কাজুবাদাম থেকে পরিপূর্ণ পুষ্টি পাওয়ার জন্য জানতে হবে কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা কি কি? কাজুবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, জিঙ্ক, কপার, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি৬ যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি রক্তের যাবতীয় সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত দুধের সাথে কাজু বাদাম মিশিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয় এবং হাড় মজবুত হয়।
কাজু বাদামে বিদ্যমান প্রোটিন দ্রুত ওজন কমাতে এবং হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে। কাজু বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া নিয়মিত কাজু বাদাম খেলে ত্বক টানটান থাকে, চোখের ম্যাকুলা অংশের ক্ষয় রোধ করে এবং মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতেও সর্বাধিক কার্যকরী। কাজু বাদামে বিদ্যমান ফ্ল্যাভোনল ক্যান্সার কোষের প্রতিলিপি তৈরিতে বাধার সৃষ্টি করে। কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা বিস্তারিত জানার জন্য আমাদের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
কাজুবাদাম
বিভিন্ন বাদামের মধ্যে কাজু বাদাম অত্যন্ত সুস্বাদু একটি বাদাম। এর বৈজ্ঞানিক নাম হল Anacardium occidentale। কাজুবাদাম সপুষ্পক অ্যানাকার্ডিয়েসি গোত্রের একটি বৃক্ষ। সাধারণত বেলে দো আশঁ মাটি এবং পাহাড়ের ঢালে এ গাছের বীজ থেকে চারা তৈরি করা হয়। কাজু বাদাম A. occidentale প্রজাতির একটি বৃক্ষ। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়া, ভারতকে, কেনিয়া, মাদাগাস্কার, মালয়েশিয়া, তানজানিয়া প্রভৃতি দেশে প্রচুর পরিমাণে কাজুবাদাম উৎপাদিত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন অঞ্চলে কাজুবাদাম উৎপাদিত হয়। এই গাছটি সর্বোচ্চ ৬০ থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত বাঁচলেও ফলন পাওয়া যায় ৫০ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত। পূর্ণবয়স্ক একটি কাজুবাদাম গাছ ১০ থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। একটি কাজুবাদাম এর ওজন সর্বনিম্ন ৫ গ্রাম থেকে সর্বোচ্চ ২০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। একটি কাজুবাদাম থেকে প্রায় ১৫৭ গ্রাম ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়।
কাজু বাদাম এর উপকারিতা
প্রতিদিন এক মুঠো কাজু বাদাম খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া কাজু বাদামে বিদ্যমান ভিটামিন C এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের আরো বিভিন্ন সমস্যা নিরাময় করতে সহায়ক। চলুন কাজুবাদাম এর উপকারিতা গুলো জেনে নেওয়া যাক:
কার্ডিওভাসকুলার প্রতিরোধে সহায়ক
কাজু বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। যা হার্টের কার্যক্ষমতা স্বাভাবিক রাখে এবং হার্টে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধের সহায়ক
কাজু বাদামে বিদ্যমান প্রো অ্যান্থোসায়ানিডিন টিউমার কোষের বৃদ্ধি প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়া কাজু বাদামে বিদ্যমান ‘কপার’ উপাদান ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিকে প্রতিহত করে।
দ্রুত ওজন কমাতে সহায়ক
প্রতিনিয়ত কাজু বাদাম খেলে ধীরে ধীরে শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল দূর হয়ে ভালো কোলেস্টেরল এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়। কাজু বাদামে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি বিদ্যমান থাকায় প্রচুর পরিমাণে শক্তির যোগান দিতে সহায়ক।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়
কাজু বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কপার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা ত্বকের কোলাজেন তৈরিতে সহায়ক, এবং ত্বকের বার্ধক্যের ছাপ দূর করতে সহায়তা করে। ত্বকের জেল্লা বাড়াতে কাজু বাদাম সহায়তা করে।
চোখের রেটিনা সুস্থ রাখে
কাজু বাদামের বিদ্যমান প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্টস চোখের রেটিনা সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে চোখকে সুরক্ষিত রাখতে কাজুবাদাম সহায়তা করে।
রক্তের জীবাণু দূর করে
কাজু বাদামে বিদ্যমান কপার রক্তে যাবতীয় জীবাণু দূর করতে সাহায্য করে। রক্ত পরিষ্কার রেখে শরীরকে সুস্থ রাখতে কাজু বাদাম সহায়তা করে।
রক্তস্বল্পতা দূর করে
কাজু বাদামে বিদ্যমান পুষ্টিকর উপাদান রক্তস্বল্পতার সমস্যা কমিয়ে শরীরের রক্ত বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য মোকাবেলা করে
সকালে খালি পেটে কাজু বাদাম খেলে খাদ্য হজম ত্বরান্বিত হয় এবং রেচন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। প্রতিদিন ১৮ টির বেশি কাজুবাদাম খেলে অতিরিক্ত প্রোটিনের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা তৈরি হতে পারে।
কাজু বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
কাজু বাদাম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা ইতোমধ্যে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কাজুবাদাম খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি?
