আয়রনের অভাবে কোন রোগ হয়, লক্ষণ, ঘাটতি পূরণের উপায়

আয়রন একটি অপরিহার্য খনিজ যা শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে ভূমিকা রাখে। আজকের ব্লগে আমরা জানবো : আয়রনের অভাবে কোন রোগ হয়, লক্ষণ, ঘাটতি পূরণের উপায় , আয়রনের অভাবজনিত লক্ষণ, আয়রনের ঘাটতি পূরণের উপায়, আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম, আয়রন ট্যাবলেট এর উপকারিতা ও শরীরে আয়রন কমানোর উপায়

আয়রনের অভাবে কোন রোগ হয়, লক্ষণ, ঘাটতি পূরণের উপায়

আয়রনের অভাবে কোন রোগ হয়, লক্ষণ, ঘাটতি পূরণের উপায়

আয়রনের অভাবে কোন রোগ হয়, লক্ষণ, ঘাটতি পূরণের উপায় :

আয়রনের অভাবে কোন রোগ হয়, লক্ষণ, ঘাটতি পূরণের উপায় সম্পর্কে জানবো : আয়রনের অভাবে শরীরে রক্তাল্পতা বা আয়রন-স্বল্পতা অ্যানিমিয়া হতে পারে। এর ফলে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায়, যা শরীরের টিস্যুগুলিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটায়।
লক্ষণসমূহ:
১.দুর্বলতা বা ক্লান্তি
২.শ্বাসকষ্ট অল্প পরিশ্রমে
৩.মাথা ঘোরা বা মাথাব্যথা
৪.হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
৫.ত্বকের ফ্যাকাশে ভাব
৬.নখ ভঙ্গুর হওয়া
৭.ঠান্ডা হাত-পা
৮.মুখের চারপাশে ক্ষত বা জিহ্বার ব্যথা

ঘাটতি পূরণের উপায়:
১.আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া:

লাল মাংস (গরু, খাসি)
মুরগীর মাংস এবং মাছ
ডিমের কুসুম
শাকসবজি (পালং শাক, কলমি শাক)
ডাল, সয়াবিন, এবং বিভিন্ন ধরনের বাদাম
আয়রন-ফর্টিফাইড সিরিয়াল

২.ভিটামিন সি গ্রহণ: ভিটামিন সি আয়রনের শোষণ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই খাবারের সঙ্গে লেবু, কমলালেবু, টমেটো ইত্যাদি খাওয়া উচিত।

৩.আয়রন সাপ্লিমেন্টস: ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন ট্যাবলেট বা সিরাপ গ্রহণ করা যেতে পারে।

৪.ফলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন বি১২: এগুলিও রক্তাল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে, তাই খাদ্যতালিকায় শাকসবজি, ডিম, এবং দুধ যোগ করতে পারেন।

আয়রনের অভাব হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আয়রন শরীরের প্রায় প্রতিটি কোষের জন্য অপরিহার্য এবং বিভিন্ন প্রোটিন ও এনজাইমের একটি প্রধান উপাদান। হিমোগ্লোবিন গঠন, মায়োগ্লোবিন গঠন, এনজাইমের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ, ইমিউন সিস্টেমের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি, মস্তিষ্কের কার্যক্রমে সহায়তা, শরীরের বৃদ্ধি ও বিকাশ, শরীরের শক্তি উৎপাদন ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে আয়রন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভুমিকা পালন করে।

আয়রনের অভাবজনিত রোগ বলতে শরীরে আয়রনের পরিমাণ যথেষ্ট না হওয়ায় বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা বোঝায়, যা সাধারণত অ্যানিমিয়া নামে পরিচিত। খাদ্য থেকে যথেষ্ট আয়রন গ্রহণ না করা, আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন লাল মাংস, মুরগি, মাছ, বীজ, শাক-সবজি ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিমাণে না খাওয়া ইত্যাদি অ্যানিমিয়া রোগের অন্যতম কারণ। 

