সিজারের পর মায়ের যত্ন কিভাবে নিবেন

সিজারের পর নতুন মায়ের যত্ন নেওয়ার জন্য জেনে নিন সিজারের পর মায়ের যত্ন কিভাবে নিবেন? সন্তান জন্মের পর সবার নজর থাকে সদ্য জন্মানো শিশুর উপর। এ সময় নতুন মা নিজের যত্ন নিতেও ভুলে যান। কিন্তু যেসব মায়েরা অস্রোপচার এর মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিয়েছেন তাদের সেরে উঠতে বেশ কিছুটা সময় লেগে যায়। 

বিশেষ করে সিজার হওয়ার দিন থেকে ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত একজন নতুন মা বিভিন্ন রকম ঝুঁকির মাঝামাঝি অবস্থান করে। তবে সিজারিয়ান মা যদি সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চলেন তাহলে খুব দ্রুত সেলাই শুকিয়ে যায়। সিজারের পর অন্তত ১.৫ মাস বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। চলুন সিজারের পর মায়ের যত্ন কিভাবে নিবেন এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক:

 

Table of Contents

সন্তান জন্মের আগে ও পরে সিজারিয়ান মায়ের যত্ন 

সন্তান জন্মদিনের পূর্বে মায়ের যত্ন যেভাবে নেওয়া উচিত সন্তান জন্মের পরেও মায়ের যত্ন আরো ভালোভাবে নেওয়া উচিত। এতে করে সদ্য জন্মানোর শিশু এবং নতুন মা দুজনেই সুস্থ থাকেন। চলুন এক নজরে দেখে আসি সন্তান জন্মের আগে মায়ের যত্ন কেমন হওয়া উচিত?

সন্তান জন্মের আগে ও পরে সিজারিয়ান মায়ের যত্ন

  • নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে গর্ভবতীর মাকে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে,
  • প্রসবের তারিখ মনে রাখতে হবে,
  • গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত টিকা নিতে হবে,
  • গর্ভবতী মা কোনরকম ভারী কাজ করতে পারবেন না,
  • গর্ভবতী মা সবসময় সুতির ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করবেন,
  • গর্ভবতী মা সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করবেন,
  • গর্ভবতী মায়ের পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম এবং ঘুমের প্রয়োজন,
  • দীর্ঘ পথ ভ্রমণ করা থেকে গর্ভবতী মাকে বিরত থাকতে হবে,
  • একজন বিশেষজ্ঞ গাইনি ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে সম্পূর্ণ গর্ভাবস্থা জুড়ে।
  • যেকোনো সমস্যা সরাসরি ডাক্তারের সাথে আলোচনা করতে হবে।

 

সিজারের পর মায়ের যত্ন কিভাবে নিবেন?

অনেকে মনে করেন সিজারের পর মায়ের আর তেমন কোন যত্নের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু এই সময় সঠিক যত্নের অভাবে নতুন মা বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশনে আক্রান্ত হতে পারেন। চলুন এক নজরে দেখে আসি সিজারের পর মায়ের যত্ন কিভাবে নেবেন?

  • নিয়মিত পেটের কাটা অংশের যত্ন নিতে হবে, কাটা জায়গায় যাতে কোন ঘা সৃষ্টি না হতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • সিজারিয়ান মায়ের শরীর থেকে অনেক পুষ্টি বের হয়ে যায়, তাই প্রতি বেলায় খাবারের সময় অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
  • সন্তানকে দুধ পান করানোর সময় সঠিক পদ্ধতিতে বসতে হবে, সঠিক পদ্ধতিতে না বসলে সেলাই এর উপর চাপ লাগতে পারে।
  • সিজারিয়ান মা সিজারের অন্তত তিন মাসের মধ্যে কোন ভারী কাজ করতে পারবেন না।
  • যেসব মায়ের সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা হয়েছে তারা প্রচুর পরিমাণে পানি পান করবেন।

সিজারের পর সেরে উঠতে করণীয়

দীর্ঘদিন একটি নতুন প্রাণকে শরীরে ধারণ করার পর যখন সন্তানের জন্ম হয় তখন মায়ের শরীরের বিভিন্ন রকম পরিবর্তন ঘটে। পূর্বের অবস্থায় মায়ের ফিরে আসতে বেশ কিছুটা সময় লেগে যায়। চলুন জেনে নেই সিজারের পর সেরে উঠতে করণীয় কি কি?

 

পুষ্টিকর ও সুষম খাবার খান

সিজারের পর মায়ের শরীর আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনার জন্য পুষ্টিকর খাবারের কোন বিকল্প নেই।

 

নিয়মিত হাঁটাচলা করুন

সিজারের পর নিয়মিত হালকা হাঁটাচলা করা যেতে পারে। এতে করে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

 

প্রসব পরবর্তী চেকআপ করুন

প্রসবের ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রথম চেকআপ, পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে দ্বিতীয় চেকআপ, ৭ম-১৪তম দিনে মধ্যে তৃতীয় চেকআপ এবং ৬ষ্ঠ চতুর্থ চেকআপ করাতে হবে।

 

প্রসব পরবর্তী সহবাস থেকে বিরত থাকুন 

প্রসব পরবর্তী হরমোনাল তারতম্য তৈরি হয়। এ সময় প্রসবের কয়েকদিনের মধ্যেই সহবাস করলে সেলাই ছিঁড়ে যাওয়া, তলপেটে ব্যথা হওয়া, অতিরিক্ত রক্তপাত, যোনিপথের শুষ্কতা ইত্যাদি সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই প্রসব পরবর্তী সহবাস এর পূর্বে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে নিন।

