সম্মানিত পাঠক, রাজশাহীর বিখ্যাত জিনিস গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। আজকের ব্লগে আমরা জানব : রাজশাহীর বিখ্যাত জিনিস, রাজশাহীর বিখ্যাত খাবার, রাজশাহীর বিখ্যাত স্থান, রাজশাহীর বিখ্যাত ব্যক্তি, রাজশাহীর বিখ্যাত মিষ্টি, রাজশাহীর বিখ্যাত খাবার হোটেল, রাজশাহীর বিখ্যাত ফল, রাজশাহীর বিখ্যাত আম ।
রাজশাহীর বিখ্যাত জিনিস
রাজশাহী তার ঐতিহ্যবাহী পণ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত। এখানে রাজশাহীর কিছু বিখ্যাত জিনিসের তালিকা রয়েছে:
১.রেশমীবস্ত্র: রাজশাহী রেশমের জন্য বিখ্যাত। এখানকার রেশমীবস্ত্রের বুনন দক্ষতার সাথে করা হয়, এবং এর রং ও নকশা অত্যন্ত আকর্ষণীয়। রাজশাহীর রেশমীবস্ত্র দেশব্যাপী সমাদৃত এবং আন্তর্জাতিক বাজারেও রপ্তানি করা হয়।
২.আম: রাজশাহী আম উৎপাদনের জন্য সুপরিচিত। এখানকার গোপালভোগ, লক্ষণভোগ, ল্যাংড়া, আম্রপালি, ফজলি, মোহনভোগ ইত্যাদি আমগুলি সুস্বাদু এবং দেশের অন্যতম সেরা আম হিসেবে পরিচিত।
৩.লিচু: রাজশাহীর লিচু তার স্বাদের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছে। বোম্বাই, চাঁপা, মল্লিকা, বেদানা ইত্যাদি লিচু রাজশাহীর অন্যতম জনপ্রিয় ফল হিসেবে পরিচিত।
৪.মিষ্টান্ন: রাজশাহীর মিষ্টান্নসামগ্রী যেমন কাঁচাগোল্লা, রসগোল্লা, চমচম, সন্দেশ, এবং জিলাপি তাদের স্বাদের জন্য দেশজুড়ে প্রসিদ্ধ।
৫.প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত রাজশাহী শহরের মনোরম দৃশ্য প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়। শহরের আশেপাশে বিভিন্ন উদ্যান ও বনভূমি রয়েছে, যা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ।
৬.সাংস্কৃতিক কেন্দ্র: রাজশাহী বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এখানকার লোকসংস্কৃতি যেমন লোকসঙ্গীত, লোকনৃত্য, এবং লোককাহিনী দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সংস্কৃতির থেকে আলাদা এবং সমৃদ্ধ।
রাজশাহী তার ঐতিহ্যবাহী পণ্য এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য নিয়ে বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে সুপরিচিত।
রাজশাহীর বিখ্যাত খাবার
রাজশাহী শহর তার ঐতিহ্যবাহী খাবার এবং সুন্দর পরিবেশের জন্য দেশের মধ্যে একটি বিখ্যাত স্থান। রাজশাহীর কালাই রুটি এবং কালাভুনা দুটি খুবই জনপ্রিয় খাবার, যা এই অঞ্চলের খাবার প্রেমীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ।
কালাই রুটি একটি বিশেষ ধরণের রুটি যা সাধারণত ডাল দিয়ে তৈরি করা হয় এবং এটি রাজশাহীর নিজস্ব ঐতিহ্য বহন করে। অন্যদিকে, কালাভুনা হলো মশলাদার মাংসের একটি বিশেষ রান্না, যা ভোজনরসিকদের মন জয় করে থাকে।
রাজশাহী শহর শুধু তার সুস্বাদু খাবারের জন্যই নয়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সৌন্দর্যের জন্যও প্রসিদ্ধ। এটি দেশের অন্যতম সুন্দর এবং পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে পরিচিত। তাছাড়া, রাজশাহী শহরকে শিক্ষা নগরী বলা হয়, কারণ এখানে রয়েছে দেশের বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ।
যারা রাজশাহীতে ঘুরতে আসেন, তারা অবশ্যই শহরের দর্শনীয় স্থানগুলোর পাশাপাশি এখানকার সুস্বাদু খাবারগুলো উপভোগ করে থাকেন। তাই, যদি কখনো রাজশাহীতে আসেন, এই বিশেষ খাবারগুলো খেতে একেবারেই ভুলবেন না, কারণ এগুলো এই শহরের খাবার ঐতিহ্যের অংশ।
রাজশাহীর বিখ্যাত খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে : রাজশাহীর কালাই রুটি, রাজশাহীর কালাভুনা, রাজশাহী বাটার মোড়ের জিলাপি, রাজশাহীর বট পরোটা, রাজশাহী ফুলতলার চটপোটি, রাজশাহী সি এন্ড বি মোড়ের গরম গরম মিষ্টি।
রাজশাহীর কালাই রুটি :
আপনি যদি রাজশাহী যান এবং কালাই রুটি না খান, তাহলে আপনার ভ্রমণ সত্যিই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। কালাই রুটি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী এই খাবারটি রাজশাহীতে বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
মাষ কলাই এবং আতপ চালের আটা দিয়ে তৈরি এই রুটি খাওয়ার মজাই আলাদা, বিশেষ করে যখন এটি বেগুন ভর্তা, শুকনো মরিচ ভর্তা, পেঁয়াজ ভর্তা বা মাংস ভুনার সাথে গরম গরম পরিবেশন করা হয়।
রাজশাহীর প্রতিটি কোণায় আপনি কালাই রুটির দোকান পাবেন, যার মধ্যে ‘কালাইঘর’, ‘কালাইবাড়ি’ ইত্যাদি নামের দোকানগুলো বেশ পরিচিত। উপশহর নিউমার্কেট এলাকায় অবস্থিত দোকানগুলোতে বিশেষত কালাই রুটি এবং হাঁসের মাংসের কম্বিনেশনটি খেতে ভুলবেন না।
এছাড়া নিউমার্কেটের রূপালী ব্যাংকের উল্টোদিকে ‘কালাই হাউজ’ নামে একটি দোকান রয়েছে, যা এখানকার অন্যতম জনপ্রিয় কালাই রুটির দোকান।