এছাড়াও মহিলাদের মাসিক ঋতু, গর্ভাবস্থা, অতিরিক্ত রক্তপাত, পাকস্থলীর অসুখ প্রভৃতি আয়রন শোষণে বাধা দেয়। শুধু তাই নয়, কিছু চিকিৎসাগত অবস্থা যেমন সেলিয়াক রোগ বা ক্রনিক ডায়রিয়া শরীরের আয়রন শোষণের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তবে ভয়ের কিছু নেই; খাদ্যাভ্যাসে সঠিক পরিবর্তন, চিকিৎসকের পরামর্শমত পরিমিত পরিমাণে আয়রন সাপ্লিমেন্টস গ্রহণ, আয়রন শোষণে বাধা দেয় এমন রোগের চিকিৎসা গ্রহণ সহ হাতে গোনা বেশ কিছু দিকনির্দেশনা মেনে চললে খুব সহজেই এর প্রতিকার সম্ভব।

আয়রনের অভাবজনিত লক্ষণ

আয়রনের অভাবজনিত লক্ষণ অনেক ধরনের হতে পারে। এ সকল লক্ষণ একজন ব্যক্তির ওপর শারীরিক ও মানসিক- উভয় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। কিছু প্রধান লক্ষণের বর্ণনা নিম্মরূপঃ

  1. ক্লান্তি ও দূর্বলতাঃ শরীরে আয়রনের অভাবে হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন কমে যায়, যা রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস করে এবং ফলস্বরূপ ক্লান্তি ও দুর্বলতা দেখা দেয়।
  2. ফ্যাকাশে ত্বক ও চোখের পাতাঃ শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে ত্বক এবং চোখের পাতায় স্বাভাবিক রক্তচাপ কমে যায়, যার ফলে তারা অপেক্ষাকৃত ফ্যাকাশে দেখায়।
  3. হৃদস্পন্দন বৃদ্ধিঃ শরীর এসময় চেষ্টা করে যাতে দ্রুত রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ করা যায়, যার ফলে হার্ট বা হৃদপিন্ড দ্রুত কাজ করে এবং ফলস্বরূপ হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পায়।
  4. শ্বাসকষ্টঃ কাজ করার সময় অর্থাৎ অল্প শ্রমেও শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।
  5. ঠাণ্ডা হাত ও পাঃ শরীরে অক্সিজেন পরিবহন কম হওয়ায় হাত এবং পায়ের তাপমাত্রা কমে যেতে পারে।

আয়রনের অভাবে কোন রোগ হয়

আয়রনের অভাবে মানবদেহে নানা ধরনের রোগ ও জটিলতার সৃষ্টি হয়। এর অভাবে প্রধানত যে রোগটি হয় তা হলো আয়রনের অভাবজনিত অ্যানিমিয়া (Iron Deficiency Anemia)। এই রোগের ফলে শরীরে পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন উৎপাদিত হয় না, যা রক্তে অক্সিজেন পরিবহনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

অ্যানিমিয়া ছাড়াও আয়রনের অভাবে যে সব সমস্যা ও রোগ হতে পারে, সেগুলো নিম্নরূপ:

  1. গর্ভবতী নারীদের জটিলতাঃ আয়রনের অভাবে গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে প্রি-টার্ম ডেলিভারি, কম জন্ম ওজন, এবং মায়ের ও শিশুর মধ্যে অন্যান্য জটিলতা হতে পারে।
  2. বাচ্চাদের বিকাশগত সমস্যঃ শিশুদের মধ্যে আয়রনের অভাবে মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে, যা বুদ্ধিমত্তা এবং শারীরিক বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে।
  3. রেস্টলেস লেগ সিন্ড্রোমঃ আয়রনের অভাবে রেস্টলেস লেগ সিন্ড্রোম নামক একটি বিশেষ মেডিকেল কন্ডিশন হতে পারে, যেখানে রোগী পায়ে অস্বস্তি অনুভব করতে থাকে এবং তাদের মধ্যে ক্রমাগত পা নাড়াচাড়া করার প্রবণতা দেখা দেয়।
  4. ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়াঃ আয়রনের অভাবে শরীরের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং ইনফেকশন বা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
  5. হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টঃ আয়রনের অভাবে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

