গর্ভবতী মহিলার গর্ভাবস্থায় বমি হলে কার্যকরী কিছু করণীয় কাজ

গর্ভাবস্থায় বমি খুব ‌ সাধারণ লক্ষণ, তাই জেনে নিন গর্ভবতী মহিলার গর্ভাবস্থায় বমি হলে কার্যকরী কিছু করণীয় কাজ। গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব এর অপর নাম মর্নিং সিকনেস হলেও আসলে দিনের যেকোনো সময় বমি বমি ভাব অথবা বমি হতে পারে। তবে গর্ভাবস্থায় প্রথম ৪-৭ সপ্তাহ এরমধ্যে বমি শুরু হয়ে যায় এবং ১২ থেকে ১৪ সপ্তাহ পর্যন্ত এই মর্নিং সিকনেস অথবা বমি বমি ভাব বেশি হয়। 

গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব কমানোর তেমন কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। অনেক ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় বমি ভাব বা Hyperemesis gravidarum তীব্র আকার ধারণ করে। এর ফলে গর্ভবতী মায়ের ওজন কমে যায়, দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়, মায়ের স্বাভাবিক চলাফেরা ব্যাহত হয়। তবে জীবনযাত্রা এবং খাদ্যাভাসে কিছু পরিবর্তন আনলে এই সমস্যা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। গর্ভবতী মহিলার গর্ভাবস্থায় বমি হলে কার্যকরী কিছু করণীয় কাজ সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।

 

Table of Contents

গর্ভাবস্থায় বমি/ হাইপারএমেসিস গ্র্যাভিডেরাম এর লক্ষণ

গর্ভাবস্থায় বমি যখন তীব্র আকার ধারণ করে তখন তাকে হাইপারএমেসিস গ্র্যাভিডেরাম বলা হয়ে থাকে। এরূপ অবস্থায় অনেকেরই হাসপাতালে ভর্তি থাকারও প্রয়োজন হতে পারে। গর্ভাবস্থায় বমি/ হাইপারএমেসিস গ্র্যাভিডেরাম এর লক্ষণ গুলো হলো:

  • স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত বমি হওয়া অথবা দীর্ঘক্ষণ বমি বমি ভাব,
  • অতিরিক্ত পিপাসা অনুভব করা,
  • মাথা ঘোরানো এবং পরিমাণমতো প্রস্রাব না হওয়া,
  • কড়া গন্ধযুক্ত প্রসাব বের হওয়া,
  • মাথাব্যথা এবং ক্লান্ত বোধ করা,
  • ধীরে ধীরে ওজন কমতে থাকা,
  • হঠাৎ করে প্রেসার লো হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

এরূপ সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে অনুভূত হতে থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। ১৬ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে সাধারণত এই সমস্যাগুলো অনেকটা কাটিয়ে ওঠা যায়। অনেকের ক্ষেত্রে মর্নিং সিকনেস বা হাইপারএমেসিস গ্র্যাভিডেরাম ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত থেকে যায়।

 

গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হয়

গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হয়

সাধারণত যখন থেকে একজন গর্ভবতী মহিলার মাসিক বন্ধ হয় তখন থেকেই তার বমি বমি ভাব শুরু হতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ মহিলাদের ক্ষেত্রে ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে বমি ভাব বেশি পরিলক্ষিত হয়। এ সময়ে বমি ভাব বেশি হওয়ার পাশাপাশি গা গুলানো, শরীরে দুর্বলতা অনুভব করা, শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম বের হওয়া ইত্যাদি সমস্যা পরিলক্ষিত হয়।

গর্ভাবস্থায় ৪-১৫ সপ্তাহ পর্যন্ত খাবারে প্রচণ্ড মাত্রায় অনীহা দেখা দিতে পারে। তাই এ সময় মুখে খাবার গ্রহণ করতে না পারলে অবশ্যই স্যালাইন খেতে হবে। গর্ভাবস্থায় অধিক বমি হলে ডাক্তার বমি কমানোর জন্য সাধারণ কিছু ঔষধ সাজেস্ট করে থাকেন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চললে এ সময় খাবারের রুচি আসবে এবং মা ও সন্তান দুজনেই সুস্থ থাকবে।

