টি রিসিভার এর সাহায্যে এই যন্ত্রটি গঠিত হয়ে থাকে।

টিনিটাস মাসকার দাম

বাজারে বিভিন্ন মানের এবং দামের টিনিটাস মাসকার অথবা হিয়ারিং এইড কিনতে পাওয়া যায়। মানের উপর ভিত্তি করে এর দাম নির্ধারিত হয়ে থাকে। চলুন কয়েকটি টিনিটাস মাসকার দাম জেনে নেওয়া যাক:

 

টিনিটাস মাসকার এর নামমূল্য
Axon V-99 Pocket Hearing Aid

    

২২০০ টাকা
Cyber Sonic Digital Sound Hearing Aid

    

৫৫০ টাকা
Axon X-136 Hearing Ear Machine৮৫০ টাকা
Rionet HA-20DX Rechargeable Hearing Aid৩৫০০ টাকা
Axon F-18 Hearing Aid

    

১৪০০ টাকা
Jecpp ZDB-108 Hearing Aid with     ৪৫০০ টাকা
Axon K-88 Rechargeable Mini Hearing Aid২৩০০ টাকা

 

টিনিটাস এর ঔষধ

টিনিটাস রোগের ক্ষেত্রে প্রথমত কোন ঔষধ সাজেস্ট করা হয় না। কিন্তু রোগের তীব্রতার ভিত্তিতে পরবর্তীতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কিছু ঔষধ রোগীকে সাজেস্ট করতে পারেন। অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি জাতীয় ঔষধ এই অসুখে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট এবং অ্যালপ্রাজোলাম নামক অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি ঔষধ টিনিটাস এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 

তবে অনেক সময় ঔষধ এর পরিবর্তে কানে রাখা স্টেরয়েডের মাধ্যমেও চিকিৎসা গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে এই চিকিৎসায় যারা ঔষধ সেবন করতে না চান তারা অতিরিক্ত কোলাহল যুক্ত পরিবেশ এড়িয়ে চলতে পারেন, উচ্চস্বরে হেডফোনে গান করতে পারেন‌‌। টিনিটাস থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ গ্রহণ করা যেতে পারে। নিচে টিনিটাস এর হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সম্পর্কে আমরা আলোচনা করব।

জনপ্রিয় ব্লগ: রুট ক্যানেল কিভাবে করা হয়

কানে ঝিঁ ঝিঁ শব্দ দূর করার  উপায়

কানে ঝিঁ ঝিঁ শব্দ দূর করার  উপায় করার উপায় গুলো হলো:

  • উচ্চ কোলাহল এড়িয়ে চলুন,
  • রিলাক্সেশন থেরাপি বা যোগব্যায়াম এর অভ্যাস করে তুলুন,
  • যে কক্ষে ঘুমাবেন সেখানে ঘড়ির টিক টিক আওয়াজ রাখতে পারেন,
  • মোবাইলে টিনিটাস মাস্কিং অ্যাপ ব্যবহার করুন,
  • নাক – কান – গলা বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে পারেন,
  • দুই হাত কানের পেছন থেকে সামনের অংশে কয়েকবার ঘষুণ,
  • বৃদ্ধাঙ্গুলসোজা করে কানের চারপাশে ম্যাসেজ করুন,
  • সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন,
  • ধূমপানে এবং মাদকদ্রব্য বর্জন করে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন,
  • সঠিক পদ্ধতিতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট এক্সারসাইজ করুন,
  • কানে ঝিঁ ঝিঁ শব্দের পরিমাণ বেশি হলে কানে প্রটেকশন ব্যবহার করতে হবে,
  • মাথার পেছনে, কানের উপরে ও পাশে ডিপফ্রিকশন করতে পারেন।

 

টিনিটাস, কানে শো শো শব্দের হোমিও চিকিৎসা

কানে শো শো শব্দের হোমিও চিকিৎসা খুবই কার্যকরী হয়ে থাকে। টিনিটাস, কানে শো শো শব্দের হোমিও চিকিৎসা সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী হয়। এক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী তিনটি ওষুধের নাম হল:

  • চেনোপোডিয়াম: এক মাস সেবন করতে হবে ( 2 ফোঁটা দিনে 3 বার),
  • কস্টিকাম : এক মাস সেবন করতে হবে ( 2 ফোঁটা দিনে ২ বার),
  • হেপার সালফার: এক মাস সেবন করতে হবে ( 2 ফোঁটা দিনে ৩ বার),
  • ক্যালকারিয়া কাব ৩০,
  • গ্রাপিটিস ৩০ সি এইচ,
  • গিংকো বিলোবা।

 

টিনিটাস‌ এর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় সাধারণত এই ঔষধ গুলোই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে এই আপনার শরীরের উপর ভিত্তি করে ঔষধের ডোজ কতটুকু হবে তা জানার জন্য একজন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

অস্থায়ী টিনিটাস থেকে মুক্তির উপায়?