নরম খাবার খান

সিজনের পরবর্তী সময়ে কয়েকটি দিন মায়ের নরম জাতীয় খাবার খেতে হবে। স্যুপ, জাউ এজাতীয় খাবার খেলে সিজারিয়ান মায়ের বমি হয় না। এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সিজারিয়ান মা ফলমূল, শাকসবজি এবং ইসুবগুলের ভুষি খেতে পারেন।

সিজারের কাটা দ্রুত শুকানোর জন্য কিছু টিপস

সিজারের কাটা জায়গা দ্রুত শুকানোর জন্য কিছু টিপস নিচে উল্লেখ করা হলো:

সিজারে কাটা জায়গা দ্রুত শুকানোর জন্য ক্ষতস্থানটি শুকনা রাখুন, পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে কিন্তু মনে রাখবেন প্রতিদিন কিছুটা সময় হালকা হাঁটাহাঁটির প্রয়োজন রয়েছে। সিজারের পর প্রতিবেলায় পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। সিজারের ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল বেছে নিতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া কাটা জায়গা দ্রুত শুকানোর জন্য সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে।

সিজারের পর কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে

সিজারের পর কয়েকটি লক্ষণ পরিলক্ষিত হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। লক্ষণগুলো হলো:

  • জ্বর এবং শরীরে কাঁপুনি,
  • অপারেশনের জায়গায় ব্যথা বা লাল হয়ে যাওয়া, ফুলে ওঠা, পুঁজ বা দুর্গন্ধ হওয়া,
  • তলপেট অথবা সম্পূর্ণ পেট জুড়ে তীব্র ব্যথা,
  • প্রসাব করার সময় জ্বালাপোড়া এবং ব্যথা হওয়া,
  • যোনিপথ দিয়ে রক্তক্ষরণ এবং প্রচন্ড তলপেট ব্যথা,
  • শ্বাসকষ্ট অনুভূত হওয়া।

উক্ত সমস্যাগুলো পরিলক্ষিত হলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

 

সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায়?

সিজারের সেলাই শুকানোর জন্য কারো কম আবার কারো বেশি সময় লাগতে পারে। কারণ সবার শরীরের ধরন একরকম নয়। তবে সিজারের সেলাই শুকানোর জন্য সর্বনিম্ন ২ মাসের মতো সময় লাগতে পারে। যাদের ওজন মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আছে তাদের সিজারের সেলাই শুকাতে কম সময় লাগে। আর যাদের ওজন তুলনামূলক একটু বেশি তাদের সিজারে সেলাই শুকাতে বেশি সময় লাগে। তবে আপনি যদি নিয়ম মেনে কাটা জায়গার যত্ন করেন তাহলে দ্রুত সিজারের সেলাই শুকিয়ে যাবে।

সিজারের পর বেল্ট ব্যবহার

সিজারের পরের দিন‌ থেকেই ম্যাটারনিটি বেল্ট ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে কোন মোটা কাপড়ের বেল্ট ব্যবহার করলেও তলপোট এবং পেট বেশ কিছুটা সাপোর্ট পায়। তাছাড়া সিজারের পর বেল্ট ব্যবহারে নতুন মা হাঁটাচলাতেও স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। সিজারের ব্যথা দ্রুত কমানোর জন্য সিজারের পর বেল্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

 

সিজারের কতদিন পর বাচ্চা নেওয়া যায়

সিজারের ঘা কয়েকদিনের মধ্যে শুকিয়ে গেলেও মায়ের শরীর পুরোপুরি সুস্থ হতে বেশ কিছুটা সময় লেগে যেতে পারে। পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পূর্বে আবার বাচ্চা নিলে বাচ্চার গর্ভে বেড়ে ওঠার ব্যাহত হবে। এমনকি এই জাতীয় মায়ের মৃত্যু ঝুঁকি থাকে অনেক বেশি। তাই সিজারের মাধ্যমে যদি কোন মা একটি বাচ্চার জন্ম দিয়ে থাকেন তাহলে অন্তত তার ২ বছর পর পরবর্তী বাচ্চা নেওয়া উচিত।

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ, কিভাবে বুঝবেন ?

সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নগুলি

১)সিজারের পর ঘা শুকাতে কত দিন লাগে?

উঃ সিজারের পর ঘা শুকাতে ১.৫ মাস সময় লাগতে পারে।

২)সিজার করার কতদিন পর পেট কমে যায়?

উঃ সিজার করার পর পেট কমতে ছয় মাস থেকে দুই বছর সময় লাগে।

৩)সিজারিয়ান অপারেশন করতে কত সময় লাগে?

উঃ সিজার করতে সাধারণত ৩০ মিনিট থেকে এক ঘন্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

৪)সি সেকশন ও হিস্টেরেক্টমি কি একই সাথে করা যায়?

উঃ হ্যাঁ, সি সেকশনের সময়েই হিস্টেরেক্টমি করা যেতে পারে।

৫)ওজন বেশি হলে কিভাবে সি সেকশন শুকনো রাখব?

উঃ ওজন বেশি হলে সি সেকশন শুকাতে বেশি সময় লাগে, তাই এ সময় কাটা জায়গা শুকনো রাখার পাশাপাশি ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করুন।

Spread the love

9 thoughts on “সিজারের পর মায়ের যত্ন কিভাবে নিবেন”

Leave a Comment