কালাই রুটির দাম সাধারণত ৩০ টাকা, তবে কিছু বিশেষ দোকানে দাম ৫০ টাকাও হতে পারে। এই রুটি শুধুমাত্র সুস্বাদু নয়, এটি স্বাস্থ্যকরও বটে। তাই রাজশাহীতে ভ্রমণে গেলে এই ঐতিহ্যবাহী খাবারটি আপনার তালিকায় অবশ্যই রাখা উচিত।
রাজশাহীর কালাভুনা :
রাজশাহীর খাবারের বিশেষ আকর্ষণের মধ্যে গরুর মাংসের কালাভুনা অন্যতম। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কালাভুনা পাওয়া গেলেও রাজশাহীর কাটাখালির কালাভুনার স্বাদ একদম আলাদা।
এখানকার কালাভুনা বিশেষ রেসিপি আর ভিন্ন মসলার সংমিশ্রণে তৈরি হওয়ায় তা খেতে যেমন মজাদার, তেমনই তৃপ্তিদায়ক। একবার খেলে যে কেউ বারবার খেতে চাইবে।
কাটাখালির পাশাপাশি রাজশাহী সিটি হাট ও নওহাটা বাজারের বেশ কিছু দোকানেও কালাভুনা পাওয়া যায়। তবে স্থানীয়দের পাশাপাশি আগত পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় দোকান হল ‘একতা হোটেল’।
কাটাখালি পাওয়ার হাউজের উল্টোদিকে অবস্থিত এই দোকানটি কালাভুনার জন্য বিখ্যাত।
দামের দিক থেকেও এটি বেশ সাশ্রয়ী। এক বাটি কালাভুনার দাম মাত্র ১৬০ টাকা, যেখানে থাকবে ১০ পিস মাংস। আর হাফ বাটি ৮০ টাকায় পাবেন ৫ পিস মাংস।
যারা চেটেপুটে খাওয়ার স্বাদ নিতে চান, তাদের জন্য এই কালাভুনা বিশেষভাবে সুপারিশ করা হয়। রাজশাহীতে এলে এই অনন্য স্বাদের কালাভুনা অবশ্যই চেখে দেখার মতো।
রাজশাহী বাটার মোড়ের জিলাপি :
জিলাপি খাওয়ার অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই অনেকের আছে, তবে রাজশাহীর বাটার মোড়ের জিলাপির মতো স্বাদ অন্য কোথাও পাবেন না।
প্রায় ৬৬ বছর ধরে এই ছোট্ট দোকানে তৈরি হচ্ছে বিখ্যাত এই জিলাপি, যা এতটাই জনপ্রিয় যে কোনো সাইনবোর্ড বা বিজ্ঞাপন ছাড়াই অসংখ্য মানুষ এখানে ভিড় করেন শুধুমাত্র এই জিলাপির জন্য।
বাটার মোড়ের এই রসে ভরা জিলাপি কেজি প্রতি মাত্র ১২০ টাকায় বিক্রি হয়, যা স্বাদের তুলনায় বেশ সাশ্রয়ী। শুধু রাজশাহী নয়, আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকেও মানুষ আসে এই বিখ্যাত জিলাপির স্বাদ নিতে।
দোকানটি রাজশাহীর জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ২৫০ গজ দূরে, বাটার দোকানের পাশেই অবস্থিত। তাই রাজশাহীতে গেলে এই বিশেষ জিলাপি অবশ্যই চেখে দেখতে ভুলবেন না!
রাজশাহীর বট পরোটা :
রাজশাহীর বট পরোটা শহরের তরুণদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি স্ট্রিট ফুড। বট, অর্থাৎ গরুর ভুড়ি সেদ্ধ করে বিশেষ মসলা দিয়ে মচমচে করে ভেজে এটি তৈরি করা হয় এবং পরোটার সাথে পরিবেশন করা হয়। এই মশলাদার খাবারটি বিকেল হলেই দোকানগুলোতে ভিড় জমায়, যা রাত পর্যন্ত চলতে থাকে।
দাম: প্রতি প্লেট বট বিক্রি হয় ৫০ টাকায়, যেখানে হাফ প্লেটের দাম ২৫ টাকা। প্রতিটি পরোটার দাম ১০ টাকা।
স্থান: শহরের বিভিন্ন স্থানে এবং হোটেলে বট পরোটা পাওয়া যায়। এর মধ্যে তালাইমারির ‘শুভ হোটেল’ এবং ‘জামিলের দোকান’ বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
এখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বট পরোটা তৈরি হয় এবং কর্মচারীদের ব্যবহারও বেশ ভালো, যা ক্রেতাদের কাছে এই দোকানগুলোর জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ।
যদি আপনি রাজশাহীতে যান, তবে এই বিখ্যাত বট পরোটার স্বাদ একবার হলেও নিয়ে দেখুন।
রাজশাহী ফুলতলার চটপোটি :
আমরা প্রায় সবাই কম-বেশি চটপটি খেতে ভালোবাসি। রাজশাহীর প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই চটপটির দোকান আছে, তবে ফুলতলার চটপটি একবার খেলে মুগ্ধ হতে বাধ্য। এখানকার চটপটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো—এটা দামে কম হলেও মানের ক্ষেত্রে কোনো কমতি নেই।
দাম ও অবস্থান: প্রতি বাটি চটপটির দাম ১৫ ও ২০ টাকা। এটি তালাইমারী বাজার থেকে সামান্য সামনে পদ্মা নদীর পাড়ে ফুলতলা অবস্থিত।
রাজশাহী সি এন্ড বি মোড়ের গরম গরম মিষ্টি :
“রানা মিষ্টি ঘর” রাজশাহীর সিএন্ডবি এলাকার একটি বিখ্যাত মিষ্টির দোকান, যেখানে বিকেলের সময় গরম গরম মিষ্টি খাওয়ার জন্য ভিড় লেগেই থাকে। ৩০ বছরের পুরানো এই দোকানে প্রতিদিন মানুষ ভিড় করে তাদের ঐতিহ্যবাহী গরম মিষ্টি আর পুরি খাওয়ার জন্য।
দোকানে গেলে বড় কড়াইয়ে গরম চিনির সিরায় ডুবানো ছানার গোল্লা আকারের মিষ্টি তৈরির দৃশ্য যে কারও মন ভরিয়ে দেবে। আর এই মিষ্টির সাথে পুরি খাওয়ার মজাই আলাদা, যা এই দোকানের বিশেষ আকর্ষণ।
দাম: প্রতি কেজি মিষ্টির দাম ২০০ টাকা, আর ১ পিস মিষ্টির দাম ১৫ টাকা।
অবস্থান: দোকানটি জিরোপয়েন্ট থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। আপনি সহজেই অটো বা রিক্সাযোগে সেখানে যেতে পারবেন।
জনপ্রিয় ব্লগ ১ : গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ, কিভাবে বুঝবেন ?