এসকল রোগ ও সমস্যা সমূহ সাধারণত আয়রনের অভাবজনিত অ্যানিমিয়া থেকে আগত এবং সময়মত তা নির্ণয় ও চিকিৎসা না হলে পরবর্তীতে গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। যথাযথ খাদ্যাভ্যাস, আয়রন সাপ্লিমেন্ট এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে সহজেই আয়রনের অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।

আয়রনের ঘাটতি পূরণের উপায়

মানবদেহের সুষ্ঠ বিকাশ ও এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সচল রাখার জন্য আয়রনের জুড়ি নেই। তাই যদি কখনো এর ঘাটতি দেখা দেয়, একজন ব্যক্তির উচিৎ তৎক্ষণাৎ বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া। আয়রনের ঘাটতি পূরণের জন্য একজন ব্যক্তি যেসকল দিকনির্দেশনা অনুসরণ করতে পারেন, তা নিম্মরূপঃ

আয়রনের ঘাটতি পূরণের উপায়

 

১. আয়রন সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণঃ

আয়রনের ঘাটতি পূরণে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নোক্ত আয়রন সমৃদ্ধ খাবারগুলি খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত:

  • প্রাণীজ উৎসের খাবারঃ
    • লাল মাংস (বীফ, ল্যাম্ব)
    • মুরগির মাংস
    • মাছ (বিশেষত তেলযুক্ত মাছ যেমন সালমন)
    • লিভার (যকৃত)
  • উদ্ভিজ্জ উৎসের খাবারঃ
    • ডাল এবং শিম
    • পালং শাক, কেল, এবং অন্যান্য শাকসবজি
    • মটরশুটি
    • বাদাম এবং বীজ (কুমড়ার বীজ, তিল)
    • সয়াবিন এবং টফু
    • পুরো শস্য (ওটমিল, ব্রাউন রাইস, কোয়িনোয়া)

২. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণঃ

ভিটামিন সি আয়রনের শোষণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন:

  • কমলা এবং অন্যান্য সাইট্রাস ফল
  • স্ট্রবেরি
  • ব্রোকলি
  • টমেটো
  • বেল পেপার

৩. আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণঃ

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে। এই সাপ্লিমেন্টগুলি ট্যাবলেট, ক্যাপসুল বা লিকুইড ফর্মে পাওয়া যায়।

৪. খনিজ ও ভিটামিনের পরিপূরক গ্রহণঃ

আয়রনের শোষণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, এমন খনিজ এবং ভিটামিন গ্রহণ করা যেতে পারে, যেমনঃ

  • ভিটামিন বি১২
  • ফলিক এসিড

৫. আয়রন শোষণে বাধা দেয় এমন খাবার এড়িয়ে চলা:

কিছু খাবার আয়রন শোষণে বাধা দেয়। যেমনঃ

  • চা এবং কফি (কারণ এতে ট্যানিন থাকে)
  • ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার
  • দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার (কারণ এতে ক্যালসিয়াম থাকে)

৬. সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং রুটিনঃ

সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া এবং খাদ্য তালিকায় নিয়মিতভাবে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

এই উপায়গুলি মেনে চললে শরীরের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। তবে আয়রনের ঘাটতির লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বিলম্ব করা অনুচিত।

 

আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম

আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে, যা অনুসরণ করলে মেডিসিনগুলো অধিক কার্যকর হয় এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা যায়। নিম্মে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার সঠিক নিয়মসমূহ সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলোঃ

আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়মঃ

  • খালি পেটে গ্রহণঃ
      • আয়রন ট্যাবলেট খালি পেটে গ্রহণ করা সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। খাবারের কমপক্ষে ১ ঘণ্টা আগে অথবা ২ ঘণ্টা পরে খাওয়া উচিত।
      • খালি পেটে খেলে যদি পেটের সমস্যা হয়, তাহলে হালকা খাবারের সাথে গ্রহণ করা যেতে পারে।
  • ভিটামিন সি সহ গ্রহণঃ
      • আয়রন শোষণ বাড়াতে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার বা পানীয় যেমন কমলার রসের সাথে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়া উপকারী।
  • ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলাঃ
      • দুধ, চিজ, এবং অন্যান্য ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার আয়রন শোষণে বাধা দেয়, তাই আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার সময় এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
  • চা ও কফি এড়িয়ে চলাঃ
      • চা এবং কফিতে থাকা ট্যানিন আয়রনের শোষণ কমিয়ে দেয়, তাই আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার সময় চা ও কফি এড়িয়ে চলা উচিত।
  • অন্যান্য ওষুধ থেকে আলাদাঃ
      • অন্য ওষুধের সাথে আয়রন ট্যাবলেট না খাওয়াই ভালো, কারণ তা আয়রনের শোষণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। আয়রন ট্যাবলেট এবং অন্যান্য ওষুধের মধ্যে অন্তত ২ ঘণ্টার ব্যবধান রাখা উচিত।
  • পর্যাপ্ত পানি পানঃ
      • আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার সময় পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত, যাতে তা সহজে গলায় নেমে যায় এবং পেটের সমস্যার ঝুঁকি কমে।
  • পর্যবেক্ষণঃ
    • আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার সময় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে হবে।

সঠিক মাত্রাঃ

  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন ট্যাবলেটের সঠিক মাত্রা গ্রহণ করা উচিত।
  • সাধারণত প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ মিলিগ্রাম আয়রন ট্যাবলেট গ্রহণ করা হয়, তবে এটি ব্যক্তির আয়রনের অভাবের মাত্রা ও স্বাস্থ্যগত অবস্থার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।

এভাবে আয়রন ট্যাবলেট গ্রহণের সময় উপর্যুক্ত নিয়মসমূহ অনুসরণ করলে তা সর্বাধিক কার্যকর হবে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম হবে। তবে আয়রন ট্যাবলেট গ্রহণের সময় কোনো সমস্যা দেখা দিলে বা কোনো সন্দেহ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আয়রন ট্যাবলেট এর উপকারিতা

আয়রন ট্যাবলেট গ্রহণের বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে, বিশেষ করে যখন শরীরে আয়রনের অভাব বা আয়রনের অভাবজনিত অ্যানিমিয়ার সমস্যা দেখা দেয়। নিচে আয়রন ট্যাবলেট গ্রহণের প্রধান উপকারিতাগুলি উল্লেখ করা হলোঃ

আয়রন ট্যাবলেটের উপকারিতাঃ

  • অ্যানিমিয়া নিরাময়ঃ
      • আয়রনের অভাবে সৃষ্ট অ্যানিমিয়া নিরাময়ে আয়রন ট্যাবলেট অত্যন্ত কার্যকর। এটি শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে, যা রক্তে অক্সিজেন পরিবহন করে।
  • শক্তি ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিঃ
      • আয়রনের অভাবে ক্লান্তি এবং দুর্বলতা দেখা দেয়। আয়রন ট্যাবলেট গ্রহণে শরীরের শক্তি ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ
      • আয়রন শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সহায়ক। এটি ইনফেকশন এবং অন্যান্য রোগের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নয়নঃ
      • পর্যাপ্ত আয়রন মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নয়নের জন্য জরুরি। এটি স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।
  • সুস্থ গর্ভাবস্থাঃ
      • গর্ভবতী নারীদের জন্য আয়রন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি গর্ভস্থ শিশুর সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়তা করে এবং মায়ের শরীরের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে।
  • শারীরিক বিকাশ ও বৃদ্ধির উন্নতিঃ
      • শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক বিকাশে আয়রনের প্রয়োজন। এটি শরীরের সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়ক।
  • চুল, ত্বক এবং নখের স্বাস্থ্য উন্নতিঃ
      • আয়রন চুল, ত্বক এবং নখের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এটি চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়, ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রাখে এবং নখের দৃঢ়তা বৃদ্ধি করে।
  • হার্টের স্বাস্থ্য উন্নতিঃ
    • পর্যাপ্ত আয়রন হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে। এটি হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