 

গর্ভবতী মহিলার বমি হলে কি করবেন

গর্ভবতী মহিলার বমি হলে কি করবেন এটা সম্পর্কে অনেকেই বিস্তারিত জানতে চান। গর্ভাবস্থায় হরমোনাল তারতম্য এর কারনে গর্ভবতী মহিলারা অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি মর্নিং সিকনেস জনিত সমস্যায় বেশি ভুগে থাকেন। গর্ভবতী মহিলার বমি হলে যা যা করবেন

  • সকালে ১৫ মিনিট খুব হালকা ব্যায়াম করতে পারেন (অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে),
  • সকালে উঠে শুকনো হালকা কিছু খাবার খেয়ে নিতে হবে,
  • সকালের নাস্তায় ভারী কোন তেল মসলাযুক্ত খাবার রাখবেন না,
  • অতিরিক্ত ঝাঁঝালো কোন খাবার গর্ভাবস্থায় খাওয়া যাবে না,
  • গর্ভবতী মহিলার রাতের বেলায় আট ঘন্টা এবং দিনের বেলায় দুই ঘন্টা ঘুম নিশ্চিত করতে হবে,
  • সকাল এবং সন্ধ্যা বেলায় বাতাসে হালকা হাঁটাহাঁটি করতে হবে,
  • গর্ভাবস্থায় বমি হলে টক জাতীয় খাবার খাওয়া যাবেনা,
  • খাবারের সময় পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

 

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ, কিভাবে বুঝবেন ?

গর্ভাবস্থায় বমি কমানোর ঘরোয়া চিকিৎসা

গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত বমি হলেও গর্ভাবস্থায় বমি কমানোর ঘরোয়া চিকিৎসা রয়েছে। আশা করি, এগুলো মেনে চললে গর্ভাবস্থায় বমির হাত থেকে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ পাবেন।

বারবার অল্প পরিমানে খাবার খান

গর্ভাবস্থায় খালি পেটে থাকবেন না। কিছু সময় পরপর অল্প পরিমাণে খাবার গ্রহণ করলে বমি ভাব অনেকটা কমে আসবে।

সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ করুন

যেসব খাবার খুব দ্রুত হজম হয় যেমন: বিভিন্ন ফল, রঙিন শাকসবজি, ভাত, টোস্ট, কলা ইত্যাদি গ্রহণ করুন। কোন অবস্থাতেই অতিরিক্ত ঝাঁঝালো খাবার এ সময় খাওয়া যাবেনা।

প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খান

এ সময় খাবার তালিকায় অধিক প্রোটিন যুক্ত খাবার যেমন: মাছ, মাংস, ডিম আর দুধের তৈরি খাবার ও বাদাম রাখুন। এতে করে বমির উদ্রেক কম হবে।

খাবারের সময় পানি খাবেন না

খাবার খাওয়ার আধাঘন্টা আগে এবং খাবার খাওয়ার আধা ঘন্টার মধ্যে পানি খাওয়া যাবে না। সকালে উঠে খালি পেটে পানি পান করুন। এবং খাবার খাবার নির্দিষ্ট সময় আগে পরিমাণমতো পানি খান।

খাবারের সাথে সাথেই বিশ্রাম নয়

খাবার খাওয়ার পর দশ মিনিট হাঁটাচলা করুন। কোন অবস্থাতেই খাবার খাওয়ার সাথে সাথেই শুয়ে পড়বেন না।

বমির উদ্রেক হয় এমন জিনিস পরিত্যাগ করুন

বমির উদ্রেক হয় এমন বিভিন্ন জিনিস যেমন: পারফিউম, আতর, কাঁচা খাবারের গন্ধ ইত্যাদি থেকে বিরত থাকুন।

 

আদাযুক্ত খাবার খান

আদা খাবার হজম করতে সাহায্য করে। তাই চা খাওয়ার সময় আদা মিশিয়ে খেতে পারেন। অথবা রান্না করার সময় বিভিন্ন খাবারে মসলা হিসেবে আদা যোগ করলে হজম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে।