জনপ্রিয় ব্লগ ২ : গর্ভবতী মহিলার গর্ভাবস্থায় বমি হলে কার্যকরী কিছু করণীয় কাজ
জনপ্রিয় ব্লগ ৩ : সিজারের পর মায়ের যত্ন কিভাবে নিবেন
রাজশাহীর বিখ্যাত স্থান
পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত রাজশাহী একটি ঐতিহ্যবাহী এবং প্রাচীন শহর, যা তার প্রাচীন ইতিহাস, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, এবং বিখ্যাত স্থানগুলোর জন্য পরিচিত। আম ও রেশমী বস্ত্রের জন্য বিখ্যাত এই শহর রাজশাহী বিভাগের সবচেয়ে বড় শহর।
প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে থাকা রাজশাহীতে রয়েছে বিভিন্ন বিখ্যাত মসজিদ, মন্দির, এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা।
পর্যটকদের জন্য রাজশাহীর বিখ্যাত ভ্রমণ স্থানের মধ্যে রয়েছে: ১.পদ্মার পাড় ২.পুঠিয়া রাজবাড়ী ৩.বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর ৪.বাঘা মসজিদ ৫. রাজশাহী কলেজ ৬.রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ৭. রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগার
৮. শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা ৯. শাহ্ মখদুমের মাজার ১০. সবুজ সিএন্ডবি রাস্তা ১১.প্যারিস রোড, রাবি ১২. রাতের কয়েকটি আলোকসজ্জিত রোড ১৩ শহীদ জিয়া শিশু পার্ক।
১.পদ্মার পাড়:
রাজশাহী শহরটি পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত, যা শহরের সৌন্দর্যকে বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে। পদ্মা নদীর পাশ দিয়ে বেশ কয়েক কিলোমিটার জুড়ে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র, যেগুলো শহরের বাসিন্দা এবং পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
এর মধ্যে অন্যতম হলো পদ্মা গার্ডেন, যা একটি উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
পদ্মা গার্ডেনের সবুজের সমারোহ এবং মনোমুগ্ধকর পরিবেশে রয়েছে বেশ কিছু রেস্তোরাঁ এবং বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো যা দর্শনার্থীদের মন কেড়ে নেয়।
মুক্তমঞ্চ আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিনোদন কেন্দ্র, যা পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত। এটি ২০১৩ সালে স্থাপিত হয় এবং এখানে মুক্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। মুক্তমঞ্চে প্রকৃতির মুক্ত হাওয়া এবং সুশীতল পরিবেশে লোকজনের সমাগম সর্বদাই চোখে পড়ে।
রাজশাহীর শান্ত, স্নিগ্ধ এবং অপূর্ব সৌন্দর্যের জন্য টি-বাঁধ এবং আই-বাঁধও বেশ জনপ্রিয়। পদ্মার শীতল হাওয়া এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে এই বাঁধগুলো আপনার জন্য আদর্শ স্থান। এখানকার মনোরম পরিবেশ এবং পদ্মার হাওয়া নিমিষেই আপনার মনকে প্রশান্তি এনে দেবে।
রাজশাহী পদ্মার পাড় এর এই স্থানগুলো রাজশাহীর বিখ্যাত স্থান স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম।
২.পুঠিয়া রাজবাড়ী :
পুঠিয়া রাজবাড়ী রাজশাহীর অন্যতম আকর্ষণীয় এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা। রাজশাহী শহর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে এবং রাজশাহী-নাটোর মহাসড়ক থেকে ১ কিলোমিটার ভেতরে এই রাজবাড়ীটি অবস্থিত।
উনবিংশ শতাব্দীতে ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই রাজবাড়ীটি তার বহুকক্ষ বিশিষ্ট দ্বিতল ভবন, সিংহ দরজা, এবং শৈল্পিক নিদর্শনের জন্য সুপরিচিত।
জমিদাররা এই রাজবাড়ী থেকে তাদের রাজকর্ম পরিচালনা করতেন। বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে থাকা পুঠিয়া রাজবাড়ীটি লস্করপুর ডিগ্রী কলেজ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
পুঠিয়া রাজবাড়ীকে ঘিরে থাকা পরিখাগুলোর রয়েছে আলাদা নাম, যেমন শিব সরোবর বা শিবসাগর, মরাচৌকি, বেকিচৌকি, গোপালচৌকি এবং গোবিন্দ সরোবর।
রাজবাড়ীর মধ্যে রয়েছে শ্যামসাগর নামে একটি বিশাল পুকুর, যা প্রাসাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও বৃদ্ধি করেছে।
এখানকার মন্দিরগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দোচালা পদ্ধতিতে নির্মিত বড় আহ্নিক মন্দির, ১৮২৩ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত বড় শিব মন্দির বা ভূবনেশ্বর মন্দির, চারতলা বিশিষ্ট পুঠিয়া দোল মন্দির এবং পুঠিয়া পাঁচআনী জমিদার বাড়ীর প্রাঙ্গনে অবস্থিত গোবিন্দ মন্দির।
প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত রাজবাড়ীটি দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। রাজশাহীর বিখ্যাত স্থান গুলোর মধ্যে পুঠিয়া রাজবাড়ী অন্যতম।
৩.বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর :
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর হিসেবে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। রাজশাহী শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই জাদুঘরটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহশালা হিসেবে পরিচিত। এর প্রতিষ্ঠার পেছনে ছিল বাংলার ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন সংগ্রহ এবং সংরক্ষণের লক্ষ্য।
১৯১০ সালে নাটোরের দিঘাপাতিয়ার জমিদার শরৎ কুমার রায়, আইনজীবী অক্ষয় কুমার মৈত্র, এবং রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক রামপ্রসাদ চন্দ্র মিলে বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি গঠন করেন।
তারা বাংলার বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান চালিয়ে ৩২টি দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে, ১৯১৩ সালে এই নিদর্শনগুলোকে কেন্দ্র করে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর তার নিজস্ব ভবনে যাত্রা শুরু করে।
জাদুঘরের অস্তিত্ত্ব নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানারকম সংকট দেখা দেয়। ১৯৪৯ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত এর অর্ধেক অংশ মেডিকেল স্কুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
১৯৬৪ সালে পুনরায় জাদুঘরটি বন্ধ হবার উপক্রম হলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এটিকে অধিগ্রহণ করে। মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, এবং অন্যান্য বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ এই জাদুঘর পরিদর্শন করেছেন।
এইভাবে, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর তার ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব ধরে রেখেছে এবং বাংলাদেশের একটি মূল্যবান ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রাজশাহীর বিখ্যাত স্থান গুলোর মধ্যে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর অন্যতম।
৪.বাঘা মসজিদ:
বাঘা মসজিদ রাজশাহী শহর থেকে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। ইট দিয়ে তৈরি এই প্রাচীন মসজিদটি স্থাপত্যশৈলীতে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
মসজিদের চারপাশে ৪টি গম্বুজ এবং মাঝখানে দুই সারিতে মোট ১০টি গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের পূর্ব পাশে ৫টি প্রবেশদ্বার আছে, তবে উত্তর-দক্ষিণের দেয়ালে থাকা দরজাগুলো বর্তমানে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
