গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ, কিভাবে বুঝবেন ?

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ, এবং গর্ভবতী হলে কিভাবে বুঝবেন এই সম্পর্কে যারা বিস্তারিত তথ্য জানতে চাচ্ছেন তারা সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন। একটি মেয়ে যখন প্রথম জানতে পারে সে মা হতে চলেছে সেদিন থেকেই তার মনে তোলপাড় শুরু হয়। গর্ভাবস্থার প্রথমদিকে তেমন কোন লক্ষণ প্রকাশ না পেলেও ধীরে ধীরে এগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। 

গর্ভবতী হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণগুলো হল স্তনে সংবেদনশীলতা, ঘন ঘন প্রস্রাব হয়, স্তনে ওজন বৃদ্ধি এবং ব্যথা, বমি বমি ভাব, হালকা জ্বর আসা, পেটে হালকা ব্যথা, মানসিক উদ্বিগ্নতা বৃদ্ধি পাওয়া, রুচির পরিবর্তন, পিরিয়ড মিস করা ইত্যাদি। তবে কোন নারী এসব লক্ষণের সম্মুখীন হলেই ধরে নিতে পারবেন না যে সে গর্ভবতী। পিরিয়ড মিস হওয়ার ২১ দিন পরে প্রেগনেন্সি টেস্ট করে সিওর হতে হবে আপনি আসলেই গর্ভবতী কিনা। গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।

 

Table of Contents

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ

বিবাহিত মেয়েদের পিরিয়ড মিস হলেই অনেকে ভেবে নেন যে সে গর্ভবতী। কিন্তু গর্ভবতী হওয়ার আরো কিছু লক্ষণ রয়েছে। চলুন গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলো কি কি সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

 

মাথা ঘুরানো ও বমি ভাব

প্রেগনেন্সির একদম শুরু থেকেই একটি প্রাথমিক লক্ষণ হল মাথা ঘুরানো এবং বমি বমি ভাব অনুভূত হওয়া। পিরিয়ড মিস হওয়ার সাথে এই লক্ষণ প্রকাশ পেলে অবশ্যই প্রেগনেন্সি টেস্ট করুন।

পেট ফাঁপা অনুভূত হওয়া

প্রেগনেন্সি জার্নি চলাকালীন একদম ফার্স্ট ট্রাইমেস্টার থেকেই পেট ফাঁপা এবং হালকা পেটব্যথা অনুভূত হয়। এক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে।

সাদা স্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি

গর্ভাবস্থায় যে কোন জীবাণু মাসিকের রাস্তা দিয়ে জরায়ুতে উঠে আসতে বাধা দেয় ফলে সাদা স্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ

গর্ভাবস্থায় পরিমিত পানি খেলেও বিশেষ করে রাতের দিকে ঘন ঘন প্রসবের বেগ অনুভূত হয়।

কিছু খাবারে অরুচি

গর্ভাবস্থায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুষ্টিকর খাবারের প্রতি অরুচি দেখা দেয়। তবে অরুচি থাকা সত্ত্বেও পরিমিত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।

কিছু খাবারে তীব্র আকাঙ্ক্ষা

গর্ভাবস্থায় বিশেষ করে ঝাল এবং টক জাতীয় খাবার অথবা ফাস্টফুডের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা অনুভূত হয়।

যোনিপথ দিয়ে হালকা রক্তপাত

গর্ভাবস্থায় কোন সমস্যা দেখা দিলে যোনিপথ দিয়ে রক্ত আসতে পারে। এরকম অবস্থায় সাথে সাথে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যান।

মর্নিং সিকনেস

গর্ভাবস্থার ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পর থেকে মর্নিং সিকনেস অনুভূত হয়। এ সময় সকালে বমি বমি ভাব অনুভূত হতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্য

গর্ভাবস্থার হরমোনাল পরিবর্তনের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। গর্ভাবস্থার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ থাকতে পারে।

ক্লান্তি ভাব

গর্ভাবস্থায় প্রথম দিকে প্রোজেস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির ফলে কোন কাজ করলেই ক্লান্তি অনুভূত হয় এবং সব ধরনের কাজের প্রতি মনোযোগ কম থাকে।

 

প্রেগন্যান্সির লক্ষণ কি কি

প্রাচীনকালে যখন প্রেগনেন্সি টেস্ট করা হতো না তখন বয়োজ্যেষ্ঠরা কিছু লক্ষণ দেখে বুঝে নিত যে সে গর্ভবতী কিনা! প্রেগনেন্সির লক্ষণ কি কি যারা জানেন না তারা সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন: 

প্রেগন্যান্সির লক্ষণ কি কি
প্রেগন্যান্সির লক্ষণ কি কি
  • বারবার টয়লেটে যেতে হতে পারে,
  • স্তনে কোমলতা বৃদ্ধি পাওয়া এবং স্তনের আকার বৃদ্ধি পাওয়া,
  • কিছু খাবারের প্রতি তীব্র অনিহা এবং কিছু খাবারের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা অনুভূত হওয়া,
  • ঘন ঘন মুড সুইং হওয়া,
  • রাতে ঘুম কম হওয়া,
  • মাথা ঘোরার পাশাপাশি মাথা ভার অনুভূত হওয়া,
  • সকালের দিকে বমি বমি ভাব এর পাশাপাশি বমি হওয়া,
  • তলপেটে চিন চিন ব্যথা করা,
  • যোনিপথ দিয়ে অধিক পরিমাণে সাদা স্রাব বের হওয়া,
  • হঠাৎ করে গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি হওয়া,
  • ডিম্বানু নিষিক্ত হওয়ার পরে গন্ধ যুক্ত সাদা স্রাব আসা,
  • রাতের দিকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া।

 