অস্থায়ী টিনিটাস থেকে মুক্তির জন্য কোন রকম ঔষধ বা অপারেশন এর প্রয়োজন হয় না। অস্থায়ী টিনিটাস থেকে মুক্তির উপায় গুলো হল: 

  • খাদ্য তালিকায় ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার‌ যোগ করুন,
  • খাবার তালিকায় বাদাম এবং কুমড়োর বীজ রাখুন,
  • ভিটামিন এ সমৃদ্ধ বিভিন্ন খাবার যেমন: গাজর, পালং শাক এবং সরিষার শাক, সেইসাথে দুধ, পনির, স্যামন রাখতে পারেন,
  • ভিটামিন বি ১২যুক্ত বিভিন্ন খাবার টিনিটাস কমাতে সাহায্য করে,
  • সোডা এবং কফি জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকুন,
  • কাঁচা লবণ অথবা কাঁচা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন,
  • চিনি, ফাস্ট ফুড এবং সোডা পানীয় এড়িয়ে চলুন,
  • ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি এবং বাদাম জাতীয় খাবার টিনিটাস বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। তাই এই সমস্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

 

টিনিটাস কি মস্তিষ্কের ক্ষতি করে? 

টিনিটাস যদি কানের ভিতরের অংশে হয়ে থাকে তাহলে এটি অবশ্যই মস্তিষ্কের ক্ষতি করে থাকে। কিছু কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে  টিনিটাস উদ্দেশ্যমূলক হতে পারে। তবে এটি খুব বিরল হয়ে থাকে। এই জাতীয় সমস্যা কানের আশেপাশে টিউমার পর্যন্ত হতে পারে। এটি সরাসরি কান থেকে মস্তিষ্কের শিরায় প্রভাবিত হয় এবং মস্তিষ্কের ক্ষতি করে।

তবে যারা কানে হালকা গুঞ্জন শোনেন, রিং অথবা হিস এর মত আওয়াজ শুনেন তাদের ক্ষেত্রে এই রোগ সাধারণত মস্তিষ্কে ক্ষতি করে না। তবে যারা মস্তিষ্কের বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলায়, স্নায়বিক ও মস্তিষ্কের সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে কোন ঔষধ সেবন করেন তাদের ক্ষেত্রে টিনিটাস হতে পারে এবং এটি অবশ্যই মস্তিষ্কে ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। তাই বলা যায় যে, টিনিটাস বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে ক্ষতি করে না, কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্র বিশেষ এটি মস্তিষ্কে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।

 

উপসংহার 

প্রিয় পাঠক পাঠিকা, আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা কানের রোগ টিনিটাস এর লক্ষণ কি? টিনিটাস থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। টিনিটাস বাহ্যিকভাবে খুব স্বাভাবিক অসুখ মনে হলেও এটি আসলেও কোন স্বাভাবিক অসুখ নয়। যারা এই রোগে দীর্ঘদিন ধরে আক্রান্ত তাদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। যারা দীর্ঘদিন ধরে টিনিটাস রোগে আক্রান্ত কিন্তু মুক্তির পথ খুঁজে পাচ্ছেন না আশা করি আমাদের আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। 

 

সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নগুলি

১) টিনিটাস কতদিন স্থায়ী হয়?

উঃ টিনিটাস কত দিন স্থায়ী হবে তা আগে থেকে বলা যায় না। কারো কারো ক্ষেত্রে এটি ছয় মাস স্থায়ী হতে পারে আবার কারো ক্ষেত্রে ১০ বছর, কিছু কিছু ব্যক্তি দেখা যায় সারা জীবন টিনিটাস রোগে আক্রান্ত হয়ে রয়েছেন কিন্তু মুক্তি পাচ্ছেন না।

২)টিনিটাসের সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা?

উঃ টিনিটাসের সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা হলো CBT। এটি সাধারণত একটি আচরণগত থেরাপি। এই থেরাপিটি মানুষের বিষন্নতা এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। অ্যাকসেপ্টেন্স অ্যান্ড কমিটমেন্ট থেরাপির মাধ্যমে কয়েক দিনেই টিনিটাস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

৩)টিনিটাসের প্রাকৃতিক প্রতিকার?

উঃ কানে যে কোনো ধরনের আটকানো বস্তু অপসারণ করুন, অ্যাকোস্টিক নিউরাল স্টিমুলেটর ব্যবহার করতে পারেন, কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট ব্যবহার করতে পারেন যাদের শ্রবণশক্তি ইতোমধ্যে কমে গিয়েছে, টেবিলটপ সাউন্ড জেনারেটর ব্যবহার করা যেতে পারে, বিভিন্ন ধরনের শ্রবণ যন্ত্র ব্যবহার করে এই সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব।

Spread the love

2 thoughts on “কানের রোগ টিনিটাস এর লক্ষণ কি? টিনিটাস থেকে মুক্তির উপায়!”

Leave a Comment