বাঘা মসজিদের ভেতরে ও বাইরে প্রচুর পোড়া মাটির ফলক দেখা যায়, যা মসজিদের সৌন্দর্য এবং প্রাচীনত্বকে আরও ফুটিয়ে তোলে। মসজিদের ভেতরে একটি উঁচু বেদিতে একটি বিশেষ নামাজের কক্ষ রয়েছে, তবে এই কক্ষটি কার বা কাদের জন্য সংরক্ষিত ছিল, তা এখনো অজানা।
মসজিদের পূর্ব পাশে একটি বিশাল দীঘি এবং অন্য পাশে একটি কবরস্থান রয়েছে, যা মসজিদের পরিবেশকে আরও মনোরম করে তুলেছে।
১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মসজিদটির ২৩.১৬ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১২.৮০ মিটার প্রস্থের ছাদ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পরবর্তীতে, বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মসজিদের গম্বুজ এবং ছাদ পুনঃনির্মাণ করে, যা মসজিদটির স্থাপত্যিক সৌন্দর্যকে পুনরুদ্ধার করে।
বাঘা মসজিদ তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও স্থাপত্যশৈলীর জন্য বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত এবং রাজশাহীর বিখ্যাত স্থান গুলোর মধ্যে বাঘা মসজিদ অন্যতম।
৫. রাজশাহী কলেজ :
১৮৭৩ সালে স্থাপিত এই কলেজটি এখন সারা বাংলাদেশে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে। প্রশাসন ভবনের গাঢ় লাল রঙের দালানটি তার অনন্য সৌন্দর্য এবং স্থাপত্যশৈলীর জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
কলেজ ক্যাম্পাসে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা এবং নানা প্রজাতির গাছ-গাছালি, যা পরিবেশকে আরও মনোরম করে তোলে। এই কলেজের প্রতিটি স্থাপনা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে মোহিত করবে।
এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি কেবলমাত্র শিক্ষার ক্ষেত্রে নয়, এর স্থাপত্যশৈলী এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্যও প্রশংসিত। এই কারণেই এটি সারা দেশের মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত এবং রাজশাহীর বিখ্যাত স্থান গুলোর মধ্যে রাজশাহী কলেজ অন্যতম।
৬.রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় :
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত, যা রাজশাহী শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পূর্বদিকে অবস্থিত। এটি ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, বিশেষ করে বাংলাদেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে।
উত্তর বাংলায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে ১৯১৭ সালে গঠিত Calcutta University Commission (স্যাডলার কমিশন) রাজশাহী শহরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছিল।
যদিও সেই সময়ে স্যাডলার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি, বাংলা সরকারের নির্দেশে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তার অধিভুক্ত রাজশাহী কলেজে বেশ কয়েকটি অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু করার অনুমতি দেয়।
১৯৫২ সালে পূর্ববাংলার মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিন এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী হবীবুল্লাহ বাহার রাজশাহী কলেজের ছাত্র সংসদ দ্বারা আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এই অনুষ্ঠানের পর রাজশাহীতে একটি
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে নূরুল আমিন সরকার ১৯৫২ সালের নভেম্বর মাসে পূর্ববাংলা ব্যবস্থাপক পরিষদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বিল উত্থাপন করেন।
১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ বিলটি ‘The Rajshahi University Act, 1953’ (The East Bengal Act XV of 1953) নামে ব্যবস্থাপক পরিষদে পাস করা হয় এবং ৬ জুন গভর্নর এই বিলে সম্মতি দেন।
১৬ জুন ১৯৫৩ তারিখে অ্যাক্টটি ঢাকা গেজেট এক্সট্রা অর্ডিনারিতে প্রকাশিত হয়। ৬ জুলাই রাজশাহী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ডক্টর ইতরাৎ হোসেন জুবেরীকে প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য নিযুক্ত করা হয় এবং ঐ দিন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়।
ডক্টর জুবেরী এবং মাদার বখ্শ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনার খসড়া প্রণয়ন করেন, যা পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিত্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
রাজশাহীর বিখ্যাত স্থান গুলোর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আজ বাংলাদেশের একটি প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, এবং এটি দেশের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে সুপরিচিত।
৭. রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগার :
রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগার বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন গ্রন্থাগার হিসেবে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এর আদি নাম ছিলো রাজশাহী সাধারণ পুস্তকালয়।
১৯৭৫ সালে গঠনতন্ত্র সংশোধনীর মাধ্যমে এর নামকরণ করা হয় রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগার, যা তখন থেকে স্থানীয় জনগণের মধ্যে আরও বেশি পরিচিতি লাভ করে।
এই গ্রন্থাগারটি রাজশাহীর ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে, যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম শিক্ষার্থী, গবেষক, এবং সাধারণ পাঠকরা জ্ঞানার্জনের জন্য আসতেন।
এটি ছিল একটি সমৃদ্ধ এবং জ্ঞানবহুল প্রতিষ্ঠান, যা বিভিন্ন ধরনের বই, পত্রিকা, এবং গবেষণা উপকরণ সরবরাহ করত।
২০১৮ সালে, গ্রন্থাগারের আদি ভবনটি ভেঙে ফেলা হয় এবং জীর্ণসংস্কারের কাজ শুরু হয়। এই সংস্কার কার্যক্রমের মাধ্যমে গ্রন্থাগারটির আধুনিকায়ন এবং পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে, যাতে এটি আরও উন্নত এবং সুবিধাজনক হয়।
সংস্কার শেষে, রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগারটি নতুন আঙ্গিকে আরও বেশি কার্যকরী ও আধুনিক রূপে পাঠক ও গবেষকদের সেবা প্রদান করতে সক্ষম হবে।
এই প্রাচীন গ্রন্থাগারটি রাজশাহীর বিখ্যাত স্থানের মধ্যে অন্যতম। প্রাচীন এই
গ্রন্থাগারটি ইতিহাস, শিক্ষা, এবং সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়, এবং এর উন্নয়ন আগামী দিনে আরও বেশি শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের জন্য জ্ঞানচর্চার একটি কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে।
৮. শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা :
রাজশাহী শহরের অন্যতম দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
পদ্মা নদীর তীরবর্তী এই চিড়িয়াখানা ও উদ্যানটি ৩২.৭৬ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত, যা একসময়ের রেসকোর্স ময়দানে প্রতিষ্ঠিত। রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৪.২ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই স্থাপনা শহরের প্রধান বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
১৯৭২ সালে শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জাম সড়কের কাছে রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানার নির্মাণ কাজ শুরু হয়, এবং ১৯৭৪-৭৬ সালে রাজস্ব বিভাগের অনুমতিক্রমে এখানে একটি শিশু পার্কও নির্মাণ করা হয়।