 

গর্ভাবস্থার শেষের দিকে বমি

গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে বমি স্বাভাবিক হলেও গর্ভাবস্থার শেষের দিকের বমি স্বাভাবিক নাও হতে পারে। গর্ভাবস্থার শেষের দিকে ইউরিনারি ট্র্যাক্স ইনফেকশন এবং গ্যাসট্রোইনটারাইটিজ এর কারণে বমি হতে পারে। গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে বমি কমাতে নিচের উপায় গুলো অবলম্বন করুন:

  • ভেষজ চা পান করুন,
  • দিনে একটি বা দুটি পুদিনা পাতা চিবিয়ে খান,
  • খাবার তালিকায় পাতি লেবু রাখুন,
  • বমি কমাতে মুখে আমলকি রাখুন,
  • আদা মিশ্রিত খাবার খান।

 

গর্ভ অবস্থায় শেষ তিন মাসের সর্তকতা

গর্ভাবস্থায় সবচেয়ে সতর্ক থাকতে হয় শেষ তিন মাস। কারণ এ সময় বমি ভাব, খাবারে অনিহা তেমন একটা না থাকলেও বিভিন্ন জটিল সমস্যা তৈরি হতে পারে। গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসের সতর্কতা গুলো হল:

কোনভাবেই অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করা যাবেনা, গর্ভবতী মায়ের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, গর্ভবতী মায়ের পেটে চাপ দিয়ে কোন কাজ করা যাবে না, কোন ভারী কাজ করা যাবে না, ঘুমের সময় পেয়ে কাত হয়ে ঘুমাতে হবে, দূরে কোথাও ভ্রমনে বের হওয়া যাবে না, হালকা বাতাসে হাঁটাচলা করতে হবে, ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে হালকা ব্যায়াম করা যেতে পারে।

এই সময় নিয়মিতভাবে ডাক্তারের চেকআপে থাকতে হবে। যে কোন জটিল পরিস্থিতি দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত অন্য কারো পরামর্শ গ্রহণ করবেন না।

গর্ভাবস্থায় বমির সাথে রক্ত

গর্ভাবস্থার শুরুতে রক্ত বমি হওয়া স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়। তবে যদি গর্ভাবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে রক্ত বমি হতে থাকে তাহলে এটা মোটেই স্বাভাবিক নয়। গর্ভাবস্থায় বমির সাথে রক্ত গ্রাসনালীর আস্তরণে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে। সাধারণত গর্ভাবস্থায় অস্বাস্থ্যকর ডায়েট এর কারণে এরূপ হয়। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ গ্রহণ করুন। এবং কয়েকদিন যাবৎ রক্ত বমি চলতে থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

পিরিয়ড না হলে কি প্রেগন্যান্ট ? জেনে নিন

 

সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১)গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে বমি হওয়ার কারণ কি?

উঃ গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে শরীরে বিটা এইচসিজি হরমোন এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে এ সময় বমি অনুভূত হতে পারে।

)৩৩ সপ্তাহের গর্ভাবস্থায় কি বমি হওয়া স্বাভাবিক?

উঃ ৩৩ সপ্তাহে সাধারণত সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়ে যায়। সন্তান জন্মের আগে বমি হওয়া স্বাভাবিক কিন্তু সন্তান জন্মের পরে বমি হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

৩)শিশুর নড়াচড়া করলে কি বমি বমি ভাব হয়?

উঃ গর্ভস্থ শিশু অধিক নড়াচড়া করলে শরীরে অস্বস্তি সৃষ্টি হতে পারে এবং বমি বমি ভাব হয়।

৪)প্রেগন্যান্ট হওয়ার কত দিন পর বমি হয়?

উঃ প্রেগনেন্ট হওয়ার চার থেকে সাত সপ্তাহের মধ্যে বমি ভাব প্রকাশ পায়।

Spread the love

15 thoughts on “গর্ভবতী মহিলার গর্ভাবস্থায় বমি হলে কার্যকরী কিছু করণীয় কাজ”

Leave a Comment