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
কাজু বাদামে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকায় রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে খুবই কার্যকরী। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কাজু বাদামের জুড়ি মেলা ভার।
খুদা মেটাতে সাহায্য করে
কাজু বাদামে বিদ্যমান ফাইবার ও চর্বি ক্ষুধা মিটিয়ে পেটভরা রাখতে সহায়তা করে থাকে।
খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কাজু বাদাম খেলে ধীরে ধীরে শরীরের খারাপ এলডিএল এর মাত্রা কমে আসে। এবং শরীরে ভালো কোলেস্টেরল এর মাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়।
হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
ব্রিটিশ জার্নাল অফ নিউট্রিশন ২০০৭ সালে প্রকাশ করে যে তারা প্রতিনিয়ত কাজুবাদাম খান তাদের হৃদরোগের সম্ভাবনা ৩৭ ভাগ কম থাকে। হৃদযন্ত্রকে অচল রাখতে প্রতিদিন সকালে কাজু বাদামের সাথে দুধ মিশিয়ে খেতে হবে।
চুলের যত্নে কাজুবাদাম
কাজু বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কপার নামক একটি উপাদান। এই উপাদানটি চুলের রঞ্জক পদার্থ মেলাটোনিন এর মাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করে। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই চুল হয়ে ওঠে স্বাস্থ্যজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত।
ব্রণের সমস্যা দূর করে
কাজু বাদামে বিদ্যমান সেলেনিয়াম ও ভিটামিন সি ত্বকের স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। ত্বকের স্ট্রেস কমিয়ে ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রতিদিন এক মুঠো কাজু বাদাম সেবন করুন।
কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম
কাজু বাদামে প্রচুর পরিমাণে অ্যানাকার্ডিক অ্যাসিড প্রতিদিন ১৮ টির বেশি কাজু বাদাম সেবন করা মোটেও উচিত নয়। তিন বেলা ভারী খাবারের পাশাপাশি স্নাক্স হিসেবে কাজুবাদাম খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু ভারী খাবার হিসেবে কখনোই কাজু বাদাম খাওয়া উচিত নয়। চলুন কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম গুলো এক নজরে দেখে নেওয়া যাক:
- পরিষ্কার এবং বিশুদ্ধ মানের কাজু বাদাম নির্বাচন করুন সেবনের জন্য,
- কাজুবাদাম দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য বন্ধ সংরক্ষণাগার নির্বাচন করুন,
- কাজুবাদাম এর পায়েস শরীরের জন্য খুবই উপকারী,
- কাজু বাদাম সকালে খালি পেটে খাবার চেষ্টা করুন,
- দুপুরের খাবারের পর স্নাক্স হিসেবে কাজু বাদাম খেতে পারেন,
- রাতের বেলা কাজুবাদাম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
কাজুবাদাম এর অপকারিতা
কাজু বাদামে বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। চলুন এক নজরে কাজুবাদাম এর অপকারিতা গুলো দেখে নেওয়া যাক:
- এলার্জির ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে,
- যারা বিভিন্ন রোগে ইতোমধ্যে আক্রান্ত তারা কাজুবাদাম থেকে দূরে থাকুন,
- কাজ বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অক্সালিক অ্যাসিড যা দুর্বল ব্যক্তির স্বাস্থ্য কে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে,
- প্রতিদিন প্রয়োজনে তুলনায় অধিক কাজুবাদাম খেলে ধীরে ধীরে ওজন বৃদ্ধি পায়।
জনপ্রিয় ব্লগ: ওটস খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
উপসংহার
যারা প্রতিনিয়ত কাজু বাদাম খাচ্ছেন তারা অনেকেই জানতে চান কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা। যারা কাজু বাদাম খাওয়ার বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান আশা করি আমাদের আজকের পোস্টটি তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। পোস্টটি ভালো লাগলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১)প্রতিদিন কতটুকু কাজু বাদাম খাওয়া উচিত?
উঃ প্রতিদিন সর্বোচ্চ 15 টি কাজু বাদাম খাওয়া উচিত।
২)কাজু বাদাম কখন খেলে ওজন বাড়ে?
উঃ প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কাজু বাদাম খেলে ওজন বাড়ে। কাজু বাদাম খাওয়ার মোক্ষম সময় হলো সকালবেলা। সকালবেলা দুধের সাথে পরিমাণ মতো কাজু বাদাম মিশিয়ে খেলে শরীরে বিভিন্ন প্রকার পুষ্টিগুণ নিশ্চিত হয়।
৩)কাজুতে কি অক্সালেট বেশি থাকে?
উঃ কাজু বাদামে সীমিত পরিমাণে অক্সালেট এর পরিমাণ বেশি থাকে। তবে পরিমিত পরিমাণে খেলে এটি শরীরের জন্য মোটেও ক্ষতিকর নয়।
5 thoughts on “কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম, উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি?”