পরবর্তীতে এটি শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা নামে পরিচিতি লাভ করে।
চিড়িয়াখানার প্রধান প্রবেশদ্বারে বিশাল জিরাফের ভাস্কর্য এবং মৎস্য কুমারীর ফোয়ারা দর্শনার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। পার্কটির ভিতরে নানারকম ফুল, ফল এবং ঔষধি গাছের ছায়া ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।
পার্কের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য, নান্দ্যনিক ব্রিজ, এবং একটি ছোট্ট লেক। চিড়িয়াখানার উল্লেখযোগ্য সংগ্রহের মধ্যে বাজরিকা, বালিহাস, ঘোড়া, হরিণ, উদবিড়াল, অজগর সাপ, কুমির সহ বিভিন্ন জলজ ও স্থলজ পশুপাখি রয়েছে।
উদ্যানের কৃত্রিম পাহাড় থেকে পদ্মা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়, যা দর্শনার্থীদের জন্য একটি বিশেষ আকর্ষণ। এছাড়া, পার্কে প্যাডেল বোট, নাগরদোলা সহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় রাইড রয়েছে, যা শিশুদের এবং পরিবারের জন্য চিত্তবিনোদনের বিশেষ সুযোগ প্রদান করে।
রাজশাহীর বিখ্যাত স্থান গুলোর মধ্যে শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা অন্যতম। বর্তমানে, এই শিশু পার্কটি রাজশাহীর প্রধান বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় দর্শনার্থী ছাড়াও প্রতিদিন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা সফর ও বনভোজনের উদ্দেশ্যে ছাত্রছাত্রী এবং পর্যটকেরা এখানে ভিড় করেন। শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই উদ্যান ও চিড়িয়াখানা স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি বাইরের দর্শনার্থীদের কাছেও অত্যন্ত জনপ্রিয়।
৯. শাহ্ মখদুমের মাজার :
হযরত শাহ্ মখদুম (রহ.) ২রা রজব, ৬১৫ হিজরী মোতাবেক ১২১৬ খ্রিস্টাব্দে বাগদাদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হযরত আলী (রা.)-এর বংশধর এবং এক পণ্ডিত ও ধার্মিক পরিবারের সন্তান ছিলেন। তাঁর প্রকৃত নাম ছিলো আব্দুল কুদ্দুস।
ছোটবেলা থেকেই তিনি কুরআন এবং নবীর ঐতিহ্য অধ্যয়ন শুরু করেন এবং শীঘ্রই ইসলামী শিক্ষার গভীর জ্ঞান এবং আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টির জন্য পরিচিত হয়ে ওঠেন।
শিক্ষা সমাপ্ত করার পর, হযরত শাহ্ মখদুম ইসলামের বাণী প্রচারের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করেন। তিনি সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে ভ্রমণ করেন, যার মধ্যে বর্তমান বাংলাদেশ, ভারত, এবং পাকিস্তান অন্তর্ভুক্ত।
ভ্রমণের পথে তিনি বহু মসজিদ ও ইসলামিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং ইসলামের শিক্ষা প্রচার করেন।
তাঁর অলৌকিক ক্ষমতা, যেমন অসুস্থদের নিরাময় করার ক্ষমতা, তাঁর পরিচিতির আরেকটি দিক ছিল। এছাড়াও, একটি জনপ্রিয় কাহিনী অনুসারে, তিনি কুমিরের পিঠে চড়ে নদী পার হতেন।
কথিত আছে যে, বনের বাঘও তাঁর আনুগত্য করত। তাঁর প্রিয় কুমিরটির কবরও তাঁর মাজারের পাশেই অবস্থিত।
হযরত শাহ্ মখদুম ১৩ শতকের মাঝামাঝি সময়ে রাজশাহীতে এসে বসতি স্থাপন করেন এবং এখানেই তাঁর বাকি জীবন কাটিয়ে দেন। তিনি ১২৫৯ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন এবং রাজশাহীতেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।
বর্তমানে, শাহ্ মখদুম মাজার সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। মাজার কমপ্লেক্সে একটি বড় মসজিদ, একটি মাদ্রাসা, এবং তাঁর সমাধি রয়েছে।
মাজারটি তার সুন্দর স্থাপত্য এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য প্রসিদ্ধ, এবং প্রতি বছর হাজার হাজার ভক্ত এই স্থানটি পরিদর্শন করেন।
শাহ্ মখদুম মাজার শুধুমাত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান নয়, এটি রাজশাহী ও সমগ্র বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীকও বটে। এটি হযরত শাহ্ মখদুমের স্থায়ী উত্তরাধিকার এবং এই অঞ্চলে ইসলামের প্রসারে তাঁর অবদানের স্মারক হিসেবে কাজ করে।
১০. সবুজ সিএন্ডবি রাস্তা :
রাজশাহীর সিএন্ডবি রাস্তাটি সত্যিই একটি নৈসর্গিক স্থান, বিশেষত সকালে হাঁটার জন্য। এই রাস্তাটি তার সবুজের সমারোহ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। ভোরের শীতল হাওয়ায় এখানে হাঁটলে যেন প্রকৃতির সাথে একাত্ম হতে পারবেন।
সন্ধ্যায় সিএন্ডবি রাস্তায় আলোর ঝলকানি আর মানুষের কোলাহলে ভরে ওঠে, যা এক অন্যরকম পরিবেশ সৃষ্টি করে। এখানকার বিখ্যাত গরম গরম রসগোল্লার স্বাদও মন ভুলিয়ে দেওয়ার মতো, যা এখানে আসা প্রতিটি দর্শনার্থীর প্রিয়।
১১.প্যারিস রোড, রাবি :
রাজশাহীর প্যারিস রোডটি নিঃসন্দেহে দেশের অন্যতম মনোরম এবং সৌন্দর্যমণ্ডিত রাস্তাগুলোর মধ্যে একটি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থিত এই রাস্তাটি তার চারপাশের সবুজ গাছপালা, ছায়াঘেরা পরিবেশ এবং সুশৃঙ্খল সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত। এখানে হাঁটতে হাঁটতে আপনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মায়ায় হারিয়ে যেতে বাধ্য।
এই রাস্তার শীতল এবং শান্ত পরিবেশ আপনাকে দেবে এক অনন্য প্রশান্তির অনুভূতি, যা আপনাকে দৈনন্দিন জীবনের কোলাহল থেকে মুক্তি দিতে সক্ষম। রাজশাহী এসে প্যারিস রোডে ঘুরে না গেলে এক ধরনের অপূর্ণতা থেকেই যায়।
১২. রাতের কয়েকটি আলোকসজ্জিত রোড :
রাজশাহীর প্রতিটি রাস্তা সত্যিই এক একটি সৌন্দর্যের নিদর্শন। দিনের বেলায় যেমন এ শহরের রাস্তাগুলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা থাকে, তেমনি রাতে আলোকসজ্জিত রাস্তাগুলো এক অনন্য মাধুর্য নিয়ে হাজির হয়।
তালাইমারি থেকে আলুপট্টি, তেরোখাদিয়া, এবং প্লেন চত্বরের রাস্তা—এসব স্থানগুলি রাতে আলোর ঝলকানিতে আরো মোহনীয় হয়ে ওঠে।
রিকশায় চড়ে বা পায়ে হেঁটে এই রাস্তাগুলো ঘুরে বেড়ানোর সময় মনে হয় যেন এক স্বপ্নময় জগতে প্রবেশ করেছেন। প্রতিটি মুহূর্তে আপনি মুগ্ধ হতে থাকবেন, আর এ পথে চলার আনন্দে পথ যেন শেষ হতে না চায়।
১৩. শহীদ জিয়া শিশু পার্ক :
রাজশাহীর নওদাপাড়ায় অবস্থিত শহীদ জিয়া শিশু পার্ক সত্যিই এক জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্র, যেখানে শিশুদের আনন্দ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য মিশ্রণ রয়েছে।
পার্কটির অন্যতম আকর্ষণ হলো দীঘির মাঝখানে স্থাপিত কৃত্রিম পাহাড়, যা পার্কটির সৌন্দর্যকে আরো বৃদ্ধি করেছে।
এই পার্কটি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে, যেখানে পরিবারের সবাই মিলে সময় কাটানো যায়। প্রবেশমূল্য মাত্র ২৫ টাকা হওয়ায় এটি সবার জন্য সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী একটি বিনোদন কেন্দ্র।
রাজশাহীর বিখ্যাত ব্যক্তি
বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চল বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল, যেখানে শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজসেবা, এবং রাজনীতির ক্ষেত্রে অসংখ্য প্রতিভাবান ও নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিত্ব তাঁদের অনন্য অবদান রেখে গেছেন।
এই অঞ্চলের গুণী ব্যক্তিরা তাঁদের কাজের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে অবদান রেখেছেন, তা আজও স্মরণীয় হয়ে আছে।
মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা
মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন শ্রদ্ধেয় এবং স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি ১ মে ১৯৩৪ সালে বাঁকুড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ব্রিটিশ ভারতে জন্মগ্রহণ করেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে তিনি তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টরের দায়িত্ব পালন করেন।
১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে তিনি শহীদ হন।
তাঁর এই আত্মত্যাগ বাংলাদেশের সংগ্রামী ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে গণ্য হয় এবং তাঁকে দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে সম্মানিত করা হয়।
শামসুজ্জোহা বাংলা ভাষা আন্দোলনের সময়ও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন, যা তাঁকে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে একজন নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
তাঁর ত্যাগ ও সাহসিকতা আজও আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে এবং তিনি সবসময় জাতির স্মৃতিতে অমর হয়ে থাকবেন।
আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান
আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন অন্যতম নেতা এবং দেশের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ইতিহাসে স্মরণীয়। তিনি ১৯২৩ সালের ২৬ জুন নাটোর জেলার বাগাতিপাড়ার মালঞ্চী রেলস্টেশন সংলগ্ন নূরপুর গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর পৈতৃক বাড়ি রাজশাহী জেলার কাদিরগঞ্জ মহল্লায় ছিল, যেখানে তিনি বনেদি জমিদার পরিবারের সন্তান হিসেবে বেড়ে ওঠেন।
কামারুজ্জামান ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গঠিত অস্থায়ী সরকারের স্বরাষ্ট্র, কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ছিলেন একজন নির্লোভ, সৎ, এবং দেশপ্রেমিক নেতা, যার জন্য তিনি সর্বদাই জনগণের মাঝে উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর কামারুজ্জামানসহ আরো তিন জাতীয় নেতাকে গ্রেফতার করে কারাবন্দী করা হয়।
এরপর ৩ নভেম্বর ১৯৭৫, বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘জেল হত্যা দিবস’ নামে পরিচিত দিনটিতে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে তাঁকেসহ জাতীয় নেতাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হিসেবে চিরস্থায়ী হয়ে আছে।
আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের জীবন ও ত্যাগ আমাদের জাতীয় ইতিহাসে গভীরভাবে প্রোথিত এবং তিনি বাঙালির স্বাধীনতার সংগ্রামে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছেন।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক অসামান্য নায়ক, যিনি তাঁর অসাধারণ সাহসিকতা এবং দেশপ্রেমের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
৭ মার্চ ১৯৪৯ সালে বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার রহিমগঞ্জ গ্রামে তাঁর জন্ম হয়। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীর ৭নং সেক্টরের একজন গর্বিত কর্মকর্তা ছিলেন।
মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী শত্রু বাহিনীর বিরুদ্ধে চরম প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে মহানন্দা নদীর তীরে শত্রুর প্রতিরক্ষা ভাঙার চেষ্টাকালে তিনি শহীদ হন।
তাঁর বীরত্বপূর্ণ উদ্যোগের ফলে মুক্তিবাহিনী ওই অঞ্চলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষতি করে এবং পরবর্তীতে অঞ্চলটি শত্রুমুক্ত হয়।
মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের স্মরণে ঢাকা সেনানিবাসের প্রধান ফটক “বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ জাহাঙ্গীর গেট” নামে নামকরণ করা হয়েছে, যা তাঁর অসাধারণ ত্যাগ ও বীরত্বের প্রতি জাতির শ্রদ্ধার নিদর্শন।
১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর তাঁর মৃতদেহ ঐতিহাসিক সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হয়, যেখানে অসংখ্য মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধা জানায় এবং সেখানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের আত্মত্যাগ আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে চিরকাল অমর হয়ে থাকবে। তাঁর বীরত্ব এবং দেশপ্রেম আমাদের সকলকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে এবং চিরকাল করবে।
মাদার বখশ
মাদার বখশ ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশি রাজনীতিক এবং ভাষাসৈনিক, যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯০৭ সালে তৎকালীন রাজশাহীর নাটোর মহকুমার সিংড়া উপজেলার স্থাপনদীঘি গ্রামে তাঁর জন্ম হয়।
মাদার বখশ ১৯৪৬ সালে রাজশাহীর (আত্রাই, বাগমারা ও মান্দা) এলাকা থেকে বঙ্গীয় আইন পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের উল্লেখযোগ্য একটি অধ্যায় হলো ১৯৫০ সালে রাজশাহী পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর নির্বাচন। দেশ বিভাজনের পর, ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন।
এছাড়াও, ১৯৫০-৫৪ সালে তিনি রাজশাহী পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত পৌর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যা আজকের রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সূচনা হিসেবে বিবেচিত হয়।
মাদার বখশ ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, যা তাঁর শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নের প্রতি অঙ্গীকারের নিদর্শন। তাঁর কর্মজীবন এবং ত্যাগের মাধ্যমে তিনি রাজশাহীর ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
ভাষা আন্দোলন এবং দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে তাঁর অবদান আমাদের জাতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
গোলাম আরিফ টিপু
গোলাম আরিফ টিপু ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশি আইনজীবী, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ভাষা আন্দোলনের কর্মী।
তিনি ১৯৩১ সালের ২৮ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কমলাকান্তপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৫২ সালে রাজশাহীতে বাংলা ভাষা আন্দোলনে তাঁর নেতৃত্ব ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের রাজশাহী অঞ্চলের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ভাষার অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন।
গোলাম আরিফ টিপু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ভাষা আন্দোলনে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৯ সালে তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করে, যা দেশের অন্যতম সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা।
গোলাম আরিফ টিপু তাঁর কর্মজীবন এবং অবদানের মাধ্যমে আমাদের জাতির ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল নাম হিসেবে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
পলান সরকার
পলান সরকার ছিলেন একজন অসাধারণ বাংলাদেশি সমাজকর্মী, যিনি শিক্ষা বিস্তারের জন্য তাঁর জীবনের একটি বিশাল অংশ উৎসর্গ করেছেন।