আয়রন ট্যাবলেট গ্রহণের উপকারিতা অনেক, তবে এটি সঠিক মাত্রায় এবং সঠিক নিয়মে গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন ট্যাবলেট গ্রহণ করা উচিত এবং আয়রনের অভাবজনিত যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

শরীরে আয়রন কমানোর উপায়

শরীরে আয়রনের অতিরিক্ততা (যাকে হেমোক্রোমাটোসিস বলা হয়) একটি স্বাস্থ্যগত সমস্যা, যা পরবর্তীতে লিভার, হৃদপিণ্ড এবং অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতিসাধন করে থাকে। যদি কারো শরীরে আয়রনের অতিরিক্ততা পরিলক্ষিত হয়, কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করার মাধ্যমে তা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। নিচে শরীরে আয়রনের পরিমাণ কমানোর কিছু উপায় দেওয়া হলোঃ

আয়রনের পরিমাণ কমানোর উপায়ঃ

  • খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনঃ
      • আয়রন সমৃদ্ধ খাবার সীমিত করা: লাল মাংস, লিভার, এবং অন্যান্য উচ্চ আয়রনযুক্ত খাবার কম খাওয়া।
      • আয়রন ফোর্টিফায়েড খাবার এড়িয়ে চলাঃ বিশেষ করে যে খাবারগুলোতে অতিরিক্ত আয়রন যোগ করা হয়, যেমন- ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল।
      • ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার কমানোঃ ভিটামিন সি আয়রনের শোষণ বৃদ্ধি করে, তাই কমলালেবু, স্ট্রবেরি, বেল মরিচ বা ক্যাপসিকাম ইত্যাদি কম খাওয়া উচিত।
      • চা এবং কফি পান করাঃ এগুলিতে থাকা ট্যানিন আয়রনের শোষণ কমায়।
  • ফ্লেবোটমি (রক্তদানের পদ্ধতি):
      • ফ্লেবোটমি একটি সাধারণ পদ্ধতি যা আয়রনের অতিরিক্ততা কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এতে নির্দিষ্ট পরিমাণ রক্ত নিয়মিতভাবে শরীর থেকে বের করে নেওয়া হয়। এটি শরীরের আয়রনের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণঃ
      • কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসক আয়রন চিলেটিং (iron chelating) এজেন্ট নির্ধারণ করতে পারেন, যা শরীর থেকে আয়রন বের করতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, ডেফেরোক্সামাইন (Desferal), ডেফেরিপ্রোন (Ferriprox), এবং ডেফেরাসিরোক্স (Exjade)।
  • আয়রন সাপ্লিমেন্ট এড়িয়ে চলাঃ
      • আয়রন সাপ্লিমেন্ট এবং সেসকল মাল্টিভিটামিন এড়িয়ে চলা, যেগুলো আয়রন সমৃদ্ধ।
  • অ্যালকোহল গ্রহণ সীমিত করাঃ
    • অ্যালকোহল লিভারের উপর ক্ষতিকর প্রভাব বাড়িয়ে দেয় এবং আয়রনের শোষণ বৃদ্ধি করে, তাই সীমিত পরিমাণে অ্যালকোহল গ্রহণ করা উচিত।
  1. নিয়মিত পর্যবেক্ষণঃ
  • নিয়মিতভাবে ব্লাড টেস্ট করে ফেরিটিন এবং ট্রান্সফারিন স্যাচুরেশন লেভেল চেক করা উচিত। এটি শরীরে আয়রনের স্তর মনিটর করতে সাহায্য করবে।

এই পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করে সহজেই শরীরে আয়রনের অতিরিক্ততা কমানো সম্ভব। তবে যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণের আগে এবং আয়রনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Spread the love

Leave a Comment