এসব লক্ষণ এর পাশাপাশি যখন আপনার পিরিয়ড মিস হবে তখন ফার্মেসি থেকে টেস্ট কিট ক্রয় করে বাসায় বসে অবশ্যই প্রেগন্যান্সি টেস্ট করান। এক্ষেত্রে আপনি যদি ইতিবাচক ফলাফল পান তাহলে অবশ্যই একজন গাইনি বিশেষজ্ঞের নিকট থেকে পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং তার মতামত অনুযায়ী চলুন।

 

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়

পিরিয়ড এর ডেট মিস হলে অথবা আপনি যদি অনিরাপদ সহবাস অর্থাৎ (কনডম, পিল বা বড়ি) ব্যবহার না করেন তাহলে পিরিয়ড এর দিন ধরে প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে পারেন। পিরিয়ড শুরু হওয়ার তারিখ থেকে যদি পিরিয়ড না হয় তাহলে যে কোনদিন প্রেগনেন্সির টেস্ট করতে পারেন অথবা অ নিরাপদ সহবাসের ২১ দিন পর উন্নত মানের টেস্ট কিট দিয়ে টেস্ট করা যেতে পারে। গর্ভাবস্থার যাবতীয় লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে ৬-৪১ দিন সময় লাগে। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে ২-৩ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।

 

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়

 

পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে গর্ভাবস্থায় পরীক্ষা করা যাবে?

পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করলে অনেক সময় রেজাল্ট পজেটিভ নাও দেখাতে পারে। তবে পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে এই পরীক্ষা করার জন্য ১০ থেকে ১৪ দিন সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

পিরিয়ড না হলে কি প্রেগন্যান্ট ? জেনে নিন

 

সাদা স্রাব কি প্রেগন্যান্সির লক্ষণ?

গর্ভাবস্থায় যাতে যোনিপথ দিয়ে কোন রকম জীবাণু জরায়ুতে উঠে আসতে না পারে সেজন্য সব মহিলাদেরই গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব আসে। এক্ষেত্রে গর্ভজাত শিশু সব ধরনের ইনফেকশন থেকে রক্ষা পায়। তবে গর্ভাবস্থার একদম শেষের দিকে জমাট বাধা বড় আকৃতির সাদাস্রাব আসতে পারে, কিন্তু এটা দেখে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। গর্ভাবস্থায় একদম শেষের দিকে গোলাপি রঙের সাদাস্রাবও আসতে পারে। এই ধরনের গোলাপি রঙের স্রাবকে ডাক্তারি ভাষায় ‘শো’ বলা হয়ে থাকে।

 

গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব কখন বিপদজনক 

সাদা স্রাব যখন পাতলা, স্বচ্ছ ও বর্ণহীন অথবা দুধের মতো সাদা হয় তখন ভয়ের কিছু নেই। গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব কখন বিপদজনক চলুন জেনে নেই:

  • দুর্গন্ধযুক্ত সাদাস্রাব,
  • সবুজ, হলুদ, লালচে রংয়ের ঘন স্রাব,
  • যোনি পথে চুলকানি এবং ব্যথা,
  • যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়া এবং চুলকানি।

 

গর্ভবতী হলে সাদা স্রাব কেমন হয়

গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব সাদা বা বর্ণহীন এবং গন্ধহীন হলে বুঝতে হবে এটি স্বাস্থ্যকর। তবে গর্ভাবস্থায় হালকা গোলাপি রঙের স্রাব অস্বাস্থ্যকর নয়। তবে এই সময় সবুজ বা হলুদ এবং লাল অথবা বাদামি রং এর স্রাব অস্বাস্থ্যকর।

 

লক্ষন ছাড়া গর্ভবতী

গর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত অনেক সময় কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তবে গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণ পিরিয়ড মিস যা সবার ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। পিরিয়ড মিস হবার পর টেস্ট কিট ব্যবহার করে শিওর ফোন আপনি গর্ভবতী কিনা। গর্ভাবস্থার তেমন কোন লক্ষণ প্রকাশ না পেলে ভয়ের কিছু নেই। কোনরকম শারীরিক অসুবিধা ছাড়া যদি গর্ভাবস্থার দিনগুলো পার করতে পারেন তাহলে এটি আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত।

 

উপসংহার

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ, কিভাবে বুঝবেন এই সম্পৃক্ত বিষয়বলি নিয়ে সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের। যারা প্রেগনেন্সির বিভিন্ন লক্ষণ নিয়ে সন্ধিহান, আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য অনেক উপকারে আসবে বলে আশা করছি।

জনপ্রিয় ব্লগ: টনসিল অপারেশনের পর ইনফেকশন হলে কিভাবে বুঝবেন? করণীয় কি ? জেনে নিন !

সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১)কত দিন পর জানা যায় গর্ভবতী?

উঃ পিরিয়ড ডেট মিস হওয়ার ৭ থেকে ১০ দিন পর পরীক্ষা করে জানা যায় যে গর্ভবতী কিনা! তবে কারো আরো কিছুদিন বেশি সময় লাগে।

২)কিভাবে বুঝবো যে আমি গর্ভবতী?

উঃ মাথা ঘোরা এবং বমি ভাব, ক্লান্তি, অবসন্নতা, সাদাস্রাব এবং খাবারের অরুচি জাতীয় লক্ষণ দেখে বুঝা যায় যে আপনি গর্ভবতী কিনা।

৩)গর্ভবতী কি না জানার উপায়?

উঃ গর্ভবতী কিনা তা জানার জন্য পিরিয়ড ডেট মিস হওয়ার ১০ দিনের মধ্যে প্রেগনেন্সি টেস্ট করে জানতে পারেন।

Spread the love

20 thoughts on “গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ, কিভাবে বুঝবেন ?”

Leave a Comment