১৯২১ সালের ১ আগস্ট তিনি জন্মগ্রহণ করেন এবং রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ২০টি গ্রামে গড়ে তুলেছেন এক অভিনব শিক্ষা আন্দোলন, যা সারা দেশেই প্রশংসিত হয়েছে।
তিনি নিজের টাকায় বই কিনে সেগুলো পিছিয়ে পড়া গ্রামের মানুষের মধ্যে বিতরণ করতেন, যাতে তারা বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে।
প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে কাঁধে বইয়ের ঝোলা নিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়তেন এবং মাইলের পর মাইল হেঁটে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে মানুষদের বাড়ি বাড়ি বই পৌঁছে দিতেন।
আগের সপ্তাহের বই ফেরত নিয়ে নতুন বই পড়তে দিতেন, যা তাকে এলাকাবাসীর কাছে ‘বইওয়ালা দাদুভাই’ নামে পরিচিত করে তোলে।
পলান সরকারের এই মহতী উদ্যোগের জন্য ২০১১ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সমাজসেবায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে একুশে পদক প্রদান করে।
তাঁর এই উদ্যোগ কেবল শিক্ষার আলো ছড়িয়েছে না, বরং সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশকে শিক্ষার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়েছে। পলান সরকার তাঁর কাজের মাধ্যমে একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন, যা আজও অনেককে অনুপ্রাণিত করে।
এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন
এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ এবং রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সফল মেয়র। তিনি ১৯৫৯ সালের ১৪ আগস্ট রাজশাহী জেলার কাদিরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর পিতা আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা এবং দেশের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
খায়রুজ্জামান লিটন ১৯৮৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
১৯৮৪ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি বার কাউন্সিলের সদস্য হন।
২০০৮ সালে তিনি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন এবং তাঁর নেতৃত্বে রাজশাহী শহর ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করে। ২০১৮ সালে পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হয়ে তিনি শহরের উন্নয়নে নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নেন।
খায়রুজ্জামান লিটন দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটি প্রেসিডিয়াম এর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।
এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন তাঁর রাজনীতি ও নেতৃত্বের মাধ্যমে রাজশাহী শহর এবং দেশের উন্নয়নে অসামান্য ভূমিকা রেখে চলেছেন। তাঁর অবদান ও নেতৃত্বগুণ রাজশাহী শহরের উন্নয়নে বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান
প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশি শিক্ষাবিদ, যিনি তাঁর কর্মজীবনের মাধ্যমে রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ও কো-কারিকুলার উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন।
তিনি ১৯৬২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার সবুজ প্রত্যন্ত গ্রাম গোপীনাথপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রফেসর হবিবুর রহমান ২০০১ সালের ৩ জুন রাজশাহী কলেজের রসায়ন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। রাজশাহী কলেজে যোগদানের পরপরই তিনি শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি কো-কারিকুলার কার্যক্রমেও
উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। তাঁর চৌকশ কর্মকাণ্ডের জন্য কলেজ প্রশাসন তাঁকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পণ করে।
২০০৫ সালে তিনি সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে পদোন্নতি পেয়ে রাজশাহী কলেজেই যোগদান করেন এবং মাত্র চার বছরের মধ্যে, ২০০৯ সালে, অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন।
এরপর তিনি সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ পাবনায় বিভাগীয় প্রধান হিসাবে বদলি হন। ২০০৯ সালে তিনি রাজশাহী কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে যোগদানের মাধ্যমে পুনরায় রাজশাহী কলেজে ফিরে আসেন।
২০১৪ সালের ১৪ আগস্ট প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের গৌরব অর্জন করেন। তাঁর সূক্ষ্ম মেধা, সৃজনশীল চিন্তাভাবনা, এবং বহুমাত্রিক প্রশাসনিক দক্ষতার মাধ্যমে তিনি রাজশাহী কলেজকে একটি অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন।
তাঁর নেতৃত্বে কলেজটি শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমানের নেতৃত্বে রাজশাহী কলেজে ব্যাপক পরিবর্তন আসে, যা কলেজের প্রতিটি বিভাগের পরিবেশ, শিক্ষা কার্যক্রম এবং শৃঙ্খলায় অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করে।
তাঁর যোগদানের পর শিক্ষক লাউঞ্চ, সেমিনার কক্ষ, শ্রেণিকক্ষ এবং ল্যাবরেটরিসহ কলেজের প্রতিটি ভবনে অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।
তাঁর দক্ষ নেতৃত্বে কলেজের একাডেমিক ফলাফলেও ঈর্ষণীয় সাফল্য আসে। ২০১৬ সালে জাতীয় পর্যায়ে রাজশাহী কলেজ দেশ সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা অর্জন করে, যা প্রফেসর রহমানের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের মাত্র দুই বছরের মধ্যেই সম্ভব হয়।
২০১৩, ২০১৪, এবং ২০১৫ সালে রাজশাহী বোর্ডের এইচএসসি ফলাফলে পরপর তিন বছর প্রথম এবং সরকারি কলেজসমূহের মধ্যেও প্রথম স্থান অধিকার করে রাজশাহী কলেজ।
২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রাজশাহী কলেজ পরপর চারবার জাতীয় পর্যায়ে এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং এ দেশ সেরা কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এসময় মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নিকট থেকে কলেজটি সম্মান অর্জন করে।
প্রফেসর রহমান ১৯৯৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর সাবিনা ইয়াসমিন (পুতুল) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের এক ছেলে আরাফ রহমান এবং এক মেয়ে আফরিন রহমান রয়েছে। অধ্যক্ষ হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন শেষে অবসরে গিয়ে তিনি সমাজসেবামূলক এবং সৃজনশীল কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন।
রাজশাহীর বিখ্যাত মিষ্টি
রাজশাহী শহর তার অপূর্ব সৌন্দর্য এবং ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্নসামগ্রীর জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। এই শহরে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি পাওয়া যায়, যা মিষ্টিপ্রেমীদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। বিশেষ করে সি এন্ড বি মোড়ের মিষ্টি গরম গরম তৈরি করে পরিবেশন করা হয়, যা স্থানীয় এবং দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষদের আকৃষ্ট করে।
রাজশাহীর বিখ্যাত মিষ্টি এবং মিষ্টির দোকানগুলো:
রাজশাহী মিষ্টান্ন ভান্ডার: রসকদমের জন্য বিখ্যাত। এই মিষ্টি দেখতে কদম ফুলের মতো এবং এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়।
নবরূপ মিষ্টান্ন ভান্ডার: ছানার কালোজামের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। সাহেব বাজারে অবস্থিত এই মিষ্টির দোকানে ছানা, ময়দা, মাওয়া, চিনি, ঘি, এবং গোলাপজলের মিশ্রণে তৈরি কালোজাম অত্যন্ত জনপ্রিয়।
বেলিফুল, মিষ্টিবাড়ি, মিষ্টিমহল: এই দোকানগুলোতে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি পাওয়া যায়, যার প্রতিটি মিষ্টিই নিজস্ব স্বাদ ও বৈচিত্র্য নিয়ে বিখ্যাত।
হোবা ঘোষের মিষ্টি: চার প্রজন্ম ধরে চলে আসা এই মিষ্টির দোকানে সাদা এবং লাল রঙের মিষ্টি দুটি খুবই জনপ্রিয়, যা সাধারণত পাউরুটির সাথে খাওয়া হয়।
শামীম সুইটস: এই দোকানে রসগোল্লা খুবই জনপ্রিয়। এর মূল্য প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা।
রানা মিষ্টি ঘর: সি এন্ড বি এলাকার একটি বিখ্যাত মিষ্টির দোকান, যেখানে বিকেলের সময় গরম গরম মিষ্টি খাওয়ার জন্য মানুষ ভিড় করে। ৩০ বছরের পুরানো এই দোকানে ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির স্বাদ নেওয়া সত্যিই এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
রাজশাহীর বিখ্যাত মিষ্টির মধ্যে রয়েছে:
রসকদম: রাজশাহীর একটি অনন্য মিষ্টি।
কমলাভোগ: কমলার স্বাদে তৈরি মিষ্টি।
ছানার কালোজাম: নবরূপ মিষ্টান্ন ভান্ডারের বিশেষ মিষ্টি।
চমচম: ছানা, চিনি এবং ঘি দিয়ে তৈরি এই মিষ্টি রাজশাহীর অন্যতম বিখ্যাত মিষ্টি।
রসগোল্লা: বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় মিষ্টি, রাজশাহীতে এর স্বাদ আরও বিশেষ।
ছানার জিলাপি: নরম এবং সুস্বাদু এই মিষ্টি রাজশাহীতে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
পোড়াগোল্লা: পোড়া স্বাদের জন্য বিখ্যাত মিষ্টি।
ক্ষীরভোড়, দধিসর, রাজভোগ, লবংগ, মালপোয়া, বোঁদে, ক্ষীরসাপাই, আলুবোখারা, দইবড়া, ছানাবড়া ইত্যাদি মিষ্টি রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্নের অংশ এবং সেগুলোর স্বাদ সত্যিই অতুলনীয়।
রাজশাহী শহর তার ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য দূর-দূরান্ত থেকে আগত মানুষের কাছে একটি প্রিয় গন্তব্য। এখানকার মিষ্টির দোকানগুলোতে ভিন্ন স্বাদের মিষ্টি পাওয়া যায়, যা শহরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।
রাজশাহীর বিখ্যাত খাবার হোটেল
রাজশাহী শহর তার সুস্বাদু এবং ঐতিহ্যবাহী খাবারের জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত। এখানে রাজশাহীর কিছু বিখ্যাত খাবার এবং সেগুলোর জন্য প্রসিদ্ধ হোটেলের একটি তালিকা রয়েছে, যা আপনি অবশ্যই চেষ্টা করবেন:
বিখ্যাত হোটেল ও তাদের খাবার:
১.ইব্রাহিম হোটেল:
বিখ্যাত খাবার: কালাভুনা
বিবরণ: গরুর মাংসের একটি মশলাদার রান্না, যা রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে পরিচিত।
২.বিন্দুর মোড়ের বিন্দু হোটেল:
বিখ্যাত খাবার: কালাই রুটি
বিবরণ: রাজশাহীর একটি শক্ত রুটি, যা স্থানীয় এবং ঐতিহ্যবাহী।
৩.মড়মড়িয়া হাট:
বিখ্যাত খাবার: হাঁসের মাংস ভুনা
বিবরণ: সুস্বাদু হাঁসের মাংসের মশলাদার রান্না, যা রাজশাহীতে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
৪.কালাই বাড়ি :
বিখ্যাত খাবার: কালাই রুটি এবং কালাভুনা
বিবরণ: এখানে কালাই রুটি এবং কালাভুনা দুটোই বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়।
৫.রাজশাহী অতিথি হোটেল এন্ড রেস্তোরাঁ:
বিখ্যাত খাবার: গ্রিল এবং নান রুটি
বিবরণ: নরম নান রুটি এবং বিভিন্ন ধরনের গ্রিল করা মাংসের জন্য জনপ্রিয়।
কিছু নির্দিষ্ট খাবার যা রাজশাহীতে চেষ্টা করতে পারেন:
কালাভুনা: গরুর মাংসের মশলাদার রান্না, যা রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী।
কালো ভুনা: খাসির মাংসের মশলাদার রান্না, যা রাজশাহীতে জনপ্রিয়।
হাঁসের মাংস ভুনা: রাজশাহীতে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি সুস্বাদু রান্না।
কালাই রুটি: শক্ত রুটি, যা রাজশাহীর স্থানীয় এবং ঐতিহ্যবাহী।
নান রুটি: নরম রুটি, যা রাজশাহীতে বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
গ্রিল: বিভিন্ন ধরনের মাংস ও সবজি গ্রিল করা হয়।
সফট আইসক্রিম: নরম এবং সুস্বাদু আইসক্রিম, যা রাজশাহীর একটি বিশেষ খাবার।
আপনি রাজশাহীতে ভ্রমণকালে এই সুস্বাদু খাবারগুলো উপভোগ করতে পারেন। এগুলো শহরের খাদ্যসংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং স্থানীয় ও পর্যটকদের মধ্যে সমানভাবে জনপ্রিয়।
রাজশাহীর বিখ্যাত ফল
রাজশাহীর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ফল হলো আম (ম্যাংগো)। রাজশাহীর আম দেশব্যাপী এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রসিদ্ধ। বিশেষ করে “ল্যাংড়া,” “ফজলি,” “হিমসাগর,” এবং “আম্রপালি” জাতের আম রাজশাহীর গর্ব।
এগুলো গুণগত মান এবং স্বাদে অনন্য। রাজশাহীকে বাংলাদেশের “আমের রাজধানী” হিসেবেও অভিহিত করা হয়।
রাজশাহী অঞ্চলে আরও কিছু বিখ্যাত ফল রয়েছে, যেমন:
- লিচু: মৌসুমী ফল হিসেবে জনপ্রিয়।
- কাঠাল: বাংলাদেশের জাতীয় ফল, এবং রাজশাহীতেও পাওয়া যায়।
- পেঁপে: এখানে ভালো মানের পেঁপে উৎপাদন হয়।
এই অঞ্চলের মাটির উর্বরতা এবং আবহাওয়া বিশেষভাবে ফলের চাষের জন্য উপযুক্ত, যা এসব ফলকে বিখ্যাত করেছে।
রাজশাহীর বিখ্যাত আম
রাজশাহী অঞ্চলের আম বাংলাদেশে এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অত্যন্ত বিখ্যাত। এই অঞ্চলের কিছু বিখ্যাত আমের জাত হলো:
হিমসাগর: এই আমকে সেরা স্বাদের আম হিসেবে ধরা হয়। এটি মিষ্টি, রসালো এবং আঁশহীন। এর ভেতরের রং গাঢ় কমলা এবং এর সুগন্ধ একেবারে অনন্য।
ল্যাংড়া: এটি একটি জনপ্রিয় আমের জাত। এর গায়ের রং সবুজ থাকে এবং খেতে অত্যন্ত মিষ্টি। এটি খেতে নরম এবং বেশ রসালো।
ফজলি: রাজশাহীর ফজলি আম আকারে বেশ বড় এবং সুস্বাদু। এটি অন্যান্য আমের তুলনায় একটু দেরিতে পাকে এবং এর স্বাদ খুবই মিষ্টি ও আকর্ষণীয়।
আম্রপালি: এই আমটি হাইব্রিড জাতের, যা সুস্বাদু এবং রসালো। আকারে ছোট হলেও স্বাদে অতুলনীয়।
গোপালভোগ: এটি মৌসুমের শুরুতে পাওয়া যায় এবং খেতে খুবই মিষ্টি। এর ত্বক বেশ পাতলা এবং রসও বেশি।
এছাড়াও রাজশাহীতে আরও অনেক ধরনের স্থানীয় জাতের আম পাওয়া যায়, যা এই অঞ্চলকে বাংলাদেশের “আমের রাজধানী” হিসেবে খ্যাতি এনে দিয়েছে।
উপসংহার:
রাজশাহী শুধুমাত্র একটি ঐতিহাসিক এবং শিক্ষার শহর নয়, এটি তার বিখ্যাত জিনিসপত্রের জন্যও দেশের গর্বিত একটি অংশ। এখানকার রেশমীবস্ত্র, আম, মিষ্টান্ন, এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রাজশাহীর গৌরবময় ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির এক অনন্য নিদর্শন। রাজশাহীর রেশমী শাড়ি এবং অন্যান্য রেশমজাত পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে রাজশাহীর নাম উজ্জ্বল করেছে।
বিশ্বজুড়ে রাজশাহীর আমের খ্যাতি তার নিজস্ব এক পরিচিতি বহন করে। হিমসাগর, ফজলি, এবং ল্যাংড়ার মতো বিভিন্ন আমের জাত শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় মানুষের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে।
এছাড়াও, রাজশাহীর মিষ্টান্নসামগ্রী, যেমন রসগোল্লা, চমচম, এবং রসকদম এর মিষ্টতা এবং অনন্য স্বাদ মিষ্টিপ্রেমীদের জন্য এক দারুণ অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে।
রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী পণ্য এবং স্থানগুলো শুধুমাত্র এর গৌরবময় অতীতকে বহন করে না, বরং এর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।